শহীদ দিবসেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখেনি ডাকঘর অফিস
একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকার নিয়ম থাকলেও নিয়ম মেনে পতাকা উড়ছে না সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার প্রধান ডাকঘরে। বুধবার (২১ শে) ফেব্রুয়ারি উপজেলার প্রধান ডাকঘরে সংলগ্ন জাতীয় পতাকা দণ্ডায়মান পাইপের শেষ পর্যন্ত তুলে রেখেছে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডাকঘর ভবনের সামনে ভাষাশহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দণ্ডায়মান জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ থাকলেও সেটি পুরোপুরি উঠানো হয়েছে। পথচারী জসিম উদ্দিন বলেন, ডাকঘরের যে বেহাল দশা তাতে আর কয়দিন টিকবে আমরা জানি না। এক সময় ডাকঘর খুব জনপ্রিয় থাকলেও বর্তমানে তা নেই । এখানকার পোস্ট অফিস কর্মকর্তা হয়তো আদৌ জানে না কোন দিবসে কীভাবে পতাকা ওঠাতে হয়। অনেকটা অবহেলায় দেখা হয় এই দিবসগুলোকে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা বলেন, আমি ২১ শে ফেব্রুয়ারির একটি প্রোগ্রামে রয়েছি। আমি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

শ্রীমঙ্গল ডাকঘর প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত না হওয়ায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রধান ডাকঘরটি আজও সাব-ডাকঘর হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছে তার কর্মকাণ্ড। অথচ টার্গেট পূরণ করছে প্রথম শ্রেণির। আর প্রথম শ্রেণির ডাকঘরে উন্নীত না করায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাটি সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই একটি উন্নত ব্যবসায়িক অঞ্চল। যেখানে একসময় মারোয়ারীরা ব্যবসা করতেন এবং পরে ব্রিটিশরা চা বাগান করার পর তা আরও সমৃদ্ধ হয়। যেখানে চালু হয় সিলেট বিভাগের অন্যতম আড়তদারি বা পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে সিলেট বিভাগ তথা চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কিছু অঞ্চলের পাইকাররা শ্রীমঙ্গলের বাজার থেকে মালামাল সংগ্রহ করতেন। এখনো শ্রীমঙ্গলের আড়তদারি বা পাইকারি ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিসের ৪৫ শতাংশ জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান ছোট এই ভবন ছাড়া বাকি জায়গা পতিত। লোকবল বৃদ্ধির পাশাপাশি অচিরেরই প্রয়োজন সম্প্রসারিত ভবন। এর আগে ত্রিপুরা রাজা এখানে নিয়মিত আসতেন। শ্রীমঙ্গল হবিগঞ্জ সড়কে রাজ কাছারিতে বসতেন। যে কারণেও এখানে গড়ে উঠে নগরায়ণ। বিগত ৫৩ বছর ধরে তিনি এই ডাকঘরে লেনদেন করে আসছেন। তার আয়ের অংশ তিনি এখানেই সঞ্চয় করেন। কিন্তু যুগ বদলে গেছে, সবকিছু আধুনিক হয়েছে, কিন্তু আধুনিক হয়নি এই ডাকঘরটি।  আর চা বাগান হওয়ার পর এর গুরুত্ব বেড়ে যায় অনেকগুণ। আর শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অর্ধশতাধিক পর্যটন স্পট থাকায় এর ব্যবসায়িক পরিধিও বেড়েছে আশাব্যঞ্জক। আর বর্তমানে এটি তৃতীয় শ্রেণির ডাকঘর হলেও এর আয় ও গ্রাহক সংখ্যা প্রথম শ্রেণির সমান। এটিকে প্রথম শ্রেণির ডাকঘরে রূপান্তরিত না করায় গ্রাহকদের ভোগান্তির শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। বর্তমানে এর মাসিক লেনদেন ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা।  আর এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলে তা শতকোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে কয়েকগুণ। পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। এতে দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলের ডাকঘর থেকে প্রথম শ্রেণির সুবিধাসংবলিত সেবা বঞ্চিত গ্রাহকরা। এ অবস্থায় বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ী এই ডাকঘর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছেন। চলমান আধুনিক যুগে এ ডাকঘরটি এখনো তৃতীয় শ্রেণির অফিস হিসেবে আছে। অথচ বহু বছর আগে থেকেই এটি দ্বিতীয় শ্রেণির প্রধান ডাকঘরে উন্নীত হতে মাসিক ২০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন অতিক্রম করে। বর্তমানে এর লেনদেন প্রায় ৩০ কোটি টাকা, যা প্রথম শ্রেণির ডাকঘরে উন্নীত হওয়ার টার্গেট।  শ্রীমঙ্গল উপজেলা ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত পোস্ট মাস্টার আব্দুল মতিন জানান, বর্তমানে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতি বিমুখ। একজন গ্রাহক বই জমা দিলে তা মৌলভীবাজার ঘুরে এসে টাকা পেতে সময় লাগে প্রায় ১৫ দিন থেকে এক মাসেরও বেশি। এখন যে ২৫ কোটি টাকার ওপরে আয় হয়, তা সঞ্চয় ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, রেজিস্টার ইস্যু, দৈনিক পার্সেলসহ অন্যান্য খাত থেকে। তিনি জানান, এক সময় লেনদেন ছিল প্রায় ৫০ কোটি। সুবিধা না পাওয়ায় এখন কমেছে। শ্রীমঙ্গল ডাকঘরের অপারেটর সবিতা রানী রায় জানান, শ্রীমঙ্গলে অনেক প্রবাসী রয়েছেন। দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণি না হওয়ায় এখানে লোকবল ও অবকাঠামো কম। গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে হলে আগে মৌলভীবাজারে চাহিদা দিতে হয়।  কাতার প্রবাসী সুব্রত চক্রবর্তী জানান, শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিসটি তৃতীয় শ্রেণির হওয়ায় বর্তমানে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইমার্জেন্সি মেইল সার্ভিস (ইএমএস) সার্ভিস পাচ্ছি না। এটি প্রথম শ্রেণি বা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে আমরা এ সার্ভিস পাব। শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর হলেও এখানে রয়েছে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, রয়েছে বিজিবির সেক্টর, ব্যাটালিয়ন, রয়েছে চা গবেষণা কেন্দ্র, চা বোর্ডেও প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট, পল্লী­বিদ্যুৎ সমিতির মৌলভীবাজার জেলা অফিস, পাওয়ার গ্রিডের মৌলভীবাজার জেলা অফিস, প্রথম শ্রেণির রেলওয়ে স্টেশন, রয়েছে র‌্যাব-৯ এর হবিগঞ্জ মৌলভীবাজার জেলার প্রধান অফিস, রয়েছে আনসার ব্যাটালিয়ান, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ, জেলা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তার পৃথক পৃথক কার্যালয়, বিভাগীয় শ্রমকল্যাণ অফিস, জেলা কলকারাখানা অফিস, পদ্মা মেঘনা যমুনার বিভাগীয় ডিপু, রয়েছে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কার্যালয়।  এ ছাড়াও রয়েছে অর্ধশতাধিক এনজিও, ৪৬টি চা বাগান, বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি রাবার বাগান, রয়েছে পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ অর্ধশতাধিক হোটেল রিসোর্ট। আছে অর্ধশতাধিক ব্যাংক বীমা অফিস। আর হাজার হাজার প্রবাসী তো আছেনই। শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিস পরিদর্শক আবু সালে মোহাম্মদ আল রাজীব বলেন, শ্রীমঙ্গল শাখা দ্বিতীয় শ্রেণির প্রধান ডাকঘরে উন্নীত হলে এই ব্রাঞ্চের নিজস্ব একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে। অ্যাকাউন্টে সবসময় স্থিতি থাকবে যার মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দেওয়া যাবে।
১১ নভেম্বর, ২০২৩

জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী রামগড় ডাকঘর
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম ও প্রচীন মহকুমা শহরের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ডাকঘর। পাকিস্তান সরকারের আমলে গঠিত এই ডাকঘরটির উপকেন্দ্রে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করে রামগড়কে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। সে সময় এই ডাকঘরেই অবস্থান নিয়েছিল ১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এদিকে আজ ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ডাক বিভাগ দিবসটি পালন করা হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৮৪ সালের ৩০মে রামগড় ডাকঘরটিকে বি গ্রেডে উন্নীত করে প্রধান ডাকঘরের স্বীকৃতি দেয় ডাক বিভাগ। মহান মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই ডাকঘরটিতে এখন আর আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য নেই। নেই গণমানুষের পদচারণা। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় মানুষ ডাক বিভাগকে ভুলতে বসেছে। অধিকাংশ মানুষের ধারণা চিঠিপত্র বিলি করা ছাড়া ডাক বিভাগের আর কোনো কাজ নেই। অনলাইন নির্ভর উন্নত যোগাযোগ ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় মোবাইলে এসএমএস ও ই-মেইল, ইন্টারনেটে, ই-কমার্স, কোরিয়ার সার্ভিসসহ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বাংলাদেশ। তারই প্রভাবে সরকারি চিঠিপত্র ছাড়া ডাকঘর কেন্দ্রিক জনসাধারণের কর্মতৎপরতা না থাকায় ঐতিহ্যবাহী রামগড় প্রধান ডাকঘরটি হারাতে বসছে তার পুরোনো জৌলুস। জানা গেছে, রামগড় ডাক বিভাগে ট্রেজারি ও ইএমইএস সেবা কার্যক্রমটি চালু করা গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পুরোনো এ পোস্ট অফিস থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাহককে সেবা দেওয়া সম্ভব। সেবাটি চালু করা হলে ডাক বিভাগকেন্দ্রিক মানুষের কর্মতৎপরতা বাড়ার পাশাপাশি এ বিভাগ থেকে সরকার পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। রামগড় ডাক অফিস সূত্রে জানা গেছে, রামগড় ডাকঘরের অধীনে রামগড় ছাড়াও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি ও লক্ষিছড়ি উপজেলা ডাক বিভাগ রামগড় প্রধান ডাকঘরের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। তা ছাড়া রামগড় প্রধান ডাকঘরের আওতাধীন চার উপজেলায় আরও ১২টি উপশাখা চালু রয়েছে। রামগড় প্রধান ডাকঘরে ২১ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১২ জন ও শূন্যপদের সংখ্যা ৯টি। উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শাহ আলম জানান, সাধারণ মানুষভাবে চিঠিপত্র আদান-প্রদান ছাড়া ডাকঘরের কোনো কাজ নেই। বর্তমানে ডাকঘরের সেবার পরিধি বেড়েছে। কিন্তু রামগড় প্রধান ডাকঘর তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। আগে সঞ্চয়পত্রের সুবিধা থাকলেও অনলাইননির্ভর হওয়ার গ্রাহক সে সুবিধা পাচ্ছে না। স্থানীয় প্রবীণ নুর ইসলাম জানান, নব্বইয়ের দশকে প্রবাস থাকাকালে তিনি এই ডাকঘর ব্যবহার করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। মাস শেষে বেতন মানি অর্ডার করে পাঠাতেন। এখন এই ডাকঘর স্মৃতিতে ঠাঁই নিচ্ছে। রামগড় প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার শহীদ কামাল আজাদ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ডাকঘরটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। ইন্টারনেট সেবা এবং দক্ষ জনবলের অভাবে সঞ্চয়পত্র এবং নতুন হিসাব খোলার মতো সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। ভবনে অন্তত রং করে দিলেও গ্রাহক আকৃষ্ট হতো।
০৯ অক্টোবর, ২০২৩
X