মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রধান ডাকঘরটি আজও সাব-ডাকঘর হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছে তার কর্মকাণ্ড। অথচ টার্গেট পূরণ করছে প্রথম শ্রেণির। আর প্রথম শ্রেণির ডাকঘরে উন্নীত না করায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাটি সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই একটি উন্নত ব্যবসায়িক অঞ্চল। যেখানে একসময় মারোয়ারীরা ব্যবসা করতেন এবং পরে ব্রিটিশরা চা বাগান করার পর তা আরও সমৃদ্ধ হয়। যেখানে চালু হয় সিলেট বিভাগের অন্যতম আড়তদারি বা পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র।
সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে সিলেট বিভাগ তথা চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কিছু অঞ্চলের পাইকাররা শ্রীমঙ্গলের বাজার থেকে মালামাল সংগ্রহ করতেন। এখনো শ্রীমঙ্গলের আড়তদারি বা পাইকারি ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিসের ৪৫ শতাংশ জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান ছোট এই ভবন ছাড়া বাকি জায়গা পতিত। লোকবল বৃদ্ধির পাশাপাশি অচিরেরই প্রয়োজন সম্প্রসারিত ভবন।
এর আগে ত্রিপুরা রাজা এখানে নিয়মিত আসতেন। শ্রীমঙ্গল হবিগঞ্জ সড়কে রাজ কাছারিতে বসতেন। যে কারণেও এখানে গড়ে উঠে নগরায়ণ। বিগত ৫৩ বছর ধরে তিনি এই ডাকঘরে লেনদেন করে আসছেন। তার আয়ের অংশ তিনি এখানেই সঞ্চয় করেন। কিন্তু যুগ বদলে গেছে, সবকিছু আধুনিক হয়েছে, কিন্তু আধুনিক হয়নি এই ডাকঘরটি।
আর চা বাগান হওয়ার পর এর গুরুত্ব বেড়ে যায় অনেকগুণ। আর শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অর্ধশতাধিক পর্যটন স্পট থাকায় এর ব্যবসায়িক পরিধিও বেড়েছে আশাব্যঞ্জক। আর বর্তমানে এটি তৃতীয় শ্রেণির ডাকঘর হলেও এর আয় ও গ্রাহক সংখ্যা প্রথম শ্রেণির সমান। এটিকে প্রথম শ্রেণির ডাকঘরে রূপান্তরিত না করায় গ্রাহকদের ভোগান্তির শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। বর্তমানে এর মাসিক লেনদেন ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা।
আর এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলে তা শতকোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে কয়েকগুণ। পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। এতে দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলের ডাকঘর থেকে প্রথম শ্রেণির সুবিধাসংবলিত সেবা বঞ্চিত গ্রাহকরা। এ অবস্থায় বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ী এই ডাকঘর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছেন। চলমান আধুনিক যুগে এ ডাকঘরটি এখনো তৃতীয় শ্রেণির অফিস হিসেবে আছে। অথচ বহু বছর আগে থেকেই এটি দ্বিতীয় শ্রেণির প্রধান ডাকঘরে উন্নীত হতে মাসিক ২০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন অতিক্রম করে। বর্তমানে এর লেনদেন প্রায় ৩০ কোটি টাকা, যা প্রথম শ্রেণির ডাকঘরে উন্নীত হওয়ার টার্গেট।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত পোস্ট মাস্টার আব্দুল মতিন জানান, বর্তমানে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতি বিমুখ। একজন গ্রাহক বই জমা দিলে তা মৌলভীবাজার ঘুরে এসে টাকা পেতে সময় লাগে প্রায় ১৫ দিন থেকে এক মাসেরও বেশি। এখন যে ২৫ কোটি টাকার ওপরে আয় হয়, তা সঞ্চয় ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, রেজিস্টার ইস্যু, দৈনিক পার্সেলসহ অন্যান্য খাত থেকে। তিনি জানান, এক সময় লেনদেন ছিল প্রায় ৫০ কোটি। সুবিধা না পাওয়ায় এখন কমেছে।
শ্রীমঙ্গল ডাকঘরের অপারেটর সবিতা রানী রায় জানান, শ্রীমঙ্গলে অনেক প্রবাসী রয়েছেন। দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণি না হওয়ায় এখানে লোকবল ও অবকাঠামো কম। গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে হলে আগে মৌলভীবাজারে চাহিদা দিতে হয়।
কাতার প্রবাসী সুব্রত চক্রবর্তী জানান, শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিসটি তৃতীয় শ্রেণির হওয়ায় বর্তমানে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইমার্জেন্সি মেইল সার্ভিস (ইএমএস) সার্ভিস পাচ্ছি না। এটি প্রথম শ্রেণি বা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে আমরা এ সার্ভিস পাব।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর হলেও এখানে রয়েছে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, রয়েছে বিজিবির সেক্টর, ব্যাটালিয়ন, রয়েছে চা গবেষণা কেন্দ্র, চা বোর্ডেও প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মৌলভীবাজার জেলা অফিস, পাওয়ার গ্রিডের মৌলভীবাজার জেলা অফিস, প্রথম শ্রেণির রেলওয়ে স্টেশন, রয়েছে র্যাব-৯ এর হবিগঞ্জ মৌলভীবাজার জেলার প্রধান অফিস, রয়েছে আনসার ব্যাটালিয়ান, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ, জেলা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তার পৃথক পৃথক কার্যালয়, বিভাগীয় শ্রমকল্যাণ অফিস, জেলা কলকারাখানা অফিস, পদ্মা মেঘনা যমুনার বিভাগীয় ডিপু, রয়েছে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কার্যালয়।
এ ছাড়াও রয়েছে অর্ধশতাধিক এনজিও, ৪৬টি চা বাগান, বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি রাবার বাগান, রয়েছে পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ অর্ধশতাধিক হোটেল রিসোর্ট। আছে অর্ধশতাধিক ব্যাংক বীমা অফিস। আর হাজার হাজার প্রবাসী তো আছেনই।
শ্রীমঙ্গল পোস্ট অফিস পরিদর্শক আবু সালে মোহাম্মদ আল রাজীব বলেন, শ্রীমঙ্গল শাখা দ্বিতীয় শ্রেণির প্রধান ডাকঘরে উন্নীত হলে এই ব্রাঞ্চের নিজস্ব একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে। অ্যাকাউন্টে সবসময় স্থিতি থাকবে যার মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দেওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন