দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিলেন সরকারি কর্মকর্তা
দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জ প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) ইনস্ট্রাক্টর রবিউল আউয়ালের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবে স্বামীর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার স্ত্রী পাপিয়া আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে পাপিয়া আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমরা ভালোবেসে ২০১৭ সালে বিয়ে করেছি। বিয়ের ১০ মাস পর স্বামীর চাকরি হয় পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর পদে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে আমাদের এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। তিনি প্রথমে ফেনীতে যোগদান করেন। ২০২০ সালে ফুলগাজী পশ্চিম বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাসলিমা আক্তারের সঙ্গে এক ঘটনার পর তাকে পটিয়াতে বদলি করা হয়। তিনি বলেন, পটিয়াতে যাওয়ার পর ওই নারী শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যায়। এ সম্পর্ক জানার পর তাকে সংশোধনের চেষ্টা করলে সে আমার ওপর অত্যাচার শুরু করে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করা হয়। ওই নারীর কাছ থেকে একটি মুচলেকা নেওয়া হয় যাতে আর কোনো সম্পর্কে না জড়ান।  রবিউল আউয়ালের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী ও ওই নারীর মধ্যে অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি জানার পর থেকে সে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতির জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে। ২০২২ সালের ২০ আগস্ট দ্বিতীয় বিয়ের জন্য একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও করতে বলে। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর না দেওয়ার কারণে নির্যাতনের মাত্র আরও বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।  তিনি আরও বলেন, এরপর ২০২৩ সালে জুলাই মাসে স্বামীকে মানিকগঞ্জ পিটিআইতে বদলি করা হয়। এখানে আসার পর থেকে আমার ওপর নির্যাতনের মাত্র আরও বাড়িয়ে দেন। তারপর ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আমাকে তালাক দেন তিনি। এ ঘটনায় আমি মানিকগঞ্জ সদর থানায় নারী নির্যাতনের একটি অভিযোগ দেই। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় আমাদের পুনরায় বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ে হলেও আমার স্বামী গোপনে ওই নারীকে নিয়ে ঢাকায় হোটেলে রাত্রীযাপন করেন। সেই সঙ্গে ওই নারীকে গোপনে বিয়ে করেছেন।  পাপিয়া আক্তার বলেন, এখন দ্বিতীয় বিয়ে অনুমতি না দিলে তার চাকরি চলে যাবে। এর জন্য সে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাচ্ছে। দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়ায় গত মাস থেকে তিনি সন্তান ও আমার কোনো ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। বাবার বাড়িতে যাওয়ায় মানিকগঞ্জের ভাড়াটিয়া বাসায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি স্বামীকে সংশোধন করার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে সংশোধন হয়নি। সে একজন নারী লোভী নরপশু। পিটিআইতে চাকরি করার কারণে অনেক শিক্ষিকার সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। এখন আমার একটাই দাবি, আমার সন্তান যেন তার বাবা ও পরিবার না হারায়। এ ব্যাপারে পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর রবিউল আওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কালবেলাকে তিনি বলেন, পাপিয়া আক্তার এখন আমার স্ত্রী নয়। সে অবাধ্য হওয়ার কারণে গত মাসে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি না দেওয়ার কারণে তালাক দিয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আর দ্বিতীয় বিয়ের প্রয়োজন নেই।  তিনি বলেন, পাপিয়া একজন সন্দেহপ্রবণ নারী। সে অফিসে এসে আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। এ ধরনের মানুষের সঙ্গে সংসার করা যায় না। তবে তিনি ওই নারীকে বিয়ে করেননি বলে দাবি করেছেন।
০৩ মে, ২০২৪

নেশার টাকা দিতে না পারায় স্বামীকে তালাক
নেশার টাকা না দেওয়ায় স্বামীকে তালাক দিয়েছে এক স্ত্রী। শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।  জানা গেছে, চার মাস আগে হরিরামপুর ইউনিয়নের পূর্ব হোসেনপুর গ্রামের মেজবাউল ইসলামের (২৬) সঙ্গে পৌর শহরের সাহেবপাড়া এলাকার রেজবাউল ইসলাম বাবুর মেয়ে মোছা. বিজলীর (২২) বিয়ে হয়। আগে থেকে নেশায় আসক্ত ছিল বিজলী। বিষয়টি জানাজানি হলে সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হয়। এরপর স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠকে বসেও কোনো সমাধান আসেনি।  সর্বশেষ শুক্রবার রাতে আবারও স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য হয়। পরে পার্বতীপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন পার্ক চত্বরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে নেশার টাকা দিতে না পারার অভিযোগ তুলে স্বামী মেজবাউলকে তালাক দেয় ওই মাদকাসক্ত নারী। বিজলীর পরিবার জানায়, আগে থেকেই নেশার সঙ্গে জড়িত ছিল বিজলী। বিয়ের পর নেশার মাত্রা বেড়ে যায় তার। এ জন্য স্বামীর সঙ্গে তার মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। ফলে প্রতিনিয়তই তাদের সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকত। আজ তালাকের মাধ্যমে তাদের ছাড়াছাড়ি হলো।  স্বামী মেজবাউল ইসলাম বলেন, আগে থেকেই নেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিয়ের সময় তা গোপন করা হয়। এরপর বিজলীর নেশার মাত্রা দিন দিন এতটাই বেড়ে যায় যে প্রতিদিন তার প্রায় ২ হাজার টাকার মতো নেশাদ্রব্য লাগত। নেশার টাকা জোগাতে সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাকে এসবে বাধা দেওয়ার কারণে সে আজ আমাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে।
৩০ মার্চ, ২০২৪

দেশে তালাক ও বিচ্ছেদ কমেছে
দুটি মানুষ একসঙ্গে চলবে বলে কত আয়োজন। প্রেম, ভালোবাসা অতপর বেশ ঘটা করে বিয়ে। পাশাপাশি থাকার শপথ নিয়ে বিয়ে করলেও আদতে সবাই একসঙ্গে জীবেনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে না।  অনেকেই শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের দিকে হাটে। তবু মানুষ ভালোবাসে, বিয়ে করে, সংসার সাজায়, বিচ্ছেদ করে আবার নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বর্তমানে এভাবে আর হয়তো বলা যাবে না। কারণ দেশে বিয়ের হার কমছে।  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দেশে বিয়ের হার কমেছে। পাশাপাশি কমেছে তালাকের হারও। ২০২৩ সালে দেশে বিয়ের হার ছিল (প্রতি হাজারে) ১৫.৭, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮.১। আর ২০২১ সালে ছিল ১৩.৫।   অন্যদিকে তালাক দেওয়ার হারও কমে ১.১ শতাংশ হয়েছে, ২০২২ সালে যা ছিল ১.৪ শতাংশ। ২০২১ সালে এ হার ছিল ০.৭ শতাংশ। বিবিএসের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালে বিয়ে বেশি হওয়ার বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ২০২০-২১ সময়কালে করোনা মহামারির কারণে অনেক বিয়েশাদি হয়নি।  করোনা-পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে তাই বিয়ের হার বেড়ে গিয়েছিল। ২০২৩ সালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় তা কমেছে। গ্রামে তালাক বেশি বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, শহরে বিয়ের হার কম। ২০২৩ সালে ছিল প্রতি হাজারে বিয়ে ১২, গ্রামে এই হার ১৬.৮। ২০২২ সালে শহরে বিয়ের হার ছিল ১৩.৮ আর গ্রামে ১৯.৫।  আবার অপরদিকে তালাকের হার গ্রামে বেশি, ২০২৩ সালে ছিল ১.১ শতাংশ। এর আগের বছর ছিল ১.৪ শতাংশ। আর শহরে এ হার ০.৯ শতাংশ, এক বছর আগে ছিল ১.০ শতাংশ।  তালাকের কারণ বিবিএসের জরিপের দেখা যায়, তালাকের বড় কারণ বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক। জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ২৩ শতাংশ এই কারণ দেখিয়েছেন। এর পর রয়েছে দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতাকে কারণ হিসেবে বলেছেন ২২ শতাংশ। ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অক্ষমতা অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদিও রয়েছে তালাকের কারণের তালিকায়।
২৮ মার্চ, ২০২৪

মেহেরপুরে ৫ ঘণ্টায় ১ তালাক
দেশে তালাকের হার বাড়ছে। এই হারটা রীতিমতো ভয়াবহ। দেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুরে প্রতি ৫ ঘণ্টায় ১টি তালাক হচ্ছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই জেলাতে তালাক হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ৫টি করে। মেহেরপুর জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে জেলাতে মোট ২১শ বিবাহের পাশাপাশি ১৯২৯টি তালাক রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এই চিত্রটিই উদ্বেগের।  একাধিক নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে তালাকের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকের অতিরিক্ত ব্যবহার ও অপব্যবহার। স্ত্রীর পিতা-মাতার স্বামীর পরিবারে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের প্রবণতা। সঠিকভাবে স্ত্রীর ভরণ পোষণ করতে না পারা এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়েয় পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া।   মেহেরপুর জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় প্রদিত্ত তথ্যমতে, সদর উপজেলায় ৭ জন, মুজিবনগর উপজেলায় ৪ জন এবং গাংনী উপজেলাতে ১১ জন সরকার নিবন্ধিত নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের (কাজী) মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৮০২টি বিবাহের বিপরীতে ৯৭৪ টি তালাক, মুজিবনগর উপজেলায় ৫৫২টি বিবাহের বিপরীতে ২৩৩টি তালাক এবং গাংনী উপজেলায় ৭৪৬টি বিবাহের বিপরীতে ৭২২টি তালাক নিবন্ধিত হয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ ও এর পরিপেক্ষিতে পরবর্তীতে সংঘটিত তালাকগুলো আইনগতভাবে লিপিবদ্ধ হয় না। বিষয়গুলো আদালতে গড়ায়। ফলে এই পরিসংখ্যান সঠিকভাবে উঠে আসে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২ শীর্ষক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, মেহেরপুর জেলায় ২২ সালে মোট জনসংখ্যা ৭ লাখ ৫ হাজার ৩৫৬ জন। প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে জেলায় বিবাহের হার ২২ এবং তালাকের হার ২.৭। সে অনুযায়ী ২০২২ সালে মেহেরপুর জেলায় মোট বিবাহের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫১৫ এবং তালাকের সংখ্যা ১৯০৪। তবে বিবিএস জরিপের তথ্যে তালাকের পরিসংখ্যান জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সাথে কিছুটা কসামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও মোট বিবাহের তথ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বসির উদ্দিন বলেন, জনশুমারির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের দোরগোড়ায় যাওয়া হয়। সেখানে ভুলের সম্ভাবনা নেই। তবে বিবাহ-তালাকের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে একটি স্যাম্পল এরিয়া নির্ধারণ করে ফল বের করা হয়। এক্ষেত্রে প্রকৃত সংখ্যার সাথে জরিপের ফলে সংখ্যাগত কিছু ব্যত্যয় ঘটতে পারে। বাংলাদেশের ট্র্যাডিশনাল সমাজ মনে করে, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল তৈরি হলে বা বনিবনা না হলে, চট করে একটি বাচ্চা নেওয়া উচিৎ। তাহলে সম্পর্ক টিকে যাবে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তখন সন্তান এই নাটকের অংশ হয়ে যায়, তার জীবন হয়ে যায় বিভীষিকাময়। কারণ, শিশু যদি দেখে বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি, ভুল বোঝাবুঝি, মারামারি বা শীতল সম্পর্ক চলছে, তা সন্তানের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মেহেরপুর পৌর এলাকার একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার খায়রুল ইসলাম (বাশার)। তিনি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৮টি বিবাহ ও ১০০টি তালাক রেজিস্ট্রি করেছেন। আর ২৩-২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৩৩টি বিবাহ ও ৮৫টি তালাক রেজিস্ট্রি করেছেন। খাইরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, জেলাতে তালাকের হার পল্লী অঞ্চলে শহরের তুলনায় প্রায় ৮২ শতাংশ বেশি, এটিই উল্লেখযোগ্য তথ্য। শহরের ধনী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের দম্পতিরা বিভিন্ন কারণে যে বিষাক্ত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও গ্রামের মানুষ সেটা করছেন না। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান তালাকের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে সংসারের বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়ে বাবা-মা মেয়ের সংসারে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করতে চান। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে উঠছে। যার শেষ পরিণতি বিচ্ছেদে গড়াচ্ছে।  মেহেরপুর সদর উপজেলার নিকাহ রেজিস্ট্রার আব্দুল মাবুদ কালবেলাকে জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তার কাছে ১৪৫টি বিবাহ ও ২৪৫টি তালাক রেজিস্ট্রি হয়েছে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত তার মাধ্যমে ১১৩টি বিবাহ ও ২১৬টি তালাক রেজিস্ট্রি হয়েছে।  আব্দুল মাবুদ আরও বলেন, বাল্যবিবাহের কারণে তালাক বেশি হচ্ছে। এ ছাড়াও এ অঞ্চলে তালাকের একটি বড় কারণ হলো স্বামী বিদেশে থাকা। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় প্রবাস থেকে স্বামীর পাঠানো টাকার হিসাব না রাখা, যত্রতত্র খরচ করা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামীর অবর্তমানে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া। মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা কল্লোল কালবেলাকে বলেন, যে সকল বিবাহ বিচ্ছেদ আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে সেগুলোর কারণ অনুসন্ধান করলে স্পষ্ট হয় যে সমাজে নৈতিকতার পতন ঘটেছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। নারী-পুরুষ বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াচ্ছে, স্ত্রী স্বামীকে মানতে বা তার অধিনে থাকতে চাইছেন না। মূলত এসকল কারণেই বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে। বর্তমানে নারীরা অতিরিক্ত স্বাধীনতাকামী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা স্বাবলম্বী হতে চায়, এবং স্বাবলম্বী হতে যেয়ে অনেকেই অনৈতিক পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকে আবার প্রবাসে থাকা স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্বামীর পাঠানো টাকা তসরুপাতসহ পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। অপর এক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বলেন, মূল কথা হলো, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস হারিয়ে গেলে তা একটি অস্বাস্থ্যকর ও লোক দেখানো সম্পর্কে পরিণত হয়। তখন সন্তান, দায়-দায়িত্ব সব কিছুই ঠুনকো হয়ে পড়ে। সম্পর্কটা হয়ে যায় সাংঘর্ষিক। নানা রকম আলাপ-আলোচনা করেও যখন সমন্বয় করা যায় না, তখন বিয়ে বিচ্ছেদ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এম এ মুহিত এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ুর কারণে মেয়েরা অল্প বয়সে যৌবনপ্রাপ্ত হয়। কুড়িতে বুড়ি, অভাবে স্বভাব নষ্ট ও নিরক্ষতা এই মন্ত্রগুলোকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের সহজ সরল অভিভাকরা অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়। আদালতে গেলে লক্ষ্য করা যায় বিবাহবিচ্ছেদের কারণে গ্রামের মানুষের নারী নির্যাতনের মামলা বেশি। যৌতুক প্রথা ও বাল্যবিবাহের কারণে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা আগের থেকে বৃদ্ধি পেলেও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ও অবাধ মেলামেশার সুযোগ পাওয়ার কারণে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। আমরা ছোট থেকে বড় বড় মনিষীদের অনুসরণ করি। বর্তমান প্রজন্মরা অল্প শিক্ষিত ফেসবুক সেলিব্রেটি ও টিকটকারদের অনুসরণ করছে। অনেক গৃহবধূরা ঘরে বসে ফেসবুকে অধিক আয় করার আশায় স্বামীকে উপেক্ষা করে ফেসবুকে রিল বানাতে ব্যস্ত থাকে। এই কারণে অধিকাংশ পরিবারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা রোধ করতে হলে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে এবং সেই সাথে অভিভাবক ও শিক্ষকদের অধিক সচেতন হতে হবে। সরকার বিটিআরসির মাধ্যমে অনলাইন টুলস্গুলো সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সামাজিক অবক্ষয় অনেকটাই কমে যাবে। সেই সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের হার কমে যাবে।
০৪ মার্চ, ২০২৪

স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ৯ মাসের মেয়েকে বিক্রি
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে শিশুসন্তানকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন এক পাষণ্ড। শিশুসন্তানকে ফিরে পেতে মা ওই স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন। গত ৪ জানুয়ারি ফরিদগঞ্জ থানায় তিনি এ অভিযোগ করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সুবিদপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইকবাল হোসেন মুন্সী নামে এক ব্যক্তি তার ৯ মাসের কন্যাসন্তান ইসরাত ইভাকে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এ কথা জানতে পেরে থানায় যান কন্যাশিশুটির মা নয়ন বেগম। তিনি বলেন, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের টাকার জন্য স্বামী ইকবাল আমাকে প্রায়ই মারধর করত। গত ১৬ ডিসেম্বর জোরপূর্বক সে তালাকনামা কাগজে এবং ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি খালি স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নেয়। পরে আমার ও তার তালাক হয়ে গেছে বলে আমার কোল থেকে মেয়েকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। লোক মারফতে জানতে পারি, সে আমার মেয়েকে শাহরাস্তির ওয়ারক এলাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। থানায় অভিযোগ করার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় পার হলেও এখনো মেয়েকে ফিরে পাইনি। জানতে চাইলে ইকবাল মুন্সী বলেন, নয়ন বেগমের অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। তাই তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। সন্তান বিক্রির যে অভিযোগ থানায় করেছে, তা সঠিক নয়। আমি আমার এক দূর সম্পর্কের খালাত বোনের কাছে সন্তানকে লালন-পালন করতে দিয়েছি। এ বিষয়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ দেওয়ার দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

স্বামীকে তালাক দিতেই বিয়ের আশ্বাস দেওয়া প্রেমিক লাপাত্তা!
ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করার সুবাদে প্রায় চার বছর আগে ফারুক মিয়ার (২৮) সঙ্গে এক সন্তানের জননী এক নারীর পরিচয় হয়। এরপর দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই অবস্থায় গত এক বছর ধরে বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক মেলামেশাসহ স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছিলেন।  এ অবস্থায় ফারুক তরুণীকে বলে তার স্বামীকে তালাক দিলে তবেই সে তাকে বিয়ে করবে। ফারুকের কথায় ওই তরুণী তার স্বামীকে গত কয়েক দিন আগে তালাক দেয়। কিন্তু এরপর থেকে ফারুক তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ওই অবস্থায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফারুককে না পেয়ে বিয়ের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে ফারুকের বাড়িতে এসে অবস্থান নেন ওই তরুণী। এদিকে তরুণী আসার পর বাড়ি থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় ফারুক। সরেজমিনে ফারুকের বাড়িতে অবস্থান নিতে ওই তরুণীকে পাওয়া যায়, এ প্রসঙ্গে কথা হলে ওই তরুণিসহ স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা এসব তথ্য জানান। ওই তরুণীর বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার পাইসকা ইউনিয়নের ধরচন্দ্রবাড়ি এলাকায়। অপরদিকে ফারুকের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের সাগুলী গ্রামে। সে ওই এলাকার মো. আবু বকরের ছেলে। বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেওয়া তরুণী বলেন, ফারুক আমাকে বলেছে স্বামী-সন্তান ছেড়ে আসলে আমাকে বিয়ে করবে। আমি তার কথায় সব করেছি। এখন সে আমাকে বিয়ে না করলে আমার মরণ ছাড়া উপায় নাই।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, এর আগেও আরও বেশ কয়েকবার ওই তরুণীকে ফারুক তাদের বাড়ি আসে। আমরা জানতে চাইলে ফারুক জানায় এটা তার প্রেমিকা, বিয়ে ঠিকঠাক। বাবা-মাকে দেখানোর জন্যই নিয়ে আসি।  স্থানীয়রা আরও জানান, বাড়িতে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে তরুণীকে শারীরিক ও অমানুষিকভাবে চরম নির্যাতন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে ফারুকের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে কথা হয় তার মা মোছা. সেলিনা আক্তারের সঙ্গে। সেলিনা বলেন, আমরা কোনো নির্যাতন করছি না। এগুলো মিথ্যা কথা। আমার ছেলে কোথায় আছে বলতে পারি না। এই মেয়ে অবিবাহিত হলে চিন্তা করে দেখতাম, বিবাহিত মেয়েকে জীবনেও আমার ঘরের বউ করব না। তবে এর আগেও ছেলের সঙ্গে ওই তরুণীর বাড়িতে আসার বিষয়টি স্বীকার করেন ফারুকে মা। এ বিষয়ে জাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল হক ঝন্টু বলেন, ওই মেয়ে গতকাল আমার পরিষদে এসেছিল। সবকিছু শোনার পর এবং মেয়ের কাছ থেকে কিছু প্রমাণ দেখার পর ছেলের অভিভাবকে উভয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা বলি। কিন্তু বিবাহিত হওয়ায় এই শর্তে তারা রাজি হয়নি। পরে আমি মেয়েকে আইনের আশ্রয় নিতে বলি।  এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

সরকারি চাকরি পেয়ে ভুলে গেলেন স্ত্রীকে, দিলেন তালাক
সরকারি চাকরি পেয়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বরগুনার আল মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে মামলা করেছেন স্ত্রী বিথি (ছদ্মনাম)। জানা যায়, এক যুগ আগে ভালোবাসার সম্পর্ক হয় গৌরনদী শহরের আল মাহমুদ ফয়সাল ও বরগুনার মেয়ে বিথির (ছদ্মনাম) সঙ্গে। দুজনই পড়াশোনা করতেন বরিশাল রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক ৬ মাস না পেরোতেই ভালোবাসার সম্পর্কে রূপ নেয় ফয়সাল বিথির সম্পর্ক। ২০১৩ সালে ডিপ্লোমা শেষ করেন একইসঙ্গে। তারপর বিএসসি গ্র্যাজুয়েশন নিতে ২০১৫ সালে ভর্তি হন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।  ফয়সাল লেখাপড়া করত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে। আর বিথির বিষয় ছিল কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০২০ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হওয়ার আগেই দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০১৯ সালে বিয়ে করেন ফয়সাল এবং বিথি। ভালোবাসার প্রথম দিকে মেয়ে পক্ষের মা বাবা রাজি না থাকার কারণে ভালোবাসার সম্পর্ককে স্থায়ী সম্পর্কে রূপান্তর করার জন্য একটু তড়িঘড়ি করেই বিয়েটা করে নেন বিথি এবং ফয়সাল।  দুই পরিবার থেকেই মেনে নিয়েছিলেন তাদের বিয়ের সম্পর্ক। লেখাপড়া চলাকালীন অনুষ্ঠান করে বিথিকে তার স্বামীর ঠিকানায় উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মেয়ের মা-বাবা। কিন্তু বিপত্তি জানায় ফয়সাল এবং ফয়সালের পরিবার। ফয়সালের পরিবার বিথির পরিবারকে জানায়, এখন যখন লেখাপড়া করছে তো লেখাপড়া শেষ করুক তারপর উঠিয়ে আনব আপনাদের মেয়েকে। ২০২০ সালে দুজনের বিএসসি শেষ হওয়ার পর আবারও মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে উঠিয়ে দিতে চান বিথির মা-বাবা। কিন্তু তখনও বিপত্তি প্রকাশ করে ফয়সাল এর পরিবার। তারা বলেন, ছেলে সবে মাত্র লেখাপড়া শেষ করল, একটা চাকরি হোক তারপর অনুষ্ঠান করে আমাদের পুত্রবধূকে উঠিয়ে আনব। এমনটাই সাংবাদিকদের জানান বিথির বাবা বজলুর রহমান। তারপর চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকেন দুজনেই।  অনেক চেষ্টার পর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে নেছারাবাদ পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগদান করেন মো. মাহমুদ আল ফয়সাল। চাকরিতে যোগদান করার পর বিয়ের অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন ফয়সাল ও বিথির পরিবার।  ফয়সাল চাকরিতে যোগদানের পর প্রায়ই আসতেন শ্বশুর এর বাসায় এমনটাই বলেন বিথি ও বিথির পরিবার। বিপত্তি শুরু হয় ৫ নভেম্বর ২০২৩ সকালে। স্বাভাবিক দিনের মতো ফয়সাল তার শ্বশুর বাড়ি থেকে সকাল বেলা কর্মস্থলে চলে যান।  পরে বিথি বিছানা ঠিক করতে গিয়ে একটা হলুদ খাম দেখতে পায় ফয়সালের বালিশের নিচে। খামটি খুলে বিথি দেখেন তার স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। পরে বিথি তার মায়ের ফোন থেকে ফয়সালকে কল দিতে থাকে, কিন্তু কোনোভাবে ফয়সালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না বিথি। এই ব্যাপারে বিথি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি জানি না কী আমার অপরাধ। ফয়সাল যেই সময় আমার কাছে যা চাইত ও যেভাবে চলতে বলত আমি সব সময় সেই রকম চলতাম। আমরা দুজন যখন ঢাকাতে ভর্তি হই তখন ওর ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফিসহ ওর যাবতীয় খরচ আমি বহন করেছি। আমার টিউশনির টাকা পুরোটা ফয়সালের হাতে তুলে দিতাম। বিথির বাবা জানান, আমাদের মেয়ের সঙ্গে হওয়া সকল অন্যায়ের বিচার চাই।  এই ঘটনার পরে বিথির সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছে বিথি। যার মামলা নম্বর ৫৭৩/২০২৩। মামলা সূত্রে জানা যায়, ফয়সাল বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করে। স্ত্রীর পরিবার কমবেশি ফয়সালকে টাকা-পয়সা দিতেন। এরই মধ্যে ফয়সাল পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরে। ফয়সাল এ বছর ১৫ অক্টোবর তার স্ত্রীকে রেজিস্ট্রি তালাক দিয়ে সেই তালাক গোপন রেখে ১৯ অক্টোবর হতে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বরগুনার শ্বশুরের বাসায় তার স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা করে। ৫ নভেম্বর সকালে ফয়সাল তার শ্বশুরের বাসা থেকে তাদের বাড়ি যাওয়ার সময় শ্বশুরের বাসায় যেখানে ফয়সাল ঘুমাতেন সেখানের বালিশের নিচে একটি খামে তালাকের নোটিশ গোপনে রেখে যায়।  এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফয়সালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কালবেলাকে বলেন, মামলায় উল্লেখিত বিষয়গুলো মিথ্যা। তাকে ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে। ওই মেয়ে আমার সঙ্গে সংসার করতে ইচ্ছুক, কিন্তু আমি ইচ্ছুক না।
২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

বিচ্ছেদের পর ২০ লিটার দুধ দিয়ে স্বামীর গোসল
দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনে ২০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করেছেন আকতারুল ঢালী (৪০) নামের এক ব্যক্তি। দীর্ঘ এক যুগ সংসার করার পর স্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) তার স্ত্রী ওমেনুর বেগমকে পঞ্চমবারের মতো পাঠানো তালাকনামা পেয়ে অবশেষে সেই কাগজে স্বাক্ষর করেন তিনি। স্বাক্ষরের পরের দিন ২২ ডিসেম্বর মনের আনন্দে তার নিজ বাড়িতে ২০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করেন আকতারুল। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আকতারুল ঢালী বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের আলতাফ ঢালীর ছেলে। জানা গেছে, ২০১২ সালে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের প্রসাদনগর গ্রামের ইস্রাফিল ইজারাদারের মেয়ে ওমেনুর বেগমের সাথে দুই পরিবারের সম্মতিতে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আকতারুল। আকতারুল ও ওমেনুর বেগমের আঁখি মনি (১১) ও আরিফুল ঢালী (৬) নামের একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তাদের সংসারে নানা বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হতে থাকে। এভাবেই চলতে থাকে তাদের সংসার। প্রায় এক যুগের পথচলায় স্ত্রী নিকট থেকে পাঁচবার তালাকনামা পেয়েছেন তিনি। প্রথম চারবার স্বাক্ষর না করলেও ৫ম বার তিনি তালাক মেনে স্বাক্ষর করে দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন। আকতারুল ঢালীর মা বলেন আমেনা বেগম বলেন, তাকে কখনো অন্যের মেয়ের মতন করে দেখি নাই। সব সময় নিজের মেয়ের চোখে দেখেছি। বারবার চলে যাওয়ার পরেও ছেলেকে ওই বউ আমি ঘরে এনে দিয়েছি। আমার ছেলে এবার এক ব্যক্তি কর্মী উদ্যোগ নিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করে ঘরে উঠেছে। আমার ছেলে এবং আমার নাতির জন্য দোয়া করবেন সকলে। প্রতিবেশী কাইয়ুম শেখ বলেন, এমন ঘটনা আগে কখনো আমি দেখিনি। খবর পেয়ে দেখতে এসেছিলাম। তার বউকে ঘরে রাখার জন্য সে অনেক চেষ্টা করেছে বলে জানি। এ বিষয়ে আকতারুল বলেন, আমি কষ্টের সাথে আনন্দিতও। আমি ২০১২ সালে বিয়ের পর থেকে আমার স্ত্রীর সাথে সংসারে নানা ঝামেলায় জর্জরিত। সে আমার সংসারে থেকেও অনেকবার ছেড়ে চলে গেছে। সে আমাকে এর আগেও চারবার ডিভোর্সের কাগজ আমার কাছে পাঠিয়েছে। আমার দুটি সন্তানের দিকে তাকিয়ে আমি কোনোদিন সেই কাগজে স্বাক্ষর করি নাই। আমি তাকে অনেকবার বুঝিয়ে সংসারে ফিরিয়ে এনেছি। কিন্তু সে কখনো আমার সংসারে সুখী ছিল না বলে দাবি করে। আমি অনেক নির্যাতন সহ্য করেও সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এবার সে আমাকে পঞ্চমবারের মতো ডিভোর্সের কাগজ বাড়িতে পাঠিয়েছে। আমি আর তার এ নির্যাতন সহ্য করতে রাজি না। তাই আমি তার পাঠানো ডিভোর্সের কাগজে স্বাক্ষর করে দিয়েছি। আমি যেন আমার দুটি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মতো মানুষ করতে পারি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

মাইকে ঘোষণা দিয়ে বউকে তালাক দিলেন আ.লীগ নেতা
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন জাকির হোসেন জেকে নামের এক যুবক। তিনি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এমন ঘটনায় এলাকাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) আসরের নামাজের পর জেলার মেলান্দহ উপজেলার চরবাণী পাকুরিয়া ইউনিয়নের রান্ধুণীগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হওয়ার পর জাকির হোসেন মসজিদে ঢুকে মাইকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর স্ত্রীকে তালাক দেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পারিবারিক কলহ ও স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্ত্রীকে তালাক দেন তিনি। তালাক দেওয়া জাকির হোসেন জেকে স্থানীয় মৃত নূরুল ইসলাম ছেলে। মাইকে তালাকের ঘোষণার পরপরই একটি ভিডিও বানিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আপলোড করে জাকির হোসের জেকে। এতেই শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। পরে মানুষের নেতিবাচক কমেন্টের পর ভিডিওটি ডিলিট করতে বাধ্য হয় তিনি। স্থানীয়রা জানান, আগেও মৌখিকভাবে সে তার স্ত্রী তালাক দিয়েছে। এবার মাইকে ঘোষণা দেওয়ার মতো কাণ্ড ঘটিয়েছে জেকে। এ বিষয়ে জেকে জানান, শরিয়াহ মোতাবেক তালাক দিয়েছি আমি। কয়েক দিনের মধ্যেই আদালতের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ পাঠাব। অন্যদিকে জেকের স্ত্রী তালাকের বিষয়টি লোক মুখে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে অভিযোগ করে বলেন, আমি গত ১০ বছরে স্বামীর নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি। জেকের অসামাজিক কার্যকালাপে বাধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। মসজিদের ইমাম ও সভাপতি জানান, মসজিদের মাইকে এমন কাণ্ড ঘটানো তার ঠিক হয়নি। এরপর থেকে মসজিদের মাইক ব্যবহারে কঠোরতা পালন থাকবে।   দাম্পত্য জীবনে এ দম্পাতির ৮ বছর ও ৫ বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে। এদিকে স্বামীর অধিকার এবং বিচার প্রার্থনা করে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী জেকের স্ত্রী।
১২ ডিসেম্বর, ২০২৩

আদালতের মাধ্যমে তালাক দেবেন যেভাবে
ইসলামী শরিয়তে তালাক হচ্ছে সর্বনিম্ন পর্যায়ের বৈধ কাজ। আমরা মুসলিম হিসেবে দাম্পত্য জীবনের ভাঙন যেন না হয়, সেদিকে পরিপূর্ণ সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। তালাকের মাধ্যমে যদিও স্বামী ও স্ত্রী মানসিকভাবে সাময়িক স্বস্তি পায়; কিন্তু তাদের যদি কোনো সন্তান থেকে থাকে, তাহলে সেই সন্তান তার মা-বাবার পরশমাখা আদর-স্নেহ সবকিছু হারিয়ে এক ভঙ্গুর মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে।  যে কোনো যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। তবে বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর করতে হলে আইন অনুযায়ী কিছু পদ্ধতি মানতে হবে। আইন অনুযায়ী তালাকের নানা দিক নিয়ে কালবেলা অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা জজকোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আইন মেনে কীভাবে একটি তালাক কার্যকর হয়, তার খুঁটিনাটি তথ্য। কালবেলা অনলাইনের পাঠকের জন্য তার চম্বুকাংশ তুলে ধরা হলো। আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, তালাক সাধারণত একজন আইনজীবী মারফত নোটিশ পাঠানোর মাধ্যমে হতে পারে। কিংবা বিয়ের কাবিননামায় ১৮ নম্বর কলামে যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাকের অনুমতি না দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী একজন আইনজীবীর মাধ্যমে পারিবারিক আদালতে বিয়েবিচ্ছেদের মোকদ্দমা দায়েরের মাধ্যমে তালাক নিতে পারেন। তালাকের নোটিশ পাঠানোর বেলায় কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্বামী ও স্ত্রী সবার ক্ষেত্রেই তালাকের নিয়ম প্রায় এক। দেশে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে আদালত থেকে তালাকের আবেদন করতে পারেন, কিন্তু স্বামীর জন্য তা কিছুটা সীমিত। যেসব কারণে স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯-এর অধীনে স্ত্রী ৯টি কারণের যে কোনো এক বা একাধিকের ভিত্তিতে আদালতে বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কারণগুলো হলো— ১. স্বামী চার বছরের বেশি সময় নিরুদ্দেশ থাকলে; ২. দুই বছর ধরে স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে; ৩. ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙ্ঘন করে স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করলে; ৪. সাত বছর বা তার বেশি সময় স্বামী কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে; ৫. কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে স্বামী তার দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে; ৬. বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা করার সময় পর্যন্ত স্বামীর পুরুষত্বহীনতা বজায় থাকলে; ৭. স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা মারাত্মক যৌনব্যাধিতে আক্রান্ত থাকলে; ৮. নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়ে থাকলে অথবা সাবালকত্ব লাভের পর, অর্থাৎ ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর স্ত্রী বিয়ে অস্বীকার করলে (কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকলে এ রকম মামলা করা যাবে না)— ৯. স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করলে, যেমন—স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন করলে, স্বামীর কোনো অবৈধ সম্পর্ক থাকলে, নৈতিকতাবর্জিত জীবনযাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করলে, স্ত্রীর অমতে তার সম্পত্তি হস্তান্তর করলে কিংবা স্ত্রীকে তার সম্পত্তির ওপর বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা দিলে, স্ত্রীকে তার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেওয়া, পবিত্র কোরআনের নির্দেশে একাধিক স্ত্রীদের সঙ্গে সমান ব্যবহার না করলে। আদালতের মাধ্যমে স্বামী যেসব কারণে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন  ১. তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে।  ২. খোলা তালাকের মাধ্যমে তালাক দিতে হবে। শুধু মুখে তিন তালাক উচ্চারণ করলেই তালাক কার্যকর হয় না। আবার লিখিতভাবে তালাক দিলেও সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর হবে না। আইনের বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করার পর তালাক কার্যকর হবে। তালাক আইন অনুযায়ী তালাক হবে। ১. স্বামী কর্তৃক তালাক  তালাক দেওয়ার অধিকার বা ক্ষমতা স্বামীর সবচেয়ে বেশি। কোনো কারণ ছাড়া স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। ২. স্ত্রী কর্তৃক তালাক   তালাক দেওয়ার অধিকার বা ক্ষমতা স্ত্রীর কম। আইনে উল্লিখিত কারণ ব্যতীত স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না। তবে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্বামীর মাধ্যমে স্ত্রীকে বিয়েবিচ্ছেদের ক্ষমতা দেওয়া থাকলে (তালাক-ই-তৌফিজ) স্ত্রী তালাক দিতে পারবে। ৩. পারস্পরিক সম্মতিতে তালাক ক. খুলা—স্ত্রী তার স্বামীকে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তালাক দেওয়ার জন্য রাজি করাবেন। খ. মুবারত—স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পারস্পরিক সম্মতিতে তালাকের সিদ্ধান্ত নেওয়া। ৪. আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করে তালাক নেওয়া। স্বামী তার স্ত্রীকে বা স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দেবেন যেভাবে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বা স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে চাইলে যে কোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাসম্ভব নোটিশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে পাঠাতে হবে এবং ওই নোটিশের একটি অনুলিপি (নকল) স্ত্রীকে বা স্বামীকে পাঠাতে হবে। একই আইনের ৭(২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নোটিশ দেওয়ার এ বিধান লঙ্ঘন করেন, তবে তিনি এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে স্বামী যদি নোটিশ প্রদান না করে তাহলে শাস্তি পাবে ঠিকই, কিন্তু তালাক বাতিল হবে না। ৭(৪) ধারা অনুযায়ী, নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবেন। সালিশি পরিষদ যদি সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয় এবং স্বামী বা স্ত্রী যদি ৯০ দিনের মধ্যে তালাক প্রত্যাহার না করে, তবে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে। এই ৯০ দিন স্বামী তার স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে। ৭(৩) ধারামতে, চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ দেওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। কিন্তু তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী যদি অন্তঃসত্ত্বা থাকে, তাহলে ৭(৫) ধারা অনুযায়ী গর্ভাবস্থা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৯০ দিন পর তা কার্যকর হবে। মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪-এর ৬ ধারামতে, বিয়ের তালাক ও রেজিস্ট্রি করতে হয়। কাজী নির্ধারিত ফি নিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করবেন এবং ফি ছাড়া প্রত্যয়ন কপি দেবেন। এভাবেই তালাক কার্যকর হয়।
১৯ নভেম্বর, ২০২৩
X