বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ০৮:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর কাছাকাছি থেকেও ক্ষমতাচর্চায় আগ্রহী হননি ড. ওয়াজেদ মিয়া’

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্মৃতি পাঠাগারে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছবি : সংগৃহীত
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্মৃতি পাঠাগারে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হয়েও, রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর সবচেয়ে কাছাকাছি থেকেও কোনোদিন ক্ষমতাচর্চায় আগ্রহী হননি ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী। যদিও বৈবাহিক সম্পর্ক বাদেই বাঙালি জাতির এক গর্বিত ও আলোকিত মানুষের নাম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন এই পরমাণু বিজ্ঞানী। ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে থেকেও তার নির্মোহ জীবনযাপন তাকে জাতির কাছে করেছে চির অমর।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) মোহাম্মদপুর টাউন হলে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্মৃতি পাঠাগারে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ব্যক্তিজীবনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে অভ্যস্থ এই বিজ্ঞানীর দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা হোসেন পুতুল। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হয়েও, রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর সবচেয়ে কাছাকাছি থেকেও কোনোদিন তিনি ক্ষমতাচর্চায় আগ্রহী হননি। ক্ষমতার উত্তাপের বিপরীতে তিনি ছিলেন স্থির, অচঞ্চল, নিভৃতচারী ও নিষ্কলুষ একজন। নিজের মেধা, শ্রম ও যোগ্যতায় তিনি ক্রমে ক্রমে হয়ে উঠেছেন সত্যিকার আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষের প্রতিচ্ছবি।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুন্নাহার লাইলী, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. শৌকত আকবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রমুখ।

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে মন্ত্রী নানক বলেন, তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। যে মানুষটি আমাকে এত পছন্দ করতেন তার শেষ যাত্রায় আমি রংপুর গিয়েছিলাম।

মন্ত্রী বলেন, ১৯৬২ সালে ড. ওয়াজেদ মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। শুধু পড়াশোনা নয় রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার সময় থেকেই ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট হতে শুরু করেন রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদশের্র প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৬১-৬২ শিক্ষা বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন । ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে এবং ওই বছরেই জেনারেল আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হন তিনি।

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সময়টা ১৯৬৭ সাল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ। ছয় দফা আন্দোলনের কারণে গোটা দেশে তখন বিরাজ করছে ভীতিকর পরিস্থিতি। এ রকম পরিস্থিতিতে ১৭ নভেম্বর পবিত্র শবেবরাতের রাতে বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের পছন্দের পাত্র, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেধাবী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শেখ হাসিনা। বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বাবা শেখ মুজিব জেলে থাকায় তাদের বিয়ের আয়োজনটি ছিল খুব সাদামাটা। বিয়ের পরদিন জেলগেটে ওয়াজেদ-হাসিনা নবদম্পতিকে দোয়া করেন বঙ্গবন্ধু। নতুন জামাইকে সে সময় তিনি একটি রোলেক্স ঘড়ি উপহার দেন। এই উপহার আজীবন সযত্নে রেখেছিলেন ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।

মন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭১ সালে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এর আগে-পরের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে তার উপস্থিতি ছিল। তিনি সর্বদা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ড. ওয়াজেদ মিয়াকে বিজ্ঞানী হিসেবেই তাকে দেখতে চেয়েছেন। রাজনীতিতে তাকে কখনোই জড়ানোর চেষ্টা করেননি। ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সাত বছর নির্বাসিত জীবন কাটান। ৪০ বছরের বিবাহিত জীবনে ড. এম এ ওয়াজেদের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি তার পরিবারের পাশে থেকে যে ধৈর্য, সাহস ও সেবার পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন, তা অসাধারণ।

নানক বলেন, বিজ্ঞান নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন ওয়াজেদ মিয়া। প্রথিতযশা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপিত হবে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, বিশ্বমাঝে বাংলাদেশ বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার নিরলস পরিশ্রম অব্যাহত রেখেছিলেন আমৃত্যু। তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য সামনে রেখে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয় ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশকে বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক ডিজিটাল রাষ্ট্রে পরিণত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও তৎপরবর্তীকালের ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে মন্ত্রী নানক বলেন, আজকে যারা প্রতিনিয়ত সরকারের সমালোচনা করেন তাদের কাছে প্রশ্ন কোন সময়টা আমাদের চেয়ে ভালো ছিল। আমি বলব তারা ভুল পথে আছে। লন্ডন থেকে নির্দেশনা নিয়ে চলা দলটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত নিতেই থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইলিয়াস কাঞ্চনের অসুস্থতায় শাবনূরের আবেগঘন বার্তা

যুদ্ধের উসকানি দিয়ে শান্তির প্রতীক হওয়া যায় না, ট্রাম্পকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাবার সঙ্গে আলোর শেষ কথা—আমরা আটকে গেছি

লাইভে এসে সংসদ ভেঙে দিলেন পালিয়ে যাওয়া মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড : দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের

ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থীকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

মেসি নন, নতুনদের নিয়েই পুয়ের্তো রিকোর মুখোমুখি আর্জেন্টিনা

বিএনপি কোনো দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় না : কফিল উদ্দিন 

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান হাসপাতালে ভর্তি

পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে : পরওয়ার

১০

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : লায়ন ফারুক

১১

ভারতের হারে এশিয়ান কাপ খেলার স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের

১২

সাবেক স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার

১৩

পর্তুগালসহ যেসব দল আজ নিশ্চিত করতে পারে বিশ্বকাপের টিকিট!

১৪

এক দিনের ব্যবধানে দেশে স্বর্ণের দাম আরও বাড়ল

১৫

সুস্থ থাকতে খেলাধুলার বিকল্প নেই : মেয়র ডা. শাহাদাত

১৬

ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর নেওয়ায় প্রতিবন্ধীর প্রতিবাদ

১৭

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে মিরাজদের সামনে বিশাল লক্ষ্য

১৮

চাকসুতে এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ

১৯

গুমের শিকার পরিবারগুলোর মানববন্ধন / স্বজনদের ফেরত দিন, না পারলে জড়িতদের বিচার করুন

২০
X