চট্টগ্রামে মার্কেটে তিল ধারণের ঠাঁই নেই
ঘনিয়ে এলো ঈদ। চট্টগ্রামের বিপণিবিতানগুলোতে বাড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্রেতাদের আনাগোনা। সোমবার (৮ এপ্রিল) নগরের নিউমার্কেট, জহুর হকার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, লালখান বাজার, জিইসি, চকবাজার এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
অভিজাত শ্রেণির ক্রেতাদের ভিড় মিমি সুপার মার্কেটে
জমকালো শাড়ি, পোশাক ও গহনার টানেই অভিজাত শ্রেণির ক্রেতারা ভিড় করেছেন মিমি সুপার মার্কেটে। মার্কেটটি ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে ঈদ উপলক্ষে নতুন শাড়ি, থ্রিপিস, বাচ্চাদের পোশাক, গয়না, জুতার বিপুল সম্ভার রয়েছে। তরুণী, মহিলা ও শিশুদের পোশাকের আধিক্য বেশি। এ ছাড়া শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবিসহ অভিজাত শ্রেণির পুরুষদের পোশাকের সম্ভারও রয়েছে। বিভিন্ন দোকানে মহিলা ও শিশুদের পোশাক কেনাকেনা চলছে। থ্রিপিস ও জুতার দোকানেও ছিল ভিড়।
মিমি সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, শিশু, তরুণী ও মহিলাদের পোশাক বেচাকেনা ভালো হলেও শাড়ির ব্যবসা খারাপ। শাড়ি এখন বিয়ে-পার্টি নির্ভর হয়ে গেছে।
বিক্রেতারা বলেন, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার বেচাকেনা ভালো হয়েছিল। তবে শনিবার থেকে ক্রেতা কমে গেছে। আমাদের দোকান হচ্ছে এক দামের। তারপরও আমরা শাড়ির দাম অনেক কমিয়ে নির্ধারণ করেছি। কারণ এখন তো প্রতিযোগিতার বাজার। তাই দামটা নাগালের মধ্যে রেখেছি।
তারুণরা ভিড়ছেন ফিনলে স্কয়ারে
ওয়েস্টার্ন পোশাকের বিপুল সমাহারের কারণে তরুণ-তরুণীরা ভিড়ছেন নগরীর বিপ্লব উদ্যান সংলগ্ন ফিনলে স্কয়ারে। দুই নম্বর গেট এলাকার অভিজাত এই শপিংমলে গিয়ে দেখা যায়, তরুণ-তরুণীদের ফ্যাশনেবল এবং ওয়েস্টার্ন পোশাকগুলোর ভালো কালেকশন রয়েছে। আরও আছে মেয়েদের ভারতীয়, পাকিস্তানি বাহারি পোশাক। তবে ক্রেতাদের মধ্যে সুতির কাপড়ের চাহিদা বেশি। পোশাকগুলো একটু বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ছেলেদের শোরুমে দেখা যায় শার্ট, প্যান্ট, টিশার্ট, পাঞ্জাবিসহ ফতুয়ার সমাহার রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শৈল্পিকের এক বিক্রেতা বলেন, ২৭ রোজা শেষ হলো। ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এখনো বেচাবিক্রি আশানুরূপ শুরু হয়নি। তিনি বলেন, ছেলেদের পাঞ্জাবির মধ্যে সিকুয়েন্স ফেব্রিকের পাঞ্জাবি বেশি চলছে। পাশাপাশি দু’একটা ডিজিটাল প্রিন্টের বিক্রি হচ্ছে। শার্ট, টিশার্ট, ফতুয়ার বেচাবিক্রি কম। এখানে ছেলেদের পাঞ্জাবি ১২৯০ টাকা থেকে ৪২৫০ টাকায় চাওয়া হচ্ছে, শার্ট ১০৯০ টাকা থেকে ১৭৫০ টাকায় এবং টিশার্ট ৫৯০ থেকে ১৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে অলস সময় পার করছে জুতা, কসমেটিকস, হিজাব ও বোরকার দোকানগুলো। এসব দোকানের কর্মচারীরা কেউ কেউ বসে বসে মোবাইল ফোন টিপছেন, কেউ বা আড্ডা দিচ্ছেন।
নারীদের প্রিয় মার্কেট সেন্ট্রাল প্লাজা
নগরীর জিইসি মোড় সেন্ট্রাল প্লাজায় ঘুরে দেখা যায়, সাজানো রয়েছে দেশি-বিদেশি কাপড়, স্যান্ডেল ও ব্যাগের সমাহার। তবে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা নেই। এখানে মিলছে দিল্লি, বোম্বের হাতের কাজ করা পোশাক। পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তানের তৈরি আগানুর, সাদা বাহার, নুরস, বিন হামিদ গুলবানু কিংবা শেভরনের নাম করা থ্রিপিস। এগুলোর মূল্য ৭শ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে। তবে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অতীতের তুলনায় গ্রাহকরা খরচ কাটছাঁট করে কেনাকেটা করছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বাহারি ডিজাইনের দেশি-বিদেশি থান কাপড়, থ্রিপিস, ভ্যানিটি ব্যাগ, মেয়েদের জুতা সংগ্রহ বেশি এ মার্কেটে। রয়েছে বেশ কিছু নামকরা টেইলার্সও।
মনির হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, দেশীয় থ্রিপিস, থান কাপাড়ের পাশাপাশি এখনে ভারত ও পাকিস্তানি থ্রিপিস ও থান কাপড়ের সংগ্রহ রয়েছে। রয়েছে চীন, থাইল্যন্ড ও ভিয়েতনামের তৈরি বেশ কয়েকটি জুতা ও ব্যাগের দোকান।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেখা গেছে, মা দীর্ঘদিন ধরে কেনাকাটা করেছে। মা, মেয়ের দেখাদেখি তৃতীয় প্রজন্মে এসে নাতি-নাততিও কেনাকেটা করছে। তাই এ মার্কেটকে বলা হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মার্কেট।
সব শ্রেণির ক্রেতার পছন্দ রিয়াজউদ্দিন বাজার
মাথার টুপি, পায়ের জুতা, ক্রোকারিজ, কাঁচা পণ্য, সেমাই-পায়েস সবই মিলে রিয়াজউদ্দিন বাজার। চট্টগ্রামে অনেক মার্কেট গড়ে ওঠলেও এ মার্কেটের কদর কমেনি। সব শ্রেণির মানুষের কাছে ঈদের কেনাকাটায় রিয়াজউদ্দিন বাজারের জুড়ি নেই।
দেখা গেছে, অলি-গলি আর দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। দম ফেলার ফুরসত নেই ব্যবসায়ীদেরও। ছোট-বড় বিভিন্ন মার্কেটের সমন্বয়ে প্রায় ১০ হাজার দোকান রয়েছে এখানে। এখানে চাহিদা রয়েছে বেনারসি ও কাতানের। থ্রি-পিস, লুঙ্গি, জুতো, প্যান্ট, জুয়েলারি, প্রসাধনীসহ পাইকারি ও খুচরা পণ্যের বিপুল সম্ভার রয়েছে। গৃহসজ্জা, প্লাস্টিক সামগ্রী, চেয়ার-টেবিল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস সবই মিলছে রিয়াজউদ্দিন বাজারে। এখানে আসা ক্রেতারাও কেউ ফিরছেন না খালি হাতে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী তাহের বলেন, বেনারসি ও কাতানের চাহিদা বেশি। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা শাড়ি, থ্রিপিসের কদর বেশি।
ব্র্যান্ডের পণ্য বালি আর্কেডে
আফরোজা, তাহিয়া, আশা তিন কাজিন বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে পাঁচটি পোশাক ও কিছু ব্র্যান্ডের কসমেটিক কিনেছেন। যেগুলো নগরীর চকবাজার বালি আর্কেড শপিংমলে পাওয়া যায়। তাই তারা নগরীর কাট্টলী এলাকা থেকে শপিং করতে এসেছেন চকবাজারের অভিজাত শপিংমল বালি আর্কেডে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ মার্কেটে ২৭৫টা দোকান আছে। বেশিরভাগই তরুণদের। পুরুষদের মত সমপরিমাণ নারী উদ্যোক্তারা এখানে ব্যবসা করছে। ভালো ব্র্যান্ডের পণ্য সব শ্রেণির মানুষের জন্য আছে। এক ছাদের নিচে সব কিছুই পাবে। এ ছাড়া ক্রেতাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিজস্ব সিকিউরিটির পাশাপাশি চকবাজার থানা পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিচ্ছেন।
দেখা গেছে, তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যবসা করছেন অনলাইন ও অফলাইনে। রয়েছে নারী উদ্যোক্তাও।
মো. সাহেদ নামে এক বিক্রেতা বলেন, যারা ব্র্যান্ড ব্যবহার করে তারা এখানে ভালো কালেকশন পাবে স্বল্প মূলে। বিভিন্ন স্টলে দেখা যায়, মেয়েদের পশ্চিমা পোশাকের ভালো কালেকশন। রয়েছে ভারতীয় ও পাকিস্তানি নানারকম পোশাক। এসব পোশাকগুলো অনলাইনেও মিলছে। রেডিমেন্ট পোশাকের মধ্যে সারারা, গারারা, কাফতান, কাফতান, শিপনের গাউনগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।চকবাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক জোন হওয়ায় বেশিরভাগ ক্রেতা শিক্ষার্থী।
মধ্য-নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় হকার মার্কেটে
ছোট একটি দোকানে নানা রঙের পাঞ্জাবির পসরা সাজিয়ে ক্রেতা ডাকছেন হকার মার্কেটের দোকানি মোহাম্মদ আজম। বেছে নেন, দেখে নেন- ভালো মানের পাঞ্জাবিসহ ক্রেতা টানতে নানা বুলি তার মুখে। পছন্দের পোশাক সাধ্যের মধ্যে মিললেই কিনে নিচ্ছেন অনেকে। শুধু ইদ্রিসের দোকান নয় মধ্য-নিম্ন আয়ের মানুষের মার্কেট হিসেবে পরিচিত জহুর হকার মার্কেটের প্রায় প্রতিটি দোকানেই ভিড় ক্রেতাদের। বেতন-বোনাস পাওয়ার পর গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতারা হকার মার্কেটে আসছেন। শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, ছোটদের পোশাক, মেয়েদের টপস, ওয়ান পিস, পর্দা, বেডসিট, বেল্ট কিনছেন ক্রেতারা।
দোকানি মোহাম্মদ আসি বলেন, ১৫ রমজানের পর থেকেই ঈদের কেনাকাটা বেড়েছে। রবিবার অফিস-আদালত খোলার দিন হওয়ায় অন্য দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
ফ্যাশন ও শাড়ি প্রিয় নারী-পুরুষের পছন্দ নিউ মার্কেট বিপনি বিতান
ব্লু মুনে তরুণদের ভিড়। তরুণরা শার্ট, জিন্স প্যান্টসহ গেঞ্জি কিনছেন। দর কষাকষি করছেন তারা। নিউমার্কেট বিপণি বিতান এমন দৃশ্য দেখা যায়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৫০০ উপরে স্টল রয়েছে। নারীদের পোশাক, প্রশাধনী, জুতা, ব্যাগ, জুয়েলারি শপসহ টেইলার্সের দোকান রয়েছে। ছেলেদের ব্র্যান্ডের পোশাকের ভালো ভালো কালেকশন রয়েছে। আরও আছে শিশুদের কালেকশন।
মো. রিদওয়ান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে বেচাকেনা কম দেখে ব্যবসায়ীরা বেশি দাম হাকাচ্ছেন না। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকার মধ্যে মিলছে শাড়ি। দেশীয় তাত, জামদানি, ঢাকা শাড়ির সমাহার রয়েছে। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৫ হাজার টাকা দামে।
বিক্রেতারা বলছেন, দেশীয় তাঁত, জামদানি শাড়ির কদর বেশি নারীদের কাছে। এ শাড়িগুলোর তুলনামূলক দামও বেশি।
নকশি বাংলা শাড়ি ও জামদানি শাড়ির দোকানের বিক্রয় কর্মীরা বলেন, এখনে শাড়ি নেন ফ্যাশন সচেতন নারী বা তরুণীরা। কিছু বিক্রি হয় উপহারের শাড়ি। খুব ভালো ভালো দেশীয় শাড়ির কালেকশন আছে। বিদেশি উন্নতমানের শাড়িগুলোও রয়েছে। বিদেশি শাড়িগুলো এক হাজার থেকে ২০ হাজারের উপরেও আছে।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪