‘এটা অবন্তিকা নয়, এ তো তিল তিল করে গড়ে ওঠা আমার স্বপ্নের লাশ। আমার স্বামীকে নিল, মেয়েকেও নিল। আমি কী নিয়ে বাঁচব, আল্লাহ, তুমি আমারেও নিয়ে যাও।’
গতকাল শনিবার বিকেলে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স থেকে মেয়ে অবন্তিকার লাশ দেখে এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ফাইরুজ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। এ সময় বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। আত্মীয়স্বজনরা বারবার তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আবার কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে মাতম করতে থাকেন।
তাহমিনা শবনম কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘হায় রে অবন্তিকা, তুই আমারে কত বলছিলি মা একটা জিডি করো, মা একটা জিডি করো। আমি বলেছি মা এগুলা করব না। আল্লায় বিচার করবে। আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোরেই নিয়ে গেল! আরে তোরে নিয়ে গেল অবন্তিকা? আমি কত কষ্ট করলাম। আমি এই জন্যই কষ্ট করলাম।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘রাফি, আম্মান, মাহিয়া, লাকি, রিমি তারপর আঁখি, বন্যা, দ্বীন ইসলাম এ ঘটনার জন্য মূল দায়ী। তারা বিভিন্নভাবে আমার মেয়েকে হয়রানি করে আজকের অবস্থার সৃষ্টি করেছে।’
অবন্তিকার মা বলেন, ‘যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে গিয়েও আমার মেয়ে কোনো বিচার পায়নি। উল্টো তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে, অপমান করা হয়েছে। আমার মেয়ে বিচার পেলে আজকের দিনে তাকে চলে যেতে হতো না।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টর সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, বিষয়টির সুরাহার জন্য। আমার মেয়ে যাতে ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করতে পারে, সেটি আর হলো না। ওদের জন্য আমি মেয়ে হারিয়েছি, আমি তাদের বিচার চাই।’
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এটাই বুঝি আমার প্রাপ্য ছিল। একটা বিধবা নারীর প্রাপ্য ছিল। আমি এখন সন্তানহারা। আমি এর বিচার কার কাছে দেব? আমি জীবনে কারও ক্ষতি করি নাই। কুমিল্লা শহরের কেউ বলতে পারবে না আমি কারও ক্ষতি করেছি। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি ১ টাকা ভাগ করে খেতে। আজকে আল্লাহ আমার এত বড় ক্ষতি করল?’