পরনের কাপড় ছাড়া দরিদ্র ৫ পরিবারের সর্বস্ব পুড়ে ছাই
নাটোরে অগ্নিকাণ্ডে দরিদ্র ৫ পরিবারের সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫টি বসতঘর, ৫টি রান্না ঘরসহ ১টি গোয়াল ঘর একেবারেই পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের লোচনগড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে কৃষক আছের উদ্দিন, অটো রিকশাচালক আফজাল হোসেন, রিকশাচালক গোলাম রসুল, ভ্যানচালক আনোয়ার হোসেন ও মো. রাজুর বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘরে থাকা এসব পরিবারের নগদ টাকা, গহনা, আসবাবপত্র ও খাদ্যসামগ্রী পুড়ে যায়। দরিদ্র এই পরিবারগুলো শেষ সম্বলগুলো হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। নাটোর ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ভুক্তভোগী ৫ পরিবারের দাবি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতিবেশী বাচ্চু মিয়া বলেন, দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে এসে দেখি দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। বাড়িগুলো ঘিঞ্জি হওয়ায় নিমৈষেই আগুন সবগুলো ঘরে ছড়িয়ে যায়। আগুনের এত তাপ, কেউ কাছে যেতে পারছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা এসে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।  ভ্যানচালক আনোয়ারের স্ত্রী তিথি খাতুন বলেন, রান্না ঘরের আগুন থেকে গোয়াল ঘর হয়ে সব ঘরে ছড়িয়ে যায়। আমার স্বামী ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। অনেক কষ্ট করে কিছু গহনা কিনেছিলাম। সেগুলোও আর পাচ্ছি না। ঘরে খাবারের যেগুলো ছিল ওগুলোও পুড়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড় সব পুড়ে গেছে। কিছুই আর রইল না। স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দিন বলেন, ৫টি পরিবার আগে থেকেই হতদরিদ্র। আগুনে সবকিছু পুড়ে এরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেল। পরনের কাপড় ছাড়া দরিদ্র ৫ পরিবারের আর কিছুই রইল না। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান সরকারি সহায়তায় ভুক্তভোগীদের বাড়ি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।  এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, খবর পাওয়ার পরেই ঘটনাস্থলে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার গেছেন। তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবারসহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হবে।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

দরিদ্র ও দুস্থদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করল স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে দরিদ্র ও দুস্থদের খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছে স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ। রোববার (৩১ মার্চ) মতিঝিলস্থ শাপলা চত্বরের পাশে স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।  অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক দরিদ্র ও দুস্থদের মাঝে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়।  এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লায়ন হামিদুল আলম সখা ও সংগঠনের উপদেষ্টা মো. দেলোয়ার হোসেন। স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আককাছ আলী আকাশের সভাপতিত্বে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ-উল-আলম ব্যাকুল। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মরিয়ম খানম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সোলায়মান, আইন সম্পাদক ফরহাদ আলম, সোনালী ব্যাংক ইউনিটের সভাপতি আলাউদ্দিন তুষার, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রায়হান উপস্থিত ছিলেন। সোনালী ব্যাংক শাখার সভাপতি আলাউদ্দিন তুষার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইফতার পার্টি না করে দুস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন, তারই অংশ হিসেবে এবং পবিত্র রমজান মাসে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নিয়মিত সেবাকাজের অংশ হিসেবে স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে।
৩১ মার্চ, ২০২৪

শামসুল হুদার বিশেষ সাক্ষাৎকার / কৃষিনির্ভর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে
শামসুল হুদা নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসেসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার, খাসজমি, ভূমি সংস্কার, ভূমিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারসহ নানা বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি।  কালবেলা : পরিকল্পনামন্ত্রী আলোচনা সভায় বলেছিলেন, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় দরিদ্র শ্রেণিকে উচ্ছেদ করে সেখানে ধনী ব্যক্তিদের জমির মালিকানা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর এ মন্তব্যের তাৎপর্য কী?  শামসুল হুদা : পরিকল্পনামন্ত্রী সত্য কথাটাই বলেছেন। সরকারের উচ্চ পদে থেকেও এ সত্য কথাটি এভাবে উচ্চারণ করার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। বিষয়টি শুধু রাজউকের জন্য প্রযোজ্য তা নয়, বরং ভূমি প্রশাসনসহ সমগ্র প্রশাসনব্যবস্থার সাধারণ চিত্র এটি। দরিদ্রদের ক্রমাগত ক্ষমতাহীন করা এবং তাদের উচ্ছেদ করা, তাদের অবহেলা করা এবং তাদের উপেক্ষা করা এবং দরিদ্র শ্রেণিকে অসম্মান করাটাই আমাদের প্রশাসন ও বিত্তবানদের বৈশিষ্ট্য। তবে কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে।  দেশে এমন কিছু আইনকানুন বা বিধি-বিধান রয়েছে যেগুলো বলা যায় দরিদ্রবান্ধব। কিন্তু কখনোই সেই সব বিধি-বিধান বাস্তবায়নের মুখ দেখে না। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে যে পরিবর্তনগুলো হওয়ার কথা ছিল নানা কারণে সেগুলো হয়নি। তবে ৭২ সাল থেকে খাসজমি কেন্দ্রিক কিছু পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এই প্রচেষ্টাটি শুরু করেছিলেন। কিন্তু সে সময় বিস্তারিত এবং সুবিন্যস্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়তো সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে সেই নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কোনো সরকারই সেই নীতিমালা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়নি। নীতিমালাটি কলেবরে ক্রমাগত ছোট হতে হতে এখন প্রায় অকার্যকর অবস্থায় বহাল আছে। দরিদ্রদের পক্ষে যে বিধানগুলো ছিল সেগুলো হয় সংকুচিত হয়েছে অথবা ক্রমাগত দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। এক সময় এই বিধি-বিধানগুলো উধাও হয়ে গেছে। নারীদের পক্ষেও কিছু বিধি-বিধান ছিল কিন্তু সেগুলোও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি।  এই নীতিমালায় নারীদের বাড়তি বৈষম্যের শিকার হতে হয়। সেখানে বিধান রাখা হয়েছে- নারীদের খাস জমি দেওয়া যাবে, কিন্তু শর্ত হচ্ছে তার সক্ষম পুত্র সন্তান থাকতে হবে। দরিদ্র এবং কৃষি জীবিকার ওপর নির্ভরশীল সকল নারীর জন্য এটা প্রযোজ্য হতে পারে না। নারী বিধবা হতে পারেন, তিনি নিঃসন্তান হতে পারেন, তিনি কন্যা সন্তানের মা হতে পারেন। সুতরাং সক্ষম পুত্র সন্তান থাকতে হবে এই বিধানটি বৈষম্যমূলক। আমরা গত ২০-৩০ বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়েও এই বিধানটি পরিবর্তন করতে পারিনি।  আমাদের কৃষি জমিকে যেভাবে সুরক্ষা দেওয়া দরকার আমরা কি সেভাবে সুরক্ষা দিচ্ছি? দিনে দিনে আমাদের কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে এক শতাংশ করে আমাদের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে।‌  প্রতি বছর আমরা যে কৃষি জমি হারাচ্ছি তার মধ্যে সম্পূর্ণটাই যে অপ্রয়োজনীয় তা আমি বলব না। যেহেতু আমাদের দেশের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, নগরায়নের প্রক্রিয়া চলছে, শিল্পায়ন এবং রাস্তাঘাটের পরিমাণ বাড়ছে ফলে এসবের কারণে কৃষি জমির ওপর হাত পড়ছে। এগুলোকে যদি আমরা প্রয়োজনীয় বলি তবুও যতটা প্রয়োজনীয় তার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমি অপ্রয়োজনীয় কাজে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের কৃষি জমির ওপর এক ধরনের নির্দয় আক্রমণ চলছে। হাউজিংয়ের নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাজার হাজার একর কৃষি জমি নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। ইটের ভাটা এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কৃষি জমি নষ্ট করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বহুবার ঘোষণা করেছেন দুই ফসলি বা তিন ফসলি কৃষি জমিতে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না এবং বিশেষ প্রয়োজনে দরকার হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু আমাদের জানামতে অনেক ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা মানা হয়নি এবং মানা হচ্ছে না।  আমরা কৃষি জমি হারাচ্ছি, আর নিজেদেরই বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। কৃষির ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছ থেকেই এসব জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যেমন- খাস জমি ভূমিহীনদের দেওয়ার নীতি থাকলেও এখন শতকরা ৮০-৯০ ভাগ খাস জমিভূমিহীনদের দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, আমরা খাস জমি ভূমিহীনদেরই দিচ্ছি। তাদের ঘরবাড়ি বানিয়ে দিচ্ছি, থাকার জায়গা দিচ্ছি। কিন্তু এসব প্রকল্পের বিভিন্ন জায়গায় আমরা লক্ষ্য করেছি, যাদের দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে অনেকে শুধু একটি ঘরই পেয়েছেন আর কিছু নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি ঘরের বাইরে অতিরিক্ত কোনো জমি না থাকায় সেটা বসবাসের জন্য তেমন উপযোগী নয় এবং প্রকৃতপক্ষে কিছুদিন পর তারা ওই ঘরে আর বসবাসও করেন না। কারণ জীবন ও জীবিকার জন্য তাদের অন্যত্র চলে যেতে হয়। ওই ঘর তাদের আর কোনো কাজে লাগে না। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথাও শোনা যায়।  কালবেলা : চরাঞ্চলের খাস জমিগুলোর ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হয়?  শামসুল হুদা : আমাদের চর এলাকায় হাজার হাজার একর জমি রয়েছে যেগুলো মূলত কৃষি জমি। পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলা এবং উত্তরবঙ্গে কিছু জেলায় চর রয়েছে। কৃষি হচ্ছে সেখানকার মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন। এসব জমিতে কৃষির আবাদ হচ্ছে কিন্তু এসব জায়গার দিয়ারা জরিপ সময় মতো হয় না। দিয়ারা জরিপ না হওয়ার কারণে এসব ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয় না। ফলে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাবান একটি শ্রেণি এসব জমি দখলে রেখেছে। ক্ষমতাবানদের কৃষি মজুর হিসেবে ভূমিহীনরা সেখানে কাজ করে। প্রভাবশালী শ্রেণির দয়া এবং অনুগ্রহের ওপর জীবন জীবিকা নির্ভর করে ভূমিহীনদের।  যেসব এলাকায় ভূমিহীনরা সচেতন ও সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের সংগঠন গড়ে তোলে, প্রশাসনের কাছে গিয়ে তাদের দাবি দাওয়া জানায়, আবেদন করে এবং দরখাস্ত করে তখন ওই প্রভাবশালী গোষ্ঠীর লাঠিয়ালরা তাদের ওপর অত্যাচার করে। এরকম একাধিক ঘটনা আমাদের জানা আছে যেখানে হত্যা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনার কোনো তদন্ত হচ্ছে না, কোনো বিচার হচ্ছে না। পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। অথচ নীতিমালা ওই কৃষি খাস জমি ভূমিহীন নারী-পুরুষদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা। কালবেলা : আমরা জানি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জমি বেশি দখল করা হয়। আপনার মূল্যায়ন কী? শামসুল হুদা : অবশ্যই! ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রান্তিক দরিদ্র মানুষ এবং সমতলের আদিবাসীদের জমি বেশি জবর দখলের শিকার হয়। পাহাড়ের আদিবাসীদের জমিও দখলের শিকার হয় তবে সেটা অন্য ইতিহাস। সেখানে চুক্তি হয়েছে কিন্তু চুক্তির বাস্তবায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে না, ভূমি কমিশন হয়েছে সেটা কার্যকর হচ্ছে না। এখন শুধু ভূমিহীনরা নয় বরং প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকরাও বিপন্ন। তাদের জমিগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির নামে। দখল হচ্ছে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নামে এবং কখনো কখনো অধিগ্রহণও হচ্ছে। অধিগ্রহণ হচ্ছে কোনো একটি প্রকল্পের নামে। যে প্রকল্পের জন্য জমির প্রয়োজন ৫ একর সেখানে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ১৫ একর। এর সঙ্গে আমাদের আমলাতন্ত্রের একটি অংশ খুবই সক্রিয়ভাবে যুক্ত।  আমি পুরো আমলাতন্ত্রকে দায়ী করব না, তবে আমলাতন্ত্রের একটি অংশ ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। আমরা যে জমির জবর দখল বা প্রান্তিক মানুষের জমির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথা বলছি তার সঙ্গে দুর্নীতির একটি বড় সম্পর্ক রয়েছে। আপনি যদি দেশের উত্তর, দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিম যে কোনো দিকে হাইওয়ে ধরে যেতে থাকেন, তখন দেখবেন দুপাশে অনেক জমিতে সাইনবোর্ড দিয়ে রাখা হয়েছে— এটা অমুক শিল্প মালিক গোষ্ঠীর জমি। হাউজিং প্রকল্পের জন্য সংরক্ষিত। এসব জমি পড়ে আছে। এই জমিগুলো কৃষি জমি - অধিগ্রহণ করে নেওয়া হয়েছে অথবা কিনে নেওয়া হয়েছে। কেনা হয়েছে অত্যন্ত কম দামে। কম দামে কিনে তারা এই জমি দখলে নিয়েছে। এখানে কোনো এক সময় শিল্প গড়ে উঠবে বা আবাসন গড়ে উঠবে।  আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের অরাজকতা বিরাজ করছে। ভূমি ব্যবস্থাপনার এই অরাজকতাটা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। আমরা আমাদের ভূমি প্রশাসন বা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সংস্কার করার উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ গত ৫০ বছরেও দেখিনি। উপনিবেশিক আমলে শাসকদের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস ছিল ভূমির কর। ভূমি রাজস্বকে তারা যেভাবে ব্যবহার করেছে সেখানে তারা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে মোটামুটি একটি সচল, সক্রিয় এবং দক্ষ ভাবেই গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। তাদের স্বার্থেই এটা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ৪৭ পরবর্তী সময়ে সেটার আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। কোনো সংস্কার ছাড়া যে কোনো একটি যন্ত্র যদি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হতে থাকে সেটা যেমন ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় তেমনি প্রশাসন যন্ত্রটিও সংস্কার না হলে ক্রমাগত নষ্ট হতে থাকে। আমি শুধু ভুমি প্রশাসনের কথা বলব না, বরং সামগ্রিকভাবে গোটা জনপ্রশাসনের সংস্কার প্রয়োজন।  কালবেলা : স্বাধীনতার পরেও আমরা অনেক সময় পেয়েছি। এই দীর্ঘ সময়ে আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনার কোনো সংস্কার করিনি কেন?  শামসুল হুদা : ভূমি সংস্কারটাকে সব সময় আমরা এড়িয়ে গেছি। এড়িয়ে গেছি প্রধানত দুইটি কারণে। একটি কারণ হচ্ছে- ভূমি প্রশাসন থেকে শুরু করে যারা প্রশাসনের উচ্চপদে ছিলেন তাদের ব্যাপক অংশ ছিলেন সংস্কার বিরোধী। তারা মূলত সমাজের সেই শ্রেণি থেকে আসা মানুষ যে শ্রেণি ভূমি সংস্কার না হলে বেশি লাভবান হয়। অর্থাৎ তাদের সামাজিক প্রভাব, সুবিধা, ধরে রাখতে ভূমির ওপর তাদের মালিকানা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। ভূমি সংস্কারের একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে, ভূমির উপরে যার জীবিকা নির্ভর করে না, যে ভূমির আয় তার প্রধান উপার্জনের উৎস নয়— সেই ভূমি তার থাকার কোনো ধরনের যুক্তি নেই। যিনি ভূমিতে রয়েছেন, যিনি ভূমিতে কাজ করেন এবং শ্রম দেন, ওই ভূমির ওপর যাদের জীবিকা নির্ভর করে ভূমির মালিকানা তাদের কাছেই থাকা উচিত। ভূমি সংস্কারের মূল লক্ষ্য এটি। কিন্তু এই আমলারা এবং সমাজের বিত্তবান শ্রেণি, উঠতি ধনিকরাও এই অধিকার ছাড়তে রাজি নয়।  কালবেলা : ভারতে আমরা ভূমি সংস্কার দেখেছি। সেখানেও প্রভাবশালী এবং ধনীকশ্রেণি ক্ষমতায় ছিল অথচ সেখানে সংস্কার হলো কীভাবে?  শামসুল হুদা : আমরা লক্ষ্য করলে দেখব- ভারতে মূলত সেসব রাজ্যে ভূমি সংস্কার হয়েছে যেখানে বাম প্রগতিশীল একটি সরকার ক্ষমতায় দীর্ঘদিন আসীন ছিল। তাদের অনেকে হয়তো সমাজের কোনো সুবিধাভোগী শ্রেণি থেকে এসেছেন কিন্তু তারা আদর্শগতভাবে সেই শ্রেণি থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছেন। পশ্চিমবাংলার জ্যোতি বসু থেকে শুরু করে এরকম অনেককেই পাওয়া যাবে যারা নিজেদের শ্রেণির স্বার্থ নয় বরং দেশের দরিদ্র এবং প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের স্বার্থ নিয়ে কাজ করেছেন। কেরালা বা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে যে সংস্কারগুলো হয়েছে অন্যান্য রাজ্যগুলোতে হয়তো সে ধরনের সংস্কার হয়নি। কিন্তু কৃষির অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কার সেখানে হয়েছে। ভারতের অনেক জায়গায় ভূমি সংস্কার না হওয়ার কারণে কৃষকদের ক্ষোভ আমরা দেখেছি। ভারতে কৃষকদের সাম্প্রতিক আন্দোলন আমরা দেখেছি। কৃষকরা ১৪ মাসব্যাপী আন্দোলন করে তাদের ক্ষোভ, দাবির কথা প্রকাশ করেছেন। কৃষক বিরোধী বেশ কিছু আইন বাতিল করার দাবি পূরণের পরই তারা মাঠ ছেড়েছেন। ভারতে এটি সম্ভব হয়েছে কারণ বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে ঐক্য এবং সংহতি তারা গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। ভারতের বাইরে যে প্রবাসী ভারতীয়রা থাকেন তারাও নানাভাবে এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন।  আমাদের দেশে শক্তিশালী কৃষক সংগঠন না থাকাটাও ভূমি সংস্কার না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। ভূমি সংস্কারের জন্য এখনো শক্তিশালী কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। প্রবলভাবে তেমন কোনো জনমত তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আমরা যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসব বিষয় নিয়ে কাজ করি তারা কথা বলতে পারি, চেষ্টা করতে পারি, বিভিন্ন ছোটখাট সফলতা হয়তো আমরা পাই, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সিস্টেম পরিবর্তন করার ক্ষমতা সামাজিক সংগঠনের এককভাবে নেই।  কালবেলা : আগে ভূমিতে ছোট ছোট মালিকানা দেখা যেত। এখন দেখা যাচ্ছে ভূমি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় চলে যাচ্ছে অথবা রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণে চলে যাচ্ছে। এটি কতটা টেকসই উন্নয়ন মডেল? শামসুল হুদা : ভূমি করপোরেট মালিকানায় চলে যাওয়ার কারণে ক্রমাগত বৈষম্য অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা দেখিয়েছেন, আমাদের দেশে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বড় বড় বিল্ডিং হয়েছে, ব্রিজ হয়েছে, অনেক রাস্তা হয়েছে। মেট্রোরেল এবং টানেল হয়েছে। এগুলো অবশ্যই উন্নয়নের অংশ কিন্তু এটাই যে একমাত্র উন্নয়ন তা নয়। বাংলাদেশে দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জীবনমান ক্রমাগত নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে দরিদ্র শ্রেণির আয় বৈষম্য, ব্যয়-বৈষম্য এবং সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য এখন গত ৪-৫ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ক্রমাগত বৈষম্য বেড়েই চলেছে যা অবশ্যই গভীর আশঙ্কার কারণ।  আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং বণ্টনব্যবস্থা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার। সব ক্ষেত্রে বৈষম্য এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে যে অর্থ না থাকলে সঠিক বিচারটিও পাওয়া যায় না। একজন মানুষ বিচার পেতে গেলে তাকে আদালতে যেতে হবে। কিন্তু সেই আদালত পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্যই হারিয়ে ফেলছে অসংখ্য মানুষ।  পুলিশ মামলা নেবে না। একজন দরিদ্র বা অসহায় মানুষ মামলা দিতে গেলে তার মামলা নেওয়া হয় না। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হলে তার মামলা পুলিশ নেয় সেই মামলার সারবস্তু যেমনই হোক। গরিব অসহায় মানুষের মামলা কোনোভাবে পুলিশ নিলেও দেখা যায় মামলার তদন্ত হচ্ছে না। আবার তদন্ত হলে প্রকৃত আসামি চার্জশিট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। সমাজে বিচার বৈষম্য রয়েছে এবং বাড়ছে, শিক্ষায় বৈষম্য বেড়ে চলেছে এবং ভোগের বৈষম্য অনেক দ্রুত কল্পনার চেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে। আর এই বৈষম্য দিনে দিনে বেড়ে সমাজে অসহনীয় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে।  কালবেলা : বিচার ব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে জট পড়ে আছে ভূমিসংক্রান্ত মামলায়। লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন। ভূমিসংক্রান্ত মামলা এভাবে জমলো কেন এবং এর কী কোনো সমাধান নেই? শামসুল হুদা : নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালত মিলে ভূমিসংক্রান্ত প্রায় ৩৫ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ফৌজদারি এবং দেওয়ানী দুই ধরনের মামলায় রয়েছে। বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ থেকে আমরা জানি এই মামলার প্রায় ৮০ শতাংশই ভূমিসংক্রান্ত। এখানে ভূমি সংস্কারের বিষয়টি চলে আসে। মুক্তিযুদ্ধের পরের প্রথম ১০ বছরে আমরা যদি ভূমি সংস্কারের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতে পারতাম তাহলে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।  ভূমি বিরোধের অনেক বিষয়ই মালিকানাসংক্রান্ত। দাবি পাল্টা দাবি এবং ভাগ বাটোয়ারাসংক্রান্ত। বহু মামলা দখল এবং অবৈধ দখলসংক্রান্ত। সুতরাং এই বিষয়গুলো তৈরি হয়েছে আমরা ভূমি ব্যবস্থা সংস্কার না করার কারণেই। আমাদের প্রয়োজন ছিল বিচার ব্যবস্থার দিকে আরো নজর দেওয়া। সাধারণ মানুষ যাতে সহজে এবং স্বল্প খরচে বিচার পায় সেজন্য বিচার ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন ছিল। ভূমিসংক্রান্ত এবং অন্য সব মামলার জন্য সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন। কোনো ধরনের মামলা কতদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।  অনেক মামলা হয় ভুয়া কাগজপত্রসংক্রান্ত কারণে। ভুয়া দলিল এবং ভুয়া আমলনামার এসব মামলা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভূমি প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি অংশের সহযোগিতা থাকে। ভূমি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের অনেকেই এসব অবৈধ কাজে সহযোগিতা করে। তাদের এই অন্যায় তৎপরতার কারণেই বিভিন্ন ধরনের দালাল ও প্রতারকরা ভুয়া দলিল ও কাগজপত্রগুলো তৈরি করতে পারে। এসব বিষয় বিচার ব্যবস্থায়ও বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। একই জমি একাধিক একদিকে কিছু আইনি বিধি-বিধানের পরিবর্তন দরকার আরেকদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় এবং অত্যন্ত স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ দিয়ে ভূমি প্রশাসন দক্ষ এবং সৎ লোকবল গড়ে তোলা দরকার। শ্রুতিলিখন- মুজাহিদুল ইসলাম 
১১ মার্চ, ২০২৪

জলবায়ুর পরিবর্তনে গ্রামীণ নারী, দরিদ্র ও বয়স্কদের ওপর প্রভাব পড়ছে : এফএও
নারী কৃষক, দরিদ্র মানুষ এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন এবং তাদের চাহিদার জন্য লক্ষ্যযুক্ত ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। মঙ্গলবার (৬ মার্চ) প্রকাশিত সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ‘আনজাস্ট ক্লাইমেট’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে- চরম আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অসম ক্ষমতার কারণে কিছু সামাজিক গোষ্ঠী জলবায়ু সম্পর্কিত আয়ের বৈষম্যের কারণে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়। আটজন বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন পরামর্শকের একটি দল দুই বছর ধরে পরিচালিত এই গবেষণায় ২৪টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের এক লাখ ৯ হাজার গ্রামীণ পরিবারের আর্থ-সামাজিক তথ্য সংগ্রহ করে। যা ৯৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। গবেষণাটি অনুসারে, গড় তাপমাত্রা যদি মাত্র এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে পুরুষের তুলনায় গ্রামীণ নারীরা তাদের মোট আয়ের ৩৪ শতাংশ বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। দরিদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা তাদের জলবায়ু-সংবেদনশীল কৃষির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তোলে এবং বন্যার সঙ্গে তারা গড়ে অ-দরিদ্র পরিবারের তুলনায় তাদের মোটের ৪ দশমিক শতাংশ হারাবে। লিঙ্গ, সম্পদ ও বয়স অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করা এই গবেষণার লক্ষ্য হলো- ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর বিভিন্ন চাহিদা মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া বিকাশে দেশগুলোকে গাইড করা। এফএও'র জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনের প্রধান লেখক নিকোলাস সিটকো সিনহুয়াকে বলেন, ‘আমাদের আশা হচ্ছে, আমরা মানুষের দুর্বলতার পার্থক্যগুলো আরও বেশি করে বিবেচনা করা শুরু করব, কারণ দুর্বলতা সবার জন্য এক নয় এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের সমর্থন প্রয়োজন।’ সূত্র : ইউএনবি
০৬ মার্চ, ২০২৪

মেডিকেলে চান্স পাওয়া দরিদ্র সুজয় ও আকছাদুরের পাশে আ.লীগ নেত্রী মেধা
পরিবারে অভাবের কারণে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় মধ্যে পড়েছিলেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়ার সুজয় মন্ডল ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের আকছাদুর রহমান। তাদের পড়াশোনার সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শেখ মাসুদা খানম মেধা। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে সুজয় ও আকছাদুরের মেডিকেলে ভর্তির অনিশ্চয়তার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর তাদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ভর্তি ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা হস্তান্তর করেন তিনি।  এর আগে, সাতক্ষীরা জেলা ও গোপালগঞ্জ থেকে সরকারি মেডিকেল কলেজে যারা চান্স পেয়েছেন তাদের তথ্য কেউ দিতে পারবেন, এমন ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন শেখ মাসুদা খানম মেধা। পরে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের এই দুই দরিদ্র শিক্ষার্থীর পরিবার মাসুদা খানম মেধার শরণাপন্ন হলে তাদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি। সুজয় মণ্ডল পাবনা মেডিকেল কলেজ ও মো. আকছাদুর রহমান দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার : শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার জাতির পিতার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে দেশের দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সমাজসেবা দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অসহায়, অনগ্রসর মানুষকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য দেশ পুনর্গঠনের শুরুতেই সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদানসহ সুদূরপ্রসারী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২ জানুয়ারি ‘জাতীয় সমাজসেবা দিবস ২০২৪’ উদযাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমাজ সেবায় গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি প্রবর্তন এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ‘পল্লি মাতৃকেন্দ্র’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। শিশুদের সুরক্ষায় প্রণয়ন করেন শিশু আইন, ১৯৭৪। জাতির পিতা শিশু বিকাশের লক্ষে কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন, বর্তমানে যা সরকারি শিশু পরিবার নামে পরিচিত। প্রতিটি শিশু পরিবারে আমাদের সরকার প্রবীণদের জন্য ১০টি আসন বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা করেছে। বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন ধরনের ২২৬টি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, অনাথ প্রতিবন্ধী, কিশোর-কিশোরী, স্বামী নিগৃহীতা নারী ও প্রবীণ ব্যক্তিরাসহ সহায়সম্বলহীন মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে লাগসই ও টেকসই প্রকল্প গ্রহণসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মোট ৫৪টি জনহিতকর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ১ কোটি ১৫ লাখ উপকারভোগীর ভাতা ও অনুদানের টাকা সরাসরি তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে জি-টু-পি পদ্ধতিতে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চা-শ্রমিক, হিজড়া, বেদে ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, বিশেষ ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করছি। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগী এমনকি অগ্নিদগ্ধদের জন্য আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হচ্ছে। হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছে। ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩, পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ, আইন ২০১৩ বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৮ ও জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন, ২০২৩ প্রণীত হয়েছে। প্রবেশন আইন, স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) ও পরিত্যক্ত শিশু সুরক্ষা আইন ও ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ এ সরকারের অন্যতম কৃতিত্ব। আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সফটওয়্যার চালু করেছি। শিশুদের সহায়তায় চাইল্ড হেল্প লাইন ১০৯৮ (টোল ফ্রি) সেবা চালু করা হয়েছে, যা শিশুর সহায়তায় ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।
০২ জানুয়ারি, ২০২৪

বরিশালে দরিদ্র বেশি খুলনায় কম
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ দরিদ্র। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস বরিশাল বিভাগে। আর সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষ বসবাস করে খুলনা বিভাগে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসের হারেও ভালো অবস্থানে রয়েছে খুলনা। দেশে ধারাবাহিকভাবে দরিদ্র মানুষের হার কমলেও বাড়ছে ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে দরিদ্র ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ। মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো আয় যাদের নেই, মূলত তারাই দরিদ্র। বিশ্বব্যাংকের মতে, দিনে ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম আয়ের মানুষকে দরিদ্র বলা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র, যা ২০১৬ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ২০১০ সালে এই হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম খুলনা বিভাগে। গ্রামীণ বা শহর এলাকায়ও সবচেয়ে কম দরিদ্রের বসবাস খুলনায়। এ বিভাগের জনসংখ্যা ১ কোটি ৭৪ লাখ ১৫ হাজার ৯২৪ জন, যার মধ্যে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ দরিদ্র। গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র কমেছে এ বিভাগে। ২০১৬ সালে এই বিভাগের মোট জনসংখ্যার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল দরিদ্র। অর্থাৎ ৫ বছরে খুলনায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে প্রায় অর্ধেক। অতিদরিদ্র মানুষের বসবাসের দিক থেকেও ভালো অবস্থানে খুলনা বিভাগ। এই সূচকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা। দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। সেখানে খুলনায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বা অতিদরিদ্র মানুষের বসবাস মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৬ সালে খুলনায় অতিদরিদ্রের হার ছিল ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২২ সালে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অতিদরিদ্র সূচকে খুলানার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শুধু ঢাকা বিভাগ। এই বিভাগে অতিদরিদ্র মানুষের বসবাস মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮ শতাংশ। এদিকে দেশের গড় অতিদারিদ্র্যের হারের দ্বিগুণেরও বেশি বসবাস বরিশাল বিভাগে। বরিশালের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ অতিদরিদ্র। এর আগের দুই জরিপে (২০১০ ও ২০১৬) দেশের সবচেয়ে কম দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র মানুষের বসবাস ছিল ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ দুই স্তরে অন্য বিভাগগুলো অনেক উন্নতি করলেও ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে বেড়েছে দরিদ্র মানুষ। মূলত গ্রামাঞ্চলে উচ্চ দরিদ্রের কারণে বিভাগগুলোতে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, ঢাকায় দারিদ্র্যের হার বাড়ার মূল কারণ হলো বেশিরভাগ হতদরিদ্র এবং দরিদ্র মানুষ জীবিকার তাগিদে শহরে চলে আসে এবং বস্তিতে বসবাস করে। সিলেটে হাওর এবং সুনামগঞ্জ এলাকার নদীভাঙনের কারণে এ হার বাড়তে পারে। সর্বশেষ শুমারিতে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের মোট জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ দরিদ্র। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ১৬ শতাংশ।
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

দরিদ্র মুদি দোকানদারের সততায় হতবাক এলাকাবাসী
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে স্বল্প পুঁজির এক দরিদ্র মুদি দোকানি স্থানীয় এক মৃত ব্যাক্তির আমানতকৃত সমুদয় টাকা ফেরত দিয়ে সততার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এতে সর্বমহলে ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২২ নভেম্বর রাতে হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নে উত্তর রহিমপুর গ্রামের মো. আব্দুল খালেক ( ৮৫) নামের এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গত দুই মাস আগে উপজেলার রামপুর বাজারের প্রবীণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. বোরহান উদ্দিনের কাছে কোনো সাক্ষী ছাড়াই ১৫ হাজার টাকা আমানত রাখেন। হঠাৎ আমানতকারী খালেকের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে প্রয়াত  আব্দুল খালেকের বাড়িতে উপস্থিত হন বোরহান। পরে মরহুমের ছেলে মো. আবু বক্কর, মো. সুরুজ আলী, ওমর ফারুক, মো. হযরত আলী ও পিয়াছ আলীসহ দুই বোনকে ডেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন। বোরহানের এমন সততা দেখে প্রয়াত খালেকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এলাকাবাসীও হতবাক হয়েছেন। বিষয়টি এলাকায় দারুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। মুদি দোকানি বোরহান উদ্দিন জানান, মরহুম আব্দুল খালেক গত দুই মাস পূর্বে আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন। আমি ওনার মৃত্যুর কথা শুনে শুক্রবার মরহুমের বাড়িতে এসে তার ছেলে-মেয়েদের হাতে আমানতের ওই ১৫ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেই। ফলে ঋণ মুক্ত হয়ে শান্তি পাচ্ছি আমি। তিনি আরও জানান, এ আমানতকৃত টাকার কথা আমি ছাড়া কেউই জানত না। এ ব্যাপারে উপজেলার রামপুর বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত চন্দ্র শীল জানান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বোরহান দীর্ঘ দিন ধরে এ বাজারে সততার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছেন। তার এমন সততা দেখে আমরাও গর্বিত। আমানতের টাকা ফেরত দিয়ে বোরহান বিরল নজির সৃষ্টি করেছেন।
২৫ নভেম্বর, ২০২৩

ওয়ানডে বিশ্বকাপ / দরিদ্র নরেন্দ্রর বাজিমাত
উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের মকবুল চিকেন বিরিয়ানির মালিক বিরাট কোহলির অন্ধভক্ত। বিশ্বকাপ চলাকালে তিনি দোকানে এক বিশেষ অফার চালু করেছেন। ভারতের যেদিন ম্য়াচ থাকবে, সেদিন বিরাট কোহলি যত রান করবেন, তত শতাংশ ডিসকাউন্ট বিরিয়ানিতেও দেওয়া হবে। ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে বিরাট কোহলি যখন ৮৮ রান করেছিলেন, সেদিন তিনি দোকানে চিকেন বিরিয়ানির এক এক প্লেটে ৮৮ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়েছিলেন। অর্থাৎ ৬০ টাকার চিকেন বিরিয়ানি মাত্র ৭ টাকায় পাওয়া গিয়েছিল। আর কোহলি যেদিন সেঞ্চুরি করেছেন, সেদিন তিনি বিরিয়ানি বাবদ কোনো টাকা নেননি। এবার এগিয়ে এসেছেন চণ্ডিগড়ের দরিদ্র ডাবামালিক নরেন্দ্র সিং। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ভারত ফাইনালে জিতলে তিনি বিনা পয়সায় ভাত ও কারি খাওয়াবেন। অন্যদিকে ভারত বিশ্বকাপ জিতলে নগ্ন হয়ে সমুদ্রসৈকতে দৌড়াবেন বলে জানিয়েছেন তেলেগু অভিনেত্রী রেখা বোজ। দুদিন আগে তিনি নিজের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লেখেন, ‘ভারত বিশ্বকাপ জিতলে আমি পাতলা কাপড় পরে ভিজাগ বিচে ঘুরে বেড়াব।’ কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে নরেন্দ্র সিংয়ের ঘোষণাটি ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সাড়া জাগাতে পেরেছে। ক্রিকেটপ্রেমী এই ডাবামালিক ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার কথাও বেশ মনে রেখেছেন। তার বিশ্বাস, আজ রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন স্বাগতিক ভারতই বিশ্বকাপ শিরোপা জিতবে। উল্লেখ্য, রাস্তার পাশের সস্তা খাবারের দোকানই ভারত ও পাকিস্তানে ডাবা নামে পরিচিত। শব্দটির মূল হিন্দি, অর্থ খাবার রাখার পাত্র বা বাক্স। তবে ডাবা শব্দটি ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ ভাষায় ব্যবহৃত হয়। এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র সিং বলেন, ‘আমি ১৯৮৩ সাল থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচ দেখছি। সেবার কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারত প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট শিরোপা নিশ্চিত করেছিল। এবার যদি ভারত শিরোপা জেতে, তবে আমি আমার ডাবায় বিনা পয়সায় কারি-চাবাল (ভাত ও তরকারি) খাওয়াব।’ মুজাফফরনগরের মকবুল চিকেন বিরিয়ানির নাম রয়েছে ভারতজুড়ে। এই বিখ্যাত দোকানের মালিক বিরিয়ানিতে যে ডিসকাউন্ট দিয়েছিলেন, সেটার চেয়েও বেশি সাড়া ফেলে দিয়েছেন চণ্ডিগড়ের দরিদ্র হোটেলওয়ালা নরেন্দ্র সিং। তার অফারের চেয়ে তার মন ও ভারতপ্রীতিকেই দেশটির মিডিয়া বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। স্বদেশপ্রেমের নিক্তিতে নরেন্দ্র সিং অন্যদের চেয়ে ফার্লং ফার্লং এগিয়ে রয়েছেন। চণ্ডিগড়ের অধিবাসী তেজিন্দর সিং বলেন, ‘টিম ইন্ডিয়ার প্রতি নরেন্দ্র সিং যে ভালোবাসা দেখাচ্ছে, সেটা অতুলনীয়। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই নরেন্দ্র কিছু একটা করার জন্য মুখিয়ে ছিল। শেষমেশ এই দরিদ্র লোক টিম ইন্ডিয়ার প্রতি নিজের প্রাণের প্রমাণ এভাবে রাখতে চাইছে।’ নরেন্দ্র সিংয়ের দোকান গুরুদুয়ারার ১৯ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত। ভারত শিরোপা জিতলে ঘোষণামাফিক তিনি ২১ নভেম্বর দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তার দোকানে যারা খাবেন, তাদের কাছ থেকে কোনো পয়সা নেবেন না। নরেন্দ্র সিংয়ের বয়স এখন সাতান্ন চলছে। ১৫ বছর বয়সে তিনি ক্রিকেট প্রেমে জড়ান।
১৯ নভেম্বর, ২০২৩

জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলনে দরিদ্র মানুষের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার দাবি 
প্রত্যন্ত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র মানুষের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ি ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।  শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে দুই দিনের জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশে এ সকল দাবি তুলে ধরা হয়। মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।  সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে কম দায়ীরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে। আবার যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, জলবায়ু অভিযোজনে তাঁরাই সবচেয়ে কম সক্ষমতা সম্পন্ন। তাই এই সংকট মোকাবেলায় জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, বর্তমানের যে জলবায়ু সংকট তা মানবসৃষ্ট। নানাভাবে আমরা পরিবেশকে নষ্ট করছি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল বিভিন্ন লাভজনক প্রকল্পের আওতায় এনে প্রতিনিয়ত তা ধ্বংস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছি। এই সমাবেশ থেকে নিজেদের করণীয় খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু সংকটের জন্য দায়ি ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে বাধ্য করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।  এপিএমডিডি’র সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল বলেন, বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে। আমাদের পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার ১.৫ ডিগ্রীর মধ্যে রাখার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো, ধনী দেশগুলো ক্রমাগত কার্বন নিঃসরণের ফলে তা আপাতদৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিউট্রাল হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের ধারে কাছেও নেই। আগামী দুই-তিনটি বছর আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশীদ, জাপানের প্রতিনিধি মাকিকু আরিমা, নেপালের প্রতিনিধি অর্জুন কারকি, ‘তারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশন’এর ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কাইনান হাউটন, ইউএনডিপি’র সহকারি আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক, সিইআর প্রতিনিধি চৌধুরি মোহাম্মদ শাহরিয়ার আহমেদ, আইইইএফএ’র প্রতিনিধি শফিকুল আলম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চৌধুরী, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র প্রমুখ।  উল্লেখ্য, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনের এই আলোচনায় দেশি-বিদেশি ৯ শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। 
০১ জানুয়ারি, ১৯৭০
X