দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ দরিদ্র। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস বরিশাল বিভাগে। আর সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষ বসবাস করে খুলনা বিভাগে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসের হারেও ভালো অবস্থানে রয়েছে খুলনা। দেশে ধারাবাহিকভাবে দরিদ্র মানুষের হার কমলেও বাড়ছে ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে দরিদ্র ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ।
মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো আয় যাদের নেই, মূলত তারাই দরিদ্র। বিশ্বব্যাংকের মতে, দিনে ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম আয়ের মানুষকে দরিদ্র বলা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র, যা ২০১৬ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ২০১০ সালে এই হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।
বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম খুলনা বিভাগে। গ্রামীণ বা শহর এলাকায়ও সবচেয়ে কম দরিদ্রের বসবাস খুলনায়। এ বিভাগের জনসংখ্যা ১ কোটি ৭৪ লাখ ১৫ হাজার ৯২৪ জন, যার মধ্যে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ দরিদ্র। গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র কমেছে এ বিভাগে। ২০১৬ সালে এই বিভাগের মোট জনসংখ্যার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল দরিদ্র। অর্থাৎ ৫ বছরে খুলনায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেছে প্রায় অর্ধেক। অতিদরিদ্র মানুষের বসবাসের দিক থেকেও ভালো অবস্থানে খুলনা বিভাগ। এই সূচকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা। দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। সেখানে খুলনায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বা অতিদরিদ্র মানুষের বসবাস মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৬ সালে খুলনায় অতিদরিদ্রের হার ছিল ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২২ সালে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
অতিদরিদ্র সূচকে খুলানার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শুধু ঢাকা বিভাগ। এই বিভাগে অতিদরিদ্র মানুষের বসবাস মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮ শতাংশ। এদিকে দেশের গড় অতিদারিদ্র্যের হারের দ্বিগুণেরও বেশি বসবাস বরিশাল বিভাগে। বরিশালের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ অতিদরিদ্র। এর আগের দুই জরিপে (২০১০ ও ২০১৬) দেশের সবচেয়ে কম দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র মানুষের বসবাস ছিল ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ দুই স্তরে অন্য বিভাগগুলো অনেক উন্নতি করলেও ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে বেড়েছে দরিদ্র মানুষ। মূলত গ্রামাঞ্চলে উচ্চ দরিদ্রের কারণে বিভাগগুলোতে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, ঢাকায় দারিদ্র্যের হার বাড়ার মূল কারণ হলো বেশিরভাগ হতদরিদ্র এবং দরিদ্র মানুষ জীবিকার তাগিদে শহরে চলে আসে এবং বস্তিতে বসবাস করে। সিলেটে হাওর এবং সুনামগঞ্জ এলাকার নদীভাঙনের কারণে এ হার বাড়তে পারে। সর্বশেষ শুমারিতে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের মোট জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ দরিদ্র। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ১৬ শতাংশ।