পাতানো দাবা তদন্তে ফিদে
দাবায় আবারও পাতানোর গন্ধ। সে গন্ধ দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্ব দাবা সংস্থা (ফিদে) পর্যন্ত। যে কারণে প্রতিযোগিতার বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। কাগজপত্র পাঠিয়ে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন ফিদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। ৮ ও ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে মানহাস ক্যাসল ২৪তম ফিদে রেটিং দাবা প্রতিযোগিতা। ২৬ ও ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে মানহাস ক্যাসল ২৫তম ফিদে রেটিং দাবা প্রতিযোগিতা। দুটি প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল জান্নাতুল ফেরদৌসের আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব অর্জনের শর্ত পূরণ করা। প্রথম প্রতিযোগিতা শুরুর আগে জান্নাতুল ফেরদৌসের রেটিং ছিল ১৯৫৫। আন্তর্জাতিক মাস্টারের খেতাব লাভের জন্য ৪৫ রেটিং পয়েন্ট প্রয়োজন ছিল এ দাবাড়ুর। প্রথম রাউন্ডে জান্নাতুল ফেরদৌস হারান আফজাল হোসেন সাচ্চুকে। পুরো আসরে দাবাড়ুদের প্রতিপক্ষ নির্ধারণ সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হলেও জান্নাতের প্রতিপক্ষ বেছে নেওয়া হয়েছে পছন্দমতো। বিপত্তিটা বেধেছে ওখানেই। পরের দুই রাউন্ড সব নিয়ম মেনেই হয়েছে। দুই রাউন্ডেই জিতেছেন জান্নাতুল। চতুর্থ রাউন্ড নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন এ দাবাড়ু। পরের রাউন্ড দিয়েছেন ওয়াকওভার। শেষ রাউন্ডে মুকিদুল ইসলামকে হারিয়েছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আরেকটি পাতানো আয়োজন ‘বাংলাদেশ পুলিশ প্রাইম ক্লাব আমন্ত্রণমূলক দাবা’ প্রতিযোগিতায়ও আব্দুল মোমিন ও মুকিদুল ইসলামকে হারিয়েছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। গত ডিসেম্বরের প্রতিযোগিতা যে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, সেটা কালবেলার কাছে স্বীকারও করেছেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। এ যাত্রায় প্রশ্নবিদ্ধ আয়োজন ইস্যুতে দাবা ফেডারেশনকে সেফ সাইডে রাখতে চাইলেন দাবার আন্তর্জাতিক বিচারক হারুন অর রশীদ। প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিযোগিতার কাগজপত্র ফিদের কাছে পাঠানোর বিষয় নিশ্চিত করে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘ফিদে কাগজপত্র চেয়েছে, আমরা সেগুলো পাঠিয়েছি। যে দুটি প্রতিযোগিতার কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর আয়োজক কিন্তু বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন নয়।’ প্রতিযোগিতা দুটি আয়োজন না করলেও তার দায় কোনোভাবেই দাবা ফেডারেশনের এড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ দুটি আসরই ছিল বাংলাদেশ দাবার অভিভাবক সংস্থার অনুমোদিত। মার্চের আয়োজনের মতোই পাতানো ছিল এপ্রিলের প্রতিযোগিতাও। এ আসরের প্রথম রাউন্ডে গিয়াসউদ্দিন মিঠুকে পছন্দমতো জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রতিপক্ষ বানানো হয়েছে। যথারীতি এ রাউন্ডে জিতেছেন জান্নাতুল। দ্বিতীয় রাউন্ডে আসাদুজ্জামান ও তৃতীয় রাউন্ডে নিলাভো চৌধুরীকে ওয়াকওভার দেন জান্নাতুল ফেরদৌস। সাধারণত কোনো প্রতিযোগিতায় পর দুই রাউন্ড ওয়াকওভার দিলে সংশ্লিষ্ট দাবাড়ুকে ওই আসরে আর অংশগ্রহণের সুযোগ দেন না আয়োজকরা। কিন্তু জান্নাতুল ফেরদৌসের ক্ষেত্রে সেটা মানা হয়নি। চতুর্থ রাউন্ডে আব্দুর রউফকে হারানোর পর জান্নতুল ফেরদৌসের ১১.৮ রেটিং পয়েন্ট বৃদ্ধি হয়, যা আন্তর্জাতিক মাস্টারের শর্ত পূরণে যথেষ্ট। যে কারণে পরের দুই রাউন্ড ওয়াকওভার দিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী এ দাবাড়ু। ফিদে এ প্রতিযোগিতার ফল স্থগিত করে দেওয়ায় জান্নাতুল ফেরদৌসের আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাবও ঝুলে গেছে। প্রশ্নবিদ্ধ এমন আয়োজন দেশের দাবাকে ধ্বংস করে দেবে উল্লেখ করে ক্ষোভ নিংড়ে দিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব চেস প্লেয়ার্স বাংলাদেশের (এসিপিবি) সাধারণ সম্পাদক শওকত বিন ওসমান শাওন, ‘২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিযোগিতা তদন্ত করতে আমরা দাবা ফেডারেশনকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু ফেডারেশন সেটা আমলে নেয়নি। এমন আরও দুটি প্রতিযোগিতা আয়োজন লজ্জাজনক। যা দেশের দাবাকে অশনি সংকেত দিচ্ছে।’ দুটি প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক ছিলেন শাহজাহান কবীর। ফিদের নোটিশ পাওয়ার পর ভয়-শঙ্কায় আছেন দাবার এ আন্তর্জাতিক বিচারক। তার ওপর নেমে আসতে পারে নিষেধাজ্ঞা। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে প্রতিযোগিতার আয়োজক মানহাস ক্যাসলের বিরুদ্ধেও। এ ছাড়া এ ধরনের আয়োজন ইস্যুতে সতর্ক করা হতে পারে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনকে।
১৪ মে, ২০২৪

দাবায় ব্যতিক্রমী আয়োজন
ধারাবাহিক আয়োজনের ভিড়ে ‘এলিগ্যান্ট আমন্ত্রণমূলক রেটিং দাবা’ প্রতিযোগিতাকে খালি চোখে আর দশটা আসরের মতো মনে হবে। কাঠামোগতভাবে এ আয়োজনে অবশ্য ভিন্নতা আছে। আসরটি আয়োজিত হচ্ছে ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টের আদলে; যার উদ্দেশ্য প্রতিভাবান শীর্ষ দাবাড়ুদের প্রতিযোগিতামূলক আসরের চর্চার মধ্যে রাখা। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের হল রুমে চলমান আসরের পৃষ্ঠপোষক এলিগ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমি, যা আয়োজিত হচ্ছে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সহযোগিতায়। দেশের বাইরের সব প্রতিযোগিতায় দাবাড়ুরা যাতে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারেন, এ জন্যই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—জানালেন আয়োজকরা। প্রতি তিন মাস অন্তর এ প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়েছে। যেখানে শীর্ষ ৮ দাবাড়ু ডাবল রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে খেলবেন। প্রতিযোগিতার প্রথম পর্যায়ের ৭ রাউন্ড সমাপ্ত হয়েছে। সপ্তম রাউন্ডের খেলা শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফিদে মাস্টার মনন রেজা নীড় ৬ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে শীর্ষে আছেন। বাংলাদেশ বিমানের আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সফিয়ান শাকিল সাড়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ও বাংলাদেশ পুলিশের ক্যান্ডিডেট মাস্টার সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ ৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন। সাড়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নারী ফিদে মাস্টার নোশিন আঞ্জুম চতুর্থ স্থানে আছেন। সপ্তম রাউন্ডে মনন রেজা নীড় নাইম হককে বলেন, আবু সফিয়ান শাকিল সাকলাইন মোস্তফা সাজিদকে, মো. তৈয়বুর রহমান সৈয়দ মাহফুজুর রহমানকে এবং নোশিন আঞ্জুম মেহেদী হাসান পরাগকে পরাজিত করেন। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এলিগ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস অ্যাকাডেমির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহমুদা হক চৌধুরী মলি।  
০৭ মে, ২০২৪

যেখানে সাকলাইন মোস্তফা প্রথম
দাবা খেলাটা এখন আর পুরোনো ধ্যান-ধারণায় বন্দি নেই। মনস্তাত্ত্বিক এ খেলায় ভালো করতে হলে মানসিক স্বাস্থ্যর যত্ন নিতে হয়। যত্নশীল হতে হয় খাবার-দাবারের বিষয়েও। ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধায় বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি দাবাড়ুদের অত গভীরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কীভাবে এসব বিষয়ে যত্ন নিতে হবে— তা জানার সুযোগ পাচ্ছেন সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ। বিশ্ব দাবা সংস্থা (ফিদে) চেসেবল একাডেমি ক্যাম্পে বিশ্বের ৪৫০ দাবাড়ু অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওটা ছিল বিশেষ ট্রেইনিং কার্যক্রম। বাংলাদেশ পুলিশের সহায়তায় চেসেবল একাডেমিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ। ৪৫০ দাবাড়ুর মধ্যে থেকে ফিদে ১২ দাবাড়ুকে বিশেষ এক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। স্পেনের মেনোরকা দ্বীপে ২৭ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে ওই ক্যাম্প। এ ধরনের ক্যাম্পে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেলেন প্রতিভাবান এ দাবাড়ু। স্পেনের প্রশিক্ষণ শিবিরে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে থাকবেন বিখ্যাত দুই গ্র্যান্ডমাস্টার জুডিথ পোলগার এবং গ্র্যান্ডমাস্টার আর্থার ইউসুপোভ। ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে ইন্সট্রাক্টররা পূর্ণ একটি দিন সাকলাইন মোস্তফা সাজিদের জন্য বরাদ্দ রাখবেন। সেদিন বাংলাদেশি খুদে দাবাড়ুর উত্তরণ, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ফিটনেস এবং ব্যক্তিগত দক্ষতার নানা দিক পর্যবেক্ষণ করবেন ইন্সট্রাক্টররা। যার ভিত্তিতে সাকলাইন মোস্তফা সাজিদকে নানা পরামর্শ দেওয়া হবে; যাতে দাবাড়ু হিসেবে সঠিক পথে বেড়ে উঠতে পারেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় জুনিয়র দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ। গেল জানুয়ারিতে দুই গ্র্যান্ডমাস্টার— জিয়াউর রহমান ও রিফাত বিন সাত্তারকে টপকে রেটিং দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে। প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। স্পেনের বিশেষ প্রশিক্ষণে সুযোগ পাওয়ার মাধ্যমে আরেকটি স্বীকৃতি পেলেন ১২ বছর বয়সী এ দাবাড়ু। ক্যাম্পে অভিভাবক হিসেবে একজনের যাওয়ার সুযোগ আছে। অভিভাবক হিসেবে যাচ্ছেন সাকলাইন মোস্তফা সাজিদের কোচ আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান শাকিল। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষে স্পেনের মেনোরকা দ্বীপেই এক প্রতিযোগিতা আয়োজিত হবে। সেখানে সাকলাইন মোস্তফা সাজিদের সঙ্গে আবু সুফিয়ান শাকিলও সে প্রতিযোগিতায় খেলবেন। ‘গোটা বিশ্ব থেকে মাত্র ১২ দাবাড়ুকে মনোনীত করা হয়েছে। এটা সাকলাইন মোস্তফা সাজিদের জন্য অনেক বড় সুযোগ। আশা করছি, এটা তাকে দাবাড়ু হিসেবে বেড়ে ওঠার পথে দারুণ সহায়তা করবে’— স্পেনের ক্যাম্পে শিষ্যর সুযোগ পাওয়া সম্পর্কে কালবেলাকে বলছিলেন সাকলাইন মোস্তফা সাজিদের কোচ আবু সুফিয়ান শাকিল। ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক মাস্টার টাইটেল পাওয়া আবু সুফিয়ান শাকিল ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ফিদে ট্রেইনার লাইসেন্স নিয়েছেন। দেশে স্কুল প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং খুদে দাবাড়ুদের নানা প্রোগ্রাম আয়োজন করে থাকেন এ কোচ। কোচিং কার্যক্রম পরিচালনায় গ্র্যান্ডমাস্টার আর্থার ইউসুপোভের খেলা বইয়ের সহায়তা নেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া জার্মান এ কোচ এবং লেখক স্বয়ং সাকলাইন মোস্তফা সাজিদকে দিকনির্দেশনা দেবেন! এ প্রসঙ্গে আবু সুফিয়ান শাকিল বলছিলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ইন্সট্রাক্টর কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। যাদের বই পড়ে ট্রেনিং করাই, তাদের সংস্পর্শে যেতে পারাটা আমার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারও সমৃদ্ধ করবে। যা আমি কোচিংয়ে কাজে লাগাতে পারব। মূলত এ কারণেই সাকলাইন মোস্তফা সাজিদের সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
০৪ মার্চ, ২০২৪

সাফল্যের শর্টকাট পথ খুঁজছে দাবা
এনামুল হোসেন রাজিবের পর কোনো গ্র্যান্ডমাস্টার নেই। ১৬ বছরের বন্ধ্যত্ব ঘোচাতে দাবাড়ুদের চেয়ে মরিয়া সংগঠকরা! নেওয়া হয়েছে সাফল্যের ‘শর্টকাট পথ’ বিশেষায়িত প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্যোগ। দাবায় বিশেষায়িত প্রতিযোগিতার ডিজাইনগুলো এমনভাবে করা হয়, যেখানে টাইটেলধারী দাবাড়ু থাকেন ঠিকই, কিন্তু মানের দিক দিয়ে তারা থাকেন দুর্বল। এমন প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্দেশ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দাবাড়ুদের নর্ম বা টাইটেল অর্জনে সহায়তা করা। এ ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের আবার দুটি উদ্দেশ্য থাকে। প্রথমত, নির্দিষ্ট ছকের মাধ্যমে কিছু দাবাড়ুকে নর্ম ও টাইটেল অর্জন করানো। দ্বিতীয়ত, এ আয়োজন দিয়ে মুনাফা তোলা। বিশ্ববাসীকে এমন প্রতিযোগিতা আয়োজনের ধারণা প্রথম দিয়েছিল মধ্য ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি। ভিয়েতনামও সম্প্রতি এমন প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে। এ নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। দাবায় বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তিং লিরেন এমন আয়োজনের কট্টর সমালোচক। বাংলাদেশে বিশেষায়িত প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোর বিরোধী গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজিব। বাংলাদেশের পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য কালবেলাকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আপনি হয়তো নর্ম কিংবা টাইটেল অর্জন করবেন। কিন্তু এমন উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে দেশের দাবায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এভাবে নর্ম ও টাইটেলের পেছনে না ছুটে বরং নাম বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। তাহলে নর্ম ও টাইটেল এমনিতেই হবে। বৃদ্ধি পাবে দেশের দাবার মান।’ কেবল প্রথম বাংলাদেশি নন, উপমহাদেশের প্রথম দাবাড়ু হিসেবে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব লাভ করেন নিয়াজ মোরশেদ। ৫৭ বছর বয়সী দাবাড়ুর দেখানো পথ ধরে পরের ২১ বছরে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব লাভ করেছেন আরও চারজন— জিয়াউর রহমান, রিফাত বিন সাত্তার, মোল্লা আব্দুল্লাহ আল রাকিব ও এনামুল হোসেন রাজিব। গত দেড় দশকের বেশি সময়ে কোনো গ্র্যান্ডমাস্টার পায়নি বাংলাদেশ। ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব লাভ করেছেন বাংলাদেশের পাঁচ দাবাড়ু—আবু সুফিয়ান শাকিল, মিনহাজউদ্দিন আহমেদ সাগর, শামীমা আক্তার লিজা, শারমিন সুলতানা শিরিন ও ফাহাদ। এ পরিসংখ্যানে মনে হতে পারে সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১১ সালের পর থেকে এশিয়ান জোনাল দাবায় ভারতের গ্রুপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাংলাদেশ। নিজেদের গ্রুপে ভারত না থাকায় জোন-৩.২-এ বাংলাদেশের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। জোনাল দাবার নারী ও পুরুষ ওপেন বিভাগের চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু সরাসরি আন্তর্জাতিক মাস্টার খেতাব অর্জন করে থাকেন। এ সুযোগের ফাঁক গলে দেশে খেতাবধারী বেড়েছে, এখনো বাড়ছে। সেভাবে মান বাড়েনি। বিশেষায়িত প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ দাবার ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না তো! বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবকিছুরই নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুটি দিক থাকে। বিশেষায়িত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও সেটা আছে।’ উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ বিশেষায়িত প্রতিযোগিতার আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এমন আয়োজনের আরেক উদ্যোক্তা দাবা সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী মাহমুদা হক চৌধুরীর (মলি) প্রতিষ্ঠান এলিগ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমি।
২৬ জানুয়ারি, ২০২৪
X