স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের নবযাত্রা
দেশের ফুটবলে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের ইতিহাস অতোটা পুরোনো নয়। মাত্র ১৯ বছর বয়সী ক্লাবটি দেশের শীর্ষ লিগে এসেছে মাত্র দুই বছর আগে। অভিষেকটা তারা রাঙিয়েছিল দেশের ফুটবলের পাওয়ার হাউস বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে। স্বপ্নের মতো সেই শুরুকে অবশ্য বেশি দূর নিতে পারেনি তারা। প্রথম মৌসুমেই অবনমিত হতে হয় তাদের। পরের মৌসুমে দ্বিতীয় স্তর থেকে নামতে হয় তৃতীয় স্তরে। দুইবার অবনমনে ক্লাবের কর্তাদেরও পতন হয় তাদের জায়গায় দায়িত্বে আসে এক ঝাঁক নতুন মুখ। আর নতুনরা দায়িত্ব নিয়েই দেখছেন নতুন করে ঘুঁড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। ক্লাবটির দায়িত্বে এই সব নতুন মুখের একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ফেরা। সেটা অবশ্য এত সহজ হবে না। সে জন্য দুই ধাপ পেরুতে হবে তাদের। তাদের প্রথম লক্ষ্য সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লিগ জেতা। তাদের সেই স্বপ্নে পথদ্রষ্টা হিসেবে পেয়েছে তারা পরীক্ষিত কোচ কামাল বাবুকে। আর পেছন থেকে রয়েছে বড় স্বপ্নে বিভোর একঝাঁক কর্মকর্তা। নতুন সভাপতি সৈয়দ গোলাম রূপসের নের্তৃত্বে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ চাইছে মাঠে সেরা হয়ে ফিরতে। দলটির কোচ কামাল বাবু বাংলাদেশের ফুটবলে পরীক্ষিত সৈনিক। প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের বড়-ছোট অনেক দলকে সাফল্য এনে দেওয়া এই কোচ ছিলেন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে। তবে তার নিজ এলাকার ক্লাব স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের কর্তাদের অনুরোধে ফেলতে না পেরে দায়িত্ব নেন শক্তিশালী দল গড়ার। নিজের মতো করে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে পছন্দের ফুটবলারদের একত্রিত করে কমলাপুল স্টেডিয়ামে আয়োজন করেন ট্রায়ালে। যেই ট্রায়ালের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বেছে নেন ৩৪ জনকে। ক্লাব তাদের জন্য ব্যবস্থা করেছে উন্নত আবাসন ও খাওয়া দাওয়ার। ক্লাবটির তরুণ সভাপতি রূপস বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি যারা চ্যাম্পিয়নশিপ এনে দেন, সেই খেলোয়াড়রাই থাকেন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। ভালো থাকার জায়গা, ভালো খাবার জুটে না। তাদের ভালো না রেখে কি করে ভালো ফলাফলের আশা করা যায়?' এ ছাড়াও খেলোয়াড়দের আশ্বাস দিয়েছেন রূপস, 'আমি কথা দিচ্ছি, তোমাদের জন্য সর্বোচ্চ মানের ফুডিং-লজিং এবং লজিস্টিক সাপোর্ট আমরা নিশ্চিত করবো। তোমাদের সেরা মানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে, ক্রীড়া সরঞ্জামাদীও হবে সর্বোচ্চ মানের। যাতে অন্য ক্লাবের খেলোয়াড়রা তোমাদের দেখে হিংসে করে। আমাদের সর্বাত্ম চেষ্টা থাকবে তোমাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার। তোমরা কেবল নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করো। আমাদের লক্ষ্য একটাই ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া। চ্যাম্পিয়ন হতে হতে প্রিমিয়ার লিগে ফেরা।' দেশের ফুটবলের সেরা স্কাউট কোচের তকমা আগেই পেয়েছিলেন। ঢাকার ফুটবল ছাড়াও সারা দেশের ফুটবলে থেকে বড় প্রতিভা এনে দিয়েছেন তিনি। স্বাধীনতাকে নিয়ে তিনিও শোনালের আশার কথা, 'আমরা সাদা দেশে ঘুড়ে ঘুড়ে খেলোয়াড় সংগ্রহ করেছি। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগ থেকে খেলোয়াড় এনেছি। তাদের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। ক্লাব কর্তারা কথা দিয়েছেন খেলোয়াড়দের প্রিমিয়ার মানের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করবেন। আমরাও আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। সেরার লক্ষ্য হয়েই খেলবো। তবে মনে রাখতে হবে শিরোপার সঙ্গে ভাগ্যও জড়িত।' ২০২২ প্রিমিয়ার লিগে তলানীতে শেষ করলেও বসুন্ধরা, সাইফের মতো দলকে হারানো, আবাহনী, শেখ জামালের মতো দলগুলোকে রুখে দিয়ে আশা জাগিয়েছিল স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ। প্রথম ম্যাচে কিংসকে হারানোর সেই স্মৃতিটা পুঁজি করে একঝাঁক নতুনমুখ ফেরার স্বপ্নে শুরু করেছেন নবযাত্রা।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সংস্কারে ব্যাংক খাতের নবযাত্রা
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নানা নেতিবাচক প্রবণতা কাটাতে দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা (মার্জার) হচ্ছে। এরই মধ্যে এ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ব্যাংকগুলোকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে এরপর একীভূত হতে বাধ্য করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন উদ্যোগকে দেশের ব্যাংক খাতের নবযাত্রার সূচনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, ‘ব্যাংক মার্জার করলে এ খাতে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে এটা কতখানি কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর। কারণ একটি সবল ব্যাংক যখন একটি দুর্বল ব্যাংকের দায় নেবে, তখন দুর্বল ব্যাংকটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে—দুর্বল ব্যাংকের ক্ষতির দায় কে নেবে? এক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাই সরকার যদি আন্তরিকভাবে এটি চায়, তাহলেই কেবল বাংলাদেশ ব্যাংক এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে।’ জানা গেছে, বর্তমান মেয়াদে দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার। সেই লক্ষ্যে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শুরু হয়েছে ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া। সেইসঙ্গে ব্যাংকের পরিচালকদের যোগসাজশে নিজেদের মধ্যে ঋণ বিতরণ বন্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায় ও বিদেশে অর্থ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি অর্থ পাচার বন্ধ করতেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। পাচারের টাকা দেশে ফেরত এনে বিনিয়োগের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই দেশের ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে ডজনখানেকের বেশি ব্যাংক মূলধন ঘাটতি ও তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সমস্যাগ্রস্ত এসব ব্যাংককে ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জার) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে এই দুই ব্যাংকের চুক্তি স্বাক্ষর হবে। কেবল পদ্মা ব্যাংক নয়, খেলাপি ঋণ এবং নানা কেলেঙ্কারিতে এক ডজনের বেশি ব্যাংকের অবস্থা নাজুক। এসব ব্যাংক এখন দেশের পুরো ব্যাংক খাতের জন্য সমস্যা হয়ে ওঠায় আর্থিক খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে ব্যাংক একীভূতকরণ বা মার্জারের দিকে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, দেশে ব্যাংকের সংখ্যা অর্থনীতির আকারের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাও মনে করছে, এ সংখ্যা কমানোর দরকার। তবে বর্তমানে সক্রিয় ৬১টি ব্যাংক থেকে কমিয়ে কতটি রাখা হবে— সে ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ব্যাংক, যাদের ঋণ ও আমানতের অঙ্ক ১০ হাজার কোটি টাকার আশপাশে, তাদের দিকেই প্রথম ধাপে নজর দেওয়ার কথা জানাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এদিকে একীভূতকরণের এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যাংক খাতের স্বার্থেই দ্রুত এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন তারা। অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ‘মার্জার করতে চাইলে খুব বেশি সময় নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ এতে দুর্বল ব্যাংকগুলো আরও বেশি অর্থ পাচার করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে এখনই দুর্বল ব্যাংকের আমানত গ্রহণ এবং বিতরণ ছাড়া অন্য সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’ ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক মানের ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হবে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে নানা ধরনের স্পেকুলেশন হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংক একীভূত হোক না কেন, এতে আমানতকারীদের স্বার্থের কোনো হানি হবে না, সেখানে আমানতকারীদের স্বার্থ শতভাগ রক্ষা করা হবে।’ এদিকে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া ব্যাংকের আমানতকারীদের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণেরও তাগিদ দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘অনেক দেশেই ব্যাংক মার্জারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমাদের এটা করার জন্য সেসব দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো আমানতকারীদের স্বার্থের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। কারণ সবল এবং দুর্বল উভয় ব্যাংকই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং দুর্বল ব্যাংকের শেয়ারের দায় যদি কোনো সবল ব্যাংক নেয়, তাহলে সেই ব্যাংকের শেয়ারের দামও কমে যেতে পারে।’ অন্যদিকে দেশের ব্যাংক খাতের সংকট নিরসনে শুধু একীভূতকরণই যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মার্জার আসলে কম বেশি সব দেশেই হয়। তবে আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতের সমস্যা এটা দিয়ে সমাধান করা যাবে না। কারণ বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ এবং গুটি কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত ঋণ। যার অধিকাংশই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিদেশে পুঁজি পাচার বর্তমানে অর্থনীতির অন্যতম সমস্যা। ব্যাংক মার্জারের মাধ্যমে এটার কোনো সমাধান মিলবে না।’ সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘অধিগ্রহণ করলে দুর্বল ব্যাংকের গ্রাহক, আমানতকারীর বাজারটি পাবে সবল ব্যাংক। তেমনি দুর্বল ব্যাংকের জনবল, খেলাপি ঋণ, বেনামি ঋণের দায়ও নিতে হবে সবল ব্যাংককে। ফলে দুর্বল ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটটা যোগ হবে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে। এতে ভালো ব্যাংকটির খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাবে, প্রভিশন রাখতে গিয়ে মুনাফা কমবে প্রথমদিকে। আর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার চাপও বাড়বে। এসব সামলে নিতে পারলেই সবল ব্যাংকটি লাভবান হতে পারবে। অবশ্য এর ফলে ব্যাংকের কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কাও রয়েছে।’ একই আশঙ্কা প্রকাশ করে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে পারলেও কর্মী ছাঁটাইয়ের শঙ্কা থাকবে। কেননা, একই এলাকায় উভয় ব্যাংকের দুটি শাখা থাকলে সেখানে একটি শাখা কমানো হবে। ফলে ওই শাখার কর্মীরা কোথায় যাবেন? শুধু শাখা পর্যায়ে নয়, ব্যাংকের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিয়োজিত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি হারাতে পারেন।’ অবশ্য একীভূত হলেও দুর্বল ব্যাংকের কোনো জনবল তিন বছরের আগে ছাঁটাই বা বাতিল করা যাবে না—এমন শর্ত রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৭ দফা ‘রোডম্যাপে’। ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে এই ‘রোডম্যাপ’ বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে।
১৮ মার্চ, ২০২৪

নতুন বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের নবযাত্রা
করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ—এ দুটি অভিঘাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব শুরু হয়েছিল, তা থেকে এখনো উত্তরণ ঘটেনি। স্বাভাবিকভাবেই এর আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। তবে সব সংকট মোকাবিলা করে রূপকল্প-২০৪১ সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরুর কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। সম্প্রতি বন্দর ভবনে নানা পরিকল্পনাসহ বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের তুলে ধরেন তিনি। এই কর্মপরিকল্পনা নতুন বছর থেকেই শুরু হবে বলে জানান তিনি। বন্দর-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ভিশন-২০৪১ অর্জনসহ এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দর বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে এখনই নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন বছরে একেবারেই নতুন করে পরিকল্পনা সাজিয়েছে সংস্থাটি। নতুন যাত্রা শুরু হতে পারে ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি থেকেই। সেদিন লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডেনমার্কভিত্তিক বিশ্বখ্যাত টার্মিনাল অপারেটর এপিএম টার্মিনালের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ‘বাংলাদেশ-ডেনমার্ক যৌথ প্ল্যাটফর্ম সভায়’ উপস্থাপন করা হবে। এ টার্মিনাল নির্মাণের কাজও আগামী বছর শুরুর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক-ভুক্ত মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে শুরু হতে পারে এর নির্মাণকাজ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্রাধিকার প্রকল্প বে-টার্মিনালের মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ ২০২৪-এর মাঝামাঝি শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওই টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ (এডি পোর্টস) ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। বে-টার্মিনালের কনটেইনার টার্মিনাল-১ ও ২ নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য যথাক্রমে পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আগামী বছর চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আশার কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বে-টার্মিনালের চতুর্থ টার্মিনাল হিসেবে গ্যাস ও তেল টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এই টার্মিনাল নির্মাণের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়-ব্যয়ের সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের সেরা এ বন্দরের মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে জাহাজসেবা এবং মালপত্র হ্যান্ডলিং খাত থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আয় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজস্ব ব্যয় প্রায় হ্রাস পেয়েছে ১০ শতাংশ। উদ্বৃত্ত প্রায় ২২ শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল কালবেলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে যে পরিমাণ কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় তা মূলত বাংলাদেশেরই অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন। চট্টগ্রাম বন্দরের এই ধারাবাহিক কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চিত্র পরিস্ফুটিত হয়। এতে বোঝা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি শত প্রতিকূলতার মধ্যে এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি অংশীদারত্বের বিষয়টি একটি দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবভিত্তিক বেসরকারি গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআইকে সম্পৃক্ত করেছে।’ জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আরএসজিটিআই এর মধ্যে বহু আকাঙ্ক্ষিত কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বন্দর অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যসহ দূরপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রীসহ ৪০ বাণিজ্য প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ সময় তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। ৩০ লাখের ক্লাবেই থাকছে চট্টগ্রাম বন্দর: ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর ৩০ লাখ ৪ হাজার ৫০৫টি টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর ১১ কোটি ৮৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭৬ টন কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে। এ বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা পড়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মন্থরতা পরিলক্ষিত হলেও বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এর উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের সাফল্য নিয়ে ২০২৪ সালের মহা-কর্মপরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩
X