বুধবার থেকে সব পোশাক কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত
চলমান পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে বন্ধ হওয়া সব পোশাক কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিবেশ শান্ত হয়ে এসেছে দাবি করে বুধবার (১৫ নভেম্বর) থেকে চালুর কথা জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বিজিএমইএ সভাপতি জানান, শ্রম আইনের ১৩/১ ধারায় বন্ধ হওয়া সব পোশাক কারখানা আগামীকাল (বুধবার) থেকে চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা কাজে আসবেন তাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে। এর আগে রোববার (১২ নভেম্বর) পোশাক কারখানায় কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে ১৩০টি পোশাক কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আশুলিয়া, কাশিমপুর, মিরপুর ও কোনাবাড়ী এলাকার প্রায় ১৩০টি পোশাক কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এসব কারখানার মালিকরা মূলত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে কারখানার সব বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে যেসব কারখানা শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহী, সেগুলোতে কাজ চলছে। তাদের কাজ চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।  লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনা মহামারির কারণে দেশের মধ্যে ২০২০-২১ সালে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ৩১৭। আর করোনাপরবর্তী সময়ে অন্যান্য কারণে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ’র সদস্যপদ গ্রহণ করলেও কালের পরিক্রমায় ৩৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ সালে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ৩১৭ এবং পরবর্তীতে অন্যান্য কারণে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফারুক হাসান বলেন, শিল্পের অভ্যন্তরের গভীরতম সংকটের বিষয়টি গণমাধ্যমে সেভাবে প্রকাশিত উঠে আসছে না। কতখানি সংকটের মধ্যে থেকে, কতখানি অনিশ্চয়তা সঙ্গে নিয়ে কারখানাগুলো চলছে তা বন্ধ হওয়ার কারখানার পরিসংখ্যানই বলে দেয়। কোনো উদ্যোক্তাই চান না, তার অক্লান্ত কষ্টে তিলে তিলে গড়া ওঠা শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাক। কিন্তু বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কিছু বিষয় আছে যার প্রভাব থেকে শিল্প চাইলেও বের হতে পারে না, শিল্পকে তা গ্রহণ করতেই হয়। এটাই এ শিল্পের কঠিন বাস্তবতা। অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আমরা যখন ‘বৈশ্বিক ও আর্থিক’-এ দ্বিমুখী চাপের মধ্যে থেকেই টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছি, ঠিক তখন শিল্পকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা অপতৎপরতা। বিশেষ করে আমাদের শান্ত শ্রমিক গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত কিছুদিন ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা। তাদের দাবি, ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর যে ঘোষণা এসেছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট নন। সরকার ৫৬ শতাংশ বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও, শ্রমিকদের মধ্যে সামান্য একটি অংশের এই হারে বেতন বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে যারা অভিজ্ঞ শ্রমিক তাদের বেতন বেড়েছে ২০-৩০ শতাংশ।
১৪ নভেম্বর, ২০২৩

পোশাক কারখানা মালিকদের জন্য বিকেএমইএর ৭ নির্দেশনা
দেশের প্রধানতম রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের জন্য ৭টি সুনিদিষ্ট নির্দেশনা জারি করেছে খাত সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিকেএমইএ। এর মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ; নিয়োগ বন্ধ রাখা; কারখানা তথ্য সরবরাহে সচেতনতা বাজায় রাখা; শ্রমিকদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা; সিসি টিভির ফুটেজ নিরাপদে সংরক্ষণ করা; শ্রমিকদের অভিযোগ গুরুত্বসহ সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া এবং শ্রমিক কর্মবিরতি বা কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কারখানা মালিকদের নিকট পাঠিছেন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান।  চিঠিতে তিনি বলেন, নিটশিল্প বর্তমানে একটি ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি সারা বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের ডামাডোলের কারণে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচকভাবে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই দেশের প্রধানতম রপ্তানি খাত নিটশিল্প খাতে এর প্রবাহ আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করতে শুরু করেছি। তিনি বলেন, এর মধ্যেই ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষিত হয়েছে, যা কষ্টকর হলেও বাস্তবায়ন করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বা মহল এই সুযোগে এই শিল্পটিকে ধ্বংস করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছে। মনে রাখতে হবে, দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এবং শ্রমিকদের স্বার্থে এই শিল্পকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার স্বার্থে সামনের দিনগুলোকে বিকেএমইএর নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলো মেনে চলার জন্য সহযোগিতা কামনা করছি। বিকেএমইএর ৭ নির্দেশনায় কারখানা মালিকদের কারখানায় যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা; জরুরি প্রয়োজন না হলে কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রাখা, কারখানার গেইটে ‘নিয়োগ বন্ধ’ নোটিশটি দৃশ্যমান করার ব্যবস্থা করা। নতুন নিয়োগ প্রয়োজন হলে শ্রমিকের সব তথ্য যাচাইপূর্বক নিয়োগ প্রদান করা। প্রয়োজনে ওয়ার্কার্স ডাটাবেইজসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত করা।  তথ্য সরবরাহের সচেতন হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, বিকেএমইএর লিখিত অনুমোদন ব্যতীত তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট কারখানার তথ্য বা উপাত্ত প্রদান থেকে বিরত থাকা; তথ্য ভাণ্ডারের বিষয়ে বলা হয়েছে, কারখানার ওয়ার্কার ডাটাবেইজ আবশ্যিকভাবে হালনাগাদ করতে হবে। কারণ, শ্রমিকদের যে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিয়োগসংক্রান্ত তথ্যাদি অত্যাবশ্যকীয়; নিরাপত্তার বিষয়ে কারখানার সব ধরনের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনিক তদারকি বাড়াতে হবে এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিরাপদে সংরক্ষণে রাখতে হবে। নিয়মিতভাবে শ্রমিকদের সাথে আলোচনাসহ তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো শোনা ও তা লিপিবন্ধ করা এবং কোনো সমস্যা চিহ্নিত হলে তা দ্রুত সমাধান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।  কারখানা বন্ধের বিষয়ে বলা হয়েছে, যেসব কারখানার শ্রমিকরা কাজ করা থেকে বিরত থাকবে বা কারখানা ছেড়ে বেড়িয়ে যাবে, সেসফল কারখানার মালিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যথাযথ আলোচনা সাপেক্ষে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ১৩(১) এর বিধান মোতাবেক কারখানা বন্ধ করে দিতে পারেন।
১৪ নভেম্বর, ২০২৩

একটি বাদে সাভার-আশুলিয়ায় খুলেছে সব পোশাক কারখানা
শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি কারখানায়। ফলে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর আওতায় ১ হাজার ৭৯২টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আজ কারখানাগুলোর একটি বাদে বাকিগুলো খুলেছে। সকাল থেকে এসব কারখানায় কাজ শুরু করছেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর আওতাধীন সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ১ হাজার ৭৯২টি কারখানার মধ্যে আজ একটিমাত্র কারখানা ছাড়া বাকিগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কারখানায় সবগুলো সেকশনে কাজ শুরু হয়নি। তবে শুধু শ্রমিকরা কাজ না করায় নাবা নিট কারখানাটি এখনো বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। আজ সকালে আশুলিয়ার জামগড়া, বেরন, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, জিরাবো এলাকা ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ কারখানার সামনে টানানো হয়েছে কারখানা খোলার নোটিশ। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের জলকামানসহ নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা। এনভয় কমপ্লেক্সের সামনের ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা এক অপারেটর কালবেলাকে বলেন, গতকাল রাতে সুপারভাইজার আমাদের কাজে আসতে বলছে তাই আসছি। দেখা যাক কী হয়। তবে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পেটের দায়ে কাজে আসলাম। আমি মনে করি এটি আমাদের ওপর অসম আচরণ।
১৪ নভেম্বর, ২০২৩

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ১৩০ পোশাক কারখানা : বিজিএমইএ
কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কারখানার সম্পত্তি রক্ষার্থে ১৩০টি পোশাক কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।  রোববার (১২ নভেম্বর) উত্তরায় বিজিএমইএ অফিসে ‘পোশাকশিল্পে ন্যূনতম মজুরি ও বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি’-বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আশুলিয়া, কাশিমপুর, মিরপুর ও কোনাবাড়ি এলাকার প্রায় ১৩০টি পোশাক কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এসব কারখানার মালিকরা মূলত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে কারখানার সব বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে যেসব কারখানা শ্রমিকরা কাজ করতে আগ্রহী, সেগুলোতে কাজ চলছে। তাদের কাজ চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।  লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনা মহামারির কারণে দেশের মধ্যে ২০২০-২১ সালে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ৩১৭টি। আর করোনা-পরবর্তী সময়ে অন্যান্য কারণে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ এর সদস্যপদ গ্রহণ করলেও কালের পরিক্রমায় ৩৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ সালে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা ৩১৭টি এবং পরবর্তীতে অন্যান্য কারণে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফারুক হাসান বলেন, শিল্পের অভ্যন্তরের গভীরতম সংকটের বিষয়টি গণমাধ্যমে সেভাবে প্রকাশিত উঠে আসছে না। কতখানি সংকটের মধ্যে থেকে, কতখানি অনিশ্চয়তা সঙ্গে নিয়ে কারখানাগুলো চলছে তা বন্ধ হওয়ার কারখানার পরিসংখ্যানই বলে দেয়। কোনো উদ্যোক্তাই চান না, তার অক্লান্ত কষ্টে তিলে তিলে গড়া ওঠা শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাক। কিন্তু বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ-বহির্ভূত কিছু বিষয় আছে যার প্রভাব থেকে শিল্প চাইলেও বের হতে পারে না, শিল্পকে তা গ্রহণ করতেই হয়। এটাই এ শিল্পের কঠিন বাস্তবতা। অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা যখন ‘বৈশ্বিক ও আর্থিক’-এ দ্বিমুখী চাপের মধ্যে থেকেই টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছি, ঠিক তখন শিল্পকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা অপতৎপরতা। বিশেষ করে আমাদের শান্ত শ্রমিক গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে।
১২ নভেম্বর, ২০২৩

অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ৯ পোশাক কারখানা
শ্রমিক অসন্তোষ, বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার ৯টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকালে কারখানাগুলোর সামনে বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গাজীপুরে তিনটি এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের হামলা-ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে দিনভর উত্তপ্ত ছিল নগরীর কয়েকটি এলাকা। এ সময় শ্রমিকরা কোনাবাড়ী এলাকায় তুসুকা নামের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। কারখানার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওইদিনই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ২২টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৯টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। শুক্রবার সকালে কোনাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুসুকা কারখানা। ওই কারখানার সামনে সাঁটানো হয়েছে একটি বন্ধের নোটিশ। নোটিশে লেখা আছে, ‘এতদ্বারা তুসুকা জিন্স লি., তুসুকা ট্রাউজার্স লি., তুসুকা প্রসেসিং লি., ভুসুকা প্যাকেজিং লি. এবং নিডেল আর্ট এমব্রয়ডারি লি. এর সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বৃহস্পতিবার অজ্ঞাতনামা কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কারখানার অভ্যন্তরে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে কর্মকর্তাদের মারধর, জখম করে। কারখানার অভ্যন্তরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা। এ অবস্থায় কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক পরবর্তী কাজের নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ এ কারখানার মহাব্যবস্থাপক মাসুম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরবর্তীতে কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’ এ ছাড়া কোনাবাড়ী আমবাগ রোডের এমএম নিটওয়্যার লিমিটেড ও কোনাবাড়ী জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের কারখানার এক নারী শ্রমিক আহত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ওই গ্রুপের তিনটি কারখানার সব  কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।  গাজীপুর শিল্পপুলিশ জোন-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরের কোনাবাড়ী ও আশপাশের এলাকার ২২টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার খবর তাদের কাছে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।  গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে মজুরি বোর্ডে বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা করা হলে সেটি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তবে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কোথাও বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।
১০ নভেম্বর, ২০২৩

আশঙ্কা নিয়েই পোশাক কারখানা খুলবে আজ
নিম্নতম মজুরির দাবিতে চলমান সহিংস আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বন্ধ হয়ে যাওয়া তৈরি পোশাক কারখানা আজ শনিবার খুলবে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের মজুরি ঘোষণার আগেই আন্দোলনে নামে তৈরি পোশাক শিল্পশ্রমিকরা। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুর, আশুলিয়া ও গাজীপুরে ৪০০ থেকে ৫০০ কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিল্প সুরক্ষায় মালিকপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। খাত-সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, আশঙ্কা থাকলেও শনিবার কারখানা খুলবে মালিকরা। শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিলে বা কাজ শুরুর পর বাইরে থেকে আক্রমণের শিকার হলে কারখানা তাৎক্ষণিক বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি তারা এটাও আশা করছেন, সরকার শ্রমিক, মালিক ও শিল্পের স্বার্থে যে মজুরি ঘোষণা করবে, তা মালিকরা মেনে নেবে। যেজন্য শ্রমিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। শিল্পাঞ্চল পুলিশের আওতাধীন শিল্পকারখানার পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, দেশে তৈরি পোশাক-সংশ্লিষ্ট মোট কলকারখানার সংখ্যা ৯ হাজার ১৭৭টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ এবং বেপজার কারখানা রয়েছে। আর এসব কারখানায় ৪৩ লাখ ৮ হাজার ৫২১ শ্রমিক কাজ করছেন। নিম্নতম মজুরি বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে বোর্ড এরই মধ্যে সব পক্ষকে নিয়ে পাঁচটি সভা করেছে। বোর্ডে মালিকপক্ষ নিম্নতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা এবং শ্রমিকপক্ষ ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার মজুরি প্রস্তাব করেছে। আর দুই পক্ষের প্রস্তাবের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য থাকায় বোর্ড চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা উভয়পক্ষকে পার্থক্য কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে মজুরির দাবিতে আন্দোলনে নামে শ্রমিকরা। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। আহত শ্রমিকদের একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও চাঙ্গা হয়ে আশুলিয়া ও মিরপুর অঞ্চলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে কারখানায় আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জানমালের ক্ষতি হয়। মালিকপক্ষ দাবি করছে, মজুরি চূড়ান্ত হওয়ার আগে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। বহিরাগত দুষ্কৃতকারীদের ইন্দনে শ্রমিকরা অশান্ত হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি দৈনিক কালবেলাকে বলেন, আমরা কারখানা খোলা রাখতে চাই। আমরা বলেছি, সরকার মজুরির বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা মেনে নেব। এরপর অস্থিরতা থাকার কথা নয়। সে লক্ষ্যে শনিবার কারখানা খোলার জন্য বিজিএমইএর পক্ষ থেকে মালিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে শ্রমিক কাজে যোগ দিলে কারখানা চলবে, আবার যোগ দানের পর বাইরে থেকে কারখানা আক্রান্ত হলে ১৩(১) ধারায় বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া কারখানা ও জানমালের নিরাপত্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সভা করেছি। আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়েছি। তৈরি পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট আরেকটি সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালবেলাকে বলেন, কারখানা খোলার বিষয়ে আমাদের সংগঠনের সিদ্ধান্ত হলো, যেসব কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ আছে, সেগুলো বন্ধ থাকবে। নতুন করে কোনো কারখানা আক্রান্ত হলে ১৩(১) ধারায় বন্ধ করা হবে। সেক্ষেত্রে শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবে না। তিনি বলেন, যেসব জায়গায় কারখানায় আক্রমণ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়েছে, সেখানে কোনো কারখানা থেকে শ্রমিক বের হয়ে এসব করেছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এরা বহিরাগত, কারখানায় আক্রমণ করে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের আক্রান্ত করছে। আমি একে শ্রমিক আন্দোলন মনে করি না। যারা এটি করছে, তারা শ্রমিক না, বহিরাগত, দুষ্কৃতকারী। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন কালবেলাকে জানান, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি। কোনো কারখানা আক্রান্ত হলে ১৩(১) ধারায় বন্ধ করে দেওয়া হবে। যেসব কারখানা আক্রান্ত হয়েছে, তা বহিরাগতদের দ্বারা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের অনেক তথ্য আমাদের হাতে এসেছে, দেখা যাচ্ছে শ্রমিকদের আন্দোলন বলা হলেও বহিরাগতদের উপস্থিতি রয়েছে। মজুরি বোর্ডের শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেছেন, কারখানা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে কারখানার বাইরে গিয়ে আন্দোলন করা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। এরই মধ্যে সরকার মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত মজুরির লক্ষ্যে আমরা শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তা ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যার কারণে এ শিল্পের জন্য এবং শ্রমিকদের ন্যায়সংগত দাবিগুলো উপেক্ষিত হয়। আপনারা ধৈর্য ধরেন মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ করবে।
০৪ নভেম্বর, ২০২৩

লিড স্বীকৃতি পেল পরিবেশবান্ধব আরও ২ পোশাক কারখানা
বাংলাদেশের আরও দুই পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানাকে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। কারখানা দুটি হলো- নারায়ণগঞ্জের ইউনিভার্সাল মেনসওয়্যার ও ঢাকার প্যাসিফিক ব্লু 'জিন্স ওয়্যার' লিমিটেড। এই দুটি কারখানাকে গোল্ড সনদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ রেটিং পাওয়া ১৫টি লিড পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ১৩টি বাংলাদেশে।’ বিজিএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী, সদ্য স্বীকৃতি পাওয়া এই দুই কারখানাসহ দেশে এখন পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার সংখ্যা ২০২টি। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭৩টি প্লাটিনাম, ১১৫টি গোল্ড, ১০টি সিলভার ও চারটি গ্রিন সনদ পাওয়া পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা আছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ এক বছরে সর্বোচ্চসংখ্যক লিড সনদ পায় পোশাক কারখানা। ওই বছর ৩০টি কারখানা লিড সনদ পায়। এর মধ্যে ১৫টি প্লাটিনাম ও ১৫টি গোল্ড সনদ। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত আরও ২০ কারখানা এই স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি সম্মানজনক প্লাটিনাম ও ৭টি গোল্ড রেটিং অর্জন করেছে। এর মধ্যে একটি কারখানা বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ রেট অর্জন করেছে। এ ছাড়া আরও ৫০০ কারখানা লিড সনদ পাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পর্যবেক্ষণে নেই ২৩ শতাংশ পোশাক কারখানা
সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর গত ১০ বছরে দেশের তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এরপরও ২৩ শতাংশ কারখানা পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও নিয়মতান্ত্রিকতার বাইরে রয়েছে। এসব কারখানায় নিরাপত্তাঝুঁকি থেকেই গেছে। এ অবস্থায় পোশাক খাতের অর্জন ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীতে গতকাল বুধবার তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা অর্জন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির এই প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামীম আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০২৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই বিপর্যয়-পরবর্তী এক দশকে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স গঠন এবং তাদের পরিচালিত কার্যক্রম কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা তদারকির ক্ষেত্রে শক্তিশালী দিকনির্দেশনা দিয়েছে। গত ১০ বছরে পোশাক খাতে বড় দুর্ঘটনা হয়নি। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চলে যাওয়ার পর দুর্ঘটনা বাড়ছে। সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানায় কয়েক বছর ধরে অগ্নিদুর্ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২০ সালে ১৭৭টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছিল। গত বছর সেটি বেড়ে হয়েছে ২৪১টি। অন্যদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা এখনো শূন্যে নামেনি। ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৩ পোশাক শ্রমিক। আর গত বছর মারা গেছেন চারজন। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা তদারকিতে এই বিশেষ অগ্রগতি হলেও অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স চলে যাওয়ার পর নতুন উদ্যোগগুলোর অর্জন ধরে রাখার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনা তদারকির দায়িত্বে থাকা দেশীয় সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিকভাবে পালন করছে কি না? গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের সংশোধন সমন্বয় সেল (আরসিসি) শুরুর দিকে ১ হাজার ৫০০-এর বেশি কারখানা তদারকিতে ছিল। কিন্তু তা এখন কমে ৬৭৯ কারখানায় এসেছে। কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের আওতায় আরসিসি কাজ করে থাকে। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিলের (আরএসসি) আওতায় পোশাক খাতের ১ হাজার ৮৮৯ কারখানা রয়েছে। অ্যালায়েন্সের কাছ থেকে বুঝে নেওয়া বা তদারকিতে থাকা নিরাপনের আওতায় আছে প্রায় ৩২৫ কারখানা। কিন্তু এই তিন প্রতিষ্ঠানের কারখানা পর্যবেক্ষণের সংখ্যার হিসাব আমরা মেলাতে পারছি না। কারণ এই তিন সংস্থার বাইরে বড়সংখ্যক কারখানা রয়ে গেছে। এর সংখ্যা প্রায় ২৩ শতাংশ। এসব প্রতিষ্ঠান রপ্তানি সংশ্লিষ্ট হলেও পর্যবেক্ষণের বাইরে রয়ে গেছে। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। নিরাপত্তা ত্রুটিযুক্ত কারখানার উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ করার মতো আইনি ক্ষমতা তাদের দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে আরএসসি ও ডিআইএফইর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ দরকার। অন্যদিকে আরএসসিকে ফলোআপ পরিদর্শন বাড়াতে হবে। কারখানা পরিদর্শনে বয়লার পরিদর্শনকে যুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, আমরা নতুন করে অ্যাকর্ডকে ফেরাতে বলছি না। অ্যাকর্ড সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে, তাদের সেই সুনাম ধরে রাখা উচিত। আসলে পরিদর্শন কার্যক্রমের মান ও কমপ্লায়েন্স দেখতে চাইছি। কারণ কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
৩১ আগস্ট, ২০২৩

একদিন দেরিতে বেতন দেওয়ায় আন্দোলন-ভাঙচুর, পোশাক কারখানা বন্ধ
গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রমিকদের বেতন পেতে একদিন দেরি হওয়ায় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন ও প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। এতে অনির্দিষ্টিকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত টঙ্গীর ভরান এলাকার পিমকি এ্যাপারেলস লি. প্রতিষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কয়েক দিন ধরে শ্রমিকরা ওভার টাইমের টাকার জন্য আন্দোলন করে আসছিল। এরই মধ্যে প্রতি মাসের ৭ তারিখ বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও ৮ আগস্ট বেতন দেয় কর্তৃপক্ষ। বেতন দেরিতে দেওয়াকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। এছাড়া দেরিতে বেতন দেওয়াসহ ওভারটাইমের দাবিও সামনে চলে আসে। তারপর ওভারটাইম ও যথাসময়ে বেতন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলন চলাকালে বুধবার শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এরপর শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে টঙ্গীর সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশি বাঁধায় শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করতে পারেনি। এ সময় শ্রমিক-পুলিশ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ হালকা লাঠি চার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন জানান, সার্ভারে ত্রুটি থাকায় বেতন একদিন পরে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করলে আরও বেশ কিছু দাবি দাওয়া সামনে আনে। শ্রমিকরা আইন শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে পুলিশ শান্ত করার চেষ্টা করে। এদিকে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষ ৯ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টিকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে। শ্রমিকরা বর্তমানে কলকারখানা অধিদপ্তর টঙ্গীতে তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।
০৯ আগস্ট, ২০২৩
X