শ্রমিক অসন্তোষ, বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার ৯টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকালে কারখানাগুলোর সামনে বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গাজীপুরে তিনটি এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিকদের হামলা-ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে দিনভর উত্তপ্ত ছিল নগরীর কয়েকটি এলাকা। এ সময় শ্রমিকরা কোনাবাড়ী এলাকায় তুসুকা নামের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। কারখানার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওইদিনই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ২২টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৯টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
শুক্রবার সকালে কোনাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুসুকা কারখানা। ওই কারখানার সামনে সাঁটানো হয়েছে একটি বন্ধের নোটিশ। নোটিশে লেখা আছে, ‘এতদ্বারা তুসুকা জিন্স লি., তুসুকা ট্রাউজার্স লি., তুসুকা প্রসেসিং লি., ভুসুকা প্যাকেজিং লি. এবং নিডেল আর্ট এমব্রয়ডারি লি. এর সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বৃহস্পতিবার অজ্ঞাতনামা কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কারখানার অভ্যন্তরে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে কর্মকর্তাদের মারধর, জখম করে। কারখানার অভ্যন্তরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা। এ অবস্থায় কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক পরবর্তী কাজের নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এ কারখানার মহাব্যবস্থাপক মাসুম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরবর্তীতে কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এ ছাড়া কোনাবাড়ী আমবাগ রোডের এমএম নিটওয়্যার লিমিটেড ও কোনাবাড়ী জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের কারখানার এক নারী শ্রমিক আহত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ওই গ্রুপের তিনটি কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পপুলিশ জোন-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরের কোনাবাড়ী ও আশপাশের এলাকার ২২টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার খবর তাদের কাছে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে মজুরি বোর্ডে বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা করা হলে সেটি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তবে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কোথাও বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন