পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের দর্শন-কর্ম থাকবে : ঢাবি উপাচার্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্ম, চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ ও দর্শন বেঁচে থাকবে।  বুধবার (৮ মে) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  ‘সোনার বাংলা স্বপ্ন ও বাস্তবতা: রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে আয়োজিত এই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা, গল্প, গান, রচনা, সাহিত্য ও শিল্পকর্মে দরিদ্র্য কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির গান গেয়েছেন। তারা উভয়ই অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ, উগ্রজাতীয়তাবাদ পরিহার এবং আত্মশুদ্ধির পন্থা অবলম্বন করেছেন।  তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, মাটি ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে সারাজীবন আন্দোলন- সংগ্রাম ও অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে আমাদেরকে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। মানুষকে ভালোবেসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইটহুট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন, ঠিক তেমনি নিজের জন্য খোঁড়া কবরের সামনে দাড়িয়ে পাকিস্তানি শাসকদের সাথে বাঙালীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তির ব্যাপারে আপোস করেননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এভাবেই বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের দর্শন ও চিন্তা-ভাবনায় অপূর্ব মিল রয়েছে।   প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতা ও সাহিত্য কর্মে সমাজের নানা অসংগতি, কুসংস্কার, বৈষম্য, মানুষের কষ্ট, প্রকৃতি, পরিবেশ, মানবপ্রেমসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু এবং রবীন্দ্রনাথ উভয়ই উগ্রজাতীয়তাবাদ বিরোধী ছিলেন। তাঁরা উভয়ই বিশ্বাস করতেন উগ্র জাতীয়তাবাদ সমাজে সংঘাত সৃষ্টি করে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাভাবনা ও দর্শন সকলের সামনে সবসময় তুলে ধরতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক মূল প্রবন্ধে বলেন, সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় ও কর্মে অনেক মিল ছিল। বাঙালির ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ে আত্মশক্তি অর্জনে উভয়ই সোচ্চার ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ সৃজনশীল কাজগুলো তৎকালীন পূর্ববঙ্গের গ্রাম্যজীবন ও পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবন নিয়ে রচিত। তিনি যেমন লেখনীর মাধ্যমে মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করে সমাজ সংস্কার করতে চেয়েছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় এককভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আলোচনা পর্ব শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগ ও নৃত্যকলা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
০৮ মে, ২০২৪

বঙ্গবন্ধু সেজে ৭ মার্চের অনুষ্ঠানে ৭০০ শিশু শিক্ষার্থী
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদের সামনে হেলিপ্যাডের বিশাল মাঠে ৭০০ শিশু শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। শিশুরা সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবি, মুজিব কোর্ট পরা। যেন সবাই এক একজন ক্ষুদে বঙ্গবন্ধু। এসব শিশুরা সুশৃঙ্খলভাবে ফুটিয়ে তুললেন ‘৭ মার্চ’ ছায়া লেখা। সে সঙ্গে একযোগে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ঐতিহাসিক সেই ৭ মার্চের ভাষণ। পরে সেখানে ৭ মার্চের ১৯ মিনিটের ১ হাজার ১০৮টি শব্দের ঐতিহাসিক ভাষণকে স্মরণ করে ১ হাজার ১০৮ জন শিক্ষার্থী এক সঙ্গে জাতীয় পতাকা হাতে নাড়িয়ে এক অনন্য দৃশ্যের অবতারণা করে। পরপরই শিশুরা নানা রঙের বেলুন আকাশে উড়িয়ে দিয়ে একটি রঙিন আকাশ উপহার দেয়। ভাষণ উপস্থাপন, বেলুন উড্ডয়ন শেষে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘৭ মার্চের শব্দ শোভাযাত্রা’ নামে একটি মিছিল বের করা হয়। উপজেলা পরিষদ প্রদক্ষিণ করে জাতির পিতার সমাধিতে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। সেখানে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করেন অতিথিরা। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মইনুল হক সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনের উন্নয়ন প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার।
০৭ মার্চ, ২০২৪

নিয়োগ দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ৯ ক্যাটাগরির পদে ৩য় থেকে ২০তম গ্রেডে ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় গ্রেডের পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পদের বেতন স্কেল ৫৬,৫০০-৭৪,৪০০ টাকা। নবম গ্রেডের সেকশন অফিসার পদে দুজন ও সহকারী কম্পিউটার প্রোগ্রামার পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পদের বেতন স্কেল ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা। দশম গ্রেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে দুজনকে ও উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পদের বেতন স্কেল ১৬,০০০-৩৮,৬৪০ টাকা। ১৫তম গ্রেডের ক্যাটালগার পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পদের বেতন স্কেল ৯,৭০০-২৩,৪৯০ টাকা। ১৬তম গ্রেডের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে দুজনকে ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট পদে তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পদের বেতন স্কেল ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা। ২০তম গ্রেডের অফিস সহায়ক পদে তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পদের বেতন স্কেল ৮,২৫০-২০,০১০ টাকা। আবেদন করবেন যেভাবে আগ্রহী প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান পিডিএফ কপি, আবেদন ফিসহ অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন ও ফি প্রদানের বিষয়ে বিস্তারিত How to Apply মেনুতে পাওয়া যাবে। একই ওয়েবসাইটে ‘Academic Qualifications and Others’ মেনু থেকে যোগ্যতার বিস্তারিত বিবরণ জানা যাবে। আবেদন ফি ক্রেডিট কার্ড/অনলাইন ব্যাংকিং/মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন ফি (সার্ভিস চার্জ ছাড়া) পরিশোধ করতে হবে। তৃতীয় গ্রেডের পদের জন্য ৬০০ টাকা; নবম ও দশম গ্রেডের পদের জন্য ৫০০ টাকা; ১৫ ও ১৬তম গ্রেডের পদের জন্য ৩০০ টাকা এবং ২০তম গ্রেডের পদের জন্য ১০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। আবেদনের শেষ সময় : ১০ মার্চ ২০২৪, রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বঙ্গবন্ধু টানেলের দেয়ালে এবার ধাক্কা দিল ট্রাক
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে আবারও দুর্ঘটনা ঘটেছে। এবার টানেলের ভেতর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাক ধাক্কা খেলে টানেলের ডেকোরেশন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় ট্রাকের চালক ও সহকারী আহত হন। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে ট্রাকটি চট্টগ্রাম নগরী থেকে আনোয়ারা প্রান্তে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পণ্যবাহী ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টানেলের ভেতর উল্টে গিয়ে টানেলের দেয়ালে ধাক্কা লাগে। এতে টানেলের ডেকোরেশন বোর্ড ভেঙে যায় এবং ট্রাকের সামনের অংশ ভেঙে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী (টোল-ট্রাফিক) তানভীর রিফা জানান, সন্ধ্যায় পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টানেলের দেয়ালে ধাক্কা দেয়। এতে টানেলের ডেকোরেশন বোর্ড ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গে টানেলের নিরাপত্তাকর্মীরা ট্রাকটি জব্দ করেন। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৭টার দিকে একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টানেলের দেয়ালে ধাক্কা দেয়। এতেও টানেলের ডেকোরেশন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাড়িটি চট্টগ্রাম নগরী থেকে আনোয়ারা প্রান্তে যাচ্ছিল। এ ঘটনায় গাড়ির পাঁচ যাত্রী আহত হন।
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মুন্সীগঞ্জে মাছবাহী পিকআপ উল্টে নিহত ২
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েতে মাছবাহী পিকআপ উল্টে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজনে ধাক্কা লেগে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শ্রীনগরের হাঁসারা এলাকায় মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতেরা হলেন- মো. হাফেজ (৪০) ও শহিদুল (৪২)। এ ঘটনায় আরও ৫ মাছ ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মাছবাহী পিক-আপটি মাওয়া থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঢাকামুখী লেনে হাঁসারা হাইওয়ে ফাঁড়ির উল্টো দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। এতে ৭ জন গুরুতর হন। পরে তাদের দ্রুত উদ্ধার করে শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আকলিমা রৌশন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় ৭ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর দুজনের মৃত্যু হয়। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাঁসারা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ কাঞ্চন কুমার সিংহ জানান, দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ জন। তারা মূলত মাছ ব্যবসায়ী। মাওয়া থেকে মাছ নিয়ে তারা ঢাকার দিকে যাচ্ছিল।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কানাডায় প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এসএইচএমবি নূর চৌধুরী কানাডায় পলাতক রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই কানাডার সরকারের কাছে এই খুনিকে ফেরত পাঠাতে বলা হলেও কার্যত তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসির অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো দেখা যায় আত্মগোপনে থাকা নূর চৌধুরীকে। সিবিসির জনপ্রিয় অনুসন্ধানী বিভাগ ‘দ্য ফিফথ স্টেট’ এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের ৪২ মিনিটের এই প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার (বাংলাদেশ সময়) সকাল ৮টায়। প্রতিবেদনে নূর চৌধুরীর কানাডায় পালিয়ে যাওয়া, ২৭ বছর ধরে ধরে সেখানে থাকা এবং খুনের অভিযোগে হওয়া শাস্তি বাস্তবায়নে তাকে বাংলাদেশের ফেরত চাওয়ার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার বলেন, এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাইকমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক। বাংলাদেশের আইনমন্ত্রীও খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে কানাডা সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। প্রতিবেদনে কানাডার টরন্টোর নিজ ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে নূর চৌধুরীকে এক ঝলক দেখা গেছে। শোনা গেছে তার কণ্ঠও। ফিফস স্টেটের অনুসন্ধানী দলটি দীর্ঘদিন ধরে নূর চৌধুরীরকে খুঁজে বেরিয়েছে। তাকে খুঁজে পাওয়ার পর অনুসন্ধানী দলের প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে তিনি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যান। সিবিসির অনুসন্ধানী দলের সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান তার ফেসবুকে লিখেন, গত ৭ মাস আমরা ছুটে বেরিয়েছি অটোয়া থেকে টরন্টো, টরন্টো থেকে ঢাকা। পড়েছি শত শত কোর্ট ডকুমেন্টস। জোগাড় করেছি দুই দেশের গোপন নথি। জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করেছি, নূরকে বাংলাদেশের আইনের মুখোমুখি করতে না পারার দায় কি শুধু কানাডা সরকারের পলিসির, নাকি আরও অন্য কিছু আছে? বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যার পর কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন নূর চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে তিনি পালিয়ে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে কানাডায় যান দর্শনার্থী হিসেবে। এরপর ১৯৯৯ সালে শরণার্থী হিসেবে থেকে যাওয়ার আবেদন করলেও কানাডা সরকার তা নাকচ করে দেয়। আপিল করেও হেরে যান তিনি। ২০০৯ সালে তাকে কানাডা থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত; কিন্তু বাংলাদেশে পাঠালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে ২০১০ সালের দিকে তিনি কানাডা সরকারের কাছে ‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এসেসমেন্টের’ আবেদন করেন। দেশটি যেহেতু মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে তিনি কানাডায় মুক্ত জীবনযাপন করছেন। প্রসঙ্গত, নূর চৌধুরী কোথায় আছেন, কি করছেন, এ নিয়ে সঠিক তথ্য না থাকায় বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রতিবেদন প্রচারের ফলে সেই ধোঁয়াশা কেটে যাবে এবং কানাডার সাধারণ জনগণ তাদের পাশের বাসায় থাকা ভয়ানক এই খুনি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা পাবে। এ বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এই প্রতিবেদন করতে গিয়ে কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ আল ইমরান জানান, এটি অনেক আগের একটি ঘটনা। কানাডার বিচার পদ্ধতি এবং ও বাংলাদেশের বিচার পদ্ধতি একেবারে আলাদা। এ কারণে দেশটির জনগণকে আমাদের বোঝাতে হয়েছেÑ বাংলাদেশের আদালতে নূর চৌধুরীর যে বিচারটি হয়েছে সেটি ছিল নিরপেক্ষ ও সঠিক। এ জন্য আমাদের শত শত কোর্ট ডকুমেন্টস জোগাড় করতে হয়েছে, সেগুলো পড়তে হয়েছে। এগুলো জোগাড় করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। এগুলো বাংলাদেশ ও কানাডার কোর্টে ছিল। এ ডকুমেন্টসগুলো দীর্ঘদিন আসলে গোপন অবস্থায় ছিল বা অপ্রকাশিত অবস্থায় ছিল। হতে পারে এবারই প্রথম এগুলো প্রচারিত হয়েছে। নূর চৌধুরীকে ফেরাতে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে কি ধরনের পদক্ষেপ বা করণীয় রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন সাংবাদিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে কোনো একটা বিষয় তুলে ধরা। বিশেষ করে কানাডার মানুষ—যারা এই নূর চৌধুরীর সহিংস অতীত জানে না, তা আমরা সবাইকে জানাতে চেয়েছি। আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, নূর চৌধুরী এই বিচার প্রক্রিয়া দুই দেশের আদালতেই নিরপেক্ষ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কানাডার আদালত একাধিকবার নূর চৌধুরীর গল্প প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাকে দেশ ত্যাগের নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা আসলে খুঁজে বের করতে চেয়েছি নূর চৌধুরী এখানে কীভাবে আছেন, তার থাকার পেছনে কোথায় ফাঁকফোকর আছে, কোন সুযোগ-সুবিধা তিনি কাজে লাগাচ্ছেন। ২০০৬ সালে তাকে কানাডা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর তিনি ২০০৯ সালে গিয়ে ‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এসেসমেন্টের আবেদন করেন। সে আবেদনটিকে ঝুলিয়ে রেখে তিনি এখানে বহাল তবিয়তে আছেন। মাঝের এই তিন বছর বাংলাদেশ সরকারের সুযোগ ছিল তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার। এখানে কূটনৈতিক ব্যর্থতার বিষয়টিও উঠে এসেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার পরে কী পদক্ষেপ নেবে, তা আমাদের প্রতিবেদনে আছে। আমরা চেষ্টা করেছি, কোন একটি মেকানিজমে এর একটা সমাধানের। কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে এবং কানাডা সরকারকে এ বিষয়ে অবগত করার মাধ্যমে একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে। কারণ এরকম একটা অমীমাংসিত ব্যাপার বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই—এটাই ছিল আমাদের প্রতিবেদনে মূল বক্তব্য। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছয়জনের ফাঁসি হয়েছে। বাকি আছেন আরও পাঁচজন। তারা হলেন আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এ বি এম এইচ নূর চৌধুরী। রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত পাঠাতে বিভিন্ন সময়ে আবেদন জানালেও দেশ দুটির সরকারের কাছ থেকে কোনো সাড়া মিলেনি। অন্যদিকে আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিন কোথায় আছেন, সেই খোঁজ নেই সরকারের কাছে। এ খুনিদের অবস্থানের তথ্য দিতে পারলে সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯ নভেম্বর, ২০২৩

টানেলে বদলে যাচ্ছে জীবনচিত্র / ১৫ দিনে ব্যবসায়িক টার্নওভার শতকোটি টাকা
উত্তরবঙ্গ থেকে গরু-মহিষবাহী  ট্রাক টানেল হয়ে অল্প সময়ে ঢুকে যাচ্ছে আনোয়ারার সরকারহাটে। সাশ্রয় হচ্ছে জ্বালানি খরচ, কমেছে চাঁদাবাজি। হাটে প্রতি সপ্তাহে বেচাকেনা হচ্ছে ৭ কোটি টাকার পশু। টানেলের শহর প্রান্তের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা প্রান্তের পুরো ৭ কিলোমিটার এলাকা পরিণত হয়েছে বিশাল পর্যটন স্পটে। যেখানে রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকানে দৈনিক কেনাবেচা ৫০ লাখ টাকার বেশি। আনোয়ারা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে মাত্র এক মাসে ১৫ কোটি টাকার জমি কেনাবেচার দলিল। এ সবে বুঝা যায় টানেল কতটা বদলে দিয়েছে এখানকার জীবনচিত্র। কর্ণফুলী নদীকে যুক্ত করে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ স্বপ্ন থেকে গত ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। চালুর পর মাত্র ১৫ দিনে বদলে গেছে এলাকার চিত্র। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে আগে কম করে হলেও ৯ ঘন্টা সময় ব্যয় হতো। এখন চট্টগ্রাম শহর থেকে টানেল হয়ে আনোয়ারা কালাবিবির  দিঘি পর্যন্ত মাত্র সাত কিলোমিটারে চার লেনের সড়ক কমিয়ে দিয়ে ঢাকা কক্সবাজারের ৫০ কিলোমিটার দুরত্ব। ফৌজদারহাট বাইপাস হয়ে টানেলে ঢুকে মাত্র ৭ ঘন্টায় পৌঁছা যাচ্ছে দেশের প্রান্তসীমায়। মাতাবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল পরিবহন এখনে অনেক বেশি সহজ। পূর্বমুখী দিগন্ত উম্মোচনে এশিয়ান সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা থেকে আনোয়ারা প্রান্তে গড়ে উঠেছে শতাধিক নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চালু হওয়ার অপেক্ষায় অন্তত ৩টি শিল্প কারখানা। কারাবিবিরদীঘি এলাকা হয়ে উঠেছে নতুন বাণিজ্যিক পাড়া। বেঙ্গল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, যমুনা ব্যাংক, আইএফআইসি, কমার্স ব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের শাখা খুলেছে। চালুর অপেক্ষায় আছে এনসিসি ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের দুটি শাখা। বেসরকারি এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এস এম আবু মহসীন বলেন, টানেল কেন্দ্রিক ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আনোয়ারায় ব্যাংকের নতুন নতুন শাখা হচ্ছে। আগামী দিনে কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরের এ এলাকাটি হবে ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন প্রাণকেন্দ্র। এটি কক্সবাজার পর্যন্ত বিশাল অর্থনৈতিক করিডরের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। টানেল চালুর পর দুই সপ্তাহের পর্যবেক্ষণের আলোকে শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, টানেল কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক টার্নওভার ১৫ দিনে শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এখানকার ব্যাংকের ৫ শাখায় ১৫ দিনে গ্রাহকের লেনদেন হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। জমি কেনাবেচা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি ৮ কোটি টাকা, টোল আদায় ২ কোটি, সরকার হাট গরু বাজারে পশু বিক্রি ১৫ কোটি। শাক সবজি, পরিবহন, দোকানের সওদাপাতি থেকে যোগ হয়েছে আরও প্রায় ৩০ কোটি টাকা। যত দিন যাবে তা আরও বাড়বে। টানেল ঘিরে বৃহত্তর অর্থনৈতিক জোন গড়তে যাচ্ছে। সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদের (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় পটিয়া, দোহাজারী, লোহাগাড়া ও চকরিয়ায় বাইপাস এবং কেরানিহাটে ফ্লাইওভারসহ পাঁচ পয়েন্টে ২৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে আর মাত্র দুই মাস পর ১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরুর কথা রয়েছে। এরই মধ্যে কর্ণফুলীর দুই পাড়ে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা। বাস্তবায়িত হচ্ছে মেগা সব প্রকল্প। পর্যটনও দেখাচ্ছে অপার সম্ভাবনা। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, পারকি সৈকত এমনকি টানেলের দুই প্রান্তে এখন বিকালের পর থেকে মানুষের ঢল। যেসব জমি একসময় কেউ নিতে চাইতেন না, এখন তারও দাম ৫ থেকে ১০ গুণ বেড়েছে। আনোয়ারা প্রান্তের কালাবিবির দীঘি থেকে তৈলারদ্বীপ, পারকি, বরকল পর্যন্ত এলাকাসমূহের  ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক চিত্রই পাল্টে যাচ্ছে। আনোয়ারা উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার রেজাউল করিম বলেন, এক মাসে ৪৮৭টি দলিল রেজিষ্ট্রি হয়েছে। সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এসব দলিলের অফিসিয়াল মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। কাগজে কলমের এই মূল্যের তুলনায় বাস্তবে বিক্রিত জমির দাম দ্বিগুণ হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টানেল কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের ধাক্কা আঁচ করা গিয়েছিল শুরু থেকে। বেড়াতে আসা লোকজনের পারাপারে  আনোয়ারা প্রান্তের কালাবিবির দীঘি মোড়ে বসে গেছে অঘোষিত বাস স্টপেজ। এখানকার ২০টি বাস রাউন্ড ট্রিপে টানেলের ভেতর দিয়ে  প্রায় ৮ হাজার মানুষকে পারাপার করছে। ভাড়া আদায় হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। মাইক্রোবাস ও কার ভাড়া করেও পার হচ্ছে কয়েকশ মানুষ। পিএবি সড়ক বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দর্শনার্থীর চাপ সামলাতে আনোয়ারা সদর থেকে ইপিজেড পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালুর জন্য ৩০টি বাসের পারমিট চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।    শুধু বাসে বা বেড়ানোর ধুম নয় টানেল চালুর পর এখানকার খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টে পা ফেলানোর জায়গা নেই। আনোয়ারা প্রান্তের ৫ রেস্টুরেন্টে ১২ লাখ টাকা, পারকি সৈকতের ৪০ দোকানে প্রায় ৫ লাখ টাকা, পতেঙ্গা সৈকতের ২শ’ ভাসমান দোকানে ৩০ লাখ টাকা মিলিয়ে দৈনিক বিক্রির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চন্দনাইশ আনোয়ারার সীমান্তবর্তী সাংগুতীরের সবজি ভাণ্ডার কিংবা চন্দনাইশের বিখ্যাত পেয়ারা এতদিন বড়জোর চট্টগ্রামের বাজার পর্যন্ত নাগাল পেত। কর্ণফুলী সেতু পেরিয়ে যানজট ঠেলে চট্টগ্রাম যেতে যে ভোগান্তি ছিল একই সময়ে টানেল হয়ে অনেকে ঢাকা পৌঁছে যাচ্ছেন। তাতেই হাসি প্রচারিত হচ্ছে সবজি চাষীদের। আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশের মিঠাপানির মাছের খ্যাতি আছে আশপাশের এলাকায়।   আনোয়ারার মৎস্য আড়ৎ আল মক্কা ফিশের স্বত্বাধিকারী আবদুর রহিম বলেন, দ্রুততম সময়ে আমাদের মাছ ঢাকার বাজারে পাঠাতে পারবো। এতে আমাদের পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে, দামও বেশি পাব। বছরে আমরা অন্তত সাড়ে ১০০ কোটি টাকার মাছ ঢাকার বাজারে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছি।  অবরোধ-হরতালসহ নানা কর্মসূচির মধ্যে টানেলে মাত্র ১৫ দিনে গাড়ি পারাপার ছুয়েছে ৮০ হাজারের ঘর। তাতে প্রায় ২ কোটি টাকার টোল আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছেন টানেল টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেন। ভূমিমন্ত্রী ও আনোয়ারা-কর্ণফুলী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, টানেলের জন্য পাল্টে গেছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরের চিত্র। এর সুফল সুদূরপ্রসারী। আর কয়েক বছর গেলে আরও স্পষ্ট হবে টানেলটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য কত বড় সম্পদ। কক্সবাজার পর্যন্ত বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
১১ নভেম্বর, ২০২৩

বঙ্গবন্ধু টানেলে রেসিং করা সেই ৫ গাড়ি জব্দ, গ্রেপ্তার ২
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে কার রেসিংয়ের ঘটনায় পাঁচটি গাড়ি জব্দের পাশাপাশি অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাড়িগুলো জব্দ করা হয়।  গ্রেপ্তাররা হলেন, কোতোয়ালি থানার আলকরন রোডের আনসারুল হকের ছেলে মো. আশারাফুল হক (৩৫) ও বাকলিয়া তুলাতুলি এলাকার মৃত হাজী সোলায়মান সওদাগরের ছেলে মো. এমরান উদ্দিন (২৪)। গ্রেপ্তারদের শুক্রবার আদালতে প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির হোসেন বলেন, ২৯ অক্টোবর রাতে কয়েকটি রেসিং কার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে প্রবেশ করে টানেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা লঙ্ঘন করে গাড়ি চালায়। এ সময় তারা রেসিং, ওভারটেকিং ও বিপজ্জনকভাবে চালানোসহ যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় ১ নভেম্বর টানেল কর্তৃপক্ষ সড়ক পরিবহন আইনে কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করে। মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচজন আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার হয়। এ সময় পাঁচটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। বাকি দুটি গাড়ি জব্দ করা হবে বলেও জানান তিনি।
১০ নভেম্বর, ২০২৩

চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে চট্টগ্রামে পৌঁছান তিনি।  কিছুক্ষেণের মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলে উদ্বোধন করে আনোয়ারায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে টোল আদায় করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এরপর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিবেন তিনি। এদিকে এরই মধ্যে জনসভায় আসতে শুরু করেছে মানুষ। চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সব স্রোত যেন এসে মিলিত হয়েছে অনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেপের মাঠে। জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত  থেকে ভাষণ দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেল দিয়ে আনোয়ারা পৌঁছে ১২টায় সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় শুরু হয় জনসভা। শুরুতে স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। বেলা সাড়ে ১১ টায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু টানেলসহ ১৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক নোট ও ডাক টিকিট উম্মোচন করবেন। এরপর তিনি যোগ দেবেন জনসভায়। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে তিনি শুরু করবেন ভাষণ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, জনসভায় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জনসভায় যোগ দিয়েছেন।
২৮ অক্টোবর, ২০২৩

সম্ভাবনার নতুন দ্বার বঙ্গবন্ধু টানেল
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা, এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উদ্ধোধন হচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এতে খুলে যাবে দেশের অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার দুয়ার। এই উদ্ধোধনের একেবারে শেষ মুহুর্তে টানেল ঘিরে পরিদর্শন ও উদ্বোধনের প্রস্তুতি মূলক মহড়া চালিয়েছে সেতু বিভাগ, সেতু কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন।  বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এবং টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ পরিদর্শন করেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম নির্মিত হয়েছে টানেল। টানেলকে ঘিরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে চট্টগ্রাম শহর ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ রূপ নেবে। এ টানেলের ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। আগামী ২৮ অক্টোবর এ টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা, কর্ণফুলী, পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। শুধু টানেল নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পনগর, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নভীর সমুদ্রবন্দর, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অনেক মানুষের কর্মস্থান হবে। বদলে যাবে চট্টগ্রাম।  তিনি বলেন, চট্টগ্রামে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলসহ মোট ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। অনেকগুলোর কাজই প্রায় শেষ হয়েছে। যেগুলো হয়নি সেগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ বলেন, উদ্বোধন ঘিরে সেতু কর্তৃপক্ষ, সেতু বিভাগ, প্রশাসন মিলে সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। এই টানেল শুধু দুই কর্ণফুলী নদীর পাড়কে সংযুক্ত করেনি, ওয়ান সিটি টু টাউনের যে কনসেপ্ট সেটাও বাস্তবায়িত হয়েছে। এই টানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। টানেল সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরাও। টানেলে ১০০টির বেশি অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ৫ মিনিটের মধ্যে উদ্ধার তৎপরতা চলবে।  অন্যদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর টানেল উদ্বোধনের দিন ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জেলা পরিষদের ৫ প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এর মধ্যে রয়েছে জেলা পরিষদের ১৮ তলা জেলা পরিষদ টাওয়ার, এক হাজার আসন বিশিষ্ট পটিয়া শেখ কামাল অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স এবং আনোয়ারা ও রাঙ্গুনিয়ায় জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। তাছাড়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতারা জনসভাস্থল পরির্দশন করেছেন পৃথকভাবে।
২৭ অক্টোবর, ২০২৩
X