প্রথম তিন দফা নিয়ে আশাবাদী হতে পারছে না বিজেপি
ভারতে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে এরই মধ্যে চার দফায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মোট সাত দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন দল বিজেপি জোট এবার ৪০০ আসন পাবে বলে আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে প্রথম তিন দফায় দলটি আশানুরূপ ফল পাচ্ছে না বলে বিভিন্ন সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আর এ নিয়ে দলটিতে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও শুরু হয়েছে। প্রথম তিনটি পর্বে আশানুরূপ ফল হওয়া মুশকিল বলে ঘরোয়াভাবে স্বীকার করে নিচ্ছে বিজেপি নেতাদের একাংশ। ভারতের গো বলয় বলে পরিচিত মধ্য ভারতের হিন্দিভাষী রাজ্যগুলো। পর্যবেক্ষকদের মতে, দিল্লির রাজনীতিতে বরাবরই সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেয় মধ্য ভারত তথা হিন্দি বলয় বা গো বলয়। এখানে আগের মতো শক্ত ভিত্তি ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে বিজেপি। বিশেষ করে গো বলয়ের বিহার ও উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রে দলটি বেশ কিছু জেতা আসন হারাতে চলেছে বলে এক রকম নিশ্চিত তারা। ভারতের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ২৭২টি আসনে জেতা জরুরি। তবে ২৭২ আসনের চেয়েও অনেক কম আসন পাবে এবার বিজেপি। এমনকি শরিকদের (এনডিএ) নিয়েও এবার সরকার গঠনে ব্যর্থ হতে পারে নরেন্দ্র মোদির দল। গত নির্বাচনে ৩০৩ আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। যোগেন্দ্র দাবি করেন, কর্ণাটকে মোট ২৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে গত নির্বাচনে বিজেপি ২৬টি আসনে জয় পেয়েছিল। এবার অন্তত ১০টি আসন সেখানে হারাতে চলেছে দলটি। রাজস্থানে ২৫ আর গুজরাটে ২৬টি লোকসভা আসন রয়েছে। গত নির্বাচনে এই ৫১টি আসনের সবকটিতেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। এবার সেখানে তারা ১০টি আসন হারাতে চলেছে বলে মত দেন যোগেন্দ্র। মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসনের মধ্যে ৪২টিতে জিতেছিল মোদির দল। যোগেন্দ্র দাবি করেন, মহারাষ্ট্রে খুব কম করে হলেও এবার ২০টি আসন হারাতে চলেছে দলটি। অর্থাৎ খুব বেশি হলে ২২টি আসনে জিততে পারেন তারা। শুধু যোগেন্দ্র নন, প্রথম তিন দফার ভোটের পর উত্তর প্রদেশে বিজেপির পক্ষে পরিস্থিতি অনুকূল নয় বলে মত দিয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষক। বিজেপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বিহারেও গিয়েছিলেন যোগেন্দ্র। পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে ঘুরে আসার পর তার মনে হয়েছে, সেখানেও এবার ভরাডুবি হবে গেরুয়া শিবিরের। বিহারে ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে গত নির্বাচনে ৩৯টিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি; কিন্তু এবার সেখানে ১৫টি আসন হারাতে পারে দলটি। যোগেন্দ্রের গণিত অনুযায়ী, বিহারে এবার ২৪টি আসনে জয় পেতে পারে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্ব দাবি করছে, বিজেপির হার এখন সময়ের অপেক্ষা। সোমবার দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘বিজেপির লেখচিত্র (গ্রাফ) প্রথম পর্ব থেকে সেই যে নিচে নামতে শুরু করেছে, তা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চতুর্থ পর্বের ভোট শেষের পরে বলাই যায়, গোটা দেশে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে হাওয়া বইছে। আর তিন সপ্তাহ পরেই নরেন্দ্র মোদির বিদায় হতে চলেছে।’ এখানেই না থেমে জয়রামের কটাক্ষ, ‘দক্ষিণে সাফ, উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বে ‘হাফ’ (অর্ধেক)।’ জয়রামের ব্যাখ্যা, দক্ষিণে বিজেপির পক্ষে খাতা খোলাই সম্ভব হবে না। আর উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বে দলটি পাঁচ বছর আগে যে সংখ্যক আসন পেয়েছিল, তার অর্ধেক পেতে চলেছে। ফলে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা হচ্ছে না নরেন্দ্র মোদির। অতীতের নির্বাচনগুলোতে প্রচারের বিষয় কী হবে তা ঠিক করে দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু এ যাত্রায় তারা সেটা করতে পারেনি বলেও দাবি করছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের মতে, এ যাত্রায় প্রচারের বিষয় স্থির করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস। সে কারণে প্রতিটি পর্বে মোদি প্রচারের বিষয়বস্তু বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। জয়রামের কথায়, ‘প্রথম পর্বের ভোটের পর মোদি মেরুকরণ ও লোকের মনে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় দফার পরে হাস্যকরভাবে লোকের ঘর থেকে মহিষ কেড়ে নেওয়া নিয়ে সরব হলেন। আর তৃতীয় দফার পরে তো মোদি নিজের বক্তব্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি নিজের দুই অতিপ্রিয় শিল্পপতি বন্ধুর নামে অভিযোগ করে বসলেন।’ কংগ্রেসের দাবি, দশ বছর সরকার চালানোর পর এখন উন্নয়ন নিয়ে প্রচার বন্ধ। চারশ আসন পাওয়ার কথাও খুব বেশি বলা হচ্ছে না। আগ্রাসীভাবে ধর্মীয় বিভাজন, মেরুকরণের প্রচারে বাধ্য হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি ও তার দল।
১৫ মে, ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে ভিডিওকাণ্ড / বিজেপি প্রার্থী রেখাসহ দুজনের নামে মামলা
পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালীর স্টিং ভিডিওকাণ্ডে বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়াল এবং বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন বলে জানা গেছে। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের। গত শনিবার সকালে প্রকাশ্যে আসা সন্দেশখালীর ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে রাজ্য-রাজনীতি। গোপন ক্যামেরায় তোলা সেই ভিডিওতে বিজেপি নেতা গঙ্গাধর দাবি করেন, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সন্দেশখালীতে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগগুলো ‘সাজানো’ ছিল। নারীরা টাকার বিনিময়ে শাহজাহান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করেছিলেন বলে দাবি করেন সন্দেশখালী-২ ব্লকের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর। ভিডিওতে গঙ্গাধর দাবি করেন, সন্দেশখালীতে নারীদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। মেয়েদের দিয়ে সাজিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে। গঙ্গাধরকে ওই ভিডিওতে এক নারীর নাম করে বলতে শোনা যায়, তাকে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়ে সাত-আট মাস আগে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ হয়েছে বলে অভিযোগ করতে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা-ই করেছিলেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এসব কাজে অর্থ ব্যয় করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রশ্নোত্তর পর্বের ওই ভিডিওর একটি অংশে গঙ্গাধরকে বলতে শোনা যায়, ‘শুভেন্দুবাবুর নির্দেশে সব হয়েছে।’
১০ মে, ২০২৪

লোকসভা নির্বাচন / বিজেপি কি ৪০০ আসন ঘরে তুলতে পারবে
ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৪০০ আসনের লক্ষ্য ঠিক করেছে। নির্বাচনপূর্ব বিভিন্ন জনমত জরিপেও এনডিএ জোটের এ সংখ্যক আসন পাওয়ার আভাস মিলেছে। কিন্তু নির্বাচন চলাকালে সব জরিপ নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। তবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকদের মতে, শুধু মোদির একক জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে এনডিএ জোট ৪০০ আসন পাওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, তা অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতোই। শুধু তাই নয়, তাদের মতে, বিজেপির বিরুদ্ধে নীরবে ভোট বিপ্লবও হতে পারে এবার। কারণ মোদি সরকার অনেক প্রতিশ্রুতিই পূরণ করতে পারেনি। ভোটের মাঠের প্রকৃত চিত্র বুঝতে পেরে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপির নেতারা এখন অসংলগ্ন বক্তব্য দিচ্ছেন বলেও মনে করছেন তারা। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই নরেন্দ্র মোদির ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে যেন বুঁদ হয়ে আছেন ভারতের সাধারণ মানুষ। ২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৫৪৩ আসনের মধ্যে এককভাবে ৩০৩ আর জোটগতভাবে ৩৫২টি আসন পায়। এবার জোটগতভাবে ৪০০ আসন পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। গতবারের নির্বাচনে কংগ্রেস ৫২টি আর জোটগতভাবে ৯১টি আসন পায়। এবার নির্বাচনের শুরুতেও বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, প্রথম দফার ভোটের পর বিজেপির সেই আত্মবিশ্বাসে যেন চিড় ধরতে দেখা যায়। কারণ অনেক আহ্বানের পরও প্রথম দফায় কোনোভাবে ৬০ শতাংশের বেশি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আনা যায়নি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার বেলায়ও তাই। তার মানে, এবার আর মোদি ম্যাজিক কাজে আসছে না। আর এ ৬০ শতাংশের হারকেও নির্বাচন কমিশন অতিরঞ্জিত করে দেখিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ইসি বিজেপির হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করছে সেই দলগুলো। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘৪০০ আসন পাওয়া তো দূরের কথা, নির্বাচনে জয়লাভ করা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তাকে বেশ নার্ভাস লাগছে। পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বলে সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে নিজের মাঠ ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন।’ একই ধরনের কথা বলেছেন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। তিনি এক কলামে লিখেছেন, মোদি ম্যাজিক এবার আর কাজে আসছে না। শুধু একজনের ওপর ভর করে বারবার খেলা দেখানো যায় না। আর তা ছাড়া গত নির্বাচনের আগে জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসী ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভোট টানতে সক্ষম হলেও এবার আর সেরকম কোনো ইস্যু নেই। আর তরুণদের ব্যাপকহারে চাকরি দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি তিনি গতবার দিয়েছিলেন, সেটা পূরণ করতে পারেননি। সেই সঙ্গে বিজেপি যে বিভাজনের রাজনীতি কায়েম করেছে, তা যে মঙ্গলজনক নয়, সেটা এখন বুঝতে পারছে মানুষ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এনডিএ জোটকে ৪০০ আসন পেতে হলে দক্ষিণে অনেক ভালো করতে হবে, যা অনেক কঠিন বিষয়। কেরালায় এখন পর্যন্ত লোকসভায় খাতা খুলতে না পারা বিজেপিকে এবারও সেখান থেকে খালি হাতে ফিরতে হবে বলে মনে করছেন তারা। গতবার বিজেপির ভালো ফল করা ১১ রাজ্যের সঙ্গে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও পশ্চিমবঙ্গকে ধরলে মোট আসন ৩৬৭টি। এসব রাজ্যে সহযোগীদের নিয়ে বিজেপি জিতেছিল ৩১৩ আসন। ৪০০ পার করতে হলে বাড়তি প্রয়োজন আরও ৮৭টি। আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মোট ২৫ আসনও যদি সঙ্গ দেয়, তা হলেও ৪০০ পার করতে দরকার আরও ৬০-৬২ আসন। সেসব আসন আসবে কোত্থেকে?
০৯ মে, ২০২৪

লোকসভা নির্বাচন / কেরালায় কি জয়ের খাতা খুলতে পারবে বিজেপি
ভারতের একমাত্র রাজ্য কেরালা, যেখানে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কখনো একটি আসনও জেতেনি। গত এক দশকে এ রাজ্যে বিজেপির ভোট সামান্য বাড়লেও এবার চমক দেখাতে পারবে, সে রকম আশাও করছেন না কেউ। এর পরও আগামীকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দফার লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের তিরুবনন্তপুরম আসনে যেন অনেকটা বাজি ধরছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, যদিও এখানে কংগ্রেসের শক্তিশালী প্রার্থী শশী থারুর এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কেরালায় সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ২০টি আসনে কংগ্রেস-জোট পেয়েছিল ১৯টি; বামজোট বাকি ১টি। ওই নির্বাচনে কংগ্রেস-জোট ভোট পায় ৪৭ শতাংশ; বামরা ৩৬ শতাংশ, বিজেপি-জোট ১৬ শতাংশ। এর আগের ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে বিজেপি-জোট ভোট পায় ১৫ শতাংশ, কংগ্রেস-জোট ৩৯ শতাংশ এবং বাম-জোট ৪৩ শতাংশ। ওই নির্বাচনে বিজেপি বিধানসভায় মাত্র একটা আসন পায়। বামরা পায় ৯১টি; কংগ্রেস-জোট পায় ৪৭টি। রাজ্যে বর্তমানে ক্ষমতায় বামরা। সর্বশেষ এই দুই নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, বিজেপি কেরালায় আসনের হিসাবে কোনো অবস্থানই তৈরি করতে পারছে না। যদিও বিগত দশকের চেয়ে তাদের ভোটের হিস্যা সামান্য বেড়েছে। কিন্তু আজও এ রাজ্য থেকে লোকসভায় বিজেপি কোনো এমপি পায়নি। অথচ ভারতজুড়ে গত এক দশক বিজেপির জয়জয়কার চলছে। মোদি-অমিত শাহ জুটিকে ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জুটি বলা হচ্ছে। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৯ সালে এই জুটির সর্বভারতীয় সব নির্বাচনী সাফল্যকে ম্লান করে কেরালা অন্যান্য দলকে বেছে নিচ্ছে বিধানসভা ও লোকসভায় তাদের প্রতিনিধি হিসেবে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, বিজেপির হিন্দুত্ববাদ কেরালায় এসে আবেদন হারিয়ে ফেলছে কি না। কেরালায় বিজেপির ব্যর্থতার প্রাথমিক কারণ এ রাজ্যের রাজনৈতিক সচেতনতার উঁচু মান। কেরালা ধর্মীয় চরিত্রে বহুত্ববাদী, ৪৫ শতাংশ জনসংখ্যা অ-হিন্দু। কেরালায় হিন্দু বিশ্বাসের অনুসারী প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষ, ২৭ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও ১৮ শতাংশ খ্রিষ্টান। যেহেতু রাজ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ অ-হিন্দু মানুষ আছে, সে কারণে কেবল হিন্দুত্ববাদের ওপর ভর করে এখানে কোনো দলের নির্বাচনী সাফল্য পাওয়া দুরূহ। এখানকার হিন্দু বিশ্বাসীদের মধ্যে আবার কমিউনিস্ট পার্টির উল্লেখযোগ্য সাংগঠনিক কাজ রয়েছে। রাজ্যের হিন্দু সমাজে ‘ইঝাভাহ’ নামে পরিচিত তুলনামূলকভাবে নিম্নবর্ণের কৃষিজীবী গোষ্ঠীতে বাম দলগুলোর রয়েছে দৃঢ়ভিত্তি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ানও একজন ইঝাভাহ। এই সম্প্রদায় হলো রাজ্যের হিন্দুদের চার ভাগের এক ভাগ। এদের মধ্যে কমিউনিস্টদের উপস্থিতি এবং মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের বিজেপিভীতি মিলেমিশে থাকায় কেরালায় বিজেপির পক্ষে একচেটিয়া ঢেউ তোলা কঠিন। হিন্দুদের উচ্চবর্ণ স্থানীয় ‘নায়ার’ আগের মতো আর বিজেপির ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। তারা রাজ্যের যে কোনো একটি পুরোনো প্রধান দলের সঙ্গেই থাকতে চাইছে। নায়াররা কেরালায় জনসংখ্যার প্রায় ১৪ ভাগ। এদের একাংশকে ব্যবহার করেই বিজেপি পুরো রাজ্যে মন্দিরগুলোকে কেন্দ্রে রেখে তৃণমূলে বিকল্প সামাজিক ভরকেন্দ্র গড়তে চেষ্টা করছে কয়েক দশক ধরে। এখনো তা বেশি সফলতা পায়নি। কেরালার সামাজিক সংস্কৃতিতে অতি প্রাচীনকাল থেকে বহুধর্মীয় একটা ছাপ রয়েছে। ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ, সিনাগগ ও চার্চ কেরালাতেই রয়েছে। এসবই এখানকার মানুষকে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক মিলনের আবহে বড় করে তোলে, যা আরএসএস-বিজেপির রাজনীতির জন্য সহায়ক হয় না। এখানকার ভাসমান ভোটার ও প্রতি নির্বাচনে পছন্দ পরিবর্তনকারী ভোটার সংখ্যাই বেশি, যা রাজ্যের রাজনীতিবিদদের প্রশাসনিক বিষয়ে চাপে রাখে। প্রশাসন পরিচালনার যোগ্যতা দিয়েই এখানে ভোটের হিসাব অদল-বদল হয়, ধর্মভিত্তিক ভাবাবেগ দিয়ে নয়। কেরালার আরেকটি নির্বাচনী বিশেষত্ব হলো, এখানকার পৌনে তিন কোটি ভোটারের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার প্রায় নয় লাখ বেশি। এই নারীদের বড় এক অংশ শ্রমজীবী। এরাও স্থানীয় বাম দলগুলোর বড় ভোটব্যাংক। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে এই নারীরা বড় এক প্রাচীর হিসেবে কাজ করছে। কেরালায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আসন পেতে হলে বিজেপিকে অবশ্যই বড় অঙ্কের মুসলমান ও খ্রিষ্টান ভোট পেতে হবে, যা বেশ কঠিন। তবে কাল শুক্রবার কেরালার তিরুবনন্তপুরম আসনে যে নির্বাচন হবে, সেখানে অনেকটা বাজি ধরছে বিজেপি। যদিও এখানে কংগ্রেসের বেশ শক্ত প্রার্থী রয়েছেন। তিরুবনন্তপুরম থেকে তিনবারের সাংসদ শশী থারুর ফের এই আসনে লড়াই করছেন। শশী থারুর কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা ও পরিচিত মুখ। একজন সুবক্তা ও সুলেখক হিসেবেও পরিচিত তিনি। তাকে হারানো যে বেশ কঠিন তা বিজেপিও জানে। কিন্তু তারপরও এ আসনে চোখ রাখছে বিজেপি। এখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখরকে। চন্দ্রশেখর হলেন একজন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী, যিনি ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র এবং প্রতিবেশী রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে তার ভাগ্য গড়েছেন। এ আসনে বামফ্রন্ট থেকে প্রার্থী হয়েছেন পান্নিয়ান রবীন্দ্রন। আর এটিকেই সুবিধা মনে করছে বিজেপি। কারণ বামফ্রন্টের বেশ বড় ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে, যা কংগ্রেসের ভোট কাটতে পারে। এখানে প্রার্থী দেওয়ায় তাই বামফ্রন্টের সমালোচনা করেছেন শশী থারুর। বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে এখানে বামফ্রন্ট প্রার্থী দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগও করেছেন। এর পরও চতুর্থবারের মতো তিনি লোকসভায় যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

উত্তর প্রদেশে ৭৩ আসনে জেতার আশা করছে বিজেপি
উত্তর প্রদেশ রাজ্যটি ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য। ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসন আছে, যা যে কোনো রাজ্যের আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি। তাই লোকসভা নির্বাচনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই প্রদেশটি। সাত দফায় অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপে গতকাল শুক্রবার উত্তর প্রদেশের আটটি আসনে ভোট হয়। পরে আরও ছয় ধাপে অন্য ৭২টি আসনে ভোট হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন বিজেপি এই রাজ্যে বেশ ভালো ফল করবে। ৮০টি আসনের মধ্যে তারা ৭৩ আসনে জয়ী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর এনডিটিভির। লোকসভায় সর্বমোট আসন ৫৪৩টি। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে অন্তত ২৭২ আসনে জয়ী হতে হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য হলো লোকসভায় তার নেতৃত্বাধীন জোটের চার শতাধিক আসনে বিজয় নিশ্চিত করা। আর উত্তর প্রদেশে জয়ী হতে পারলে তা মোদিকে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অনেকখানি এগিয়ে দেবে। এবারের ভোটকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে ভোটকেন্দ্রগুলো। নিয়োগ করা হয়েছে ২৬৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য। প্রতিটি কেন্দ্রেই থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আরও থাকছেন ১২ হাজার ৩১০ রাজ্য পুলিশ সদস্য। নির্বাচন কমিশন স্পর্শকাতর কেন্দ্রে সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
২০ এপ্রিল, ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সভাপতির কাঁধে ১৬ মামলা
পশ্চিমবঙ্গে ফৌজদারি মামলার শীর্ষে রয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট আসনে বিজেপির প্রার্থী ও রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ১৬টি মামলা। তিনি লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ শুক্রবার রাজ্যের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার—এ তিনটি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। এরপর ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট আসনে হবে ভোট গ্রহণ। বুধবার বিকেলে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফরমস (এডিআর) দ্বিতীয় দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৪৭ প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ৪৭ প্রার্থীর মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা। এর মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। আর এই ফৌজদারি মামলার শীর্ষে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট আসনে বিজেপির প্রার্থী ও রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ১৬টি মামলা। এ দফার নির্বাচনে সবচেয়ে সম্পদশালী প্রার্থী হলেন দার্জিলিং আসনের বিজেপির প্রার্থী রাজু বিস্তা। তার মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪৭ কোটি রুপি। গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি রুপি। ওই সময় রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও বিদায়ী সংসদ সদস্য সুকান্ত মজুমদারের সম্পদ ছিল ৫৮ লাখ রুপি। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ রুপি। বিজেপির বিদায়ী সংসদ সদস্য রাজু বিস্তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুটি ফৌজদারি মামলা। আর রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রামজের বিরুদ্ধে রয়েছে দুটি মামলা। দার্জিলিংয়ের নির্দলীয় প্রার্থী বিষ্ণু প্রসাদ শর্মার বিরুদ্ধে রয়েছে চারটি মামলা। কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন ইলেকশন ওয়াচের রাজ্য সমন্বয়ক উজ্জয়িনী হালিম। তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফার প্রার্থীদের মধ্যে ১২ জন কোটিপতি রয়েছেন। কোটিপতির তালিকায় রাজু বিস্তার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছেন যথাক্রমে রায়গঞ্জের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী (১২ কোটি ১১ লাখ রুপি) এবং ওই আসনে বিজেপির প্রার্থী কার্তিক পাল (৫ কোটি ৮ লাখ রুপি)।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ভোটের আগে অরুণাচলে বিজেপি নেতা অপহৃত
লোকসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির-বিজেপির এক নেতাকে অপহরণ করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা (সিইও) পবন কুমার সাইন বুধবার বলেন, চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের চেষ্টা সহ্য করা হবে না এবং এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খবর এনডিটিভির। অরুণাচল প্রদেশে লোকসভার দুটি আসন রয়েছে। ওই দুই আসনে ভোট গ্রহণের পাশাপাশি আজ রাজ্যের ৬০ সদস্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণও অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে নিয়ম মেনে ভোটের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করা হয়েছে। বুধবার রাজ্যের লংডিং জেলা থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সাংগাম ওয়াংশু নামে বিজেপির এক নেতাকে ধরে নিয়ে যায়। জেলাটি অরুণাচল ইস্ট লোকসভা আসনের অন্তর্গত। আইজিপি চুখু আপা বিজেপি নেতা অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি। অরুণাচল প্রদেশে ৬০ আসনের বিধানসভায় এরই মধ্যে ১০টি আসনে বিজেপি একমাত্র প্রার্থী দেওয়ায় তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছে। অরুণাচল প্রদেশের পূর্বের তিন জেলা তিরাপ, চ্যাংল্যাং এবং লংডিং এ নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সক্রিয়। তারা অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে এবারও কি চমক দেখাতে পারবে বিজেপি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাম সরকারের শাসন অবসানের পর রাজ্যটি যেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্গে পরিণত হয়। পশ্চিমবঙ্গ বলতেই যেন বোঝায় মমতা ব্যানার্জি। সেই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের নেতা-সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তাদের ক্রমবর্ধমান দাপট এ প্রশ্নই সামনে নিয়ে আসছে যে, সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনের মতো বিজেপি কি এখানে আবারও চমক দেখাতে পারবে? প্রায় ১৩ বছর আগে, ২০১১ সালে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা বাম সরকারের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয় পাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৪টিতে জিতেছিলেন। তারপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে নিজের স্থান আরও শক্তপোক্ত করতে সমর্থ হন তিনি। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। আর এ বছরের নির্বাচনে এনডিএর ৪০০ গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে যে বিজেপি, তারা কি এবারও পশ্চিমবঙ্গে ২০১৯-এর মতো জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে? বিশেষ করে যখন সন্দেশখালী, দুর্নীতি ও বেকারত্বের মতো বড় ইস্যু রয়েছে? একটি জনমত সমীক্ষায় বিজেপি ২৫টি আসন পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, আর অন্য একটি সমীক্ষা বলছে তারা ১৯টি আসন পেতে পারে। তৃতীয় একটি সমীক্ষায় বলা হচ্ছে বিজেপি ২০টি আসনে জয়ী হতে পারে। নির্বাচন বিশ্লেষক প্রশান্ত কিশোর বিবিসিকে বলেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ভালো ফল করতে পারে, অন্যদিকে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ দাবি করেন তৃণমূল কংগ্রেস ৩০-৩৫টি আসন পাবে। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য দলের টার্গেট ৩৫ বলে জানালেও সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইদুল ইসলাম মনে করেন না যে ‘বিজেপি তার অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোট থেকে বেরিয়ে এসে ৪২টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জ হলো, সমালোচকদের এটি প্রমাণ করে দেখানো যে, তারা একাই প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আটকাতে পারে। যদি দলটি তা করতে পারে, তা হলে দেশের বিরোধী নেতাদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মর্যাদা বাড়বে। তবে তা যদি না করতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস, তাহলে নেতাদের দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা যেমন তৈরি হবে, তেমনই পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য ফল নিয়ে প্রশ্ন তোলার আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে।’ মনে করা হয়, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিজেপির ভালো ফলের অন্যতম কারণ ছিল তৃণমূলবিরোধী ভোট তাদের পক্ষে যাওয়ার ঘটনা। বিশ্লেষক মইদুল ইসলামের মতে, ২০১৯ সালে বামদের প্রচুর ভোট বিজেপির দিকে গিয়েছিল এবং এর একটি বড় কারণ ছিল ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, যাতে মানুষ খুব ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আরেকটি কারণ ছিল রাজনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি বাম এবং কংগ্রেস। তাই মানুষের সামনে বিকল্প ছিল সীমিত—সেজন্যই বিজেপিকে তারা বেছে নিয়েছিল। তার মতে, বাম দলগুলোর ভোট এখন আবার তাদের দিকেই ফিরছে, তাই বিজেপি তাদের আসন বাড়াতে পারবে বলে তিনি মনে করেন না। বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ : পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সামনে চ্যালেঞ্জগুলোর কথা উঠলে বারবার শোনা যায় যে, এ রাজ্যে মমতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো শক্তিশালী সংগঠন নেই, বড় জননেতা নেই বিজেপির। আর যারা আছে, তাদের অনেকে আবার তৃণমূল কংগ্রেস থেকে আসা নেতা। অনেকেই বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তিশালী মাঠ পর্যায়ের সংগঠনের মোকাবিলা করা বিজেপির পক্ষে সহজ নয়। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখ শুভেন্দু অধিকারী। মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শুভেন্দু ২০২০ সালে তৃণমূলের একাধিক নেতার সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেন। এবার তার ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী, অর্জুন সিং এবং তাপস রায়ও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। শিখা মুখার্জির মতে, বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হল তারা এ রাজ্যের কোনো আন্দোলনে যোগ দেয়নি, আবার রাম মন্দির আন্দোলনের কোনো প্রভাবও এ রাজ্যে না পড়ার মতো বিষয়গুলো। বিজেপির কাছে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হল, রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলমান ভোটারের একটি বড় অংশ তাদের থেকে অনেক দূরে থাকেন। এটি বলা ভুল হবে না যে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন চালু হওয়ার পরে ওই দূরত্ব কমেনি তো বটেই, বরং বেড়েছে।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বিএনপির হামলায় বিজেপি প্রার্থী মকবুল আহত
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ) আসনে প্রচারের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী মকবুল হোসেন তালুকদারসহ দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার জগন্নাথপুরের মইজপুরে এ হামলা হয়। জানা যায়, মইজপুর মসজিদে নামাজ পড়ে কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন বিজেপির প্রার্থী মকবুল হোসেন। এ সময় পাটলী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুক মিয়া, তার ভাই তাজুল মিয়া, সাহেল মিয়া, ফুল মিয়া, মাসুক মিয়ার ছেলে মাসুদসহ বেশ কয়েকজন তাদের ওপর হামলা চালান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং প্রার্থীকে উদ্ধার করে। কাঁঠাল প্রতীক প্রার্থী মকবুল হোসেন তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার মইজপুর মসজিদে নামাজ শেষে নির্বাচনী প্রচারে গেলে বিএনপি নেতা মাসুক মিয়ার নেতৃত্বে তার সমর্থকরা হামলা চালান। এতে আমি ও আমার চাচাতো ভাই ফয়জুল রহমান আহত হয়েছি। এ সময় কৌশলে পার্শ্ববর্তী বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিই। আমরা জগন্নাথপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। তিনি বলেন, ভোটাররা আমাকে ভোট দিতে চান। লোকজন যাতে ভোটকেন্দ্রে না যায়, সেজন্য এখন থেকেই হুমকি দিয়ে আসছে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। আমি এ আসনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা মাসুক মিয়ার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আংগুর মিয়া বলেন, শুনেছি বিএনপির লোকজন মকবুল হোসেন তালুকদারের ওপর হামলা করেছে। জগন্নাথপুর থানার ওসি আমিনুল রহমান জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিজেপির প্রার্থী মকবুল হোসেন তালুকদারকে উদ্ধার করি।
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩

বিজেপি নেত্রীকে খুন করে লাশ ভাসিয়ে দিলেন স্বামী
নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর জানা গেল স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে বিজেপি নেত্রী সানা খান। মহারাষ্ট্রে বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি। জব্বলপুরের পুলিশ জানিয়েছে, সানা খানকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  জানা যায়, তিনি মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে গিয়েছিলেন গত ১ আগস্ট। ব্যবসার সূত্রে অমিত ওরফে পাপ্পু সাহু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে। দুদিনের মধ্যেই ফিরে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু তিনি আর ফেরেননি। ঘটনায় অভিযোগের তীর ছিল পাপ্পুর দিকেই। তিনি সেখানকার কুখ্যাত এক অপরাধী। তার সঙ্গে বেআইনি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন সানা। তাই তার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে হাত থাকতে পারে পাপ্পুর, এমন সম্ভাবনাও ছিল। পরে প্রকাশ্যে আসে, ওই পাপ্পুই সানার স্বামী। তিনি আগেই তাকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন বলে খবর। জানা যায়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করেছেন পাপ্পু। সানাকে মেরে তার দেহ হিরণ নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, সানা-পাপ্পুর মধ্যে দীর্ঘদিনের অশান্তির মূলে রয়েছে টাকাপয়সা সংক্রান্ত সমস্যা। আর সেই কারণেই স্ত্রীকে খুন করেছেন অমিত।  
১৩ আগস্ট, ২০২৩
X