যে শর্তে পরীক্ষায় অংশ নেবেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা
ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) স্থগিত হওয়া ও শিক্ষার্থীদের বর্জন করা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১১ মে এই পরীক্ষা শুরু হবে। শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেবেন এক শর্তে। তা হলো- তাদের দাবিদাওয়া মেনে নিতে হবে এবং ছাত্ররাজনীতি বিষয়ে আদালত থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় পেলেই আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে।    মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শ্রেণি প্রতিনিধিদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুয়েটের কাউন্সিল ভবনের দ্বিতীয় তলায় অনুষ্ঠিত এ সভায় বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার সভাপতিত্ব করেন। বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, গতকাল আমাদের সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভদের (সিআর) নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বর্জন করা ও স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর তারিখ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। ১১ মে থেকে শুরু হবে এই পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরাও এ সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছেন। এদিকে ‘বুয়েটিয়ান’ নামে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেইজে বলা হয়, বুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার আশ্বাস দিয়েছেন। মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের বয়কটকৃত পরীক্ষাগুলোর রিশিডিউলের জন্য উপাচার্য, ডিন মহোদয়, বিভাগীয় প্রধান ও ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া সাপেক্ষে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার প্রতিশ্রুতি দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ছাত্ররাজনীতি বিষয়ে আদালত থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পরপরই তারা আপিল করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১১ মে থেকে স্থগিত হওয়া বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।  সভায় অন্যান্যের মধ্যে বুয়েটের সহউপাচার্য আবদুল জব্বার খান, রেজিস্ট্রার মো. ফোরকান উদ্দিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ ইমামুল হাসান ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা উপস্থিত ছিলেন।  প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের এক আবাসিক হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্ররাজনীতি। এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর এখানে সকল সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। এর মধ্যেই গতমাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ একদল নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে পরের দিন নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।  তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে প্রকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বি এ ঘটনার জন্য দায়ী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাব্বির সিট বাতিল করলে বুয়েটে ফের ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবিতে সমাবেশ আয়োজন ও এরপর প্রকাশ্যে নেতাকর্মী নিয়ে গত ৩১ মার্চ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ। এরপরের দিন ছাত্ররাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী রাব্বির হাইকোর্টে করা রিট মামলার প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি আদেশ স্থগিত করেন বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ।  অন্যদিকে, গত ৩১ মার্চ থেকে চলতি মাসের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন। এরপর ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের ছুটি শেষে গত ১৭, ১৮ ও ২০ এপ্রিল কয়েক ব্যাচের অনুষ্ঠিত পরীক্ষা প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী বর্জন করে। যার প্রেক্ষিতে পূর্বনির্ধারিত সকল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
০১ মে, ২০২৪

নিরাপত্তা চেয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন কিছু শিক্ষার্থী। এরপর বিকেলে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনে ইসলামী ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মতো সংগঠনের ইন্ধন রয়েছে বলে গত ৩০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও ছাত্রলীগপন্থি পাঁচ শিক্ষার্থী। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হয়ে যিনিই কথা বলছেন, তাকেই ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে বারবার অত্যাচার ও সামাজিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। তারা বলেন, ২০২৩ সালে সুনামগঞ্জে আটককৃত ২৪ বুয়েট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, আমরা একটি মানববন্ধনের মাধ্যমে দোষীদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করি। যারা মানববন্ধনে ছিল তাদের হল বা ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ব্যাচ ও যার যার নিজ নিজ ব্যাচের ছাত্রদের মাধ্যমে ডেকে জবাবদিহি চাওয়া হয়। রাতে একসঙ্গে কাচ্চি খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যাচারের মাধ্যমে সবার সামনে অপরাধী বানিয়ে আমাদের ওপর যে ‘মব জাস্টিস’ শুরু করে তা এর আগে উপাচার্যকে জানিয়েছিলাম। তিনি আমাদের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত কোনো তদন্ত রিপোর্ট বা দোষীদের শাস্তি দেয়নি। এসব কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নতুন নতুন পদ্ধতিতে তারা আমাদের নিপীড়ন ও হেনস্তা করে যাচ্ছে। তাই এসবের তদন্ত ও ক্যাম্পাসে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

অচলাবস্থা কাটেনি, সেশন জটের কবলে বুয়েট
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশের প্রতিবাদ ও ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধের দাবিতে গত ২৯ ও ৩০ মার্চ টানা দুদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এরপর থেকে বড় সমাগম বা দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি তারা না নিলেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটির আগে ও পরে পূর্বনির্ধারিত সব টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাই প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী বর্জন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে গত শনিবার একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় পূর্বনির্ধারিত বাকি সব টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন অবস্থায় দীর্ঘ সেশনজটের কবলে পড়তে পারে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানটি। প্রশাসন বলছে, আলোচনার ভিত্তিতে পরে এই পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না এলে ক্লাস-পরীক্ষায় তারা ফিরবেন না, তাতে যত সময়ই লাগুক। ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের এক আবাসিক হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্ররাজনীতি। এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর এখানে সব সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। এর মধ্যেই গত মাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ একদল নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে পরদিন নতুন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বি এ ঘটনার জন্য দায়ী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাব্বির সিট বাতিল করলে বুয়েটে ফের ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবিতে সমাবেশ আয়োজন ও এরপর প্রকাশ্যে নেতাকর্মী নিয়ে গত ৩১ মার্চ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ। এর পরদিন ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী রাব্বির হাইকোর্টে করা রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে গত ৩১ মার্চ থেকে চলতি মাসের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাজনিত কারণে অবস্থান বা বিক্ষোভের মতো কোনো কর্মসূচি গ্রহণ না করলেও নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন। বিশেষ করে, গত ৩০ ও ৩১ মার্চ ২০তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় দুজন ছাড়া আর কেউ অংশ নেননি। এ ছাড়া গত ৩ এপ্রিল ১৮তম ব্যাচের পরীক্ষায়ও কেউ অংশ নেননি। এরপর ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের ছুটি শেষে গত ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ১৮তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় কেউ অংশ নেননি এবং ২১তম ব্যাচের পরীক্ষায় ১ হাজার ২৭৯ জনের মধ্যে অংশ নিয়েছেন মাত্র ৮ জন। গত ১৮ এপ্রিল ১৯ ও ২২তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায়ও কেউ অংশ নেননি। সবশেষ ২০ এপ্রিল ২০তম ব্যাচের পরীক্ষায় ১ হাজার ২১৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২১৩ জনই (৯৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ) অনুপস্থিত ছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এদিনই সন্ধ্যায় এক সভায় পূর্বনির্ধারিত বাকি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাগুলো স্থগিত ঘোষণা করে বুয়েট প্রশাসন। এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের (ডিএসডব্লিউ) নতুন পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক জানান, শিক্ষার্থীরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সামনে যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে। তবে বর্জন করা ও স্থগিত হওয়া পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিএসডব্লিউ অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানকে অপসারণ করে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিককে নিয়োগ দেওয়া হয়। চলমান আন্দোলনের শুরুতে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে একটি দাবি ছিল, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশের ঘটনায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দরুন ডিএসডিব্লউ অধ্যাপক মিজানুর রহমানের পদত্যাগ। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্র রাজনীতিমুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজমান হওয়ার লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাডেমিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকব এবং আগের জরুরি নোটিশ বলবৎ রেখে সুষ্ঠু ও সুন্দর ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তা পেলেই একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরব। আমরা মনে করি, আমাদের একতা ও মনোবল আমাদের ক্যাম্পাসকে আগের মতো সুন্দররূপে ফিরিয়ে দেবে। এক শিক্ষার্থী কালবেলাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের যে দাবি ছিল, আমরা সেটিতেই অনড় রয়েছি। আমরা এই ইস্যুতে প্রায় সব শিক্ষার্থীই ঐক্যবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অফিসিয়াল ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরব না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে কাজ করে যাব।’ বুয়েটের ডিএসডব্লিউ অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক কালবেলাকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে বুয়েটে শিক্ষার্থীদের আপাতত কোনো ক্লাস নেই। কারণ এখন পরীক্ষার সময়। পরীক্ষা স্থগিত থাকায় নতুন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করার জন্য প্রত্যেক বিভাগীয় প্রধানরা ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, কবে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আর শিক্ষার্থীদের সম্ভাব্য সেশনজট নিরসনেও বিভাগীয় প্রধানরা কাজ করে যাচ্ছেন।’ ছাত্ররাজনীতি আবার চালু হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির বিষয়টা যেহেতু আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে গেছে, সেহেতু হাইকোর্টের লিখিত আদেশ পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হবে।’ সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারকে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বুয়েট সাংবাদিক সমিতির কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা 
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহপাঠ্য ক্লাব ‘বুয়েট সাংবাদিক সমিতি’-এর বর্তমান কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর। রোববার (২১ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. রূপক মুৎসুদ্দী সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, অনিবার্য কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠ্য ক্লাব ‘বুয়েট সাংবাদিক সমিতি’-এর কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২৩-২৪ কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হলো। এদিকে, আজ (সোমবার) বুয়েট সাংবাদিক সমিতির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়,  এর কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২৩-২৪ এর নতুন কমিটি আগামীকাল ঘোষণা করা হবে। এতে বলা হয়, সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সাপেক্ষে সহযোগী ছাত্রকল্যাণ পরিচালক কর্তৃক বুয়েট সাংবাদিক সমিতির বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একইসাথে, আলাদা একটি বিজ্ঞপ্তিতে বুয়েট রোভার স্কাউট ক্লাবের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে, আগামীকাল সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২৩-২৪ এর  নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত শুধু পূর্ববর্তী কমিটির জন্য বলবৎ থাকবে। ক্লাব হিসেবে সাংবাদিক সমিতি বা তার কার্যক্রমের বিষয়ে কোনোরকম সিদ্ধান্ত নয়। বুয়েট সাংবাদিক সমিতি তার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সর্বদা বুয়েটের নিয়মনীতির উপর শ্রদ্ধাশীল হয়ে পরিচালিত হবে। বুয়েট সাংবাদিক সমিতি পূর্বের মতই বুয়েটের বিভিন্ন অর্জন, অভ্যন্তরীণ যেকোনো সংবাদ সততার সঙ্গে প্রকাশ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
২২ এপ্রিল, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন / বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ হিসেবে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেই যাচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে টার্ম ফাইনালের পূর্ব নির্ধারিত বাকি পরীক্ষাগুলো স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হয় বলে জানান কাউন্সিল সদস্যরা। পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের ছুটি শেষ হলে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ২১ ও ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন। ঈদের আগে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৮, ২০ ও ২২ ব্যাচের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন। এমন প্রেক্ষাপটেই শনিবার বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা থেকে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের নতুন পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক জানান, শিক্ষার্থীরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সামনে যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিলো সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে। তবে বর্জন করা ও স্থগিত হওয়া পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ২৭ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়  নেতাকর্মীরাসহ অন্যান্য বহিরাগতদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রেক্ষিতে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দিচ্ছেন।
২১ এপ্রিল, ২০২৪

বুয়েট : সমসাময়িক প্রেক্ষাপট ও কিছু প্রশ্ন
দেশের প্রকৌশল শিক্ষার পীঠস্থান বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রচেষ্টা চলছে। ছদ্মবেশে সেখানে হম্বিতম্বি করছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নামে নিজেদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বীজ বপন ও ফসল তুলে নিচ্ছে তারা। যার ফল শিবিরের মতো ক্যাম্পাসে রেজ্যুলেশন করে নিষিদ্ধ সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা পাচ্ছে বুয়েট থেকে।  বুয়েটে আজ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হিজবুত তাহরীর ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের মতো মৌলবাদী সংগঠন। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশ নিচ্ছে। প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা মুখ খুললেই তাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে শারীরিক ও মানসিকভাবে। সেই সঙ্গে প্রচার চালানো হচ্ছে ‘বুয়েটে শিবির-হিযবুত বলতে কিছু নেই’। মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সবখানেই রাজনীতির নিবিড় সংযোগ রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থী তথা আগামী দিনের কাণ্ডারিদের মধ্যে সেই সংযোগ গড়ে তোলার প্রাথমিক পাঠ দেয়। প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে প্রত্যেকটি মানুষের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করার অধিকার আছে। কিন্তু বুয়েটের মতো ক্যাম্পাসে মুক্ত চিন্তা ও বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কারা এই ঘটনার নেপথ্যে? বুয়েট কি তবে সংবিধানের বাইরে এক বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড? এ বছরের ৩১ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিল, বুয়েটে কার্যক্রম চালাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হয়ে যিনিই কথা বলছেন, তাকেই ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে বারবার অত্যাচার করা হচ্ছে৷ এর প্রমাণও মিলেছে একাধিক ঘটনার মাধ্যমে। বুয়েটে শিবিরের অস্তিত্বের প্রমাণ আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে সুনামগঞ্জের হাওরে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার অভিযোগে বুয়েটের প্রাক্তন এবং বর্তমান ৩৪ জন শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হন। তাদের নামে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে এখনো আদালতে মামলা চলমান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী মৌলবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন। এই মানববন্ধন করার পর তাদের চিহ্নিত করে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং জবাবদিহি চাওয়া হয়। বিভিন্ন হলের কক্ষে কক্ষে রাত ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ডেকে জবাবদিহি চাওয়া হয়। এমনকি মানববন্ধনকে একটি অপরাধের সঙ্গে তুলনা করে তাদের হল থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বুলিংয়ের শিকার এক শিক্ষার্থী বলেছিলেন, বুয়েটের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপগুলোতে আমাদের পক্ষে কেউ নিজের কোনো মতামত রাখতে গেলে তাকে বুলিং এবং নানা ধরনের হুমকির শিকার হতে হয়। আমাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক কিংবা পরিচয় থাকায় অনেককেই কটাক্ষের স্বীকার হতে হয়। যে কারোরই পারিবারিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলে বা পরিচয় থাকলে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়; পরিবার নিয়েও অশালীন মন্তব্য করা হয় অনলাইন ও অফলাইনে।  মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আমাদের মতো গুটিকয়েক ছেলের বিরুদ্ধে কারা এবং কাদের ইন্ধনে এসব হচ্ছে, তা একটু ভেবে দেখার সময় হয়েছে। মিথ্যাচার করে আমাদের দোষী করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী। বুয়েটে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড একটি জঘন্য ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। দেশের সর্বস্তরের মানুষ আবরারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক স্বদিচ্ছায় ঐতিহাসিক দ্রুততার সঙ্গে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার হয়েছে। বলা যায়, অতিরিক্ত কঠোর ও লোকরঞ্জনবাদী বিচার। একটি হত্যাকাণ্ডে এতজনের মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ পুরো পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল। কিন্তু আমরা দেখলাম, আবরার ধীরে ধীরে ছিনতাই হয়ে গেছে। আবরারের ফ্যামিলি বিশেষত আবরারের ছোটভাইয়ের ওপর ভর করে একটি বিশেষ গোষ্ঠী আবরারকে তাদের পলিটিক্যাল ক্যাপিটাল বানিয়েছে। আবরারের লাশকে ঘিরে যে শক্তিশালী ইমোশন, যে তীব্র শক বাংলাদেশের মানুষের মনে তৈরি হয়েছিল, সেটিকে মৌলবাদীরা চমৎকারভাবে ক্যাপিটালাইজ করেছে। আবরারকে তারা ব্যবহার করছে ‘পলিটিক্যাল শিল্ড’ বা ‘রাজনৈতিক বর্ম’ হিসেবে। কিছু হলেই তারা আবরারের নাম নিচ্ছে, আবরারের ছবি দেখাচ্ছে। আবরারের লাশের ভেতর বসে তারা পরিকল্পনা করছে, কীভাবে বুয়েটে স্বাধীন জঙ্গিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়।  অর্থাৎ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে বুয়েট যেভাবে উপকৃত হওয়ার কথার ছিল, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ছাত্রদের কর্মযজ্ঞ যেভাবে বাড়ার কথা ছিল, তা হয়নি। উল্টো এই সুযোগে, বুয়েট চলে গেছে সাম্প্রদায়িক মাস্তানদের হাতে। বুয়েট হয়ে উঠেছে জামায়াত, শিবির আর হিজবুত তাহরীরের অভয়ারণ্য।  বুয়েটে শিবির ও হিজবুত তাহরীরের প্রকাশ্য বা গোপন অবস্থান সবসময়ই ছিল। মৌলবাদীরা দীপকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এই বুয়েট ক্যাম্পাসেই। গণজাগরণমঞ্চের আরেক সংগঠক তন্ময় আহমেদকে কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে গিয়েছিল শিবির ক্যাডাররা। বুয়েটের ছেলেরা মেধাবী বলেই জঙ্গি ও মৌলবাদীরা বুয়েট ছাত্রদের টার্গেটেড রিক্রুট করে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, হিজবুত ও শিবির বুয়েটে তাদের অবস্থান স্ট্রং করেছে আবরার হত্যাকাণ্ডের পরে বিরাজনীতিকরণের নামে।  বুয়েটের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদের একটি অংশের ফেসবুক অ্যাক্টিভিটি দেখলেও তা অনুমান করা যায়। এই র‍্যাডিক্যাল ও গোঁড়া মাইন্ডসেট নিয়ে তারা আর্মি, প্রশাসন, পুলিশ এসব ক্যাডারেও যোগ দিচ্ছে। ফলে রাষ্ট্র ও নাগরিকের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ঝুঁকির ভেতর পড়ছে। এখনই সময় বুয়েটের প্রতি রাষ্ট্রের নিবিড়ভাবে নজর দেওয়ার।  ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের দিকে বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলের ২২৩, ৩০২, ৩২৪, ৩৩০ ও ৪১০ নম্বর রুম এবং আহসানউল্লাহ হলসহ বিভিন্ন হল থেকে প্রচুর ইসলামি বই ও শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিবরণ সংবলিত বেশ কিছু গোপন নথি পাওয়া যায়।  গোপন কাগজপত্র থেকে জানা যায়, বুয়েটে সেবা নামের একটি সংগঠনের আড়ালে শিবির তাদের কর্মকাণ্ড সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে প্রচার ও প্রসার করত। এ রকম ‘মেধাবীদের খোঁজে’ নামক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন নামে বেনামে সংগঠন দাঁড় করিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের তাদের দলে ভেড়ায়। গোপনে তারা বুয়েট প্রশাসন ও ক্যাম্পাসে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল। বুয়েটে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শিবির অনেক অর্থ ব্যয় করছে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পেছনে। ২০১০ সালে বুয়েটে শিবির অর্থ ব্যয় করেছে ৮ লাখ ৭০ হাজার ৩১৪ টাকা এবং ২০১১ সালে খরচ করে ১৩ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকা। এ ছিল ঘোষিত খরচ। এর বাইরেও ছিল নানা ফান্ড এবং সুযোগ-সুবিধার হাতছানি।  বুয়েট শিবিরের এক নেতার কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক জব্দ করে এ খরচের গোপন তথ্য উদ্ধার করে। ইসলামি ছাত্রশিবির মেধাবীদের মগজ ধোলাই করতে এবং দরিদ্র ছাত্রদের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে নিজেদের বশে আনতে এ বিপুল অর্থ ব্যয় করছে।  এসব তথ্য ফাঁস হওয়ার পর বুয়েট ছাত্রলীগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুয়েট শিবির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জন শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। বুয়েটের এক শিবির নেতাকে ডিবি পুলিশ মালিবাগে মিছিল থেকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এসব শিবির নেতাকর্মীকে ধরা হয়। এ কথা প্রমাণিত যে বুয়েটে মৌলবাদী গোষ্ঠী মোটামুটি বিনা বাধায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই তৎপরতার বড় প্রমাণ হিসেবে প্রগতিশীলদের ওপর বড় আঘাত আসে ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল। বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে দীপের মাথায় ও পিঠে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। ওই বছরের ২ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আর এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন মেজবাহ নামের উগ্রবাদী বুয়েটের এক শিক্ষার্থী। যিনি হেফাজতে ইসলামের সমর্থক ছিলেন বলে জানা গেছে।  একইরকম ঘটনা ঘটেছিল বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও তৎকালীন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদের সঙ্গেও। ২০১৩ সালে তিনিও শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তার শরীরে এখনো সেই হামলার ১৩০টি সেলাই রয়েছে। এসব হামলার আগে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গুজব ও উসকানিমূলক লেখালেখি শুরু হয়েছিল। সূত্র মতে, বুয়েটে বর্তমানে শতাধিক শিক্ষার্থী শিবিরের সঙ্গে যুক্ত। আর তাদের কাছে অন্তত চার হাজার শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য মজুদ আছে। তারা ব্যাপক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মধ্য দিয়ে মূলত বুয়েটকে একটি মৌলবাদের অভয়নগরে পরিণত করতে চাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে বুয়েট শিক্ষার্থীদের নামে শিবির তথা মৌলবাদী গোষ্ঠী দেশের সংস্কৃতি, আচার-উৎসবকে লক্ষ্য করে নানা লেখা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে নারীরা। মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বাঙালির ঐতিহ্যকে আক্রমণ করছে তারা। একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে জাতীয় দিবসগুলোতে অংশগ্রহণ করে না অধিকাংশ সাধারণ শিক্ষার্থী, ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য নিজেদের শিক্ষাগুরুদের গালি দেওয়া হয়, আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা হয়। এটা কি সর্বোচ্চ শিক্ষার নমুনা? এটা কি সর্বোচ্চ মেধার প্রকাশ! ২০১৯ থেকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। অথচ ২০২২ সালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একদল সাবেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকার পরেও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর ও যুদ্ধাপরাধী-মৌলবাদী সংগঠন শিবিরের তৎপরতা নিয়ে কথিত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো কথা নেই। ২০২৩ সালে সুনামগঞ্জের হাওরে আটক, নাশকতার মামলার আসামি ৩৪ শিবিরকর্মীর বিচার বিষয়ে তথাকথিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো কথা নেই। বুয়েটে রাজনীতি বন্ধ, একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক তৎপরতাও স্থবির। শুধু চলছে সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম। শিবির, হিজবুত তাহরির ও অন্যান্য সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলোর বেশিরভাগ কার্যক্রম মসজিদভিত্তিক হওয়ায় এসব কর্মকাণ্ড তারা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, সেখানে মসজিদভিত্তিক রাজনীতির সুবাদে শিবিরের ঘাঁটি গড়ে ওঠে এবং গলাকাটা, রগকাটার রাজনীতি শুরু হয়। বুয়েটেও এখন সেই আলামত দেখা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বললেও তাকে ‘আবরারের হত্যাকারী’ বা ‘ছাত্রলীগ’ বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেয় করা হচ্ছে। মৌলবাদ বিরোধী মানববন্ধন করায় শিক্ষার্থীদেরকে সারারাত আটকে রেখে জবাবদিহি চাওয়া হয়। বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পোস্টারিং করছে কারা? নিষিদ্ধ এ সংগঠনটির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা সক্রিয় থেকে কর্মী সংগ্রহ ও প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ করছে কী করে? ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রকৃতপক্ষে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের বিকাশ ঘটছে বুয়েটে। পরিকল্পিতভাবে বুয়েটকে একটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। ৭৫ এর পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওঠেনি। ছিল না বঙ্গবন্ধুর কোনো প্রতিকৃতি বা শ্রদ্ধা জানাবার ব্যবস্থা। সেটাও হয় ২০১৪ সালের পরে। বঙ্গবন্ধু ফলক, দীপের ফলকসহ বুয়েটে নানা কর্মকাণ্ড চালু করে প্রগতিশীলরা। আর সেটিকে থামাতেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদীরা। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিচিহ্নগুলো অবহেলিত, দীপের ফলক হয়েছে সাইকেল স্ট্যান্ড। কখনো তার ফলক ঘেঁষে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে সাইকেল! বুয়েটে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডেও মৌলবাদের ছায়া প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে শুরু থেকেই। রাজনীতি বন্ধের কথা বললেও তারা হিযবুত ও শিবির নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। বুয়েটের বিধিমালা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির নিরাপত্তার জন্য যে সকল কমিটি রয়েছে তার প্রতিটির দায়িত্বে রয়েছেন রেজিস্ট্রার মহোদয়, যিনি নিজেও একজন শিক্ষক। কিন্তু বুয়েটের নিরাপত্তা না দেওয়ার জন্য কেন ডিএসডব্লিউকে দায়ী করা হয়, কেন শুধু ডিএসডব্লুই, ভিসি বা প্রভিসিকে গালি দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রারকে কেন দেওয়া হচ্ছে না গালি বা তাকে তার অপরাধের জন্য কেন দায়ী করে তার বিরুদ্ধেও আন্দোলন হচ্ছে না?  এই প্রশ্নগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে সাবেক এক বুয়েটিয়ান হিসেবে করতে চাই। আমি বলছি না এমন আচরণ রেজিস্ট্রার মহোদয়ের সঙ্গে করা উচিৎ, বরং বলতে চাচ্ছি রেজিস্ট্রারকে যেমন আন্দোলনের তীরে বিদ্ধ করা হচ্ছে না, তেমনটিই হওয়া উচিত ভিসি, প্রোভিসি বা সাবেক ডিএসডব্লিউয়ের সঙ্গে।  সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা, এমনকি বুয়েটের শিক্ষকদের ‘ভুয়া’ বলে সম্বোধনসহ তাদের তুই-তুকারি করে কথা বলা এবং ফেসবুক পোস্ট করার মাধ্যমে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা কোন অ্যাকাডেমিক সংস্কৃতির চর্চা করতে যাচ্ছেন? সামনে সাধারণ ছাত্রদের রেখে পেছনে দাঁড়িয়ে এমন স্লোগান কারা দিচ্ছেন। নিজের শিক্ষকদের এমন অপমানজনক স্লোগান শোনার পরও সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেনো প্রতিবাদ করছেন না। এই বুয়েটের শিক্ষকরাই তো বুয়েটকে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেছেন। তাহলে তাদের প্রতি শিক্ষার্থীদের কৃতজ্ঞতাবোধ না থাকলে আমার মনে হয় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার চাইতে প্রথম বর্ষে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নৈতিক শিক্ষার কোর্স প্রদান করার কথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিবেচনা করা উচিত। একটি কথা বলে শেষ করতে চাই। চলতি বছর ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে বুয়েটের কিছু শিক্ষার্থী ইফতারের আয়োজন করে এবং বুয়েটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে নিজেদের সাধ্যমতো ইফতার প্যাকেট তৈরি করে পৌঁছে দেয়। এটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে এই কাজটি হয়নি এবং এই আয়োজনে কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ও ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু এ ঘটনায় কেন এই শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে র‍্যাগিং করা হলো? কেন তাদের রাত জুড়ে জেরা করা হলো। কেন হলের রুমে এবং মাঠে তাদের সকলের সামনে সামাজিকভাবে অপদস্ত করা হলো? এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিংয়ের অপরাধে কেন শাস্তির আওতায় আনা হলো না? বাংলাদেশ স্বাধীন হলো যার রক্তে, যেই ব্যক্তি তার পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে হত্যার শিকার হলো এই দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য, তার জন্মদিনে কিছু ইফতার পরিবেশন করলে কাদের এত সমস্যা হয়।  বেশ স্পষ্টতই যারা এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, তাদের আদর্শগত দ্বন্দ্ব রয়েছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সঙ্গে। আর এ কারণেই বুয়েটের ত্রিসীমানায় তারা এই আদর্শ ধারণ করা কাউকেই স্বস্তিতে থাকতে দিতে চায় না। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা যেই অবাধ রাজনীতির সুযোগ পেয়েছে বুয়েটে, সেই সুযোগ মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না। বুয়েট আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সনি, দীপ বা আবরার ফাহাদের মতো কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে তার দায়িত্ব নিতে হবে প্রশাসনকে। সেই সঙ্গে মানুষকে তার রাজনীতির অধিকারও ফেরত দিতে হবে। মানুষ একজন রাজনৈতিক প্রাণী হিসেবে জন্মেছে। রাজনীতি শূণ্যতা কখনো অপরাজনীতিকে প্রতিহত করতে পারেনি। বরং সম্মিলিত রাজনীতি এবং সকলের অংশগ্রহণের রাজনীতি চালু হওয়া আবশ্যক। আমি স্বপ্ন দেখি বুয়েটে একটি শক্তিশালী ছাত্র সংসদ গড়ে উঠুক। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হোক। বাংলাদেশকে তারা হৃদয়ে ধারণ করে সকল মৌলবাদী অপশক্তির বিপক্ষে বজ্রকণ্ঠ ধারণ করুক। সেই সঙ্গে লেজুড়বৃত্তিক অপরাজনীতি নিয়েও তারা সচেতন ও প্রতিবাদী হোক। দেশের সেরা মেধাবীরা রাজনীতি সচেতন না হয়ে রাজনীতি বিমুখ হলে, সেই দেশের ভবিষ্যৎ কখনই আলোকিত হবার নয়। লেখক- সাবেক শিক্ষার্থী, পুরকৌশল বিভাগ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় 
২০ এপ্রিল, ২০২৪

টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দিলেন না বুয়েট শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্লাস-পরীক্ষা ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ২২তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিলো। কিন্তু, এ পরীক্ষায় ১ হাজার ৩০৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনও পরীক্ষার হলে উপস্থিত হননি। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতেই শিক্ষার্থীদের এমন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলছে। আজ বুয়েটের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ফেসবুক পেইজে শিক্ষার্থীরা বলেন, সকাল ৯টার সময় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও সকাল থেকে ক্যাম্পাসে কাউকেই উপস্থিত দেখা যায়নি। ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে পরীক্ষার হলে কর্তব্যরত শিক্ষকদের প্রশ্নের প্যাকেট হাতে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, গত ৩০মার্চ ২২ ব্যাচের বুয়েট জীবনের প্রথম টার্ম ফাইনাল এক্সামও বর্জন করা হয়। তারা আরও বলেন, টার্ম ফাইনাল এক্সাম বুয়েটিয়ানদের জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। তা সত্ত্বেও রাজনীতিমুক্ত একটা সুন্দর ক্যাম্পাস রক্ষার প্রশ্নে বুয়েটিয়ানরা যে ঐক্যবদ্ধ, স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক্সাম বয়কট করার ঘটনা সেটাকেই আবারও প্রমাণ করে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ২৭ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরাসহ অন্যান্য বহিরাগতদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রেক্ষিতে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪

বুয়েটে ছাত্রলীগ নেতা রাব্বীকে হলের সিট ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাব্বীর হলের সিট ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (৮ এপ্রিল) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটির ওপর শুনানি হয়। পরে আদালত এ আদেশ দেন। সোমবার সকালে ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে রাব্বীর হলের সিট বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে তাকে হলের সিট ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। বুয়েটের ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়। আদালতে রাব্বীর পক্ষে ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ রিটটি দায়ের করেন। এর আগে, গত ২৯ মে রাজনৈতিক সমাগমকে কেন্দ্র করে আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের সিট বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দাবি, আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও গত বুধবার মধ্যরাতের পর বহিরাগত কিছু নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান। ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ প্রবেশ ও রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন; যিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাই তাকে বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও তার সহযোগীদেরও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। এদিকে গত ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ২০১৯ সালে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করে তা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪

ক্যাম্পাসে ঈদের নামাজের স্থান ও সময় জানাল বুয়েট
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রথম জামাত সকাল সোয়া ৭টায় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।  রোববার (৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ঈদুল ফিতরের নামাজ সকাল সোয়া ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। খোলা মাঠে নামাজের জামাতের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ জারি করা হলে অথবা আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে খেলার মাঠের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি মসজিদে নিম্নবর্ণিত সময়সূচি অনুযায়ী উক্ত নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। ১. বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদ - সকাল সাড়ে ৭টা । ২. বকশিবাজার বায়তুস সালাম মসজিদ - ৮টা । ৩. আজাদ আবাসিক এলাকা মসজিদ - ৮টা ।
০৭ এপ্রিল, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি বুয়েট অ্যালামনাইর
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন বুয়েট অ্যালামনাই বলছে, ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে কথা বলা ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। সাধারণ ছাত্ররা যে নিরাপত্তাহীনতার কথা বারংবার প্রকাশ করছে, সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আনতে হবে। এ ছাড়া, সংগঠনটি মনে করছে, তারা সুষ্ঠু রাজনীতির পক্ষে, তবে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির নামে যা চলমান, তা অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি ও অনিশ্চয়তা নিয়ে গত বুধবার (০৩ এপ্রিল) বুয়েট অ্যালামনাই বোর্ড অব ট্রাস্টি ও বুয়েট আবাসিক হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিশিষ্ট অ্যালামনাইদের সঙ্গে বুয়েট অ্যালামনাই এর সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাতের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত একটি যৌথ জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব কথা জানানো হয়। সভায় বুয়েটের বর্তমান পরিস্থিতিকে অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করে উপস্থিত সকল সদস্য গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন।  এ সময় বুয়েটের সামগ্রিক ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এবং শিক্ষার মান অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেগুলো হলো- ১. বুয়েট অ্যালামনাই মনে করে যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পূর্ণ দায়িত্ব উপাচার্য মহোদয় ও সিনডিকেটের। ২. ক'দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি অনভিপ্রেত। এই সভা সুষ্ঠু রাজনীতির পক্ষে মত প্রকাশ করছে। তবে বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির নামে যা চলমান তা অপরাজনীতির বহিঃপ্রকাশ বা নামান্তর। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষা আর শিক্ষার মান সমুন্নত রাখবার জন্য বুয়েট অ্যালামনাইদের ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং এই উদ্দেশে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যুগপৎভাবে দায়িত্ব পালনে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। ৪. বিগত ৫ (পাঁচ) বছরে বুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম অবিঘ্নিত ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্রে সম্মানজনক অর্জন ও স্বীকৃতির ক্রমোন্নতি এই ধারাবাহিক সাফল্যের সাক্ষ্য দেয়। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে এই উন্নয়ন সাধনের জন্য বুয়েট অ্যালামনাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-এর সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকমণ্ডলী ও প্রশাসনকে অভিনন্দন জানাতে চায়। এই পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়া কারোরই কাম্য হতে পারে না। আগামীতেও বুয়েটের এই সংকল্প ও অভিলাষ লক্ষ্যচ্যুত না হয়ে আরও বেগবান হোক বুয়েট অ্যালামনাই এই সভার মাধ্যমে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করতে চায়। ৫. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষা ও গবেষণায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণায় মনোযোগ, সুশাসন, একাডেমিক নেতৃত্ব, ইন্ডাস্ট্রি -একাডেমিয়া কলাবরেশন এবং প্রাক্তন ছাত্রদের পৃষ্ঠপোষকতায় বুয়েট ক্রমাগতভাবে তার বৈশ্বিক র‍্যাংকিং এ উন্নতি সাধন করে চলেছে। ২০২১ সালে, বুয়েটের বিষয় ভিত্তিক র‍্যাংকিং ৩৪৭ ছিল, যা ২০২৪ এ ৩০৫ এ উন্নীত হয়েছে। তাছাড়া একাডেমিক সূচকেও বুয়েটের পারফরম্যান্স লক্ষণীয়। প্রতিষ্ঠানটি তার একাডেমিক স্কোরে ক্রমাগত উন্নতির স্বাক্ষর রেখে চলেছে। ২০২১ সালে একাডেমিক স্কোর ৬৫.৩ ছিল, ২০২৪ সালে ৭২-এ উন্নীত হয়, যা কিনা একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে। উপরন্তু, বুয়েটের সাইটেশন স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা এর গবেষণার অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ২০২১ সালে এর সাইটেশন স্কোর ছিল ৬৬.২ তা ২০২৪ সালে দাঁড়ায় ৭৭, যা একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের স্বীকৃতি প্রকাশ করে। বুয়েট তার এ অসাধারণ সাফল্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে অপরাজনীতি মুক্ত অনুকূল একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার মাধ্যমে। ক্রমাগত প্রচেষ্টা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার মাধ্যমে, বুয়েট তার বৈশ্বিক খ্যাতি আরও বাড়াতে এবং বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে, যদি এখানে একটি রাজনীতি-মুক্ত পরিবেশ বজায় থাকে। ৬. আমাদের বুয়েট স্নাতকরা দেশে-বিদেশে কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, নতুন বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দরসহ অসংখ্য বৃহৎ প্রকল্পে তারা পেশাদার সহায়তার মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলার জন্য উপযোগী মানব সম্পদ গড়ে তুলতে বিদেশে অবস্থানরত কর্মক্ষেত্রে (INTEL, Microsoft) প্রতিষ্ঠিত অ্যালামনাইগণ দেশের ও বুয়েটের মান উন্নয়নে অবদান রাখছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে রেখেও, প্রতিষ্ঠানটি তার ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ গড়ে তোলার কারণে একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং জাতীয় অগ্রগতির লক্ষ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ৭. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিকভাবে অতি উচ্চ মানের কারিগরি শিক্ষা প্রদানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমাণিত ও স্বীকৃত। বুয়েট অ্যালামনাই বিশ্বাস করে এই প্রতিষ্ঠান জঙ্গিবাদ লালন করবার ক্ষেত্র নয়। এই বিষয়ে ন্যূনতম আভাস বা সম্ভাবনা দেখা গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকার নিশ্চয়ই কঠোর হস্তে দমন করবে। ৮. ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ ছাত্ররা যে নিরাপত্তাহীনতার কথা বারংবার প্রকাশ করছে, সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আনার জন্য বুয়েট অ্যালামনাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ-কে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছে। ৯. বুয়েট অ্যালামনাই বিশ্বাস করে, সাম্প্রতিক এই সংকট দ্রুত নিরসন হবে। অতীতের মত আগামীতেও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, প্রশাসন ও শিক্ষকমণ্ডলীদের পারস্পরিক সম্মান, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সদা জাগ্রত থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট সকলেই এই বিদ্যাপীঠের গৌরব ও সুনাম সমুন্নত রাখবার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে।  প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের এক আবাসিক হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি। এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর এখানে সকল সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। এর মধ্যেই কয়েকদিন আগে রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ একদল নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে পরের দিন নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বি এ ঘটনার জন্য দায়ী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাব্বির সিট বাতিল করলে বুয়েটে ফের ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবিতে সমাবেশ আয়োজন ও এরপর প্রকাশ্যে নেতাকর্মী নিয়ে গত রোববার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ। এরপরের দিন (সোমবার) ছাত্ররাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী রাব্বির হাইকোর্টে করা রিট মামলার প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি আদেশ স্থগিত করেন বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ। এরপর থেকে এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা ও সমালোচনা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বর্তমানেও চলমান।
০৬ এপ্রিল, ২০২৪
X