নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর, ভবিষ্যৎ ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতা বিষয়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, কৃষি বিশেষজ্ঞ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিসহ বহুপাক্ষিক অংশীজনের অংশগ্রহণে এক গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। কৃষি উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক অংশীজন এবং কৃষি ব্যবসায়ীদের নিকট বাংলাদেশের কৃষিখাতের সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরতে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাস। কৃষি গবেষণায় বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাখেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসার্চ এবং কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এ গোলটেবিল আলোচনাটি আগামী ০৬ মে সোমবার অনুষ্ঠিত হবে। এতে অন্যদের সঙ্গে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব ব্যাংক, গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা যোগ দিবেন। গোলটেবিল বৈঠকের কার্যক্রম নেদারল্যান্ডস থেকে ভাখেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন প্লাটফর্ম https://wur.yuja.com/LiveStream/W/1561642/277811235 এ ০৬ মে সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.০০ টা থেকে প্রচারিত হবে।  বাংলাদেশের কৃষিতে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেইন) এবং দক্ষতার ঘাটতি পূরণ- এই ৪টি বিষয়ে আলোচনা সভায় গুরুত্বারোপ করা হবে।   এ আলোচনা সভায় যোগ দিতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে নেদারল্যান্ডস যাচ্ছেন চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমান।  শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় প্রতিনিধিদল নেদারল্যান্ডসের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডস বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশ। নেদারল্যান্ডসের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও গবেষণা দক্ষতা দেশের কৃষিতে প্রয়োগের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডস সফরকালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৃষিখাতের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছিলেন। বিগত দুই বছরে কৃষি খাতে বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ২০২২ সালে নেদারল্যান্ডসের ভাখেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসার্চের  প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কৃষির ভবিষ্যৎ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা যেসব বড় বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, তা মোকাবিলা করতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ৩টি রূপান্তরমূলক প্রকল্প গ্রহণের জন্য তহবিল অনুমোদন করেন। কৃষি খাতে বৈশ্বিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে কানাডার কৃষি গবেষণায় শীর্ষস্থানীয় সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার আলোকে সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপন, গাজীপুরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের চত্বরে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র স্থাপন ও ঢাকায় বিএআরসি চত্বরে সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির অফিস স্থাপন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি প্রযুক্তি ও জাত উদ্ভাবন নিয়ে ইতোমধ্যে গবেষণা শুরু করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে।
০৪ মে, ২০২৪

জাপার ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্কবার্তা
সারা দেশে সাংগঠনিক করুণ দশা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতারা বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আপস আপস খেলা দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব এবং মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি না থাকায় দিন দিন লাঙ্গলের জনসমর্থন কমছে। বড় দলগুলো নানা প্রলোভনে স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ভালো প্রার্থীদের বাগিয়ে নিচ্ছে। এ অবস্থায় জনবান্ধব রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দলকে চাঙ্গা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গত শনিবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেছেন বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা। এ সময় মঞ্চে ২৫ জনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতা উপবিষ্ট ছিলেন। জানা গেছে, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। এর মধ্যে ৩৭টি জেলার প্রতিনিধিরা বর্ধিত সভায় বক্তব্য দিয়েছেন। সময়স্বল্পতার কারণে বাকিরা কথা বলার সুযোগ পাননি। এ কারণে অনেকেই গতকাল রোববার দলের বনানী কার্যালয়ে গিয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের মতামত তুলে ধরেন। জানা গেছে, বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের দেওয়া বক্তব্যে মাঠপর্যায়ে দলের বেহাল দশা, জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া, জনবান্ধব কর্মসূচি না দেওয়া, দল পরিচালনায় পারিবারিক প্রাধান্য, সাংগঠনিক সফরসহ নানা বিষয়ে উঠে আসে। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা বলেন, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণে ব্যর্থ হলে আগামীতে আরও বেশি ভরাডুবি হবে। দলের নেতৃত্ব ও পরিস্থিতি যে পর্যায় চলে গেছে, তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাপার অস্তিত্ব ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। জাপা সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির সম্মেলন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০টি জেলার সম্মেলন বাকি। এ ছাড়া ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে কতটিতে সম্মেলন হয়নি—তার সঠিক হিসাব কেন্দ্রীয় দপ্তরেও নেই। মহানগর কমিটি থাকলেও তেমন শক্তিশালী নয়। উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ওয়ার্ড কমিটির দশা আরও বেহাল। জাতীয় পার্টিকে বর্তমান করুণ দশা থেকে বের করতে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে (জি এম কাদের) দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্ত্রীর কথা না শোনার পরামর্শ দেন অনেকেই। পাশাপাশি কেউ কেউ মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বনানীর কার্যালয়ে বসে না থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সারা দেশ সফরেরও তাগিদ দেন। বর্ধিত সভায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাপার সভাপতি এয়ার আহমেদ সেলিম বলেন, ‘পার্টির অবস্থা দিন দিন রসাতলে যাচ্ছে। অথচ ঢাকায় বসে কেন্দ্রীয় নেতারা নামমাত্র দল নিয়ে আসন ভাগাভাগির যুদ্ধে নামেন। মাঠে গিয়ে দেখুন পরিস্থিতি কী। যেখানে আমাদের দু-একজন ভালো নেতা আছে; তাদের বড় দলগুলো নানা প্রলোভন দেখিয়ে ভাগিয়ে নিচ্ছে। এভাবে আমাদের একসময় কিছুই আর হাতে থাকবে না।’ খুলনা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, ‘পার্টির কিছু নেতা রয়েছেন যারা সুযোগসন্ধানী। তারা রাজনীতির মাঠে না থেকেও বারবার এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির দুর্গ ছিল রংপুর। আজ সেই দুর্গ নেই। কারণ একটাই—নেতৃত্বের অভাব। কান কথা শুনে রাজনীতির নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। দলের মধ্যে কান কথা বেশি চলছে। ফলে রংপুরের ঘাঁটি হারিয়ে গেছে।’ কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি ডা. আব্দুল হাই জাপা চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার আশপাশে যারা বসা আছেন, তারা শুধু হালুয়া-রুটির জন্য আপনার আশপাশে ঘুরঘুর করেন। হালুয়া-রুটির জন্য আপনার কাছে ধরনা দেন। এসব নেতার কাছ থেকে দূরে থাকুন। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি না করে নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে জনস্বার্থে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামুন।’ টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জাতীয় পার্টির রাজনীতি বনানী অফিসকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। যারা প্রতিদিন বনানী অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে দেখা করেন, তারা পদপদবি পান। তারাই প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হচ্ছেন। এভাবে একটি রাজনৈতিক দল চলতে পারে না।’ দিনাজপুর জেলা সভাপতি রুবেল আহমেদ পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব। আপনি কয়টি জেলা সফর করেছেন? কয়টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন? বানানী অফিসে বসে দলের নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না।’ লালমনিরহাট জেলা জাপা সভাপতি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘তৃণমূলে জাতীয় পার্টির অবস্থা খুবই দুর্বল। দলটির অঙ্গসংগঠনগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জাপা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে আরও ভরাডুবি হবে।’ ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল আলম রুবেল বলেন, ’৪২ বছর ধরে আমি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করি। আমার মতো অনেকে আছেন, যারা এ দলটি করতে গিয়ে সবকিছু হারিয়েছেন। আজ আমাদের মাজা ভেঙে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টি নামে দল করছেন। তিনিও জানেন, তাকে দিয়ে রাজনৈতিক দল হবে না। তাদের ওখানে যেসব নেতা রয়েছেন, তারাও সময়মতো চলে আসবেন। তারাও নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন, এমপি হবেন। অথচ এমন অনেকেই আছেন, যারা ২০-২৫ বছর জাতীয় পার্টির রাজনীতি করছেন; কিন্তু একবারও নির্বাচন করার সুযোগ পাননি। সেসব নেতার সমর্থকরা কেন জাপার সঙ্গে থাকবেন?’ তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা জি এম কাদের বলেন, ‘আপনারা যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন তার অনেক কিছুই আমাদের জানা। এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

আসুন সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে একযোগে কাজ করি : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসুন, নতুন বছরে অতীতের সব ব্যর্থতা-দুঃখ-গ্লানি পেছনে ফেলে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করি।  রোববার (১৪ এপ্রিল) সারা দেশে উদযাপিত হবে বাংলা নববর্ষ- ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে তিনি আজ বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তায় (ভিডিও) দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। বর্ষ পরিক্রমায় আবারও আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে নতুন বছর। আপনারা যারা দেশে-বিদেশে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের সব ভাইবোনকে জানাই বঙ্গাব্দ ১৪৩১-এর শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ। প্রধানমন্ত্রী কবি সুফিয়া কামালের ভাষায় উচ্চারণ করে বলেন : ‘পুরাতন গত হোক! যবনিকা করি উন্মোচন তুমি এসো হে নবীন! হে বৈশাখ! নববর্ষ! এসো হে নতুন।’ শুভ নববর্ষ।
১২ এপ্রিল, ২০২৪

ড. সজল চৌধুরীর নিবন্ধ / একটি ভবিষ্যৎ স্মার্ট গ্রামের গল্প
ধরে নেওয়া যাক আজ থেকে দশ বছর পরের একটি গ্রামের গল্প এটি। যে গল্পটির নাম ‘একটি ভবিষ্যৎ স্মার্ট গ্রামের গল্প’! যে গ্রামে সব মানুষের সঙ্গে সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির মেলবন্ধনের মাধ্যমে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। গ্রামটি প্রযুক্তির ব্যবহার করে জনগণের জীবন এবং জীবিকার মান নতুন পর্যায়ে উপস্থিত হয়েছে সবার কাছে। সব সদস্য তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক স্থানীয় টেকনোলজিকে ব্যবহার করে উন্নতি করতে পারে। এ স্মার্ট গ্রামের সব সদস্যের একটি করে ডিজিটাল প্রোফাইল আছে যেখানে তারা তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আর্থিক অবস্থাসহ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য সমন্বয় করতে পারে। তারা তাদের স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে গ্রাম এবং নিজেদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতে পারে। এই স্মার্ট গ্রামে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে সংরক্ষণের জন্য এমন কিছু স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা জৈব কৃষি এবং পরিবেশ নিশ্চিত করবে। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত এ গ্রামের সবাই শহরের সঙ্গে প্রয়োজনে একটি ডিজিটাল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদন এবং পরিবেশনার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে। এ গ্রামের মাধ্যমে গ্রামীণ অবস্থানে নিজস্ব সক্ষমতা বিকাশ করতে এবং তাদের পরিবেশের উন্নতির জন্য প্রযুক্তির উপযোগী একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে গ্রাম পরিষদ, সরকার এবং প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সম্পর্ক রয়েছে। গ্রামের প্রত্যেকটি স্কুলে শিক্ষার্থীরা যেন শহরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পায়, এজন্য এখানে এমন ভার্চুয়াল এনভারমেন্ট তৈরি করা হয়েছে যেন শহরের কিংবা দেশ-বিদেশের বিখ্যাত শিক্ষকরাও ভার্চুয়াল এনভায়রনমেন্টের মাধ্যমে গ্রামের একটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে ছাত্রছাত্রীদের সামনে তাদের শিক্ষা পরিবেশন করবে। স্কুল এবং হাসপাতালে ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থী এবং রোগীরা পরামর্শ ও পরিচিতি পান। গ্রামটিতে প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য সহজেই অ্যাকসেস করা যায়। এখানে বিভিন্ন সেবা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। স্মার্ট গ্রামে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে গ্রামের মানুষের জীবন সহজ এবং সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। এ গ্রামে জনগণের সঙ্গে ইন্টারেকটিভ যোগাযোগমাধ্যমের সমন্বয় করা হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা এর আগে ইন্টারনেটের অভাবে হয়তোবা অসন্তুষ্ট ছিলেন কিন্তু বর্তমানে তারা সবাই প্রয়োজনের ভিত্তিতে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে জীবনযাপনের ও প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরেছে। তার একটি উদাহরণ হলো সাহায্যকারী রোবট। এ রোবটগুলো গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে এবং তাদের প্রতিদিনের কাজে সাহায্য করতে পারে। এখানে কখনো বিদ্যুৎ যায় না। কারণ এ স্মার্ট গ্রামটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এখানে উৎপন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে তারা সৌরশক্তিকেও ব্যবহার করেছে। শুধু তাই নয়, নিজ গৃহে নয়—এ গ্রামে যে গভীর ও অগভীর জলাশয়গুলো আছে সেই জলাশয়ের ওপরও সৌরশক্তি উৎপাদনের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এমনকি এ গ্রামের প্রত্যেকটি ঘরে স্মার্ট মিটার রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা ঘরবাড়িতে কতটুকু বিদ্যুতের প্রয়োজন, কতটুকু বিদ্যুৎ মজুত রয়েছে এবং সৌরশক্তিকে কীভাবে দিনের বিভিন্ন সময় আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়, পরিবেশের তারতম্য অনুসারে সেগুলোর অ্যাপ্লিকেশন এবং দিকনির্দেশনা রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা খুব সহজেই শুধু নিজের ঘরের জন্য নয়, পুরো গ্রামের জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চয় করতে পারে। গ্রামটির খামারগুলোতে এমন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে খামারগুলোর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সেখানকার পশুপাখির চাহিদা অনুযায়ী আপনাআপনিই পরিবর্তিত হয়। গ্রামটির প্রতিটি স্থাপনায় যেন গ্রামের নিজস্ব কৃষ্টি এবং কালচারের ছাপ রয়েছে। প্রতিটি স্থাপনা তৈরির উপকরণগুলো গ্রামটির নিজস্ব চিত্র বহন করবে। বৈচিত্র্যের দিক থেকে প্রত্যেকটি স্থাপনায় আধুনিকতার ছায়া রয়েছে। গ্রামটির মধ্যে সাধারণরা পায়ে হাঁটার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের সব চাহিদা পূরণ করতে পারে যেমন—চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাসেবা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি। এমন অনেক অসাধারণ গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেই স্মার্ট গ্রামটিতে যার আরও গল্প হয়তো পরে করা যাবে। এবার একটু বর্তমানে ফিরে আসি। আমরা আজ যে স্মার্ট গ্রাম উন্নয়নের কথা বলছি সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ থেকে বহু বছর আগে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তানাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে যমুনা বহুমুখী সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) নির্মাণের স্বপ্নের কথা প্রথম সূচনা করেন, যা শুধু যাতায়াতের জন্য নয়, নদীর দুই প্রান্তের গ্রামগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মেলবন্ধনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রাম ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্য তিনি প্রাথমিকভাবে ৫০০ ডাক্তারকে গ্রামে নিয়োগ করেছিলেন যেন শহর আর গ্রামের স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য নিরসন হয়। এমনকি দেশের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা এবং ধারণ ও সমৃদ্ধির জন্য তিনি গঠন করেছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আমরা সত্যি আশান্বিত হই প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশের গ্রামগুলোর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। স্মার্ট গ্রাম উন্নয়নকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিবেচনা করছেন। বঙ্গবন্ধুর ১৯৭২ সালের জুন মাসের এক ভাষণে বলেছিলেন দেশের প্রত্যেকটি মানুষ যেন খেতে পারে, আশ্রয় পাবে…। বলেছিলেন প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। আর এটি ছিল তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রধান লক্ষ্য। তার বিভিন্ন বক্তৃতায় উঠে আসে গ্রামের পরিবেশ, কৃষি, প্রকৃতি, আর সেইসঙ্গে কৃষকের কথা। নিজস্ব সংস্কৃতি, স্থাপত্য ও পরিকল্পনাকে বুঝতে হলে প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনার সমন্বয় এবং সেগুলোকে সঠিক পন্থায় অনুধাবন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বক্তৃতার মধ্যে এভাবেই বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে তার মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি সর্বস্তরের বৃক্ষরোপণের ডাক দিয়েছিলেন, উপকূলীয় বনায়ন করেছিলেন, বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন প্রণয়ন করেছিলেন, জলাভূমি রক্ষার রূপরেখা প্রণয়ন করে বহুমুখী কর্মকাণ্ড করেছিলেন, যা ছিল সুস্থ সমাজ এবং পরিবেশবান্ধব সমাজব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সর্বত্রই তখন ছিল ধ্বংসলীলা। বাঙালির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, কৃষির উৎপাদন এমনকি পুনর্বাসনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে তিনি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন এবং দেশের সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে দুর্ভিক্ষকে প্রতিহত করেছিলেন। প্রাথমিক সংকটগুলোকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। কলকারখানার উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো সম্ভব, পুনর্বাসনের ব্যবস্থাপনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন রূপ ধারণ করবে এসব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ চিন্তা ও বিশ্লেষণ তার কর্মধারার মধ্যে বিশদভাবে ছিল। তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। যার লক্ষ্যগুলো ছিল মূলত দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান, আর্থিক উন্নয়ন, পণ্যের চাহিদা, কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রযুক্তিগত কাঠামোতে সমসাময়িক রূপান্তর ইত্যাদি। এমনকি তার ভাবনার মধ্যে ছিল দেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। সেইসঙ্গে আরেকটি বিষয় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা হলো শ্রমশক্তির শহরমুখী অভিবাসন বন্ধ করা, যা বর্তমানে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের শহরগুলোকে নিয়ে ভাবছি। বর্তমানে আমরা শহর ও গ্রামের টেকসই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। বিভিন্ন সভা-সেমিনার করছি। লেখালেখি করছি। নতুন পরিকল্পনা করছি। নতুনভাবে নগর এবং শহরের প্রস্তাবনা করছি। সেতু, ভবন, কারখানা এককথায় নগরায়ণ শিল্পায়ন এবং উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের কথা ভাবছি। কিন্তু যে বিষয়টিকে এখানে গুরুত্বারোপ করছি সেটি হলো আমাদের এই স্মার্ট-টেকসই উন্নয়নের ধরন কেমন হবে কিংবা গ্রাম-নগরায়ণ-শিল্পায়ন কেমন হবে সেসব বিষয় যদি বঙ্গবন্ধুর দর্শন থেকে আরও নিবিড়ভাবে নেওয়া যেত গবেষণার মাধ্যমে তাহলে হয়তো টেকসই উন্নয়নের আরও একটি ধাপ স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা এগিয়ে নিতে পারতাম। তাদের ভাবনা এবং চিন্তার জায়গাগুলোকে আরও স্পষ্টভাবে স্থাপত্য, প্রকৌশল আর নগরায়ণের দিক থেকে বিশদভাবে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কোনো পরিকল্পনা করা সম্ভব হলে হয়তো দেশের চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের জন্য বিরাট একটি প্রাপ্তি হতো। কী তার নগরায়ণ, গ্রামোন্নয়নের অথবা শিল্পায়নের ভাবনা? এ সম্পর্কে আরও বিশদ পরিকল্পিত গবেষণার প্রয়োজন অবশ্যই। এজন্য প্রয়োজন একটি স্বতন্ত্র জাতীয় ‘বঙ্গবন্ধু গ্রাম ও নগর উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র’ কিংবা প্রতিষ্ঠান, যেখানে শুধু বাস্তবায়িত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ। লেখক: স্থপতি, শিক্ষক ও স্থাপত্য পরিবেশবিষয়ক গবেষক
০২ এপ্রিল, ২০২৪

ইভিএমের ভবিষ্যৎ জানতে সরকারকে চিঠি দিচ্ছে ইসি
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভবিষ্যৎ জানতে সরকারকে চিঠি দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আজকালের মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ চিঠি দেবে তারা। চিঠিতে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে এ মেশিন ব্যবহার হবে কি না এবং হলে তা সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হবে। কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার কমে আসা এবং দক্ষ জনবল ও অর্থের অভাবে যথাযথ সংরক্ষণ করতে না পারায় এসব অকেজো যন্ত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছে সংস্থাটি। পাঁচ বছর আগে উচ্চমূল্যে কেনা ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএমের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৪০ হাজার মেশিন সচল আছে। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ও ইসির পরীক্ষায় দেখা যায়, অনেক ইভিএম ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। ইভিএমের ভেতর পানি ও কাদামাটি জমা আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিকিউরড কানেকটিং কেবল নেই। ১০ বছর সচল থাকার কথা থাকলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে অচল হয়ে আছে যন্ত্রগুলো। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা অনেক ইভিএম এখন ময়লা বা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইভিএমের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা শেষবারের মতো জানতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, ইভিএমের জন্য অর্থ বরাদ্দে সরকারের সবুজ সংকেত না পেলে অচল ইভিএমগুলো সব ধ্বংস করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে সচল ইভিএমগুলো ব্যবহারের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কে এম নুরুল হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম কিনলেও সেগুলা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ইভিএম কেনা এবং পুরোনো ইভিএম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনের নেওয়া ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার স্থগিত করে দেয়।
৩১ মার্চ, ২০২৪

এআই, চ্যাটজিপিটি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ বর্তমান
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চ্যাটজিপিটি যেভাবে দুনিয়াজুড়ে সাড়া ফেলেছে, তাতে এর সঙ্গে আরও নতুন নতুন প্রতিযোগী যুক্ত হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হবে সে বিষয় নিশ্চিত। এখন অবধি প্ল্যাটফর্মটি ফ্রি এবং পেইড উভয় ভার্সন থাকায় অনেকেই ইতোমধ্যে এর ব্যবহার করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের মতো অনেক দরিদ্র দেশে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করছে; ই-মেইল, ইউটিউব স্ক্রিপ্ট, কপিরাইটিংয়ের মাধ্যমে। ফ্রিল্যান্সিং শুধু ব্লগ পোস্ট লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; আপনি ট্রান্সলেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রুফরিডিং এবং আরও অনেক কিছুর জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে পারেন।  চ্যাটজিপিটি কীভাবে ফ্রেমওয়ার্ক, টুলচেন, প্রোগ্রামিং ভাষা এবং আরও অনেক কিছু ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে ধাপে ধাপে নির্দেশাবলিসহ আপনার ধারণাগুলোকে বাস্তব প্রোডাক্টে অনুবাদ করতে সাহায্য করতে পারে। তারপর হোমওয়ার্ক, কোডিং, চ্যাটজিপিটি টুল দ্বারা যে কোনো কোড সহজেই লেখা যায়। এ ছাড়া কোনো কোডে ভুল থাকলে তা এখানে অটোমেটিক সংশোধন হয়ে যায়। কীভাবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করবেন? চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে আপনাকে প্রথমে chat.openai.com-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে, আপনার কাছে Try ChatGpt-এর অপশন থাকবে, যেখানে ক্লিক করার পরে আপনি আপনার ইমেল আইডি দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রার করতে পারেন এবং এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে আপনি যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন। আপনি কাউকে ভালোবাসেন, কিন্তু মনের কথা প্রাণ খুলে লিখতে পারেন না; সে চিঠিও নিখুঁতভাবে লিখে দেবে। আপনার গোপন প্রেমের কথা, হৃদয়ের ব্যথা জেনে যাবে। কেউ অপরাধ করেছে, তার তদন্ত ও শাস্তি কী হবে বা আদৌ কিছু হবে কি না সব জানিয়ে দেবে এই কৃত্রিম রোবট। আপনি কোডিং পারেন না, শেখাবে, যদি শিখতে চান, দরকারে লিখে দেবে। আপনি আর্টিকেল লিখতে চান, লিখে দেবে। নতুন চাকরির জন্য আবেদন করবেন, কিন্তু সিভি/বায়োডাটা লিখতে পারেন না; বায়োডাটা লিখে দেবে। আরও মজার ব্যাপার কী জানেন? যদি একটি কবিতা শেকসপিয়ার বা আমার স্টাইলে লিখতে বলেন, সেটাও সুন্দর করে লিখে দেবে, আর এ কবিতা যে অতীতে কেউ লিখেছে সেটা জানার উপায় থাকবে না, মানে প্লেজিয়ারিসম চেক করার যে সফটওয়্যার আছে এ ক্ষেত্রে কিছুই করতে পারবে না। তারপর যে কোনো গোপনীয় কোড যা শুধু আপনার জানার কথা তাও ফাঁস হয়ে যাবে যদি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে (এআই ) সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না শেখেন বা যদি কোনো কন্ট্রোল না থাকে। কী বুঝলেন? ব্যাপারটি ভয়ংকর বা সুন্দর, দুটোই হতে পারে, তাই না? এই হচ্ছে বর্তমানের ভবিষ্যৎ। তাহলে ভবিষ্যতের বর্তমান কেমন হবে?  মানুষ হয়তো তার ক্ষমতা হারাবে নয়তো নতুন জগৎ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। চ্যাটজিপিটি তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষের চেয়ে দ্রুত এবং সঠিক উত্তর প্রদান করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় অগ্রগতির ফসল চ্যাটজিপিটি। এর বিশেষত্ব হলো এটা মানুষের কথাবার্তা এমনভাবে নকল করে যে এর সঙ্গে চ্যাট করলে যন্ত্র মনে হবে না। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা সব ধরনের বিষয়ে চ্যাটজিপিটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণে এর ভাষাগত দক্ষতাসহ সর্বক্ষেত্রে আলোচনা চালিয়ে যেতে চ্যাটজিপিটি এখন সক্ষম। এর সৃজনশীলতা শুধু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি আমাদের মতো গল্প, চিত্রনাট্য, এমনকি জটিল সফটওয়্যারের কাজ করতে পারে। একে দিয়ে অবিরাম কাজ করে নেওয়া এখন সম্ভব এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ ইতোমধ্যে সে করে চলেছে। চ্যাটজিপিটি বহু কাজে সফলতার পরিচয় দিলেও এখনও এটি সম্পূর্ণ নিখুঁত নয়। আমরা নিজেরা যেহেতু ভুল করছি ঠিক আমাদের মতো চ্যাটজিপিটি বেশ কিছু ভুল করছে। তবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চ্যাটজিপিটি নিজেকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করছে। ফলে যত বেশি আমরা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করব, চ্যাটজিপিটির সিস্টেম তত বেশি উন্নত হতে থাকবে। চ্যাটজিপিটি অ্যাডভান্স মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের সাহায্যে বিপুলসংখ্যক তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে ভালো ফলাফল প্রদান করছে। ফলে এর সঙ্গে কথা বললে বা প্রশ্ন করলে আমাদের মতো ভেবেচিন্তে উত্তর দিতে পারে। শুধু একবার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নয়, পূর্বের আলোচনা মনে রেখে আমাদের মতো দীর্ঘ সময় আলাপচারিতা চালিয়ে যেতেও সক্ষম। চ্যাটজিপিটি আস্তে আস্তে পৃথিবীর সব ভাষা শিখছে। এমন একটা সময় আসছে, দেখবেন চ্যাটজিপিটি এত সুন্দর করে লিখবে যা অনেক বিদ্ব্যান বা পণ্ডিতও লিখতে পারবে না। আমাদের মাথায় যত বুদ্ধি আছে, তত বুদ্ধি প্রয়োগ করে একে কাজে লাগাতে পারা সম্ভব। ভাবুন, পৃথিবী কত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আর আপনি যদি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আপনার মূল্যবান সময় অপচয় করেন, তাহলে আপনি ওখানেই পড়ে থাকবেন, সামনে এগোতে পারবেন না। যে কারণে আপনি পৃথিবীতে এসেছিলেন, সে কারণই যদি না জানেন তাতে হয়তো কিছু যায় আসে না, তবে যদি জেনে থাকেন তাহলে চেষ্টা করুন কিছু করতে, কারণ সবকিছু দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আর আপনি? এখন আমি ভাবছি এত সুন্দর করে বড় বড় নামিদামি শপিংমল থেকে শুরু করে হোটেল, রাস্তা-ঘাট কতকিছু তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়। কী হবে সেগুলোর যখন সবকিছুর কেনাবেচা শুরু হতে চলেছে অনলাইনে? এ প্রশ্ন আমার মনে এসেছিল করোনা মহামারির সময়। লকডাউনের কারণে আমরা ঘরে বসে অর্ডার দিলেই সব হুড় হুড় করে চলে আসত দরজার সামনে।– অফিস-আদালত বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গিয়ে আমরা জুমের মাধ্যমে ফোনালাপ, ভিডিওর মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের সমস্যার সমাধান করেছি। সবকিছুই ম্যানেজ হয়েছে ফিজিক্যাল মুভমেন্ট ছাড়াই। তখন ভেবেছি তাহলে এত যুগ ধরে এত কিছু তৈরি করা হলো, সবকিছু কি তাহলে পড়ে থাকবে, না কি এটাই নিউ নর্-ম! ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর কারণে পৃথিবী লকডাউন থেকে শুরু করে শাটডাউন হয়েছিল। করোনা ভ্যাকসিন এলো আর সব কিছু আস্তে আস্তে নরমাল হতে শুরু করল। শুরু হলো বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট, তারপর চলছে যুদ্ধ।  অন্যদিকে বিশ্বের সাধারণ মেহনতি মানুষ নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে কী হবে তাদের যদি আজকের তথ্যপ্রযুক্তির জামানায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সব কাজগুলো স্মার্ট ওয়েতে করতে সহায়ক হয়। শারীরিক অস্তিত্বহীন এই অ্যাসিস্ট্যান্ট শুধু গ্রাহকের কমান্ড মেনে কাজই করে না, আগে থেকে বলে রাখা হুইপ যথাসময়ে সঠিকভাবে করে রাখে। আবার সেই কাজ সুসম্পন্ন হয়ে গেলে অতীতের করে আসা কাজ সম্পর্কিত কিছু করতে হবে কি না তাও প্রভুকে জিজ্ঞাসা করে নেয়। অর্থাৎ গ্রাহকের সেবায় এই নিবেদিতপ্রাণ সবই করে তার নিজের বুদ্ধি বা মেধা খাটিয়ে। ভার্চুয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক দ্বারা গঠিত এই প্রযুক্তি যা রক্তমাংসের ব্রেন নয় অথচ সবকিছু করছে। বিশ্বের অনেক দেশ যেমন জাপান, সুইডেন আমেরিকা শুরু করেছে মানুষের পরিবর্তে রোবটের ব্যবহার। কারণ সমস্যা এসেছে আর মানুষ তার সমাধান করছে, দারুণ। এখন যদি পণ্যদ্রব্য শেষ হয়ে যায় বা মজুত না থাকে তবে তো তা উৎপাদন করতে হবে। যেমন– বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর বিশ্বের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী নানা ডিজাইনের পোশাক তৈরি করে আসছে কয়েক যুগ ধরে। এখন অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কিনতে হলে তো তা তৈরি করতে হবে। সেটাও না হয় এআই রোবট দিয়ে তৈরি করা সম্ভব হবে। নানা ধরনের পোশাক তৈরি করতে দরকার র-ম্যাটেরিয়ালসের এবং তার জন্য কৃষিকাজে লোকের দরকার। তাও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং এআই রোবট দিয়ে ম্যানেজ করা সম্ভব হবে। এখন প্রশ্ন তাহলে অভাগা মানুষ জাতি, আমাদের হবে কী? আমরা কী করব? ঘরে শুয়ে বসে সময় কাটাব আর অনলাইনে সবকিছু অর্ডার দেব? বাইরে গিয়ে পার্কে ঘুরতে পারব না। মলে গিয়ে শপিং করতে পারব না। গাড়িতে করে যেখানে খুশি যেতে পারব তবে সে গাড়ি এআই নিজেই চালাবে। প্লেনে করে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে সুন্দর পৃথিবীকে দেখতে পারব তবে মানুষের পরিবর্তে এআই পাইলট প্লেন চালাবে। এ কেমন অবিচার? এত সুন্দর পৃথিবী হঠাৎ এআই দখল করে নেবে। ভাবনার বিষয়! এদিকে অতীতের মতো দুর্নীতিও করা সম্ভব হবে না। কারণ অনলাইনে কার্ড দিয়ে পে করতে হয়, ক্যাশ টাকার ব্যবহার বিলুপ্তির পথে। আমি কয়েক বছর আগে লিখেছিলাম দুর্নীতিমুক্ত সমাজ পেতে কাগজের টাকা বন্ধ করতে হবে। অনেকেই বিষয়টি পছন্দ করেনি তখন। কিন্তু এখন কী হবে?  আকাশে পাখি উড়তে দেখে যেমন একদিন রাইট ব্রাদার্সদের মনে ভাবনা এসেছিল কীভাবে মানুষও আকাশে উড়তে পারে। সেই ভাবনাকে তারা বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছিল। কোভিড-১৯ আমাদের চাপ সৃষ্টি করেছিল নতুন করে ভাবতে। কেন যেন মনে হচ্ছে এআই প্রযুক্তির যুগে মানুষের ক্ষমতা বিলুপ্তি হবে যদি আমরা এআইকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই, সেক্ষেত্রে নতুন করে ভাবতে হবে। প্রযুক্তিগত সমাধান বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বড় ধরনের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে পোশাকশিল্পও। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ের সফলতা ধরে রাখার জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক পটভূমি তৈরি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ এ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন এই দুটি ছিল প্রধান শক্তি, যা বাংলাদেশের পোশাক খাতের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পেরেছিল।  এতদিন ধরে যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি অনুযায়ী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে পরিচালনা করা হয়েছে, ভবিষ্যতে একইভাবে কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নতুন পন্থার উদ্ভাবন করতে হবে। উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন, উৎপাদনের অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা, সরবরাহের ক্ষেত্রে বিলম্ব দূর করা, সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস এবং গুণগত মান উন্নয়নের দিকে কড়া নজর দিতে হবে।  যে কোনো কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নির্ভর করে ধারাবাহিকভাবে ক্রেতাদের প্রত্যাশাপূরণের সক্ষমতার ওপর। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত মূলত বড় ধরনের রপ্তানিনির্ভর শিল্প। এর গ্রাহকদের একটি বড় অংশই খুচরা বিক্রেতা। এদের বেশির ভাগই ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। এর পাশাপাশি লাতিন আমেরিকা এবং অতি সম্প্রতি তৈরি হওয়া বেশ কিছু উদীয়মান বাজারগুলোয় বৃহত্তর রিটেইল চেইনের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি করছে। সেক্ষেত্রে সেরা সব সরঞ্জাম যেমন কাইজেন, লিন, সিক্স সিগমা, টোটাল প্রোডাক্টিভিটি ম্যানেজমেন্ট (টিপিএম), থিওরি অব কনস্ট্রেইন্টস (টিওসি), অ্যাডজাস্ট-ইন-টাইম (এআইটি) পদ্ধতিগুলো এআইকে ব্যবহার করে শিল্পকারখানার উৎপাদনের মান আরও উন্নত করা দরকার। নতুন করে করোনার চেয়ে ভয়ংকর কিছু বা এআই-এর চেয়ে আরও স্মার্ট, কিছু আসবে না তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? সমস্যা জীবনে আসবে তার সমাধান এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সুশিক্ষা, আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমি মনে করি শুধু পোশাকশিল্প, এআই রোবট বা অনলাইন বিজনেস নয়; নতুন প্রযুক্তি যেন আরও ভালো তথ্য ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে এবং সেটা যেন মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। একই সঙ্গে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে দেশের জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান আশু প্রয়োজন। সৌর এবং বায়ু শক্তি উৎপাদনে এআই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের অবকাঠামোকে মজবুত করুন, পাশাপাশি কৃষিখাতে মনোযোগী হোন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছ লাগান সারা দেশব্যাপী।  এখনও বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি, দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র দূরীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এই খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমি সুইডিশদের কৃষিখাতে মনোযোগী হতে উৎসাহিত করছি কারণ যন্ত্র, তন্ত্র, মন্ত্র নয়, হৃদয়, মন, প্রাণ দিয়ে দুর্নীতি মুক্ত মানুষ এবং ক্যাশ লেস সমাজ চাই। কারণ ভালোবাসা, অনুভূতি, অনুকরণ, অনুসরণ ছাড়া জীবন বৃথা তবে যুক্তির মধ্যে দিয়ে এসেছে প্রযুক্তি কী করে তাকে অযুক্তির মধ্যদিয়ে এত বছর পরে বলব যে প্রযুক্তি আমাদের পরনির্ভরশীল করতে শুরু করেছে।  অনেক দিন ধরে প্রযুক্তির ওপর ভেবেছি। আমার অনেক কথা লেখার ছিল, আমিও চাই সবার মনে প্রশ্ন জাগুক, সমাজের সবাই জেগে উঠুক, সবার মনে ঝড় উঠুক আমার মতো করে এবং সেই ঝড় বয়ে আনুক নতুন দিগন্ত সবার মনের ঘরে এবং আমরা যেন প্রাউড ফিল করতে পারি— টুগেদার উই হ্যাভ মেড দিস ওয়ার্ল্ড বিউটিফুল। রহমান মৃধা : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন  
০৪ মার্চ, ২০২৪

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের গোলটেবিল বৈঠক অর্জন, প্রতিবন্ধকতা ও ভবিষ্যৎ
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তরার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি-আইইউবিএটির নিজস্ব ক্যাম্পাসে দেশের ১৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন, প্রতিবন্ধকতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তহবিল সংগ্রহে নানা পন্থা খুঁজছে। শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে, যা ব্যয়বহুল। যে কারণে আলাদা কমিটি করে আউটকাম বেইজড এডুকেশন তথা ওবিই পরিচালনা করা হয়। কীভাবে ইউজিসি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করলে প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি আসবে তা নিয়েও আলোচনা হয়। এ ছাড়া, পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ডুয়েল সেমিস্টারের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনার নির্দেশনার ফলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান বক্তারা। উপাচার্যরা বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব একাডেমিক স্ট্যান্ডার্ড থাকার পরও একই গ্রেডিং ব্যবস্থায় নিয়ে আসার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। চলমান প্রতিবন্ধকতা কাটাতে পাবলিক-প্রাইভেট চুক্তির মাধ্যমে নতুন তহবিল গঠনের গুরুত্বের কথা জানান আলোচকরা। এ ছাড়া, শিল্পকারখানাগুলোতে কাজে লাগে এমন কারিকুলাম তৈরির মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রবের সঞ্চালনায় আলোচনায় যে উপাচার্যরা অংশ নেন তারা হলেন—অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল খান (আইএসইউ), অধ্যাপক ড. এএফএম মফিজুল ইসলাম (সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি), অধ্যাপক ড. ফরিদুল আলম (বিইউএইচএস), অধ্যাপক ড. ইমরান রহমান (ইউল্যাব), অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান (ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি), অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া (ইউআইইউ), অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন (সিসিএন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি), অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস (নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ), অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম (প্রাইম ইউনিভার্সিটি), অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান চৌধুরী (প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি), অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কাশেম (তিস্তা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফাইয়াজ খান (বিইউবিটি), অধ্যাপক ড. প্যাট্রিক গ্যাফনি (নটরডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ), অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান (কেন্দ্রীয় মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. কুমরুল আহসান (ইউএপি), অধ্যাপক ড. এস এম ইকবাল হোসেন (জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ), অধ্যাপক ড. শহীদ আখতার হোসেন (ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি), অধ্যাপক ড. শাহজাহান খান (এইউবি)।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ জানালেন নেতানিয়াহু
গত অক্টোবরে হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নিয়ে তখন থেকেই দেশ ও বিদেশ থেকে চাপ আসতে থাকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর। অবশেষে যুদ্ধোত্তর গাজা নিয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন তিনি। খবর বিবিসির। নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা অনুযায়ী, অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরায়েল। হামাসের পরিবর্তে ইসরায়েল-বিদ্বেষী নয় এমন কোনো গোষ্ঠী গাজার শাসনভার পরিচালনা করবে। যুদ্ধ শেষে গাজার শাসন ক্ষমতা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে চায় ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি মন্ত্রিপরিষদের কাছে দেওয়া নেতানিয়াহুর সংক্ষিপ্ত নথিতে এমন কোনো কিছুর কথা উল্লেখ নেই। অবশ্য আগে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত এই সংস্থার কাছে যুদ্ধোত্তর গাজাকে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব অনেকবার নাকচ করেছেন নেতানিয়াহু। এ ছাড়া গাজাকে একটি বেসামরিক অঞ্চলে পরিণত করার স্বপ্ন দেখছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুদ্র এই উপত্যকার জনশৃঙ্খলা রক্ষার বাইরে সব ধরনের সামরিক সক্ষমতা কেড়ে নেবে ইসরায়েল। গাজার সব ধর্মীয়, শিক্ষা ও কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে চরমপন্থা রোধ কর্মসূচি চালু করার কথা বলছে তেল আবিব। এই ধরনের কর্মসূচির পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন আরব দেশকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে। তবে কোন দেশকে যুক্ত করা হবে তা বলা হয়নি। শুধু গাজা নয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী অধিকৃত পশ্চিম তীরের স্থল, সমুদ্র ও আকাশ পথের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণও নিজের হাতে নেবে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এই পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ বলেছেন, নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে। বিশ্ব যদি সত্যিকার অর্থে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আগ্রহী হয়, তাহলে অবশ্যই ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর ইসরায়েলের দখলদারির অবসান ঘটাতে হবে। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মিয়ানমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ মেঘাচ্ছন্ন
ইস্ট এশিয়া ফোরাম এডিটোরিয়াল বোর্ড ক্রফোর্ড স্কুল অব পাবলিক পলিসি এবং কলেজ অব এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক রূপে বিবেচিত। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এ ফোরামের পক্ষ থেকে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। নিবন্ধটি ঈষৎ ভাষান্তর করেছেন গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ মিয়ানমারে চলমান সংঘাত নিরসনের বিষয়ে কারও কাছে কোনো সুখবর নেই। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটা সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে। তারপরও পূর্ব থেকে গৃহযুদ্ধপীড়িত দেশটির সমাজ এবং অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক এ সংঘাত বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে চলেছে। তবে ২০২৩ সালে যুদ্ধের তীব্রতায় এক ধরনের স্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয়। এমন ইঙ্গিতকে একটি উৎসাহজনক দিক বা আশার আলো বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। এ সময় সরকার ও সামরিক জান্তাবিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অপ্রত্যাশিত ঐক্যের ফলে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) তথা সামরিক জান্তার বাহিনী সিরিজ পরাজয় মানতে বাধ্য হয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধী শিবিরের সর্বাত্মক প্রতিরোধের এ অগ্রগতি ও সাফল্য দেশের সামরিক বাহিনীর মুখে অপমানের কালিমা মেখে দিয়েছে, যা উচ্চপদমর্যাদাধারী সামরিক কর্মকর্তা এবং সাধারণ সৈনিকদের মনোবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ জয়-পরাজয় দেশের অভিজাত শ্রেণির মধ্যেই শুধু ক্ষমতার ভারসাম্য ধরে রাখার অতি প্রাচীন প্রবণতাকে অস্থিতিশীল ও প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। সমাজবিজ্ঞানের গবেষক ও অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিকোলাস ফ্যারেলি এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, দেশের রাজধানী নেপিদো মহানগরীতে থাকা সামরিক জেনারেলরা এখন আগের চেয়ে বেশি চাপ বোধ করছে। যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং মিয়ানমার আন্তর্জাতিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরপর কী ঘটবে, এমন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা বা প্রশ্ন শুরু হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে প্রশ্নটি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ প্রশ্নের পাশাপাশি আরও কিছু উত্থাপিত প্রশ্নের একটি হলো সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা ক্ষমতাসীন জাতীয় ঐক্য সরকার তথা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) আওতায় থেকে জান্তাবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে কী ধরনের রাজনৈতিক ঐক্য বজায় রাখা সম্ভব, যেখানে সেনা অভ্যুত্থানের সময় ক্ষমতাচ্যুত ও নির্বাসিত বেসামরিক রাজনীতিবিদদেরও সরকার রয়েছে এবং বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রীয় রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে। অধ্যাপক ফ্যারেলি লিখেছেন, যদি সামরিক শাসন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় অর্থাৎ সেনা অভ্যুত্থানকারীদের পিঠ যদি দেয়ালে ঠেকেও যায়, তবুও মিয়ানমারের জনগণের কঠোর সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, জাতিগত, ধর্মীয় এবং আদর্শিক কারণে যারা সংগ্রাম করে, তারা প্রায়ই এমন সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। সেনা অভ্যুত্থানের তৃতীয় বার্ষিকীর প্রাক্কালে, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) প্রধান জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যা সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রণীত ২০০৮ সালের সংবিধানে নিহিত সীমাবদ্ধ গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তার পরিবর্তে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ফেডারেল রাষ্ট্রের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এ রূপরেখায় সামরিক বাহিনীর কোনো ভেটো ক্ষমতা থাকবে না এবং সেনাবাহিনী কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করে না। যারা এ ধরনের একই দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেন এবং গভীর রাজনৈতিক সংস্কারের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ, তাদের সতর্ক করে দিয়ে অধ্যাপক ফ্যারেলি বলেন যে, কোনো একটি দিনের শেষে বা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘যদি সংঘাত বন্ধ হয়ে যায়’, তখন অগণিত গোষ্ঠীর মধ্যে সুষমভাবে ক্ষমতা এবং সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার বিষয়টি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ অভ্যুত্থানকারী সেনা ও তাদের দোসরদের পরাজিত করার জন্য সবাই কঠোর লড়াই করেছেন। তারা বোধগম্যভাবে কর্তৃত্বের ক্ষেত্র তৈরি করতে, স্বায়ত্তশাসিত সরকারের সঙ্গে নিজেদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এবং দেশের বিশাল সম্পদের একটি অংশ নিজেদের অধীনে সুরক্ষিত করতে আগ্রহী। বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছতে এখনো অনেক রক্তপাত বাকি। সরকারবিরোধী প্রতিরোধ বাহিনী এখনো পর্যন্ত প্রতিরোধ করে চলেছে। তবুও প্রতিরোধ বাহিনী আশা করবে যে, সামরিক অবস্থানের আরও অবনতি ঘটলে জান্তারা যেন ন্যাশনাল ইউনাইটেড গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এবং তার মিত্রদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হয়। এতে ব্যর্থ হলে ভূখণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও জান্তার ক্ষমতাকে সামরিক কায়দায় ধ্বংস করার জন্য প্রতিরোধ বাহিনী পরিচালিত একটি নৃশংস লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এটাই হতে পারে রাজধানী ‘নেপিদোর’ মহানগর পতনের দৃশ্যপট। যেমন অধ্যাপক ফ্যারেলি লিখেছেন, ‘বর্তমান সামরিক নেতৃত্বকে অন্তর্ভুক্ত করে এমন একটি সমঝোতা মীমাংসার কল্পনা করা কঠিন। যদি নেপিদো আক্রমণ করা হয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা দখল সম্ভব হয়, তবে সরকার ও সেনাদের শেষ বিকল্প হবে অসম্মানজনকভাবে অভয়ারণ্যে নির্বাসনে গমন। তামাদাও (তাঁতমাদও) নামে পরিচিত মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিচ্ছিন্নতাবাদী বা বিদ্রোহীদের পাশাপাশি বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণ করার পদ্ধতি অবলম্বন করে, যাতে সব সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত করা যায় এবং আত্মসমর্পণে বাধ্য করা যায়। যদি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের পতন ঘটে, তাহলে সংঘাত-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জবাবদিহিতা এবং নৃশংসতার জন্য দায়মুক্তির প্রশ্নগুলো বড় আকার ধারণ করবে। কারণ সংঘর্ষ-পরবর্তী সময়ে সামরিক বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা যা-ই হোক না কেন, সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষমতা খর্ব হবে না বরং তারাই শক্তিশালী রাজনৈতিক খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারে। যাই হোক না কেন, ক্ষমতার শূন্যতা রোধ এবং মিয়ানমারকে যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া থেকে ফিরে আসা এবং তার ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমার স্থায়িত্ব রোধ করাকে সবার ওপরে অগ্রাধিকার দিয়ে কঠোর রাজনৈতিক সমঝোতা করতে হবে। স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল পরবর্তী সরকারের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমন্বয় করার সক্ষমতা রয়েছে বলে ধরে নিলেও মিয়ানমারকে আবার ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে নতুন সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রচুর কাজ করতে হবে। কভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যাকে এ সংঘাত শুধু অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করেনি, সেইসঙ্গে সংঘাতের ফলে সামাজিক কাঠামো বা সামাজিক বন্ধন ছিঁড়ে গেছে। আইন ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার কাউন্সিলের যুগে নজরদারি, নালিশ করা, নির্বিচারে আটক এবং নির্যাতন প্রতিদিনের কাজের সমার্থক ছিল। একই পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের অধীনে থাকা রাজ্য বা অঞ্চলগুলোতে বিরাজমান। সেইসঙ্গে সামাজিক আস্থার সংকট ও সংহতির দুর্বলতাও লক্ষণীয়। মিয়ানমারের গৃহসংঘাত এখন আর সেরকম নিয়ন্ত্রণের বাইরে বা অচলাবস্থায় নেই, যা মাত্র এক বছর আগেও দেখা গিয়েছিল। আসিয়ানকে অবশ্যই জান্তাকে বোঝানোর জন্য প্রতিটি সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত ‘পাঁচ দফা ঐকমত্য’ বাস্তবায়নের সঙ্গে আসিয়ান যে জড়িত এবং বিশেষভাবে আগ্রহী, তা জানাতে হবে। আসিয়ান হলো প্রতিরোধ বা বিদ্রোহী বাহিনী ও সামরিক জান্তাদের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার সুস্পষ্ট প্ল্যাটফর্ম। আসিয়ানের এমন ভূমিকা গ্রহণ পশ্চিমা স্টেকহোল্ডাররাও সাদরে গ্রহণ ও সমর্থন করবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এনজে হান মনে করেন যে, চীন মিয়ানমারের ক্ষেত্রে দুদিকেই বাজি ধরেছে। একদিকে চীন স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। আবার অন্যদিকে মিয়ানমারের সীমান্তে সক্রিয় কিছু প্রতিরোধ বা বিপ্লবী গোষ্ঠীকে স্পষ্টতই সমর্থন দিচ্ছে। চীন ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে। কারণ চীন এনইউজিকে পশ্চিমাদের খুব কাছাকাছি মনে করে। তবে রাজনীতি ও কূটনীতির ক্ষেত্রে চীন মিয়ানমারের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিলকে কী পরিমাণ নিরাপত্তা বা আশ্রয় দেবে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে। কারণ সামরিক জান্তার ভাগ্য দেয়ালে লেখা থাকে না। ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের জড়িত হওয়ার ব্যস্ততার সঙ্গে মিয়ানমারের তুলনা করলে দেখা যায়, কূটনৈতিক অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে মিয়ানমার পিছিয়ে আছে; কিন্তু আসিয়ানের ভবিষ্যৎ মিয়ানমারের এ মর্মান্তিক সংঘাতের সমাধানের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এশিয়ার এ অঞ্চলে সমস্যার সমাধানে সাফল্য কিংবা আঞ্চলিক ক্ষেত্রে এমন সংঘাতের ক্যান্সারতুল্য প্রভাব এড়াতে আসিয়ানের দক্ষতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের বিষয়ে একটি উদ্যোগের জন্য প্রস্তুতি কূটনৈতিক বিবেচনায় আসিয়ানের জন্য অতি আবশ্যিক।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পুরান ঢাকার জীবন্ত ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ অনুসন্ধান নিয়ে হামিদুর রহমান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
হামিদুর রহমান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ভাষার মাসে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘পুরান ঢাকা থেকে শেখা: জীবন্ত ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ অনুসন্ধান’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুঁই এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এ দিনে আমি এখানে উপস্থিত হতে পেরে আনন্দিত। এই প্রদর্শনীতে পুরান ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে৷ বিশেষ করে নদীকেন্দ্রিক এই শহর কীভাবে দিনে দিনে গড়ে উঠেছে সেই ধারণা স্পষ্ট হয়েছে। এখানে ফরাশগঞ্জের চিত্র উঠে এসেছে। এই ফরাশগঞ্জের সমৃদ্ধির সঙ্গে ফরাসিদের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস জড়িয়ে আছে৷ এ সময় ম্যারি মাসদুপুঁই এই প্রদর্শনীর সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। নসরুল হামিদ তার বক্তব্যের শুরুতে ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে কেরানীগঞ্জ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। এই কেরানীগঞ্জবাসী পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। আবার ঢাকা থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের সেফ শেল্টার দিয়েছে। ঢাকা যদি সিটি হয়, তাহলে কেরানীগঞ্জ সাব-সিটি। ঢাকাকে বাঁচাতে যে অক্সিজেনের (প্রাত্যহিক চাহিদা) প্রয়োজন সেটার সরবরাহ হয় কেরানীগঞ্জ থেকে। তাই পুরান ঢাকার ঐতিহ্য আর কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্য আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে৷ এ সময় তিনি পুরান ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য অনুসন্ধানে শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। এর আগে, পুরান ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। যেখানে ভিন্ন ধারার ভিডিও প্রদর্শনীর মধ্যদিয়ে পুরান ঢাকার আদি ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। এই প্রদর্শনীটি ইএনএসএ, প্যারিস লা ভিলেট, বুয়েট, ঢাকা, বিভিসিওএ, নভি মুম্বাই, সি. এ. টি., ট্রিভ্যানডাম এবং মোকলো বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষক দল দ্বারা পরিচালিত। যা একটি দুই সপ্তাহের নিবিড় স্থাপত্য গবেষণার চূড়ান্ত ফল। যার মধ্যদিয়ে পুরান ঢাকার বিপন্ন ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। মোট ৮টি স্থানকে প্রাধান্য দিয়ে প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- বড় কাটরার বিবর্তন, আরমানিটোলা পাড়া পুরান ঢাকার আরমানিটোলা পাড়ায় সর্বজনীন উন্মুক্ত স্থানগুলি, শাঁখারি চুড়ি তৈরি, তাঁতী বাজার, বাংলাবাজার, গোল তালাব, মঙ্গোলাবশ জমিদার প্রাসাদ। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে  ৪৪ জন শিক্ষার্থী ও ১২ জন পরামর্শদাতা। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইয়ুথ গ্লোবাল ফাউন্ডেশন ও বাঁধন সোসাইটি অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড . সীমা হামিদ, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, বিখ্যাত ফরাসি শিল্পী রামোনা পোয়েনারু, শিল্পী আপন বিশ্বাস, জায়েদ মালেক অনন্য, পিনাকী নাথ, রুশমিলা হোসেন রাশপি, সাইফ আলম নাবিল, শোয়েব হোসেন বাপ্পিসহ পুরান ঢাকার ছয়জন পোর্টার।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X