রাজন ভট্টাচার্য
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২২ এএম
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জাপার ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্কবার্তা

বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের আলোচনা
জাপার ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্কবার্তা

সারা দেশে সাংগঠনিক করুণ দশা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতারা বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আপস আপস খেলা দলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব এবং মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি না থাকায় দিন দিন লাঙ্গলের জনসমর্থন কমছে। বড় দলগুলো নানা প্রলোভনে স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ভালো প্রার্থীদের বাগিয়ে নিচ্ছে। এ অবস্থায় জনবান্ধব রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দলকে চাঙ্গা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

গত শনিবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেছেন বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা। এ সময় মঞ্চে ২৫ জনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতা উপবিষ্ট ছিলেন।

জানা গেছে, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। এর মধ্যে ৩৭টি জেলার প্রতিনিধিরা বর্ধিত সভায় বক্তব্য দিয়েছেন। সময়স্বল্পতার কারণে বাকিরা কথা বলার সুযোগ পাননি। এ কারণে অনেকেই গতকাল রোববার দলের বনানী কার্যালয়ে গিয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

জানা গেছে, বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের দেওয়া বক্তব্যে মাঠপর্যায়ে দলের বেহাল দশা, জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া, জনবান্ধব কর্মসূচি না দেওয়া, দল পরিচালনায় পারিবারিক প্রাধান্য, সাংগঠনিক সফরসহ নানা বিষয়ে উঠে আসে।

বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা বলেন, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণে ব্যর্থ হলে আগামীতে আরও বেশি ভরাডুবি হবে। দলের নেতৃত্ব ও পরিস্থিতি যে পর্যায় চলে গেছে, তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাপার অস্তিত্ব ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

জাপা সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির সম্মেলন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০টি জেলার সম্মেলন বাকি। এ ছাড়া ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে কতটিতে সম্মেলন হয়নি—তার সঠিক হিসাব কেন্দ্রীয় দপ্তরেও নেই। মহানগর কমিটি থাকলেও তেমন শক্তিশালী নয়। উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ওয়ার্ড কমিটির দশা আরও বেহাল।

জাতীয় পার্টিকে বর্তমান করুণ দশা থেকে বের করতে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে (জি এম কাদের) দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্ত্রীর কথা না শোনার পরামর্শ দেন অনেকেই। পাশাপাশি কেউ কেউ মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বনানীর কার্যালয়ে বসে না থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সারা দেশ সফরেরও তাগিদ দেন।

বর্ধিত সভায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাপার সভাপতি এয়ার আহমেদ সেলিম বলেন, ‘পার্টির অবস্থা দিন দিন রসাতলে যাচ্ছে। অথচ ঢাকায় বসে কেন্দ্রীয় নেতারা নামমাত্র দল নিয়ে আসন ভাগাভাগির যুদ্ধে নামেন। মাঠে গিয়ে দেখুন পরিস্থিতি কী। যেখানে আমাদের দু-একজন ভালো নেতা আছে; তাদের বড় দলগুলো নানা প্রলোভন দেখিয়ে ভাগিয়ে নিচ্ছে। এভাবে আমাদের একসময় কিছুই আর হাতে থাকবে না।’

খুলনা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, ‘পার্টির কিছু নেতা রয়েছেন যারা সুযোগসন্ধানী। তারা রাজনীতির মাঠে না থেকেও বারবার এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির দুর্গ ছিল রংপুর। আজ সেই দুর্গ নেই। কারণ একটাই—নেতৃত্বের অভাব। কান কথা শুনে রাজনীতির নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। দলের মধ্যে কান কথা বেশি চলছে। ফলে রংপুরের ঘাঁটি হারিয়ে গেছে।’

কিশোরগঞ্জ জেলা সভাপতি ডা. আব্দুল হাই জাপা চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার আশপাশে যারা বসা আছেন, তারা শুধু হালুয়া-রুটির জন্য আপনার আশপাশে ঘুরঘুর করেন। হালুয়া-রুটির জন্য আপনার কাছে ধরনা দেন। এসব নেতার কাছ থেকে দূরে থাকুন। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি না করে নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে জনস্বার্থে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামুন।’

টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জাতীয় পার্টির রাজনীতি বনানী অফিসকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। যারা প্রতিদিন বনানী অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে দেখা করেন, তারা পদপদবি পান। তারাই প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হচ্ছেন। এভাবে একটি রাজনৈতিক দল চলতে পারে না।’

দিনাজপুর জেলা সভাপতি রুবেল আহমেদ পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব। আপনি কয়টি জেলা সফর করেছেন? কয়টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন? বানানী অফিসে বসে দলের নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না।’

লালমনিরহাট জেলা জাপা সভাপতি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘তৃণমূলে জাতীয় পার্টির অবস্থা খুবই দুর্বল। দলটির অঙ্গসংগঠনগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জাপা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে আরও ভরাডুবি হবে।’

ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল আলম রুবেল বলেন, ’৪২ বছর ধরে আমি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করি। আমার মতো অনেকে আছেন, যারা এ দলটি করতে গিয়ে সবকিছু হারিয়েছেন। আজ আমাদের মাজা ভেঙে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টি নামে দল করছেন। তিনিও জানেন, তাকে দিয়ে রাজনৈতিক দল হবে না। তাদের ওখানে যেসব নেতা রয়েছেন, তারাও সময়মতো চলে আসবেন। তারাও নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন, এমপি হবেন। অথচ এমন অনেকেই আছেন, যারা ২০-২৫ বছর জাতীয় পার্টির রাজনীতি করছেন; কিন্তু একবারও নির্বাচন করার সুযোগ পাননি। সেসব নেতার সমর্থকরা কেন জাপার সঙ্গে থাকবেন?’

তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা জি এম কাদের বলেন, ‘আপনারা যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন তার অনেক কিছুই আমাদের জানা। এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তাসকিনকে নিয়ে শান্তর সুখবর

চূড়ান্ত রায়ের আগে কনডেম সেলে নয়, হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত

২১ শিক্ষক মিলেও পাস করাতে পারেনি এক শিক্ষার্থীকেও

ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্যের উদাহরণ সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

নারী চোরের ভেল্কি, দিনদুপুরে হাওয়া স্মার্টফোন-ল্যাপটপ

পানিশূন্য যমুনা নদী, যতদূর চোখ যায় বালু আর বালু

‘২০১৯ সালের চেয়ে ২০২৩-এ ঢাকায় ডেঙ্গুরোগী ৪২ হাজার কম ছিল’

বিকেলে টাইগারদের সঙ্গে ডোনাল্ড লু’র সাক্ষাৎ

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ

নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৪ নেতাকে শোকজ

১০

নতুন শিডিউলে চলবে মেট্রোরেল

১১

উদ্ভাবনে কৃষকরা উপকৃত হবেন ও ফসলের উৎপাদন বাড়বে : কৃষিমন্ত্রী

১২

লিফট ছিঁড়ে নিহত ১, আটকা ১৪

১৩

এসএসসি পাসেই ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ

১৪

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পে দুদকের হানা

১৫

কুরকুরে চিপস না আনায় ডিভোর্স চাইলেন স্ত্রী

১৬

মাতৃমৃত্যু রোধে বাংলাদেশের উন্নতি অকল্পনীয় : ইউএনএফপিএ

১৭

আবারও চমক দেখিয়ে প্রযুক্তির এলিট ক্লাবে ঢুকল ইরান

১৮

আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই : প্রধানমন্ত্রী

১৯

ভোটারকে চড় মেরে পাল্টা চড় খেলেন এমপি

২০
X