টাকা দিলেই মারামারি ও ডাকাতি করত তারা
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের নেতাসহ ৩৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ধারাবাহিক এ অভিযানে বনানী, মহাখালী, উত্তরা ও টঙ্গী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব বলছে, স্থানীয় বিভিন্ন বড় ভাইয়ের হয়ে কাজ করে এসব গ্যাং সদস্য। টাকার বিনিময়ে মারামারি, ছিনতাই, দখলবাজিসহ ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত এসব কিশোর।
গ্রেপ্তার হওয়া এসব কিশোর বিভিন্ন গ্যাংয়ের সদস্য। তাদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ২৪টি মোবাইল ফোন, একটি কুড়াল, একটি পাওয়ার ব্যাংক, পাঁচটি রড, ১৬টি চাকু, তিনটি লোহার চেইন, একটি হাতুড়ি, একটি উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করা মোটরসাইকেল এবং ২৪ হাজার ২৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১-এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ।
তিনি বলেন, বর্তমানে কিশোর গ্যাং, গ্যাং কালচার, উঠতি বয়সীদের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তার নিয়ে এক গ্রুপের সঙ্গে অন্য গ্রুপের মারামারি-বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে মারধর করে। এসব ঘটনায় কাউকে খুন করতেও দ্বিধা করে না তারা। এ অবস্থায় মহাখালী, বনানী, বিমানবন্দর, টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকায় অভিযানে কিশোর গ্যাং গ্রুপ জিরো জিরো সেভেন গ্রুপের দলনেতা আল-আমিন, জাউরা গ্রুপের দলনেতা মাহাবুব, বাবা গ্রুপের দলনেতা সাদ, ভোল্টেজ গ্রুপের মনা, ডি কোম্পানির দলনেতা পাপ্পু ওরফে লন্ডন পাপ্পুসহ ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক মোশতাক আহমেদ বলেন, প্রতিটি গ্রুপের সদস্য ১০ থেকে ১৫ জন। তারা টাকার বিনিময়ে মারামারি, দখলবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কিছু ব্যক্তি এসব গ্রুপের সদস্যদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তারা মদদদাতাদের হয়ে মারামারি করে। তাদের হয়ে কাজ করার কারণে অপরাধ করে শেল্টার পায়। মদদদাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
র্যাব-১-এর সিও বলেন, গণমাধ্যম ও র্যাব সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কিশোর গ্যাং সম্পর্কে আমরা অনুসন্ধান করছি। আগেও এভাবে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন কিশোর গ্যাং নিয়ে নির্দেশনা পাওয়ার পর গত ১৫-২০ দিন ধরে কাজ করেছি। এ সময়ে নতুন গ্রুপগুলোর দলনেতাসহ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কার্যক্রম, মামলাসহ তাদের বিষয় অনুসন্ধান চলছে। আমাদের অভিযান থেমে নেই।
কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে দেখা যায়। এসব মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই অপরাধীদের কোনো দল থাকতে পারে না। তাদের কোনো পরিচয় বিষয় না। অপরাধ করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪