পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গেও যুদ্ধ হবে ইসরায়েলিদের
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যতদিন বর্বরতা বন্ধ না করা হবে ততদিন ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক। গত ২ মে থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে দেশটি। তুরস্ক বাণিজ্য বন্ধ করার তিন দিনের মাথায় ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ক্যালকালিস্ট জানিয়েছে, তুরস্কের এই বাণিজ্য বয়কটের প্রভাব আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পড়া শুরু হবে। খবর আলজাজিরার। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, তুরস্কের এই সিদ্ধান্তের কারণে ইসরায়েলে মৌলিক পণ্য, খাদ্য পণ্য এবং বাড়িঘরের দাম বেড়ে যাবে। ইসরায়েলি এ সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, তুরস্ক বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করার পর ইসরায়েলি সরকার বেশ অবাক হয়েছে। কারণ তারা ভেবেছিল তুরস্ক বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিলেও; এটি কখনো কার্যকর করবে না; কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের বিকল্প বের করতে লম্বা সময় প্রয়োজন হবে। সঙ্গে নতুন করে চুক্তিও করতে হবে। এমনকি বিকল্প কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও পণ্যের দাম বেশিই থাকবে। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির এই ভার সাধারণ ইসরায়েলিদেরই বহন করতে হবে। যারা যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে আগের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন। তুরস্কের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে ইসরায়েলি নির্মাণ শিল্পের ওপর। সঙ্গে অটোমোবাইল খাতেও এটির প্রভাব পড়বে। কারণ বেশিরভাগ অটোমেকার জনপ্রিয় সব গাড়ি তুরস্ক থেকে ইসরায়েলে নিয়ে আসে।
০৬ মে, ২০২৪

গাজা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-কাতারের নীলনকশা
গাজা থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে কোনোভাবেই উৎখাত করছে পারছে না ইসরায়েল। তবে এবার ভিন্ন এক জায়গা থেকে সংগঠনটিকে চেপে ধরতে চাইছে ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। কাতারভিত্তিক হামাসের রাজনৈতিক অফিস নিয়ে নতুন এক চক্রান্তের নীলনকশায় মেতে উঠেছে দেশটি। নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাতারকেও দলে ভিড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (০৪ মে) ওয়াশিংটন পোস্টের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষপর্যায় থেকে এমন চাপ আসার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে কাতার। যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করা হতে পারে বলে কাতারের পক্ষ থেকে হামাসের নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তার বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতার কয়েক মাস ধরেই হামাসের শীর্ষ নেতাদের দেশটি থেকে বের করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে শুধু দেশ থেকে বহিষ্কারই নয় কাতারে হামাসের রাজনৈতিক অফিসও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। কাতার সরকারের এমন পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিগত বছরগুলোতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাতে কাতারকে মধ্যস্থতা করতে দেখা গেছে। তবে গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে কাতার অনেকটা নিস্পৃহ ভূমিকা বজায় রেখেছে। গেল মাসে কাতার জানায়, তারা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই পরোক্ষ আলোচনায় মধ্যস্থতার ভূমিকা থেকে সরে আসতে পারে। রাজনীতিকরা নিজেদের ফায়দা লাভের আশায় কাতারের ভূমিকাকে খাটো করে দেখছে, এমন উদ্বেগ থেকেই নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার কথা জানায় দোহা।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, কাতার যদি মধ্যস্থতার ভূমিকা থেকে সরে আসে তাহলে হামাসের রাজনৈতিক অফিস দেশটিতে রাখার কোনো মানে নেই। বাইডেন প্রশাসনের আশা, হামাসের নেতাদের কাতার থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিতে রাজনৈতিক ফায়দা হতে পারে। তবে ওয়াশিংটন পোস্টকে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে আলোচনা প্রক্রিয়া আরও জটিল হবে। কেননা দোহায় হামাসের অফিস থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না। কারণ গাজায় বসে যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাদের কাছে হামাসের অফিস কোথায় থাকবে তা কোনো বিষয় নয়। ঠিক একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কাতারের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিক থিওরোস। তার বিশ্বাস, কাতার থেকে হামাসকে বের করে দেওয়া হোয়াইট হাউসের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন হবে। এর ফলে ভবিষ্যত আলোচনার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে হামাসের চেয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অনাগ্রহ বেশি বলে দাবি করেছেন গ্রুপটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হুসাম বাদরান। তার ভাষায়, যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আমাদেরই আগ্রহ বেশি।
০৫ মে, ২০২৪

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ
শান্তিপূর্ণ ও সংঘাতমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা এবং গাজা ও ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বাংলাদেশের ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত কূটনৈতিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজা, ইউক্রেনসহ বিশ্বব্যাপী সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনরুদ্ধার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধ করা জরুরি। এ সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সমর্থনের জন্য যুক্তরাজ্য সরকার, সেদেশের নাগরিক এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাছান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার কথা বলেন। যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিশ্বের নজর এখন ২০৩০ সালের মধ্যে নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হতে চলা আমাদের দেশের দিকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দনপত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদারত্ব বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি তিনি ‘বঙ্গবন্ধু-এডওয়ার্ড হিথ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু-হ্যারল্ড উইলসন ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড’ চালু করার জন্য যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের প্রশংসা করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিকটবর্তী ঐতিহাসিক চার্চিল হলে এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোয়েল প্রধান অতিথি এবং হাউস অব কমন্সের নেতা পেনি মর্ডান্ট, যুক্তরাজ্যের মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও জাতিসংঘের এফসিডিও মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ, পরিবেশ, খাদ্য ও গ্রামীণবিষয়ক ছায়া-সচিব স্টিভ রিড এবং বাংলাদেশ নিয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের চেয়ারম্যান রুশনারা আলী এমপি বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
০৩ মে, ২০২৪

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ : লন্ডনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী 
শান্তিপূর্ণ ও সংঘাতমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠা এবং গাজা ও ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার (২ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বাংলাদেশের ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত কূটনৈতিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজা এবং ইউক্রেনসহ বিশ্বব্যাপী সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনরুদ্ধার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধ করা জরুরি। এসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সমর্থনের জন্য যুক্তরাজ্য সরকার, সেদেশের নাগরিক এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাছান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার কথা বলেন। যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের সহায়তা প্রয়োজন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের নজর এখন ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হতে চলা আমাদের দেশের দিকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন পত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদারত্ব বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি তিনি ‘বঙ্গবন্ধু-এডওয়ার্ড হিথ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু-হ্যারল্ড উইলসন ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড’ চালু করার জন্য যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের প্রশংসা করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিকটবর্তী ঐতিহাসিক চার্চিল হলে এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোয়েল প্রধান অতিথি এবং হাউস অব কমন্সের নেতা পেনি মর্ডান্ট, যুক্তরাজ্যের মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও জাতিসংঘের এফসিডিও মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ, পরিবেশ, খাদ্য ও গ্রামীণবিষয়ক ছায়াসচিব স্টিভ রিড এবং বাংলাদেশ নিয়ে সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের চেয়ারম্যান রুশনারা আলি বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
০২ মে, ২০২৪

গাজা যুদ্ধ নিয়ে আরব শিক্ষার্থীরা চুপ কেন?
প্যালেস্টাইনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভে উত্তাল বিশ্ব। তার সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্ত হয়েছে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। গত ২০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে প্রতিদিনই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এ বিক্ষোভ ক্রমেই সংগঠিত রূপ পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের এমন আন্দোলন ১৯৬০ এবং ১৯৭০ সালে আলজেরিয়া ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ই কেবল দেখা গিয়েছিল। এবার শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের শুরুটা হয়েছে প্রথমে অমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন মুভমেন্ট’ ওই বিক্ষোভের আয়োজক। গত ১৭ এপ্রিল সংগঠনটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়টির আঙিনায় তাবু গেড়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। তাদের ওই কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ফলে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান। পুলিশি বাধায় ক্ষুব্ধ হয়ে অন্য শিক্ষার্থী এবং ফ্যাকাল্টি সদস্যরাও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ কারণে, ওই কর্মসূচি অনেকটা অ্যামেরিকান ‘হাইড পার্কে’ রূপ নেয়। নিজেদের মধ্যে কখনো লেকচার দেওয়ার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভাষণও চলতো। আন্দোলনকারীরা নানা স্লোগানের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের দাবকেহ গান পরিবেশন, নৃত্য, পাঠদান, বিতর্ক এবং পড়াশোনাও করতো। হাতেগোনা কিছু শিক্ষার্থীর শুরু করা এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানালে আমেরিকার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তা ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও চিন্তাশীল সম্পন্ন বিশ্বের নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এর প্রভাব পড়ে। একই সময়ে শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়ার তালিকাও লম্বা হতে থাকে এবং তা যুদ্ধ বিরতিকে ছাপিয়ে যায়। যেসব সামরিক কোম্পানি ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চুক্তি বাতিলের দাবি তোলা হয়। সেই সঙ্গে শান্তি ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মূলনীতি অনুসারে ইজরায়েলি সামরিক শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার বিষয়টিও দাবিতে যুক্ত করা হয়। চলমান যুদ্ধ নিয়ে নিরবতা ও অপরাধীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখার মাঝেই শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে  শিক্ষার্থীরা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাজা সলিডারিটি এনক্যাম্পমেন্টকে’ বীরোচিত কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করছে।  তারা তাদের সরকারের ওপর গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাংকের নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও ইসরায়েলের সমালোচনা ও তার অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলনকে নস্যাৎ এবং শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করতে প্রথাগত অস্ত্র হিসেবে এ আন্দোলনকে ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম’ তথা ইহুদি বিদ্বেষী তকমাও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের এ অস্ত্র এখন আর কোনো কাজে আসছে না। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা যখন নিশ্চিত করেছে যে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, তাদের এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ। ফলে, এটি সেই নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন, যা আমেরিকার ইতিহাসে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৫০ সাল থেকেই আফ্রিকা থেকে ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়া থেকে আরব অঞ্চলের আরব বসন্ত; এসব  ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থী আন্দোলন স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য বিপ্লবের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এর একটি অংশ মার্কসবাদেও দখল করে আছে। শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। মার্কসবাদীরা যাকে ‘মোটর শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার ইতিহাস’ হিসেবে গণ্য করে থাকে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোতে রাজনীতিকরণ এবং দুর্নীতির মতো দুর্বলতার কারণে ছাত্র আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনে সক্ষম ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কারণ, এতে রয়েছে যুবকদের প্রাণশক্তি, যারা বিভিন্ন দল ও সুবিধাভোগীদের থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাচ্ছে এবং এই যৌবন তাদেরক ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগরে পরিণত করছে। অথচ, কোনো এক অজানা কারণে, আমরা আরব দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তেমন কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছি না। অন্তত তাদের দেশের বাইরেও তাদের কণ্ঠ শোনা যায় না। আমার সবচেয়ে কাছের দেশ মরক্কোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্যাতন ও নিপীড়নের ভয়ে সবাই নিশ্চুপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কর্মীরাও ফিলিস্তিনের সমর্থনে জোড়ালো আওয়াজ তুলতে ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে, যারা গাজায় যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে চান, তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়া এবং ছাত্র আন্দোলন দমন-পীড়নে নানা কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গত মাসে, জেরুজালেমবিষয়ক ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মরোক্কান স্টুডেন্টসের’ ষষ্ঠ ফোরামে শিক্ষার্থীরা যাতে অংশ নিত না পারে, সেজন্য মরক্কোর আবদেল মালেক এসাদি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রসিডেন্ট ক্যাম্পাসে পুলিশ তলব করেন। ‘আল আকসা ফ্লাড : বিজয় ও স্বাধীনতাই জাতির সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক’ শীর্ষক স্লোগানে ওই ফোরাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ফোরাম শুরুর আগেই তিনদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট সব ধরনের ক্লাস ও সুবিধা বন্ধ ঘোষণা করেন। এ ছাড়া, মরক্কোর ৩০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য কলেজ ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যাপক, শিক্ষক কিংবা ছাত্র, সবার মাঝেই ভয় এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। একটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রগতিশীল অধ্যাপক যিনি ন্যায়ের পক্ষে বিশেষ করে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তার অবস্থানের জন্য সুপরিচিত। তিনি আমাকে জানান, ভয়ের কারণে মরক্কোর  বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত থাকছে সবাই। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন, সেটি রাবাতের একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রমাণ হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। ওই অধ্যাপক প্রসিডেন্টকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে একটি শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এমন আয়োজনে রাষ্ট্রের ‘সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ’ অনুমতি নাও দিতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসিডেন্ট তার আশঙ্কার কথা জানান। বিশেষ করে মরক্কোর সঙ্গে জায়নবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের বাতিঘর এবং সমাজের নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। মরক্কো হলো সেই দেশ, যার ইতিহাসের  প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী এমনকি সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন বছরগুলোতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্ররাই সামাজিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু গত দুই দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রসিডেন্টরা কর্মী বনে গেছেন। তারা এখন কেবল তাদের ব্যক্তি স্বার্থ, পদ-পদবী এবং সামাজিক মান মর্যাদার প্রতিই বেশি মনোযোগী। তারা কর্তৃপক্ষের ইশারার অপেক্ষায় থাকেন, যাতে তাদের বিরাগভাজন হতে না হয়। তবে, কর্তৃপক্ষকে ক্ষুব্ধ এবং অসন্তুষ্ট করতে পারে এমন কণ্ঠস্বর দমনে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করেন না। এভাবেই তারা তাদের পদ-পদবী রক্ষার মূল্য দেন এবং সব  আশাকে জলাঞ্জলি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন। অন্যদিকে, মরক্কোর জনগণের যেকোনো লড়াই ও সংগ্রামে  দেশটির ছাত্র সমাজ অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।  নাগরিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান এবং রাজনৈতিক দল পরিচালনাসহ মরক্কোর ইতিহাসজুড়ে রয়েছে ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা এবং তাদের আত্মত্যাগের কাহিনি। যার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিবর্তন এবং উন্নয়ন সূচিত হয়েছে। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে মরক্কোতে যে আন্দোলন হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। ওই আন্দোলন হাজার হাজার তরুণ ও যুবককে আকৃষ্ট করেছিল এবং শিক্ষার সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে পদ্ধতিগত নিপীড়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখা হচ্ছে। গাজায় যুদ্ধাপরাধ যখন অনেক দূর অঞ্চলেও প্রতিবাদের ঢেউ তুলেছে, তখন আমরা আরব অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছি। কারণ, এটি একটি গভীর নৈতিক বিষয়। গাজা ট্রাজেডি বন্ধে প্রতিনিয়ত যেসব কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হচ্ছে এবং দাবি তোলা হচ্ছে তাতে যদি বিশ্ব কর্ণপাত না করে, তাহলে ভবিষ্যতে মানবজাতির সহাবস্থানের ক্ষেত্রে এ সঙ্কট ভয়ংকর রূপ ধারণ এবং মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।  মিডল ইস্ট মনিটর অবলম্বনে অনূদিত
০২ মে, ২০২৪

যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছি : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফিলিস্তিনে অব্যাহত গণহত্যা, মিয়ানমারে চলমান সংঘাত, রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসন ও বিশ্বে চলমান সংঘাত বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি। বৃহস্পতিবার (২ মে) থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্যই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। আওয়ামী লীগ সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে আর বিএনপি মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়। প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে ছয় দিনের সরকারি সফর শেষে ২৯ এপ্রিল ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরেছেন। সফরকালে শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসে (থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুই নেতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ভিসা অব্যাহতি, জ্বালানি সহযোগিতা, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত বিষয় এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) আলোচনার বিষয়ে পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক নথি সই হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুসিত প্রাসাদের অ্যামফোর্ন সাথার্ন থ্রোন হলে থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরা-ক্লাওচা-উয়ুয়া এবং রাণী সুথিদা বজ্রসুধা-বিমলা-লক্ষণের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে ব্যাংককে পৌঁছেন শেখ হাসিনা। ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫২ বছরে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান পর্যায়ে এটাই ছিল প্রথম সফর। সফরটি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবেশী’ নীতির ওপর বৃহত্তর মনোনিবেশের অংশ হিসেবেই তার এই সফর। আর এ সফর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নবায়নের চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে। একই সময়ে তিনি ব্যাংককের জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা। একইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের নির্বাহী সচিব আরমিডা সালসিয়াহ আলিশাবানা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
০২ মে, ২০২৪

যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা
গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করছে ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েল বলেছিল, গাজা থেকে তারা হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করবে। তবে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তারা এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এর মধ্যে গাজার সর্বশেষ নিরাপদ স্থান রাফাহতে হামলার পরিকল্পনা করছে দখলদার ইসরায়েল। তবে দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলায় এতে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২ রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৩০ জন সেনা দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। প্যারাট্রুপার রিজার্ভ ইউনিটের এসব সদস্য বলেছেন, রাফাহতে অভিযান চালানোর সময় তাদের ডাকা হলে এতে সাড়া দেবেন না। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমান্ডাররা এসব রিজার্ভ সেনাকে দায়িত্বে যোগ দিতে জোর করবেন না। তবে এই সেনাদের যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি করার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে ছয় মাস ধরে যুদ্ধ করে তারা কতটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সেনাদের অভিভাবকরাও ইসরায়েলের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। তারা বলছেন, এ অর্থহীন যুদ্ধে সন্তানদের পাঠিয়ে তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। গাজায় থাকা তাদের সেনা সন্তানদের ফেরত আনার দাবি করছেন তারা।
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

দুই রাষ্ট্রনায়কের উপলব্ধি!
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সম্প্রতি প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ঘণ্টার একটি ভাষণ দিয়েছেন। প্রায় ১৭ হাজার শব্দের ওই ভাষণ ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। আলোচনার আগে ব্যক্তি মাখোঁ সম্পর্কে একটু বলা প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকেই তিনি এক ব্যতিক্রম মানুষ। নিজের সমবয়সীদের সঙ্গে তার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি সমানভাবে যেত না বলে সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতেন না। জীবনসঙ্গী বাছাইয়েও তিনি ব্যতিক্রম। নিজের থেকে ২৪ বছর বড় তারই ড্রামা শিক্ষিকা ব্রিজিতকে বিয়ে করতে জেদ ধরেন এবং শেষাবধি তার জেদের কাছে হার মেনে তিন সন্তান, স্বামীকে ছেড়ে ব্রিজিত মাখোঁর হাত ধরেন (তার সমালোচকরা কেউ কেউ তাকে জেরন্টোফাইল বলে থাকেন। এটি একটি মানসিক অবস্থা। এ অবস্থার মানুষ প্রণয়ের ব্যাপারে নিজের চেয়ে অনেক বড় অথবা বয়স্ক মানুষকে পছন্দ করে থাকে। এটা অবশ্যই তার ব্যক্তিগত বিষয়)। মাখোঁ ছোটবেলা থেকেই প্রচুর বইয়ের সঙ্গে থাকেন, সময় পেলেই পড়েন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে একাধিকবার বলেছেন, তার বামপন্থি নানা তার আদর্শ, যিনি তাকে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ২০১২ সালে তিনি যখন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদের দপ্তরে ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পান, তখন ছিলেন দাপ্তরিক কাজে একেবারে আনাড়ি। কিন্তু অচিরেই তার দক্ষতা সবার নজর কাড়ে। সে কারণে ফরাসি সাংবাদিকরা তাকে মোজার্ট অব এলিসি (এলিসি হলো ফরাসি প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন) নামে অভিহিত করেন। বর্তমান বিশ্ব নিয়ে মাখোঁর উপলব্ধি এবং উদ্বেগ ইউরোপের তো বটেই, ইউরোপের বাইরের মানুষের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে। তিনি যা বলেছেন তা এরকম—‘আমরা ইউরোপীয়রা তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি। বিশ্বের দুই পরাশক্তি (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মকানুন মানছে না। ১৯৯৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি পার ক্যাপিটা বেড়েছে ৬০ শতাংশ। আর ইউরোপের মাত্র ৩০ শতাংশ। এ হিসাব যুক্তরাষ্ট্রের ইনফ্লাশন রিডাকশন অ্যাক্ট তৈরির আগের। আমাদের মূল্যবোধ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, দৃষ্টিভঙ্গি এখন খাটো করে দেখা হচ্ছে। আমরাই এটা করতে দিয়েছি। কারণ এখন আমরা দুর্বল হয়ে পড়ছি।’ তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জড়িয়ে আছে একটি শক্তিশালী পরমাণু শক্তির দেশ। আর আমাদের সর্বক্ষণ সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। এটা ভালো বিষয় যে, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে আছে। কিন্তু আমাদের নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া দরকার, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার এবং নিজেদের নিরাপত্তার ভার নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া দরকার। আমাদের অ-ইউরোপীয় দেশগুলো বন্ধু থাকবে, কিন্তু আমাদের যেন যুক্তরাষ্ট্রের পরিচয়ে চলতে না হয়।’ ব্রিটেনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন যে, ব্রেক্সিট তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারেনি। ব্রিটেনের সঙ্গে ফ্রান্স তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে। ল্যাঙ্কাস্টার হাউস ট্রিটিসহ দুপক্ষের অনেক শক্ত চুক্তি আছে। তিনি তার ভাষণে বহু জায়গায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে থাকলে ইউরোপ অর্থনৈতিকভাবে আর দাঁড়াতে পারবে না এবং যুক্তরাষ্ট্রই সেই দুধের সর খেয়ে ফেলবে। মাখোঁ আরও একটি বিপদের কথা উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাদের বন্ধু এবং এটা সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই দেশটিতে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা পরাজিত হলে ইউরোপ চরম সংকটে পড়তে পারে। তিনি বলেছেন, আগামীতে তিনি ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে এ নিয়ে জোর আলোচনা করবেন। ইউরোপের নিজেদের পরাশক্তিগুলোকে মোকাবিলা করতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি আধুনিক যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক এসব তৈরি করে থাকে এবং তা বিভিন্ন দেশের কাছে বিক্রি করে। তারপরও কেন মাখোঁ ইউরোপের প্রতিরক্ষার কথা বলছেন? তার মূল কথা হলো, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এর বলয় থেকে বের হওয়ার কথা বলছেন। ইউরাপের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে ইমানুয়েল মাখোঁর ভাষণটি খুবই বাস্তবমুখী। কোনো দেশের জন্যই পরনির্ভরশীলতা সুফল বয়ে আনে না। কিন্তু ইউরোপ কি পারবে একত্রিত হয়ে নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নিজেরাই করতে? আপাতত মনে হয় না। কারণ ইউরোপের নেতাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে দ্বিমত আছে। এর একটি উদাহরণ হলো, হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ওরবান। ভিক্টরের সঙ্গে ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের তীব্র বিরোধ আছে মাইগ্রেশন পলিসি এবং ইউক্রেন যুদ্ধে সমর্থন প্রশ্নে। হাঙ্গেরি একমাত্র দেশ, যা কি না সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদে আপত্তি জানিয়েছিল। ১৪ বছর ধরে ভিক্টর ওরবান হাঙ্গেরির ক্ষমতায় আছেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট তাকে ‘নির্বাচিত স্বৈরশাসক’ বলে অভিহিত করেছিল। খুবই মজার বিষয় হলো, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার ঠিক আগে ভিক্টর ছিলেন ছাত্রনেতা। তখন রেড আর্মিকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল সাধারণ মানুষ। তার পুরস্কার হিসেবে ভিক্টর পশ্চিমাদের সহায়তায় রাজনীতির সামনের কাতারে চলে আসেন। এখন সেই ভিক্টর ওরবানই পশ্চিমা অনেক চিন্তার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন। যে কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অন্যদিকে ইউরোপীয় নেতারা যখনই জ্বালানিনীতি নিয়ে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে, ইউরোপের বিভিন্ন ফোরামে ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে বসেন, তখনই দেখা যায় তাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা রয়েছে। ফলে মাখোঁ যেসব ইউরোপীয় দেশকে এক চিন্তায় নিয়ে আসতে পারবেন তা মনে হয় না। ২৩ এপ্রিল ৭৫ বছর বয়স্ক পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো ডি সুজা এক বক্তব্যে বলেছেন, ১৫০০ শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ঔপনিবেশিক শাসনে যে ট্রান্স-আটলান্টিক দাস ব্যবসা চলেছে, সেজন্য তার দেশের ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। তিনি বলেছেন, আমরা পাপ করেছি। গত বছর ২৫ এপ্রিল ১৯৭৪ সালের পর্তুগিজ বিপ্লব দিবসেও তিনি দেশটির দায়িত্বের কথা বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছেন, সাবেক কলোনিগুলোর কাছে যে ঋণ আছে, তা পরিশোধ করা উচিত এবং সাবেক উপনিবেশ দেশগুলোতে অর্থায়ন করা প্রয়োজন। ডি সুজা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ ক্ষত ঢেকে রাখতে পারি না। যদিও পর্তুগিজ সরকার বলেছে, ‘আমাদের সাবেক উপনিবেশ দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সুসম্পর্ক রয়েছে, আমরা ঐতিহাসিক সত্যকে সম্মান করি, ভ্রাতৃপ্রতিম দৃষ্টিতে আমরা সহযোগিতার কথা চিন্তা করি। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো প্রক্রিয়া আমাদের হাতে নেই।’ এ সময়কালে ইউরোপীয়রা ১ কোটি ২৫ লাখ আফ্রিকানকে ধরে নিয়ে গেছে এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় দাস হিসেবে বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ৬০ লাখ আফ্রিকানকে পর্তুগিজ জাহাজে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ নিয়ে অনেক সাহিত্য ও স্মৃতিচারণ হয়েছে। অ্যালেক্স হেলির বিখ্যাত উপন্যাস রুটস সিনেমায় রূপ দেওয়া হয়, যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। আফ্রিকার মানুষদের তখন গরু-ছাগলের চেয়েও নিম্নমানের প্রাণ হিসেবে দেখার কালচার ছিল। দীর্ঘকাল পর্তুগালের উপনিবেশ ছিল অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, গিনি বিসাউ, ম্যাকাও, ব্রাজিল, কেপ ভার্দে, পূর্ব তিমুর এবং ভারতের কিছু অংশ। এখন সেই পর্তুগালের প্রেসিডেন্টই তাদের পূর্বপুরুষদের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করছেন, আত্মোপলব্ধি হচ্ছে। গত বছর নেদারল্যান্ডস সাবেক কলোনিগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়েছে। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উদোদোর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এমনকি নেদারল্যান্ডসের রাজাও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। কারণ যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তা ইউরোপের দেশগুলো এখন বহন করতে পারবে না বলেই অনেক ইউরোপীয় নেতা মনে করেন। এ নিয়ে আইনগত লড়াইও চলছে। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার ভলকার তুর্ক আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মানুষের ওপর উপনিবেশ শাসনের যে প্রভাব পড়েছে, তার দায় উপনিবেশ তৈরি করা দেশগুলো নিচ্ছে না। অতীত অথবা বর্তমান যে সময়ের দুঃখজনক ঘটনার কথা আমরা বলি না কেন, এ উপলব্ধিগুলো রাষ্ট্রনায়কদের জন্য জরুরি। হয়তো শিগগিরই কোনো সমাধান হবে না। কিন্তু এ উপলব্ধি বলে দেয়, একটি রাষ্ট্র বা সমাজ আলোর মুখ দেখেছে। কারণ আলো ছাড়া সত্য দেখা যায় না। আত্মম্ভরিতা, অতিরঞ্জিত জাতীয়তাবাদ, অন্য জাতির প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন দৃষ্টি অন্ধকার সমাজেই বিদ্যমান থাকে। যেমনটা এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। এসব অঞ্চলে অতীত বা বর্তমান ভুল নিয়ে কেউ কখনো অনুশোচনা করে না। কারণ এখানকার সমাজ আত্মোপলব্ধি ও অনুশোচনা করতে শেখেনি। লেখক: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

টেকনাফ সীমান্তের ওপারে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা
টেকনাফের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারে যুদ্ধ পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে দেশটির রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং বিজিপি সদস্যদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অরক্ষিত স্থল এবং জল সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকিও রয়েছে। গতকাল রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সামছুল হক দুদু, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, ময়েজ উদ্দিন শরীফ, মো. ছানোয়ার হোসেন, চয়ন ইসলাম, মো. সাদ্দাম হোসেন (পাভেল) এবং হাছিনা বারী চৌধুরী অংশ নেন। বৈঠকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উপস্থাপিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের মে নাগাদ টেকনাফ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের যেসব ঝুঁকি রয়েছে, তা উল্লেখ করা হয় এ প্রতিবেদনে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ; বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অরক্ষিত স্থল ও জল সীমান্তে নিরাপত্তা; রোহিঙ্গাদের অবৈধ পাচাররোধ; মাদকের বিনিময়ে রেশন সরবরাহের ফলে মাদক ও চোরাচালানকৃত পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পেতে পারে; সীমান্তে যুদ্ধাবস্থায় আগ্নেয়াস্ত্র সহজলভ্য হওয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তা সংগ্রহ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার করতে পারে। স্থানীয় আদিবাসী ও মগ সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরাকান আর্মির সখ্য থাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। বৈঠক থেকে মাদক নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি কঠোর হস্তে কিশোর গ্যাং দমনের সুপারিশ করেছে কমিটি। এ ছাড়া কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব বাহিনীকে আরও সচেতন ও সতর্ক থেকে কাজ করার সুপারিশ করে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব অগ্নিকাণ্ডের পর দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা হয় না বলে উল্লেখ করেন। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এমন দুর্ঘটনা ঘটলে প্রায়ই কিছু লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে সব গতানুগতিকভাবে চলতে থাকে। এজন্য সব সংস্থার একটি কমন প্ল্যাটফরম করতে হবে। এতে যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়ম না মেনে কার্যক্রম চালাবে, সেসব প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে তাদের বন্ধ করে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

আমেরিকা ছাড়িয়ে ইউরোপে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন
বেশ কয়েক দিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন চলছে। এবার সেই আন্দোলনের স্রোত আমেরিকা পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার লন্ডন ও কভেন্ট্রিতে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন ব্রিটিশ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ইহুদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সিএনএনের বরাতে ইরনা জানিয়েছে, এদিন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জড়ো হয়ে ইসরায়েলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কের প্রতিবাদ করেছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, সেন্ট্রাল লন্ডনের গাওয়ার স্ট্রিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা ভিড় করেছেন। এ সময় তাদের হাতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ‘অ্যাকশন ফর প্যালেস্টাইন’ গ্রুপ এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া শুক্রবার ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে এখনো উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা তাঁবু গেড়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। রাতদিন বিভিন্ন সময় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে মিছিল নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখছেন। আন্দোলেনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানও বয়কট করছেন। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন দমাতে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রেছেছে দেশটির পুলিশ। ইতিমধ্যে কয়েকশ শিক্ষার্থী পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে গ্রেপ্তার, ধস্তাধস্তি, হুমকি, বিভিন্নভাবে চাপপ্রয়োগ করেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে পারছে না মার্কিন প্রশাসন। গেল ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এ হামলায় উপত্যকাটিতে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে।
২৭ এপ্রিল, ২০২৪
X