শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
এবার নাগালের বাইরে শুঁটকি বাজার
দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা চলছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। এবার দাম বেড়ে ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে শুঁটকি। মাসের ব্যবধানে সব ধরনের শুঁটকি কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাগরে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়া, শুঁটকি তৈরির অন্যতম উপাদান লবণের দাম বৃদ্ধি ও হিমায়িত করে মাছ বিদেশে রপ্তানি করার কারণে শুঁটকির উৎপাদন কমে গেছে। পাশাপাশি আগের তুলনায় পরিবহন খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ার কারণে শুঁটকির দামও এখন বাড়তির দিকে। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে শিয়ালখোওয়া বাজারে বিভিন্ন শুঁটকির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের শুঁটকি কেজিতে  ৫০ থেকে ৩শ টাকা বেড়েছে। কেজিতে ভেটকি শুঁটকি ১ হাজার টাকা, দেশি চেপা শুঁটকি ১ হাজার ২শ টাকা, চিংড়ি শুঁটকি ছয়শ টাকা, বালিয়া শুঁটকি ৪শ টাকা, লইট্টা এক হাজার দুইশ টাকা, ফেওয়া শুঁটকি ৪শ টাকা, হিছুটিমলা শুঁটকি ৪শ টাকা, ছুরি শুঁটকি ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে চিংড়ি শুঁটকি ৫৫০ টাকা, বাঁশপাতা সিদল শুঁটকি ৪শ টাকা ও ৫০ টাকা বেড়ে চেপা শুঁটকি (বড়) ৮শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কালীগঞ্জের শিয়ালখোওয়া বাজার এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইব্রাহিম কালবেলাকে বলেন, লবণের দাম আগে ৫শ টাকা ছিল, এখন ৮শ টাকা। তার ওপর সাগরে মাছ কমে গেছে, হিমায়িত মাছের রপ্তানি বেড়েছে। তাই আমাদের দেশে শুঁটকির উৎপাদন অনেক কমে গেছে। শুঁটকি আমদানি করতে গিয়েও বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে। আমাদের দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকের মজুরি তো আছেই। সবমিলিয়ে দামটা বেড়েছে। তাই ক্রেতার সংখ্যাও কমে গেছে। আরেক ব্যবসায়ী মো. কাশেম মিয়া বলেন, বাজারে মাছের দাম বেশ চড়া। এক কেজি ছুরি শুঁটকি উৎপাদনে পাঁচ থেকে ছয় কেজি মাছ লাগে। আট কেজি লইট্টা মাছ শুকালে এক কেজি লইট্টা শুঁটকি পাওয়া যায়। তার ওপর লবণ আর মজুরি বেড়েছে। তাই দাম বেশি।
১১ মে, ২০২৪

পর্যটকদের মন কাড়ছে কুয়াকাটার কীটনাশকমুক্ত শুঁটকি
কোনো ধরনের ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে শুকানো হচ্ছে শুঁটকি। সমুদ্রপাড়ে খোলা আকাশের নিচে রোদের সাহায্যে মাছ শুকিয়ে বিক্রি করা হয় ক্রেতাদের কাছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রাকৃতিকভাবে দর্শনার্থীদের কাছে বিখ্যাত হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে সুনাম কুড়াচ্ছে এই পর্যটন নগরীর বিষমুক্ত শুঁটকি, যা ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে কুয়াকাটার শুঁটকি এখন অন্যতম। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত এ শুঁটকির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। শুঁটকিপ্রেমীরা শুঁটকি কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন কুয়াকাটায়। এখানকার শুঁটকি সুস্বাদু হওয়ায় দেশে ও বিদেশের রয়েছে আলাদা চাহিদা। প্রতি বছরই এ শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। সরেজমিনে দেখা গেছে, সামুদ্রিক মাছ সহজে পাওয়ায় কুয়াকাটায় বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। এসব পল্লীতে প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম। এ কাজে অংশ নেন নারী, পুরুষ ও শিশুসহ পরিবারের সকল সদস্যরা। পোয়া, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্রা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙ্গর, ভোল ও কোড়ালসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে খোলা জায়গায় বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। কোনো কীটনাশক ছাড়া শুধু লবণ মেখে প্রক্রিয়াজাত করায় এর আলাদা স্বাদ ও চাহিদা রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কোনো পল্লী না থাকায় বছরের ছয় মাস চলে এ ব্যবসা। জানা গেছে, স্বাদে ও গুণে বেশ সুনাম আছে এখানকার শুঁটকির। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ার কারণে পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটার শুঁটকি দোকান থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়। যারা বেড়াতে আসেন তারা ফিরে যাওয়ার সময় আর কিছু না হোক কিছু শুঁটকি কিনে নিয়ে যান। ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নজরুল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটার শুঁটকির অনেক নাম রয়েছে। এখানে এসে নিজ চোখে শুঁটকি শুকানো করা দেখেছি। তারা কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করে না। আমাদের এলাকার চেয়ে দাম অনেক কম। মানও ভালো, তবে স্থায়ী পল্লী থাকলে আরও পরিছন্নভাবে করতে পারত। শুঁটকি শ্রমিক মো. হোসেন বলেন, শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করার কোনো নির্ধারিত জায়গা না থাকায় আমরা সৈকতের পাশে মাছ শুকাই। অনেক সময় উচ্ছেদ অভিযানে সব কিছু ভেঙে ফেলে। আবার শুঁটকি ব্যবসায় আসা কষ্টের হয়ে যায়। শুঁটকি ব্যবসায় আলাদা করে লোনও পাই না আমরা। শুঁটকি ব্যবসায়ী ফারুক ঘরামি বলেন, অনেক বছর ধরে শুঁটকি ব্যবসা করি তবে স্থায়ী শুঁটকি মার্কেট  না থাকায় কিছু দিন পরে উঠে যেতে হয়। কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়ই হচ্ছে  শুটকি। তাই সরকারের কাছে আমরা স্থায়ী শুঁটকি মার্কেট চাই। কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা কালবেলাকে বলেন, সারা দেশে কুয়াকাটার শুঁটকির একটা সুনাম রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে শ্রমিকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা এবং স্থায়ী শুঁটকি পল্লীর জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে উন্নতমানের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য এই পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

শেকৃবির উদ্ভাবন / স্মার্ট ড্রায়ারে স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি
আমাদের দেশের মানুষের পছন্দের খাবারের তালিকায় কমবেশি শুঁটকি মাছ থাকে। এ ছাড়া বিদেশে চাহিদা থাকায় প্রতিবছর দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ শুঁটকি রপ্তানি করা হয়। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে তৈরি শুঁটকি নিয়ে নানা অভিযোগের কারণে অনেকেই খাবারের তালিকা থেকে তা বাদ দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কীটনাশকমুক্ত শুঁটকি তৈরির যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদ রানা। সাউ নামের আধুনিক যন্ত্রটিতে (স্মার্ট ড্রায়ার) এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে সেটি নিজেই পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ড্রায়ারটি দিনের বেলায় সূর্যের তাপ ব্যবহার করে মাছ শুকাবে। এতে সোলার যুক্ত করায় তা রাতেও মাছ শুকানোর কাজ করবে। অর্থাৎ দিনে সূর্যের তাপ এবং রাতে সোলার থেকে প্রাপ্ত শক্তির মাধ্যমে তাপ সৃষ্টির ফলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা তা কাজ করবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে মাছ শুকানোর জন্য দিনের বেলায় সময় পাওয়া যায় ৫-৭ ঘণ্টা। কিন্তু উদ্ভাবিত ড্রায়ারটিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করার কারণে মাছ শুকানোর সময় ৬০ শতাংশ কমে আসবে। ফলে একই সময়ে দ্বিগুণ পরিমাণ শুঁটকি তৈরি করা সম্ভব। ড্রায়ারটি সম্পূর্ণ উচ্চমাত্রার সহনশীল পলিথিন দিয়ে ঘেরাও করে রাখা সম্ভব বলে এর ভেতরে মাছি বা অন্য পোকামাকড় প্রবেশ করতে পারবে না। তা ছাড়া বিরতিহীনভাবে মাছ শুকানোর কাজ চলার কারণে এতে কীটনাশক প্রয়োগেরও প্রয়োজন পড়বে না। ড্রায়ারটিতে সেন্সর বেইসড সফটওয়্যার ব্যবহার করায় সেটি মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং মেশিনটির ভেতরের সব প্যারামিটারের মান মোবাইলে আসে। এ বিষয়ে উদ্ভাবক অধ্যাপক মাসুদ বলেন, ড্রায়ারটি নিরাপদ শুঁটকি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে রাখবে অনন্য ভূমিকা। মেশিনটি ব্যবহার করে অল্প সময়ে অধিক শুঁটকি তৈরি করতে পারবে। এমনকি বর্ষাকালেও শুঁটকি তৈরি করা সম্ভব। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি উৎপাদন হলে দেশে যেমন ভোক্তার সংখ্যা বাড়বে, তেমনি বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব। অধিকন্তু দেশের বেকারত্ব দূরীকরণেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই ড্রায়ার।
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

শেকৃবির উদ্ভাবন / স্মার্ট ড্রায়ারে স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি
আমাদের দেশের মানুষের পছন্দের খাবারের তালিকায় কমবেশি শুঁটকি মাছ থাকে। এ ছাড়া বিদেশে চাহিদা থাকায় প্রতিবছর দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ শুঁটকি রপ্তানি করা হয়। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে তৈরি শুঁটকি নিয়ে নানা অভিযোগের কারণে অনেকেই খাবারের তালিকা থেকে তা বাদ দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কীটনাশকমুক্ত শুঁটকি তৈরির যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদ রানা। সাউ নামের আধুনিক যন্ত্রটিতে (স্মার্ট ড্রায়ার) এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে সেটি নিজেই পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ড্রায়ারটি দিনের বেলায় সূর্যের তাপ ব্যবহার করে মাছ শুকাবে। এতে সোলার যুক্ত করায় তা রাতেও মাছ শুকানোর কাজ করবে। অর্থাৎ দিনে সূর্যের তাপ এবং রাতে সোলার থেকে প্রাপ্ত শক্তির মাধ্যমে তাপ সৃষ্টির ফলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা তা কাজ করবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে মাছ শুকানোর জন্য দিনের বেলায় সময় পাওয়া যায় ৫-৭ ঘণ্টা। কিন্তু উদ্ভাবিত ড্রায়ারটিতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করার কারণে মাছ শুকানোর সময় ৬০ শতাংশ কমে আসবে। ফলে একই সময়ে দ্বিগুণ পরিমাণ শুঁটকি তৈরি করা সম্ভব। ড্রায়ারটি সম্পূর্ণ উচ্চমাত্রার সহনশীল পলিথিন দিয়ে ঘেরাও করে রাখা সম্ভব বলে এর ভেতরে মাছি বা অন্য পোকামাকড় প্রবেশ করতে পারবে না। তা ছাড়া বিরতিহীনভাবে মাছ শুকানোর কাজ চলার কারণে এতে কীটনাশক প্রয়োগেরও প্রয়োজন পড়বে না। ড্রায়ারটিতে সেন্সর বেইসড সফটওয়্যার ব্যবহার করায় সেটি মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং মেশিনটির ভেতরের সব প্যারামিটারের মান মোবাইলে আসে। এ বিষয়ে উদ্ভাবক অধ্যাপক মাসুদ বলেন, ড্রায়ারটি নিরাপদ শুঁটকি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে রাখবে অনন্য ভূমিকা। মেশিনটি ব্যবহার করে অল্প সময়ে অধিক শুঁটকি তৈরি করতে পারবে। এমনকি বর্ষাকালেও শুঁটকি তৈরি করা সম্ভব। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি উৎপাদন হলে দেশে যেমন ভোক্তার সংখ্যা বাড়বে, তেমনি বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব। অধিকন্তু দেশের বেকারত্ব দূরীকরণেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই ড্রায়ার।
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

সিদল শুঁটকি রপ্তানিতে খুলতে পারে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সলপা গ্রামে বহুকাল থেকে সিদল ও শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। তাদের তৈরি এ সিদল দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। সলপা গ্রামের কয়েকটি পরিবার তাদের বাপদাদার আদি এ পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন। একসময় ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার সিদল তৈরির কাজ করত। এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ার কারণে সিদলকে ঘিরে নিজেদের দীর্ঘদিনের পুরোনো পেশা বদলে অনেকেই চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে সিদলের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাদের শিদল এখন অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। উপজেলার সলপা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাচায় সিদল ও শুঁটকি শুকানোর কাজ করছেন রবীন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিদল প্রস্তুত করতে সময় পার করেন তারা।  বিষ্ণু চন্দ্র সরকার বলেন, দুই জাতের সিদল তৈরি হয়। একটি হচ্ছে পোয়া অন্যটি পুঁটি মাছের। পোয়া মাছ চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয়। পুঁটি মাছ মেঘনা ও সিলেট এলাকা থেকে আসে। পুঁটি মাছ আনার পর এগুলোর পেট কাটতে হয়। আমাদের এলাকার প্রায় ১০০ নারী প্রতিদিন এ কাজ করেন। মাছের পেট কেটে নিয়ে তেল ওঠানো হয়। ওই তেল নারীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনে রাখেন রবীন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার। এরপর মাছগুলো মাচায় শুকানোর কাজ চলে। মাছ শুকানোর একমাস পর মটকার ভেতর ঢুকানো হয়। তখন ওই তেল ব্যবহার করা হয়।  ব্যবসায়ী মন্টু চন্দ্র সরকার বলেন, বংশপরম্পরায় আমরা এ কাজ করে আসছি। একসময় নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় উন্মুক্ত থাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। ফলে সিদল শুঁটকি তৈরিতে খরচ কম হতো। এই কারণে শুঁটকির দাম ছিল কম। এখন আর এলাকায় মাছ পাওয়া যায় না। আগে কেজিতে যে সিদল ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন এই সিদল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। চড়া মূল্য হওয়ায় স্বাদের সিদল এখন অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। তিনি আরো বলেন, একসময় বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণ শেষে অতিরিক্ত মাছগুলো পচে নষ্ট হতো। এই পচে যাওয়া মাছগুলোকেই রোদে শুকিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হতো সিদল। বর্তমানে মাছ সব কিনে আনতে হয়। বাজারে সিদলের চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে বেশি তৈরি করতে পারি না। আমাদের সিদল ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। এ ছাড়া ভারতের আগরতলা এবং সোনামুড়ায় আমাদের কিছু পাইকার আছে। তারা এসে সিদল নিয়ে যান। সরকারিভাবে যদি আমারা পৃষ্ঠপোষকতা পেতাম তাহলে আমরা আরও বেশি করে বিভিন্ন দেশে শুঁটকি ও সিদল রপ্তানি করে দেশের জন্য বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতাম।
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

৩৫০ মণ শুঁটকি নষ্ট
গত কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় চলনবিল এলাকার ৫০টি শুঁটকির চাতালে রাখা প্রায় ৩৫০ মণ শুঁটকি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারা বলছেন, আবহাওয়ার এই অবস্থা আরও দু-এক দিন থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। চলনবিল এলাকায় মিঠাপানির মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরির ভরা মৌসুম চলছে। তাই চাতালগুলোয় শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মালিক-শ্রমিকরা। কিন্তু হঠাৎ গত সোমবার থেকে বিল অঞ্চলের আবহাওয়া বৈরী হতে শুরু করে। এই আবহাওয়ায় শুঁটকি শুকাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় চাতাল মালিকদের। বিশেষ করে গত বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় পুঁটি, ট্যাংরা, গুচি, শোল, বোয়ালসহ নানা ধরনের কাঁচা মাছে পচন ধরতে থাকে। পাশাপাশি আধা শুকনা মাছ নষ্ট হয়ে যায়। ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর তালুকদার বলেন, গত তিন দিনে আমার চাতালে রাখা প্রায় ৪৫ হাজার টাকার ১১ মণ মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। আরেক ব্যবসায়ী নান্নু হোসেন বলেন, আমার চাতালে শুঁটকি করার জন্য কেনা প্রায় ৪৫ মণ মাছ দুদিন ধরে সংরক্ষণের জন্য লবণ পানিতে ভিজিয়ে রেখেছি। সেগুলো শুকানোর জন্য কয়েকদিনের মধ্যে চাতালে না দিতে পারলে নষ্ট হয়ে যাবে। এ অবস্থা শুধু আমার নয়, চলনবিলের প্রায় সব ব্যবসায়ীর। ব্যবসায়ী নরেন হালদার, মমতাজ উদ্দিন, কাদের আলীসহ অনেকেই জানান, তাদের চাতালে রাখা পাঁচ থেকে সাত মণ মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি আরও ৩০ থেকে ৩৫ মণ আধা শুকনা মাছ নষ্ট হওয়ার উপক্রম। দু-এক দিনের মধ্যে আবহাওয়া ভালো না হলে অনেককে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ জানান, চলনবিলে আবহাওয়ার এ বৈরিতা দু-এক দিনের মধ্যেই কেটে যাবে। আর আধা শুকনা শুঁটকিগুলো ঘরে বিছিয়ে রেখে ফ্যানের বাতাস দেওয়ার পরামর্শও দেন। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, বৈরী আবহাওয়া এবং বিক্রির জন্য মজুত করা শুঁটকি রক্ষণাবেক্ষণে তাড়াশের মহিষলুটি এলাকায় একটি শেড নির্মাণের পরিকল্পনা মৎস্য অধিদপ্তরের আছে।
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

আশার আলো দেখছেন না চলনবিলের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা
দেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলে সাম্প্রতিক সময়ে মাছের অভাবের কারণেই শুঁটকির চাহিদা ও উৎপাদন ক্রমেই কমে যাচ্ছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী দেশীয়ও মাছের শুঁটকির ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারের পথে। এ দিকে এ অঞ্চলে সংরক্ষণাগার থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানো সম্ভব বলে দাবি করছেন স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, চার দশক পূর্বে ৮০ দশকে চলনবিলের মাছের রমরমা শুঁটকির ব্যবসা শুরু হয়। আশ্বিনের শুরুতে তাড়াশ, উল্লাপাড়া, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, গুরুদাসপুর, সিংড়া এবং আত্রাই উপজেলা এলাকার বিলে অস্থায়ী আবাস গড়ে ব্যবসায়িরা শুঁটকির চাতাল বিছিয়ে শুঁটকি তৈরি করতেন। মাছ প্রাপ্তি সাপেক্ষে তা পৌষ মাস পর্যন্ত চলতো। পুঁটি, টাকি, ট্যাংড়া, খলিশা, চান্দা, বোয়াল, ঘুচি, ইচা বা ছোট চিংড়িসহ নানা প্রকারের বিষমুক্ত দেশীয়ও মাছের শুঁটকি তৈরি হতো শত শত টন। যা উওরের মোকাম সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন। আবার চলনবিলের শুঁটকি সৈয়দপুরের মহাজনদের হাত বদলে ভারতে রপ্তানি করা হতো। দেশে আসত বৈদেশিক মুদ্রা। চলনবিলের হাট-বাজারে ঘুরে জানা যায়, শুঁটকি করার মতো পুঁটি মাছ প্রতি কেজি প্রকার ভেদে ৩৫ থেকে ১৬০। টাকি ১৪০ থেকে ১৫৫। খলিশা ৫৫ থেকে ৮৫। চান্দা ৬৫ থেকে ৭৫। ট্যাংড়া ২৭০ থেকে ৩৩০ টাকায় চাতাল মালিকরা কিনছেন। যা গত বছরের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি শুঁটকির উপযোগী পর্যাপ্ত বোয়াল, শোল, গচি, ইছা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ মৌসুমে প্রতি মণ পুঁটির শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার, টাকি ২৫ থেকে ৩৫, বোয়াল ৩২ থেকে ৩৬, খলিশা ১৬ থেকে ১৮ হাজার, চান্দা ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকায়। কিন্তু ওই সকল মোকামে শুঁটকির চাহিদা থাকলেও চলনবিলের ব্যবসায়ীরা সরবরাহ করতে পারছেন না।  মহিষলুটি চাতালের ব্যবসায়ী নাটোর জেলার গুরুদাসপুর এলাকার নান্নু মিয়া জানান, চাতালে শুঁটকিতে মাছি বসা রোধ, ওজন ঠিক রাখতে মাছ চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লবন পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে তা ধুয়ে প্রয়োজন মতো রোদে শুকিয়ে নিরাপদ শুঁটকি তৈরি হয়। চলনবিলের শুঁটকিতে কোনো ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মেশানো হয়না। এতে মানুষের শরীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় না। এ কারণে যে কোনো মোকামে চলনবিলের মাছের শুঁটকির কদর ও দাম রয়েছে।  সিংড়া মাছ বাজারের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, চলনবিলে চেলা, টাকি, শোল, পাতাসি, চান্দা, পুঁটি, টেংরা, গজার, মাগুর, কই, চিংড়ি, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের বিচরণ বেশি। বর্ষায় প্রচুর মাছ বংশ বিস্তার করে বিলের পানিতে। বর্ষাকালে এসব মাছ খুব কমই ধরা পড়ে। তবে অক্টোবর মাস থেকে বিলের পানি নামতে শুরু করলে মাছ ধরার পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে গেলেও এবার মাছের পরিমাণ খুবই। আবার যেটুকুই পরিমাণ কাঁচা মাছ পাওয়া যায়। তা একসঙ্গে বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। এ সময় ধরা পড়া মাছের একটি অংশ শুঁটকি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করেন। তবে এই অঞ্চলে মাছ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ জন্য তারা সারা বছর শুঁটকি উৎপাদনের সুযোগ পাচ্ছেন না।  শুঁটকি ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের শুঁটকির মান ভালো। বিক্রিও ভালো। কিন্তু সারা বছর আমরা শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারি না। কারণ, এখানে মাছ সংরক্ষণ করে রাখার ব্যবস্থা নাই। তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকায় শুঁটকির চাতালের শ্রমিক ফাতেমা খাতুন বলেন, এ মৌসুমে শুঁটকি তৈরিতে এলাকার প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ নারী-পুরুষ কাজ করতেন। এখন মাছের অভাবে শুঁটকির উৎপাদন কম হওয়ায়। এখন কাজ কম হওয়ায় পারিশ্রমিকও কম। আবার আমরা আগে নারী শ্রমিকরা ৩৫০ থেকে ৩০০ টাকা পেতাম। পুরুষের সাড়ে ৫০০ থেকে ৪৫০ টাকা। অথচ কাজ করার আগ্রহী শ্রমিক বেশি হওয়ায় নারীদের ২৫০ এবং পুরুষদের ৪০০ টাকা দিন হাজিরা দেওয়া হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার বিনায়েকপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর জানান, দীর্ঘ ২০ বছর হলো চাতালে শুঁটকির ব্যবসায় করে আসছি। আমার এ শুঁটকির চাতালে প্রায় চার মাস ১২-১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। গত ২০২১ সালে ৩৫ লাখ টাকার মাছ কিনে প্রায় ৫৫০ মন শুঁটকি পেয়েছিলেন। ২০২২ সালে টাকা থাকলেও চাহিদা মত মাছ পাননি। তাই ২৮ লাখ টাকায় মাছ কিনে ৪৭০ মণ শুঁটকি তৈরি করেন। গত আট থেকে ১০ বছরে শুঁটকি তৈরির মৌসুমে উপযোগী মাছের স্বল্পতায় এ অঞ্চলে শুঁটকির চাতাল কমার সাথে রোজগারে টান পড়েছে। এ বছর মৌসুমের শুরুতেই শুঁটকি করার মত চাহিদা মাফিক মাছ পাচ্ছেন না। তাই অর্ধেক চাতালে মাছ শুকালেও আর অর্ধেক ফাঁকা পড়ে আছে।   তবে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মসগুল আজাদ বলেন, এ বছর তাড়াশ উপজেলায় মহিষলুটি মৎস্য আড়তের ৫টি চাতালে ১৪৮ টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মৎস্য বিভাগ। তাড়াশের কুন্দাইল, নওগাঁ, ধামাইচহাট, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলা, নাটোরের চলনবিল এবং ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলার ৩০ থেকে ৪০টি বিল থেকে কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে এখানকার চাতালে সরবরাহ করা হয়। শুঁটকি তৈরিতে কোনো রকম রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয় না। মানভেদে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। পাঠানো হয় ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে। ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে সেখান থেকে ভালো মানের শুঁটকি রপ্তানি করা হয় বিভিন্ন দেশে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, শুঁটকি তৈরির সাথে জড়িতদের নিরাপদ শুঁটকি তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। পাশাপাশি শুঁটকির উৎপাদন বাড়াতে তাঁদেরকে উব্ধুদ্ধ করা হয়। আর গত বছর তাড়াশে শুঁটকি উৎপাদন কম হলেও উল্লাপাড়া উপজেলায় বেশি ছিল। আর এখন মাছের দামও বেশি।
১২ ডিসেম্বর, ২০২৩

শীত মৌসুমে কুতুবদিয়ায় বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের হিড়িক
শীত মৌসুম এলেই শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উপকূলের বাসিন্দারা। উপজেলাজুড়ে শুঁটকি উৎপাদনে হিড়িক পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকাজুড়ে ছোট বড় ৯৫ থেকে ১০০টি মহাল রয়েছে। আর এসব মহালে এক হাজারেরও অধিক লোক শুঁটকি উৎপাদনে কাজ করেন। আর এই বিষমুক্ত শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন যাচ্ছে দুবাই, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে। এতে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন হয়। চলতি মৌসুমে উপকূলে তিন হাজার টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কাঁচা মাছের চেয়ে শুঁটকি অনেকটা মজাদার হওয়ায় দামও থাকে বেশি। নভেম্বর থেকে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বড়ঘোপ সমুদ্রচর, সন্দীপপাড়া, তাবালের চর, বড়ঘোপ স্টিমারঘাট, উত্তর ধুরুং, কৈয়ারবিল, আলি ফকির ডেইল প্রভৃতি স্থানে বড় শুঁটকিমহাল ছাড়াও অনেক জেলে পরিবারে নিজ আঙিনাতেও লবণও বিষ ছাড়া শুঁটকি উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। ক্ষুদ্র পরিসর থেকে শুরু করে বৃহৎ পরিসরে মাচা তৈরি করে শুকানো হচ্ছে বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত নানা জাতের মাছ। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে সহস্রাধিক শ্রমিক। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও শুঁটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শ্রমিকরা শুকনো শুঁটকি বাতাস দিয়ে বিশেষ কায়দায় উড়িয়ে পরিষ্কার করছেন। এখানে তাদের উৎপাদিত শুঁটকির মধ্যে রয়েছে লইট্টা, ছুরি, ফাইস্যা, চিংড়ি, মাইট্টা, ল্উাখ্যা, টেংরা, সুন্দরাসহ নানা প্রজাতির মাছ অন্যতম। বৃষ্টি না থাকায় শীত মৌসুমে মাছ শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন সরবরাহ চলছে সাধারণত চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর। সেখান থেকে সৌদি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হয়। শীত মৌসুমে উৎপাদিত শুঁটকি তুলনামূলক দাম কম থাকায় আগত পর্যটকরা সাধ্যমত কিনে বাড়ি ফিরছে। তা ছাড়া এখান থেকে এখন কম দামে কিনে বড় বড় গুদামে হাজার হাজার মণ শুঁটকি গুদামজাত করে বর্ষা মৌসুমেও উচ্চ দামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে অনেক ব্যবসায়ী লাভবান হন। এদিকে বড়ঘোপ বাজারের শুঁটকি ব্যবসায়ী আবুল কাশেম, শুঁটকি মহাল মালিক শফিউল আলম, ধুরুং বাজারের শুঁটকি ব্যবসায়ী বদিউল আলম, শাহ আলম জানান, নতুন ছুরি শুঁটকি কেজি ৮০০-১০০০ টাকা, লইট্টা ৫০০-৭০০ টাকা, মাইট্টা (সুরমা) ১৫০০-১৮০০ টাকা, চাকা চিংড়ি ১২০০-১৫০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৩৫০-৪৫০ টাকা, ফাইস্যা ৪০০-৫০০ টাকা রইস্যা ৪০০-৬০০, হুন্দরা ৮০০-১২০০ টাকা, প্রতি কেজি বড় ইছা ৭৫০-৮৫০ টাকা, জলিঙ্গা ইছা ৭০০-৭৫০ টাকা, মিশালি শুঁটকি ১৫০- ২০০ টাকা ও শুঁটকির গুঁড়া ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেচা বিক্রি হচ্ছে। শুঁটকি উৎপাদনকারী শ্রমিকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, তারা নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। পুঁজির অভাব, সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, শুঁটকির ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব। অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদনের জন্য নেই কোনো সরকারি নীতিমালা, মনিটরিং, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক ব্যবস্থা। তাই দিন দিন এ শিল্পের উন্নতি হলেও আধুনিক এবং মানসম্মত পদ্ধতি কোনো উৎপাদকরা গ্রহণ করছেন না। শুঁটকি শিল্পে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও এর সাথে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠী মনে করে, এ মৌসুম তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। শুঁটকি শুকানোর নারী শ্রমিক রাবেয়া খাতুন বলেন, দৈনিক ৪৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করছি। মহিলা মানুষ আর কোনো কাজ তো করতে পারব না। তাই এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। শ্রমিক আনোয়ার হোসেন বলেন, শীত মৌসুমে তেমন কোনো কাজ পাওয়া যায় না। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুঁটকির মহালে দৈনিক ৭৫০ টাকায় কাজ করি। শুঁটকি ব্যবসায়ী জানে আলম বলেন, এবার তুলনামূলক সাগরে মাছ কম মেলায় শুঁটকি উৎপাদনে কাঁচা মাছের ঘাটতি রয়েছে। গত বছরের একই দাম এবারও বাজারে। স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা মহাল থেকে পাইকারি ক্রয় করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন। বিষ, লবণবিহীন শুঁটকি হওয়ায় বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে তিনি জানান।  তিনি আরও বলেন, শুঁটকি মহালগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে উৎপাদন খরচ কম হবে। ফলে আরও বেশি শুঁটকি উৎপাদনে আগ্রহী হবে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। আয় হবে কোটি কোটি টাকা। সেই সাথে সরকারও রাজস্ব পাবে বিপুল পরিমাণ। আড়ৎদাররা জানান নদী, সাগর থেকে কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি পল্লীতে নিয়ে এসে নারী শ্রমিকরা তা পরিষ্কার করেন। এরপর পরিষ্কার পানিতে মাছগুলো ধুয়ে মাচায় শুকাতে দেওয়া হয়। তিন চার দিনের রোদে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। প্রতিটি শুঁটকি পল্লী থেকে সপ্তাহে কয়েকশ মণ শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল আমিন বলেন, কুতুবদিয়ার উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন চরে শুঁটকি পল্লীতে সহস্রাধিক দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। জেলে ও শ্রমিক শুঁটকি উৎপাদনকারী একটি জনগোষ্ঠী তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন এই শুঁটকি উৎপাদনে। জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করে যেতে পারেন এজন্য তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এ বছর উন্নত বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট (মৎস্য অধিদপ্তর)-এর উদ্যোগে বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে কুতুবদিয়া উপজেলার ১০ জন শুঁটকি উৎপাদককে আগামী মাসে উন্নত প্রযুক্তির ফিশ ড্রাইয়ার প্রদান করা হবে। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে মৎস্য দপ্তরের নিয়মিত মনিটরিং চলমান। বর্তমানে কুতুবদিয়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় শুঁটকি উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের সহযোগিতা থাকবে।
২৯ নভেম্বর, ২০২৩

উপকূলের বিষমুক্ত শুঁটকি যাচ্ছে বিদেশে
শীত মৌসুম এলেই শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা উপকূলের বাসিন্দারা। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৩৫টি মহালে এক হাজারেরও অধিক লোক শুঁটকি তৈরির কাজ করেন। আর এ শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন যাচ্ছে দুবাই, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে। এতে সরকারে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন হয়। চলতি মৌসুমে আনোয়ারা উপকূলে তিন হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। নভেম্বর থেকে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে শুঁটকি তৈরির এ কাজ। সরেজমিনে গহিরা উঠান মাঝির ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বালু চরে পলিথিন বিছিয়ে চলছে শুঁটকি শুকানোর কাজ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যোগ দিয়েছেন এ কাজে। শ্রমিকরা শুকনো শুঁটকি বাতাস দিয়ে বিশেষ কায়দায় উড়িয়ে পরিষ্কার করছেন। জানা যায়, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগর উপকূলের গ্রাম গহিরা। এখানকার বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা চলে সমুদ্রের মাছ ধরে। বিগত ১০ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে চলছে শুঁটকি ব্যবসার কাজ। এ কাজে ৩৫ টি শুঁটকি মহালে হাজারেরও অধিক নারী-পুরুষ কাজ করেন। এ ছাড়া আরও তিন-চার হাজার মানুষ নানাভাবে এ কাজে যুক্ত। শুঁটকি ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী। আবার অনেকে কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী থেকেও আসেন ব্যবসা করতে। চিংড়ির পাশাপাশি লইট্যা, ছুরি শুঁটকি, বাইলাসহ আরও কয়েক ধরনের শুঁটকি তৈরি হয় এখানে। সাগর থেকে জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করে উপকূলে নিয়ে আসেন। উপকূলের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা এই মাছ প্রতি কেজি ১০০ থেকে দেড়শ টাকা দিয়ে কিনেন। এরপর বালুচরে পলিথিন বিছিয়ে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। প্রতি মহালে দৈনিক ১০০০ থেকে ১২০০ কেজি শুঁটকি উৎপাদন হয়। এসব কাজে শুঁটকি মহালগুলোতে ২০ থেকে ২৫ জন পুরুষ এবং ৭ থেকে ১০ জন নারী শ্রমিক কাজ করেন। আর প্রতি কেজি ছোট ইছা শুঁটকি ৩০০-৩৫০ টাকা, বড় ইছা ৫৫০-৬০০ টাকা, জলিঙ্গা ইছা ৭০০-৭৫০ টাকা, মিশালি শুঁটকি ১৫০- ২০০ টাকা ও শুঁটকির গুঁড়া ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে কেমিকেলমুক্ত শুঁটকি হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। এখানকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা হল, রায়পুর ইউনিয়নের এরশাদ, জাহাঙ্গীর আলম, নুর নবী, আবদুল খালেক, নবী হোসেন, কামাল উদ্দিন, চকরিয়া রাজাখালী এলাকার বাসিন্দা মোস্তাক আহমদ, সোলেমান, পেটান আলী, শফিউল্লাহসহ প্রায় ৩৫ জন ব্যবসায়ী কাজ করেন।  ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুঁটকি তৈরির কাঁচা মাছ প্রতি কেজি ১০০ থেকে দেড় শ টাকায় কেনা হয়। আর প্রতি কেজি শুঁটকি ২০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। প্রতি মহালে প্রতি দিন ১০০০ থেকে ১২০০ কেজি শুঁটকি উৎপাদন হয়। এই শুঁটকি চট্টগ্রামের চাক্তাইসহ বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যান। এই শুঁটকি বিদেশে দুবাই, ওমানের বড় ব্যবসায়ীরা পাইকারী নিয়ে যান। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই কাজ। শুঁটকি শুকানোর শ্রমিক আমেনা খাতুন বলেন, ‘দৈনিক ৪৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করছি। মহিলা মানুষ আর কোনো কাজতো করতে পারব না। তাই এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’ শ্রমিক মোহররম আলী বলেন, ‘শীত মৌসুমে তেমন কোনো কাজ পাওয়া যায় না। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুঁটকির মহালে দৈনিক ৭৫০ টাকায় কাজ করি।’ আনোয়ারা উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, ‘আমাদের তালিকাভুক্ত ২০ জন শুঁটকি ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদেরকে শুঁটকির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শীত মৌসুমের তিন থেকে চার মাস উপকূলে শুঁটকির কাজ চলে। শুঁটকির ব্যবসায় বিভিন্নভাবে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এই শুঁটকি পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিদেশে নিয়ে যান।’
২৫ নভেম্বর, ২০২৩

শুঁটকি মৌসুম : কুয়াকাটায় ৪০ হাজার লোকের কর্মযজ্ঞ শুরু
পটুয়াখালীর কুয়াকাটার নিজামপুরের শুঁটকি পল্লীতে বাণিজ্যিকভাবে শুঁটকি শুকানোর কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪০ হাজার লোকের মাঝে চলছে ব্যস্ততা। দম ফেলানোর ফুরসত কারো কাছে নেই। কেউ চট রেডি করছে, কেউবা আবার ট্রলার সাগরে নামাচ্ছে। কেউ কেউ মাছ শুকাচ্ছে। কেউ ব্যস্ত অস্থায়ী আবাসিক ঘর তৈরি করতে। স্বাদে আর গুণে বেশ সুনাম আছে এখানকার শুঁটকির। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয় এই নিজামপুরের প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি শুঁটকি।   সরেজমিনে দেখা যায়, শুঁটকি শিল্পের সাথে জড়িত সকলেই ব্যস্ত সময় পার করছে। একটি দলে প্রায় ৭ থেকে ৮ জন শ্রমিক কাজ করছে। এ রকম প্রায় ৪০০টি দল কাজ করে। কোনো কোনো দলে প্রায় ১২ জনও কাজ করে থাকে। কেউ মাছ ধরার ট্রলার সাগরে নামাচ্ছে কেউ বা আবার চাতাং তৈরি করছে। জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে। অর্থনৈতিক সংকট কেটে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন তাদের চোখে ও মুখে বিরাজ করে। জেলেদের তথ্যমতে, শুঁটকি শুকানোর কাজ চলবে প্রায় ৪ মাস। এ চার মাসে এখান থেকে হাজার হাজার মন শুঁটকি দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পাঠানো হবে। এখানকার শুঁটকি প্রাকৃতিক উপায়ে রোদে শুকানো হয় বলে দেশের নানা প্রান্তে এর চাহিদা মিলে। দামও একটু বেশি থাক। এদের মধ্যে লইট্টা, চিংড়ি ও সোনাপাতার চাহিদা বেশি।  কাওসার নামে জেলে বলেন, সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে পানি দিয়ে ধুয়ে রৌদ্রে শুকাই। কোনো কোনো মাছের পেট কেটে দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকাই। কোনো ধরনের কেমিকেল মেশাই না। যা ফলে আমরা দাম ভালো পাই।  জেলে রহিম বলেন, আমরা এখন থেকে ৫ মাস পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করব। আশা করি এবারে দামটা ভালো থাকবে। এখন পর্যন্ত যে চাহিদা আছে তাতে তেমনটাই আশা করি। জেলে আলাউদ্দিন ঘরামি বলেন, আমরা চাই আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি শুকাতে কিন্তু সরকার আমাদের প্রতি নজর দেয়ান। যদি আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে শুকাতাম তাহলে আরও বেশি মাছ শুকাতে পারতাম। এখন চিংড়ি মাছ শুকাতে দুদিন সময় লাগে। লইট্টা প্রায় ৩ দিন সময় লাগে। এত সময় লাগত না যদি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পেতাম।  আড়তদার ইসাহাক হাওলাদার বলেন, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ৩০ হাজার লোকের ব্যস্ততা থাকে এই নিজামপুরে। এমনও দিন আছে দুই কোটি টাকারও বেশি শুঁটকি মাছ বিক্রয় করা হয় এখান থেকে। এখন মৌসুম শুরু হয়েছে। এবার দাম একটু বেশি পাওয়া যাবে। এবারে চিংড়িটা ২৮ হাজার মন দরে বিক্রি হচ্ছে, লইট্টা ২৬ হাজার মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।  কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম। আমরা তাদেরকে বিভিন্ন সময় ট্রেনিং দিয়ে থাকি আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করার। এবারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার টন। আশা করি, লক্ষ্যমাত্রা অগিক্রম করবে। তবে গ্রিনহাউস ও ড্রাইয়ারের মাধ্যমে শুঁটকি করার পদ্ধতি শুরু হয়েছে। এখানকার শুঁটকি অনেকটাই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদন করা হয় বলে সব জায়গায় চাহিদা কম বেশি আছে।
০৭ নভেম্বর, ২০২৩
X