কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সলপা গ্রামে বহুকাল থেকে সিদল ও শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। তাদের তৈরি এ সিদল দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। সলপা গ্রামের কয়েকটি পরিবার তাদের বাপদাদার আদি এ পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন। একসময় ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার সিদল তৈরির কাজ করত। এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ না পাওয়ার কারণে সিদলকে ঘিরে নিজেদের দীর্ঘদিনের পুরোনো পেশা বদলে অনেকেই চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে সিদলের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাদের শিদল এখন অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
উপজেলার সলপা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাচায় সিদল ও শুঁটকি শুকানোর কাজ করছেন রবীন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিদল প্রস্তুত করতে সময় পার করেন তারা।
বিষ্ণু চন্দ্র সরকার বলেন, দুই জাতের সিদল তৈরি হয়। একটি হচ্ছে পোয়া অন্যটি পুঁটি মাছের। পোয়া মাছ চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয়। পুঁটি মাছ মেঘনা ও সিলেট এলাকা থেকে আসে। পুঁটি মাছ আনার পর এগুলোর পেট কাটতে হয়। আমাদের এলাকার প্রায় ১০০ নারী প্রতিদিন এ কাজ করেন। মাছের পেট কেটে নিয়ে তেল ওঠানো হয়। ওই তেল নারীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনে রাখেন রবীন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার। এরপর মাছগুলো মাচায় শুকানোর কাজ চলে। মাছ শুকানোর একমাস পর মটকার ভেতর ঢুকানো হয়। তখন ওই তেল ব্যবহার করা হয়।
ব্যবসায়ী মন্টু চন্দ্র সরকার বলেন, বংশপরম্পরায় আমরা এ কাজ করে আসছি। একসময় নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় উন্মুক্ত থাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। ফলে সিদল শুঁটকি তৈরিতে খরচ কম হতো। এই কারণে শুঁটকির দাম ছিল কম। এখন আর এলাকায় মাছ পাওয়া যায় না। আগে কেজিতে যে সিদল ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন এই সিদল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। চড়া মূল্য হওয়ায় স্বাদের সিদল এখন অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।
তিনি আরো বলেন, একসময় বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণ শেষে অতিরিক্ত মাছগুলো পচে নষ্ট হতো। এই পচে যাওয়া মাছগুলোকেই রোদে শুকিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হতো সিদল। বর্তমানে মাছ সব কিনে আনতে হয়। বাজারে সিদলের চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে বেশি তৈরি করতে পারি না। আমাদের সিদল ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। এ ছাড়া ভারতের আগরতলা এবং সোনামুড়ায় আমাদের কিছু পাইকার আছে। তারা এসে সিদল নিয়ে যান। সরকারিভাবে যদি আমারা পৃষ্ঠপোষকতা পেতাম তাহলে আমরা আরও বেশি করে বিভিন্ন দেশে শুঁটকি ও সিদল রপ্তানি করে দেশের জন্য বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতাম।
মন্তব্য করুন