পটুয়াখালীর কুয়াকাটার নিজামপুরের শুঁটকি পল্লীতে বাণিজ্যিকভাবে শুঁটকি শুকানোর কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪০ হাজার লোকের মাঝে চলছে ব্যস্ততা। দম ফেলানোর ফুরসত কারো কাছে নেই। কেউ চট রেডি করছে, কেউবা আবার ট্রলার সাগরে নামাচ্ছে। কেউ কেউ মাছ শুকাচ্ছে। কেউ ব্যস্ত অস্থায়ী আবাসিক ঘর তৈরি করতে।
স্বাদে আর গুণে বেশ সুনাম আছে এখানকার শুঁটকির। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয় এই নিজামপুরের প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি শুঁটকি।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুঁটকি শিল্পের সাথে জড়িত সকলেই ব্যস্ত সময় পার করছে। একটি দলে প্রায় ৭ থেকে ৮ জন শ্রমিক কাজ করছে। এ রকম প্রায় ৪০০টি দল কাজ করে। কোনো কোনো দলে প্রায় ১২ জনও কাজ করে থাকে। কেউ মাছ ধরার ট্রলার সাগরে নামাচ্ছে কেউ বা আবার চাতাং তৈরি করছে। জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে। অর্থনৈতিক সংকট কেটে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন তাদের চোখে ও মুখে বিরাজ করে।
জেলেদের তথ্যমতে, শুঁটকি শুকানোর কাজ চলবে প্রায় ৪ মাস। এ চার মাসে এখান থেকে হাজার হাজার মন শুঁটকি দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পাঠানো হবে। এখানকার শুঁটকি প্রাকৃতিক উপায়ে রোদে শুকানো হয় বলে দেশের নানা প্রান্তে এর চাহিদা মিলে। দামও একটু বেশি থাক। এদের মধ্যে লইট্টা, চিংড়ি ও সোনাপাতার চাহিদা বেশি।
কাওসার নামে জেলে বলেন, সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে পানি দিয়ে ধুয়ে রৌদ্রে শুকাই। কোনো কোনো মাছের পেট কেটে দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকাই। কোনো ধরনের কেমিকেল মেশাই না। যা ফলে আমরা দাম ভালো পাই।
জেলে রহিম বলেন, আমরা এখন থেকে ৫ মাস পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করব। আশা করি এবারে দামটা ভালো থাকবে। এখন পর্যন্ত যে চাহিদা আছে তাতে তেমনটাই আশা করি।
জেলে আলাউদ্দিন ঘরামি বলেন, আমরা চাই আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি শুকাতে কিন্তু সরকার আমাদের প্রতি নজর দেয়ান। যদি আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে শুকাতাম তাহলে আরও বেশি মাছ শুকাতে পারতাম। এখন চিংড়ি মাছ শুকাতে দুদিন সময় লাগে। লইট্টা প্রায় ৩ দিন সময় লাগে। এত সময় লাগত না যদি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পেতাম।
আড়তদার ইসাহাক হাওলাদার বলেন, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ৩০ হাজার লোকের ব্যস্ততা থাকে এই নিজামপুরে। এমনও দিন আছে দুই কোটি টাকারও বেশি শুঁটকি মাছ বিক্রয় করা হয় এখান থেকে। এখন মৌসুম শুরু হয়েছে। এবার দাম একটু বেশি পাওয়া যাবে। এবারে চিংড়িটা ২৮ হাজার মন দরে বিক্রি হচ্ছে, লইট্টা ২৬ হাজার মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম। আমরা তাদেরকে বিভিন্ন সময় ট্রেনিং দিয়ে থাকি আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করার। এবারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার টন। আশা করি, লক্ষ্যমাত্রা অগিক্রম করবে। তবে গ্রিনহাউস ও ড্রাইয়ারের মাধ্যমে শুঁটকি করার পদ্ধতি শুরু হয়েছে। এখানকার শুঁটকি অনেকটাই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদন করা হয় বলে সব জায়গায় চাহিদা কম বেশি আছে।
মন্তব্য করুন