রাতের আঁধারে পাহাড় কাটছে সওজ
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাপছড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নির্বিচারে কাটা হয়েছে পাহাড়। পাহাড়ের বুকে এখনো ড্রেজারের ক্ষত চিহ্ন বিরাজমান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সড়কের উন্নয়ন কাজ করার জন্য এভাবে ড্রেজার দিয়ে রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে সাবাড় করছিল। এদিকে বিষয়টি নজরে আসার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দীন। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই সড়কটি দিয়ে চলাচল করার সময় বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এতে সাথে সাথে আমি রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ প্রদান করি। সড়কের উন্নয়ন হবে তবে সেটা পাহাড় কেটে নয়, এ বিষয়ে তাদের অবগত করেছি। এ ছাড়া পাহাড় কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই কেউ যেন পাহাড় কাটতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যারা পাহাড় কাটবে তাদের আইনের আওতায় এনে দণ্ড প্রদান করা হবে। এদিকে পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চেয়ে রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমার মোবাইল নম্বরে একাধিক বার কল দেওয়া হলেও কল রিসিভ হয়নি। সম্প্রতি যে স্থানে পাহাড় কাটা হয়েছে কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাফছড়ি এলাকায় সেখানে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে তারা অভিযোগ করে বলেন, রাতের আঁধারে ড্রেজার দিয়ে কাটা হতো পাহাড়ের মাটি। এ ছাড়া তারা আরো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সড়কের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে ভালো কথা, তবে কেন নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি ভরাট করতে হবে। পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের ওপর ক্ষতি সাধন হচ্ছে। এতে পাহাড়ে আশেপাশে বসবাসরত বাসিন্দাদের মধ্যে ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে আসন্ন বর্ষায় পাহাড় ধসের মতো ঘটনা ঘটে প্রাণহানির ঝুঁকিও রয়েছে। কয়েক বছর পূর্বেও পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, পাহাড় কাটার বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেয়েছি। কাপ্তাই ইউএনও মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করে পাহাড় কাটা বন্ধ করেছেন।
২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

৮ বছরেও ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি সওজ
রাজধানীর ডেমরা-রামপুরা সড়কে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। সড়কটি অত্যন্ত সরু হওয়ায় যানজট এখানকার নিত্যদিনের সঙ্গী। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণ পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের জেলার এয়ারপোর্টগামী গাড়ি, কন্টেইনারবাহী গাড়ি এবং ঢাকার উত্তরাংশে যাতায়াতের পাবলিক গাড়ির চাপও সামলাতে হচ্ছে এ সরু একটি সড়কের। সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ সড়কটি একটি মহাসড়কে পরিণত করার প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদন দেয় সরকার। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও থমকে গেছে ডেমরা-রামপুরা-শিমরাইল সড়কের ৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৬২ একর জমি অধিগ্রহণ করে সওজ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার শিমরাইল এলাকায় মাত্র ০.৩৯৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে মোট ৬২.৯৩ একর জমির প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সড়ক ও জনপথ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাট মন্ত্রণালয় ও ডেমরা লতীফ বাওয়ানী জুট মিলস লিঃ এসব দপ্তর থেকে প্রায় ৩০.১৯ একর জমি হস্তান্তরের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।   এ ছাড়া ও সংশ্লিষ্ট দুটি জেলায় (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ) মিলে আরও প্রায় ৩২.৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু হয়ে বনশ্রী-শেখের জায়গা-এবং আমুলিয়া হয়ে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার সড়কের ওপর দিয়ে পূর্বে তারাবো এবং দক্ষিণে সারুলিয়া হয়ে শিমরাইল ঢাকা চিটাগাং রোড মহাসড়কে এসে সংযোগ স্থাপন করবে। এ প্রকল্পটি পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে ৪ লেনে উন্নিত হয়ে এটি একটি মহাসড়কে পরিণত হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ের মতো দৃষ্টিনন্দন করা হবে। হাতিরঝিল-রামপুরা-ডেমরা শিমরাইল সংযুক্ত এ সড়কটি হবে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য। এর মধ্যে ৯ কিলোমিটর সড়ক হবে এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে আর সাড়ে ৪ কিলোমিটার হবে সমতল সড়ক। ১৩.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ সড়কটি এক্সপ্রেস ওয়ে মানে উন্নীত করা হলে ঢাকা শহরের রামপুরা হতে ডেমরা হয়ে চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হবে এবং ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। এটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার সঙ্গে সিলেট-চট্টগ্রামের সঙ্গে নতুন একটি গেটওয়ে সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু হয়ে যানবাহন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের বিকল্প হিসেবে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সুযোগ পাবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)র ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি)’র ভিত্তিতে এ প্রকল্পটির দায়িত্ব পেয়েছেন চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কনসেটিয়াম অব চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এবং চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি)। এই ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক এর সঙ্গে সেতু, ইন্টারচেঞ্জ, কালভার্ট, ওভারপাস, আন্ডারপাস, ফুটওভার ব্রিজ সার্ভিস রোড ভূমি অধিগ্রহণের কাজসহ যাবতীয় অবকাঠামো তৈরিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১২০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে এবং বাকি টাকার জোগান দেবে নিয়োগকৃত কোম্পানি। মোট ২১ বছরে ৪২টি কিস্তির মাধ্যমে চায়না কোম্পানিটি তাদের টাকা তুলে নেবে। এ ছাড়া সড়কটির কাজ সম্পন্ন করা হলে সড়কের টোল কালেকশন করে বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে জমা হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকৌশলী প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) মো. এনামুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক কালবেলাকে বলেন, আমরা যতটুকু সম্ভব সাধারণ মানুষের ক্ষতি না করে কাজটি সম্পাদন করতে চাই। আর এ কারণেই এ সড়কের টোল প্লাজার ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন এনে প্রায় ২ একর জমি কমিয়ে এনেছি। তারপরও ডেমরা স্টাফকোয়ার্টার এলাকার মো. মোক্তার আলী হাওলাদার, আলহাজ নূর আলম সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদারসহ আরও ২০ জনের স্বাক্ষরসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবর জমি অধিগ্রহণ না করার জন্য ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট একটি দরখাস্ত দাখিল করেন। অনুলিপি দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ, যুগ্ম সচিব সওজ বিভাগ, সিনিয়র সহকারী সচিব এবং ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। মূলত, এ কারণেই জমি অধিগ্রহণের কাজে ধীরগতি চলে এসেছে। ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম বর্তমানে আমাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রয়েছে। ওখানে স্থানীয়দের কিছু শুনানি রয়েছে। এ শুনানি হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আমরা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মূল কাজে চলে যেতে পারব।
১২ ডিসেম্বর, ২০২৩
X