সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ সংস্কার করার লক্ষ্যে তিন বছর আগে প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছিল। সেই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাও প্রায় আড়াই বছর আগে। ইতোমধ্যে কাজ শুরুর ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে কয়েকবার। তবুও শুরু হচ্ছে না এ ব্রিজের সংস্কারকাজ।
বারবার নানা জটিলতায় আটকে যাচ্ছে এ উন্নয়ন কাজ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে এ নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। এই দুই বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে এই সেতুর সংস্কার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে এই দুই বিভাগের মধ্যে চলছে দোষারোপের পালা।
সূত্র মতে, গত ২৫ জুলাই কিন ব্রিজের সংস্কারকাজ শুরুর ঘোষণা দেয় কাজ সম্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সংস্কার কাজের জন্য ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিন ব্রিজ দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। ১০ জুলাই সেতুটির সংস্কার কাজের সময় যান চলাচল বন্ধ রাখতে সিলেট মহানগর পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে একটি পত্রও দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু বিভাগের প্রকৌশলী জিশান দত্ত। কিন্তু এখনও যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়নি কাজও শুরু হয়নি। শুক্রবারও কিন ব্রিজ দিয়ে আগের মতো যান চলাচল করতে দেখা গেছে। জানা যায়, কিন ব্রিজ সওজের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও লোহার তৈরি এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ অধিক পারদর্শী। তাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়া ৮৭ বছরের পুরোনো কিন ব্রিজের সংস্কার কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের সেতু বিভাগই সংস্কার কাজ করবে। তবে কাজ শুরুর আগেই সওজ ও রেলওয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে।
ঘোষণা দিয়েও সংস্কার কাজ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে রেলওয়ের সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জীষাণ দত্ত বলেন, ‘সংস্কার কাজ শুরুর জন্য আমরা প্রস্তুত। সব মালামাল কিন ব্রিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আশা করছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’
তিনি বলেন, কিন ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ রাখার দায়িত্ব সওজের। তারা যান চলাচল বন্ধ করে আমাদের জানাবে। এরপর কাজ শুরু করব। এ ব্যাপারে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংস্কার কাজের জন্য রেলওয়ের ঠিকাদার এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত না। তাই কিন ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করিনি। কারণ কাজ শুরু করতে দেরি হলে শেষ করতেও দেরি হবে। আর দীর্ঘ সময় গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু বন্ধ রাখলে জনভোগান্তি বাড়বে। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলেছি পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে আমাদের বলার জন্য। তখন আমরা সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেব। তারা এতে সম্মত হয়েছেন। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাতে পারেননি। তবে আগে ভাগে যান চলাচল বন্ধ করে দিলে জনভোগান্তি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে অর্থ স্থানান্তরে জটিলতা, বন্যাসহ নানা কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে যায় কিন ব্রিজের সংস্কার কাজ। সিলেটের পরিচিতির অংশ হয়ে ওঠা কিন ব্রিজ নির্মাণ হয় ব্রিটিশ আমলে। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় ‘কিন ব্রিজ’।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, জরাজীর্ণ কিন ব্রিজ সংস্কারের জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরেরই জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন হলেও এটি দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘কিন ব্রিজ সিলেট তথা দেশের একটি ঐতিহ্য। সিলেটের পরিচয়বহনকারী স্থাপত্য এটি।
মন্তব্য করুন