তীব্র গরমে সুপেয় পানি সরবরাহ করছে ফায়ার সার্ভিস
সারাদেশে তীব্র তাপদাহ চলছে। জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ ও বিপর্যস্ত। তাই এই তাপদাহে ঢাকা শহরের সাধারণ মানুষ, পথচারী, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মাঝে স্বস্তি আনয়নে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।  বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্নস্থানে ১৮০০ লিটারের ওয়াটার ট্যাংক স্থাপন করে এই সেবা প্রদান করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর মিডিয়া সেল থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।  বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা শহরের সচিবলায়ের সামনে, ধানমণ্ডির ৫নং সড়কসহ ঢাকা শহরের বিভিন্নস্থানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সেবামূলক কার্যক্রম চলমান থাকবে। যতদিন এরকম তীব্র তাপদাহ চলমান থাকবে ততদিন এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।  ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, যারা রাস্তায় সামান্যতম ক্লান্তিতে থাকবেন তারা এই ওয়াটার ট্যাংকি থেকে পানি পান করতে পারবেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের দুইজন ফায়ারফাইটার পানি বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়াটার ট্যাংকের পাশে অবস্থান করবেন।  বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এই কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সারাদেশব্যাপী করার উদ্যোগ রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের।  
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বরেন্দ্র অঞ্চলে মিলছে না সুপেয় পানি
বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীতে দীর্ঘদিন থেকেই পানির স্তর এমনিতেই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। তার ওপর কয়েকদিন থেকে তীব্র তাপদাহে এই অঞ্চলে সুপেয় পানিরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে শত শত হেক্টর আবাদি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। সেই পুকুরগুলোতে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি ভরার কারণে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট উপজেলাসহ আশপাশের এলাকাগুলোর গভীর নলকূপ থেকে পানি উঠেছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাস খানেক থেকে বাঘা, চারঘাট এলাকার শত শত গভীর নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। শুধু এই দুই উপজেলাতেই নয়, জেলার পুঠিয়া উপজেলাধীন ৩ নম্বর বানেশ্বর ইউনিয়ন, ৪ নম্বর ওয়ার্ড, শিবপুরহাট জায়গিরপাড়া এলাকার কোনো টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষিজমির সেচ কার্য ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খাবার পানি ও সেচ কার্যের পানি পুরোটাই মোটর পাম্পনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে এসব এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করা এলাকাবাসীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহী জেলার পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ও মাটিকাটা ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সব ইউনিয়নের গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। তানোর উপজেলার পাচন্দর, মুণ্ডুমালা, কলমা ও বাধাইড় ইউনিয়নে অনেক জায়গায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়; রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী পশ্চিমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের ঝিলিম ইউনিয়ন, গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর, রহনপুর ও পার্বতীপুর ইয়নিয়ন এবং নাচোল উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। নিজ নির্বাচনী এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট নিয়ে কয়েকদিন আগে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পোস্ট দিয়েছিলেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, বাঘা-চারঘাট এলাকায় পানি পেতে (খাবার পানি) সমস্যা হচ্ছে মানুষের। এর পরও গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। পুকুর খনন করে গভীর নলকূপ বসিয়ে পুকুর ভরায় পানির স্তর দ্রুত নেমে গিয়েছে। চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের হামীম হাসান বলেন, ‘এলাকার টিউবওয়েলগুলোতে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তীব্র এই গরমে এলাকার মানুষ খাবার পানির জন্য হাহাকার করছে। সরকারি অর্থায়নে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সাবমারসিবল পাম্প বসানো গেলে মানুষের কিছুটা হলেও কষ্ট দূর হবে।’ রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমান জানান, শুষ্ক মৌসুমে বরেন্দ্র এলাকায় পানির সংকট বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে এলাকার মানুষের পানির প্রাপ্তির প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ ও পুকুর। তাও লোকজনকে অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পানি সংগ্রহের কষ্টটাই এখন এলাকার মানুষের কাছে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডাকসো ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মাটির নিচের পানি তুলে এখন পুকুরে মাছ চাষ হচ্ছে। একুইফার (ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর) একবার শুকিয়ে গেলে চাষ তো দূরের কথা, খাবার পানি পর্যন্ত পাওয়া যাবে না। আর এমন অবস্থাই সৃষ্টি হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলে।’ তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে আইন করে গ্রাউন্ড ওয়াটার তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ আমরা নানা অজুহাতে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে নিজেদের স্থায়ী ক্ষতি করছি।’ জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘রাজশাহী ওয়াসা চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প করে পদ্মা নদীর গোদাগাড়ী পয়েন্ট থেকে খাবার পানি আনার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটার চেয়ে জরুরি ছিল এমন প্রকল্প করে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিকে বাঁচানো। রাজশাহী শহরের একুইফার খুব ভালো এবং প্রতি বছর বর্ষায় তা রিচার্জ হয়। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যারা কাজ করেন, এ অঞ্চলের পানির বিষয়ে তাদের দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময় পার হয়ে গেলে হাজার চেষ্টা করেও মৃত একুইফারকে জীবিত করা যাবে না।’ শুধু রাজশাহী বিভিন্ন উপজেলাতেই নয়, খোদ রাজশাহী শহরেও পানির সংকট রয়েছে। রাজশাহী ওয়াসার তথ্যমতে, শহরে এখন প্রতিদিন পানির চাহিদা ১১ কোটি ৩২ লাখ লিটার। চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ ৮ কোটি ৬৫ লাখ লিটার পানি তোলা হয়। এখন মাত্র ৯০ লাখ লিটার ভূ-উপরিস্থ পানি পরিশোধন করা হয়। তাও প্রতিদিন ১ কোটি ৭৭ লাখ লিটার পানির ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকীর হোসেন বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলার সারেংপুরে পদ্মা নদী থেকে খাবার পানির সংগ্রহে একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ওই স্থানে পদ্মা নদীতে সারা বছর পানি থাকে। এজন্য ওই স্থানটিই বাছাই করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজশাহী শহরে আর পানির ঘাটতি থাকবে না। শহরের চাহিদা মিটিয়ে রাজশাহী ওয়াসা আশপাশের পৌর এলাকাগুলোতেও সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারবে। রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘প্রতি বছরই এপ্রিল-মে মাসে বরেন্দ্রের পানিস্তর নেমে যায়। বৃষ্টি হলে তখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। রাজশাহীর আবহাওয়া এখন বেশ উত্তপ্ত। এপ্রিলজুড়ে খরা চলছে। গ্রামাঞ্চলে পানির কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে বলে খবর পাচ্ছি।’ বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রতি বছর অব্যাহতভাবে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনি বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব রাজশাহী অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। আবার বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারও এজন্য অনেকাংশে দায়ী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ হতে পারে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানো।’  
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

উপকূলে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি
উপকূলে লবণপানি নিয়ন্ত্রণ এবং সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনের নেতারা। তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের পাশাপাশি মানুষের সৃষ্ট নানা কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এরপর লবণাক্ততার আগ্রাসনে এই সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে উপকূলের জীবন-জীবিকা ও প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। এই হুমকি মোকাবিলায় লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করা জরুরি। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিশ্ব পানি দিবস ২০২৪ উপলক্ষে নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত খালি কলস হাতে নারীদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তারা। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তফা আলমগীর রতন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দিন, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল প্রমুখ। কর্মসূচিতে পরিবেশ আন্দোলনের নেতা শরীফ জামিল বলেন, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলে পানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরপর লবণাক্ত পানিতে চিংড়ি চাষের কারণে মিঠাপানির পুকুরগুলোর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আর সময়ে-অসময়ে লবণাক্ত পানি ফসলি জমিতে প্রবেশ করায় জমিতে ফসল হচ্ছে না। তাই জীবন-জীবিকা রক্ষায় উপকূলের বসতি ও ফসলি এলাকায় লবণ পানি বন্ধ করতে হবে। অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি গ্রহণের ফলে নারীদের জরায়ুতে বিভিন্ন রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন খিঁচুনি, গর্ভপাত, এমনকি অপরিণত শিশু জন্ম দেওয়ার হার বেড়েছে। যে কারণে উপকূলীয় এলাকায় বাল্যবিয়ে বাড়ছে। আবার রোগে আক্রান্ত হয়ে জরায়ু কেটে ফেলার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটছে। তাই টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে উপকূলে সুপেয় পানি নিশ্চিত করা জরুরি। কর্মসূচিতে উত্থাপিত দাবি দাবিনামায় বলা হয়, পানি আইনের ধারা-১৭ অনুযায়ী উপকূলীয় অঞ্চলকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। মিঠা পানির উৎস ভরাট ও দূষণ করে এমন যে কোনো ব্যক্তিগত বা শিল্প উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে। নিরাপদ পানির সর্বজনীন, ন্যায্য ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। জলবায়ু ঝুঁকি, দারিদ্র্য ও বিপদাপন্নতা বিবেচনায় নিয়ে উপকূল সংশ্লিষ্ট এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও পরিধি বাড়াতে হবে।
২৩ মার্চ, ২০২৪

সুপেয় পানি সরবরাহে সাজেকে নতুন প্রকল্প
নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত রাঙামাটি জেলার সাজেক উপত্যকা বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান। সাজেক ভ্যালি রাঙামাটির চাঁদ নামেও পরিচিত। এই পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য উপভোগের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার পর্যটক জড়ো হন, যা সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটির সময় ৮ থেকে ১০ হাজারে পৌঁছায়। এসব পর্যটকের জন্য এখানে ১৫০টির অধিক হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় অধিবাসী ও হোটেল-রিসোর্ট পরিচালনাকারীদের নিয়ে এখানে প্রায় ৪ হাজার মানুষের স্থায়ী বসবাস। কিন্তু এলাকাটিতে এই বিপুল জনগোষ্ঠীর তৃষ্ণা মেটাতে নেই কোনো সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। কারণ যেসব হোটেল বা রিসোর্ট রয়েছে, সেগুলো সাজেক ভ্যালি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এবং প্রায় আড়াই হাজার ফুট নিচের ছড়া থেকে পানি উত্তোলন করে পর্যটকদের দৈনন্দিন ব্যবহারের পানির চাহিদা মেটাতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। তা ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে ছড়ায় পানির প্রবাহ একবারেই কমে যায় এবং বর্ষাকালে পানি অত্যধিক ঘোলা হয়ে যায়। কিন্তু বিকল্পের অভাবে কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই এই পানি দিয়েই পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের প্রয়োজন মেটানো হয়। এ ছাড়া স্থানীয়রা পাহাড়ের ঝিরি থেকে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করে খাবার পানির চাহিদা মেটান। এই পানিরও ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। এই যখন পরিস্থিতি, তখন বিষয়টি নজরে এনেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। পর্যটক এবং স্থানীয়দের সুপেয় পানির অভাব দূর এবং তা সবার কাছে সরবরাহ নিশ্চিতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য সাজেকসহ রাঙামাটি এলাকার নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নের জন্য এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ‘সাজেক পর্যটন এলাকাসহ রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাথুরে এলাকায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন’ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। যার বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৩১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। আর বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত। অনুমোদন পেলে চলতি বছরেই এর কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নের মাধ্যমে সাজেক পর্যটন এলাকাসহ রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাসরত জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। সাজেক পর্যটন এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা, রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাথুরে এলাকায় জিএফএস স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং প্রকল্প এলাকার ইউনিয়ন পর্যায়ের জনসমাগমপূর্ণ স্থান বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকা এবং সাজেকের অধিকাংশ এলাকা পাথুরে হওয়ায় নলকূপ স্থাপন সফল হয় না। সাজেকে পানি সরবরাহের জন্য ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ দুটি উৎস থেকেই পানির প্রাপ্তি খুবই অপ্রতুল। পাথুরে কঠিন শিলা স্তর হওয়ায় নলকূপ স্থাপনও খুব কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তা ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পানিবাহিত বালিস্তর পাওয়া যায় না বলে নলকূপ স্থাপনের কাজ সফল হয় না। সাজেক উপত্যকাটি সম্পূর্ণ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এবং অত্যন্ত উঁচুতে হওয়ায় পানির স্থিতি তল অনেক নিচে। অন্যদিক ভূ-পৃষ্ঠস্থ যে ছড়াটি থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়ে থাকে সেটিও শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যায়। এ জন্য নলকূপ এবং পাইপলাইন স্থাপন, পানি পরিশোধনাগার ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ওই এলাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আলোচ্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চাহিদার ভিত্তিতে ছয়টি পরীক্ষামূলক নলকূপ, তিনটি উৎপাদক নলকূপ, চারটি পাম্প, ট্রান্সফরমার, রিটেইনিং ওয়াল, নিরাপত্তা দেয়ালসহ পাম্প হাউস নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া একটি ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি পরিশোধনাগার, ১২ কিমি সঞ্চালন পাইপলাইন ও ৬ কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হবে, যা ৩৫০টি গৃহে সংযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া, ৩ কিমি আরসিসি ড্রেন এবং ৬১টি জিএফএস নির্মিত হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান ২০টি জিএফএস মেরামত ও সংস্কার এবং ১০টি বি টাইপ পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বিশ্লেষণে কিছু ত্রুটি-বিচ‌্যুতি পেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। যেগুলো প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার আলোচনায় তোলা হবে। এর পরই এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে।
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X