রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:১৮ এএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আশ্বস্ত হলেও সরকারকে চাপে রাখবে বিএনপি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন
আশ্বস্ত হলেও সরকারকে চাপে রাখবে বিএনপি

অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারপ্রধানের এমন কথায় নির্বাচন নিয়ে আশ্বস্ত হয়েছে দলটি। এ ঘটনায় বিএনপি বেশ উৎফুল্লও। তবে দলটির নেতারা মনে করেন, তার পরও বাধা আসতে পারে। কারণ, নির্বাচন প্রলম্বিত করতে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ আছে। তাই পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে দ্রুততম সময়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপি। এ জন্য সরকারকে চাপে রাখতে পূর্বঘোষিত ঢাকাসহ দেশব্যাপী সভা-সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে দলটি। সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে। রাত পৌনে ৯টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আজ বুধবার থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং ফ্যাসিবাদীদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের ৬৭টি সাংগঠনিক জেলায় সভা-সমাবেশ করবে দলটি। এ কর্মসূচিতে চারটি লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকেই ‘মূল ফোকাস’ হিসেবে তুলে ধরতে চায় তারা। প্রথম দিনে আজ ছয় জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। খুলনায় সমাবেশে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, লালমনিরহাটে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিরাজগঞ্জে নজরুল ইসলাম খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বরকত উল্লাহ বুলু, সুনামগঞ্জে আরিফুল হক চৌধুরী এবং পটুয়াখালীতে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধান অতিথি থাকবেন।

এদিকে দেশব্যাপী এ কর্মসূচি শুরুর আগে সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে তাগিদ দিতে সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বৈঠকে নির্বাচন প্রশ্নে দলীয় অবস্থান ও মনোভাব প্রধান উপদেষ্টাকে জানান বিএনপি নেতারা। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ওইদিন রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করেন তিন নেতা। তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা আশ্বস্ত করেছেন, অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছেন। উনারা রোডম্যাপের ব্যাপারে সম্ভাব্য ১৫ তারিখের (ফেব্রুয়ারি) মধ্যেই কিছু একটা বলতে পারেন।

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এমন আশ্বাসের পরও বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এর পরও বাধা আসতে পারে। কারণ, দ্রুত নির্বাচন না দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ওপর এক ধরনের চাপ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্ররা নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর সারা দেশে সংগঠন গোছানো ও সুসংহত করতে তাদের বেশ সময়ের প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতও এখন তৃণমূলে সংগঠনকে গোছানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএনপি নেতাদের অভিমত, এমন অবস্থায় দ্রুত নির্বাচন দাবিতে বিএনপি দেশব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কৌশলে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করলে ড. ইউনূসের ভীতি কাটতে পারে। এর ফলে তিনি রোডম্যাপ ঘোষণা ইস্যুতে এক ধরনের ভরসাও পাবেন। কারণ, ব্যাপক জনসমাগমে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে, বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে রয়েছে এবং তারা নির্বাচন দাবিতে রাজপথেও নেমেছে। তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সমাবেশ ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে সর্বাত্মকভাবে সফলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপি মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাসে নির্বাচনের যে আলো দেখা গেছে, দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা হলে তা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। একই সঙ্গে সব ধরনের সংকট কেটে যাবে, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কাও দূর হয়ে যাবে। কারণ, রোডম্যাপের পর পুরো দেশ তখন নির্বাচনমুখী হয়ে পড়বে। দলটির নেতারা মনে করেন, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই হতে পারে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।

দেশব্যাপী সমাবেশের কর্মসূচি রমজান শুরু হওয়ার আগেই সম্পন্ন হবে। জানা গেছে, আসন্ন রমজানে রাজপথে কোনো কর্মসূচি থাকবে না বিএনপির। তবে ওই মাসে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়েও একই দাবি তুলে ধরা হবে। আর এ সময়ের মধ্যে সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলে রমজানের পর রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে দলটি। তখন দেশব্যাপী বিভাগ ও মহানগরে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতারা। এ ছাড়া ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশজুড়ে সংঘটিত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পর এসে তারা কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সমর্থন করেন না। দলীয় এ অবস্থান তারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

গাজাবাসীর জন্য রোজা থাকছেন বিশ্বের ১৫০ আলেম

ডেনমার্ক দূতাবাসে চাকরির সুযোগ

সকালে উঠেই কোন ভুলের কারণে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি 

গাজা সিটির নতুন এলাকায় ট্যাংক নিয়ে ঢুকেছে ইসরায়েলিরা

বেড়েছে স্বর্ণের দাম, ভরিতে কত?

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় কতটা অস্বস্তিতে ভারত?

সারা দেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬৬২

নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটাক দখলে নিলেন ববি শিক্ষার্থীরা

আইভরি কোস্ট  / প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে চান ৬০ জন

১০

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

১১

গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘের

১২

আজ আপনার ভাগ্যে কী আছে, দেখে নিন রাশিফলে

১৩

২৮ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৪

২৮ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা

১৫

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৬

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৭

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প কর্মসূচি দিয়ে জবি ছাত্রীসংস্থার আত্মপ্রকাশ

১৮

২৮ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৯

২০৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপী / আসিফ এপারেলসের এমডিসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

২০
X