আতাউর রহমান
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীতে আতঙ্ক

গণপিটুনিতে ছড়াচ্ছে নতুন ভয়

বাড়ছে উদ্বেগ
গণপিটুনিতে ছড়াচ্ছে নতুন ভয়

রাজধানী ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে জনতা। গত মঙ্গলবার রাতের এ ঘটনায় উদ্বেগ ছড়ানোর মধ্যেই রাজধানীর উত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই যুবককে পিটিয়ে আহত করার পর তাদের ফুট ওভারব্রিজে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে ভীতি ছড়ালেও তখন পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি, এরা ছিনতাইকারী দলের সদস্য।

যদিও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ঘটনার শিকার যুবকরা ছিনতাইকারী হলেও আইন কাউকে এভাবে পিটিয়ে মারার অধিকার দেয়নি। এ ধরনের ঘটনা হত্যাকাণ্ড এবং তা দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ এমন গণপিটুনিতে নির্দোষ ব্যক্তিরও প্রাণ যেতে পারে, এমন উদাহরণ আগেও রয়েছে।

শুধু টঙ্গী বা উত্তরার ওই দুটি ঘটনাই নয়, দেশে গণপিটুনির এমন ভয়াবহতা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। তবে সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষও প্রতিরোধে নামে। এর জেরে ঘটছে এ গণপিটুনির নামে বীভৎসতা।

মূলত গত রোববার রাত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ‘ছিনতাইকারী ও ডাকাত’ ধরার পর পিটুনি দেওয়ার বেশকিছু তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই গণপিটুনির বিভিন্ন ভিডিও নিজেদের আইডিতে ছড়িয়ে সতর্ক করে পোস্ট দেন। তবে অনেকে এসব ভিডিও পুরোনো বলেও পোস্ট দেন। এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায় সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে পায়ে দড়ি বেঁধে ফুট ওভারব্রিজের সঙ্গে তাদের উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখার মতো বীভৎসতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আতঙ্কও ছড়ায়। যদিও রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মো. নাজিম (৪০) ও মো. বকুল (৩০) নামের ওই দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পুলিশ বলছে, ওই দুজন যে ঘটনাস্থলে ছিনতাই করেছে, এমন তথ্য-প্রমাণ তারা পায়নি।

এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে শেরপুরের নকলা উপজেলায় গরুচোর সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই ঘটনায় আহত হয় আরও চারজন। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ছবিরপাইক গ্রামে জহির উদ্দিন নামে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে চোর আখ্যা দিয়ে দফায় দফায় মারধর করা হয়। পরে তাকে খুঁটিতে বেঁধে ভিডিও ধারণ করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। গুরুতর আহত ওই ব্যক্তি ওই অবস্থাতেই মারা যায়।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যানুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে দেশে গণপিটুনিতে ২৩৩ জন নিহত হয়। এর মধ্যে গত বছরই নিহতের সংখ্যা ১৪৬ জন। অন্য একটি মানবাধিকার সংগঠন ‘মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ)’ হিসাব বলছে, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপিটুনি, অর্থাৎ আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা তখনই বেড়ে যায়, যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। সাধারণ মানুষ যখন মনে করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না, তখনই নিজেদের নিরাপত্তায় আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তারা আরও বলছেন, গণপিটুনি আইন ও সামাজিক রীতিবহির্ভূত এক ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতা। এটি এক ধরনের মব। এটা বন্ধ করতে না পারলে ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধারে পিটিয়ে আহত করা বা হত্যা করার মতো সুযোগ অনেকে নেওয়ার চেষ্টা করবে।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক কালবেলাকে বলেন, বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে এবং রাজধানীসহ দেশে অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষ নিজেই আইন হাতে তুলে নিচ্ছে, নিজেরাই অপরাধীর বিচার করছে, গণপিটুনি দিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষক আরও বলেন, যখন মানুষ দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারছে না অথবা করছে না বা তারা অপরাধীকে অপরাধ করার সুযোগ দিচ্ছে, তখনই মানুষ আইন হাতে তুলে নেয় বা গণপিটুনির মতো সহিংসতা ঘটনা ঘটায়। এসব বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পরিপূর্ণভাবে তার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা প্রয়োজন।

অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেছেন, অপরাধ দমনে সাধারণ মানুষ সবসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করে; কিন্তু কোনোভাবেই কাউকে ধরে গণপিটুনি দেওয়া বা আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। জনতা সন্দেহভাজন কাউকে ধরলে অবশ্য নিকটস্থ থানায় বা পুলিশকে অবহিত করবে, এটাই কাম্য।

তিনি বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিনতাই-ডাকাতিসহ নানা অপরাধ দমনে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। এসব অভিযানে সফলতা রয়েছে, অপরাধীরা ধরা পড়ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে অভিযানগুলো তদারকি করছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবির ৩ ঘণ্টার বৈঠকে কী আলোচনা হল?

যুক্তরাজ্য থেকে আসবে ৩ কার্গো এলএনজি

২৫ মিলিয়ন ডলারের চুরি করা গোলাপি হীরা উদ্ধার দুবাই পুলিশের

খোলামেলা পোশাকে বিতর্কে পাকিস্তানি অভিনেত্রী আইজা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

দেশজুড়ে মোবাইল কোর্ট অভিযানে ১২২০ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ

স্বামীর মৃত্যুদণ্ড জনসম্মুখে, স্ত্রীর দণ্ড হবে কারাগারে

এইচএসসি পাসে নিয়োগ দেবে সজীব গ্রুপ, লাগবে না অভিজ্ঞতা

টিসিএল পণ্য এখন বাজারজাত করছে মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ

ডাকসু নির্বাচন / শেষ দিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ৯৩ জনের, মোট ৬৫৮

১০

২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই বদলি কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও

১১

আব্দুল মজিদ মল্লিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তেরখাদায় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান 

১২

কক্সবাজারে মার্কিন নারীকে শ্লীলতাহানি, অতঃপর...

১৩

এসএসসি পাসেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ

১৪

গয়েশ্বর চন্দ্রের দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ধার্য

১৫

সংস্কার না করে পূর্বের নিয়মে নির্বাচন হতে পারে না : চরমোনাই পীর

১৬

ওমরাহ করে ফিরেছেন রইস উদ্দিন, সাক্ষাৎ করতে গেলেন অপু বিশ্বাস

১৭

কেউ টাকা ধার চাইলে সম্পর্ক ঠিক রেখে যেভাবে ‘না’ বলবেন

১৮

ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা লড়াই করেছি : মো. শাহজাহান

১৯

৫৫ লাখ টাকা চুরির মামলায় গৃহকর্মী-দারোয়ান রিমান্ডে 

২০
X