

সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবিতে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও শিক্ষকরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।
চার দফা দাবিতে ‘বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র (বাসমাশিস) ব্যানারে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা গতকাল সোমবার থেকে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ২৪ নভেম্বর শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষাও বন্ধ রেখেছেন তারা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রংপুরসহ বিভিন্ন বিভাগের অনেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকাল পরীক্ষা হয়নি। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, সরকারি করোনেশন গার্লস হাইস্কুল (খুলনা), গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, সবুজবাগ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শেরপুরের সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি, কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা স্থগিতের খবর পাওয়া গেছে।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের দীর্ঘদিনের পেশাগত মর্যাদা ও বেতন-ভাতা নিয়ে চারটি দাবিতে এই কর্মবিরতি পালন করছেন। তাদের দাবিগুলো হলো—সহকারী শিক্ষক পদকে নবম গ্রেডে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’-এর গেজেট দ্রুত প্রকাশ; বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা; সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়া এবং ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের দুই থেকে তিনটি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।
শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, সরকার দাবি পূরণ করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করবেন। অন্যথায় কর্মবিরতি চলবে।
শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সিনিয়র শিক্ষক ও বাসমাশিসের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, চার দাবিতে মাউশি চত্বরে দুই দিন অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরও আমাদের সঙ্গে সরকার বা মাউশির কেউ আলোচনা করেননি। তাই আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি। স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত আছে। সহকারী শিক্ষকদের বছরের পর বছর বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ গতকাল সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় আজ মঙ্গলবারও এ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন। তিনি বলেন, কর্মসূচিতে সারা দেশের শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। আজও পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে।
মাউশির হুঁশিয়ারি: শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, বার্ষিক পরীক্ষা ২০ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে মাউশির পূর্ববর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে ও নির্বিঘ্নে আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বা কর্মকর্তার যে কোনো ধরনের শৈথিল্য বা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
মন্তব্য করুন