

বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে সারা বিশ্বের ৮২০ কোটি মানুষের অর্ধেকেই শহরে বসবাস করছেন। এর ফলে অতিমহানগরীর সংখ্যা বাড়ছে। সাম্প্রতিক জাতিসংঘের এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর মেগা সিটি ফের আলোচনায় এসেছে। এখন একনজরে দেখা নেই—মেগা সিটি বলতে আসলে কী বোঝানো হয় এবং এটি কীভাবে নির্ধারণ করা হয়।
মেগা ও মেটা সিটি কী: মেগা সিটি বা অতিমহানগরী শব্দটি ব্যবহার করা হয় এমন শহরের জন্য, যেখানে জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন (এক কোটি) বা তার বেশি এবং যা আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু জনসংখ্যা নয়, শহরের অবকাঠামো, অর্থনৈতিক কার্যক্রম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নাগরিক সেবার ঘনত্বও মেগা সিটি হিসেবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রাখে।
আর যে শহরের জনসংখ্যা ২ কোটির বেশি থাকে, সেটাকে বলে মেটা সিটি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মেগা সিটি শুধু সংখ্যাগত ধারণা নয়, বরং একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা, জাকার্তা, টোকিও—এই শহরগুলো শুধু জনসংখ্যা বেশি নয়, বরং দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন ও সামাজিক কাঠামোর কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
ব্রিটানিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেগা সিটি হচ্ছে এমন বিশাল মেট্রোপলিটন এলাকা, যার জনসংখ্যা ১ কোটির বেশি। এগুলোকে বিশাল ভৌগোলিক অবস্থান দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, যা পরিবেশগত, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিস্তৃত পরিসর। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর মেগা সিটিগুলোতে দ্রুত প্রবৃদ্ধির হার থাকে। যদিও উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ—উভয়ের ক্ষেত্রেই মেগা সিটিতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ মূলত ক্রমবর্ধমান অভিবাসন এবং জন্মহারকে দায়ী করা হয়।
ইতিহাস: বিশ্বের প্রথম মেগা সিটির উত্থানের স্থান ও সময় নিয়ে ভিন্ন তথ্য রয়েছে। কিছু গবেষক মনে করেন যে, ১৯৩০ সালে নিউইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন এলাকার জনসংখ্যা হবে ১ কোটির বেশি। যুদ্ধোত্তর শিল্পায়নের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে লাখ লাখ শ্রমিক শহরে আকৃষ্ট হওয়ার পর ১৯৫০-এর দশকে টোকিওর জনসংখ্যাও কোটি ছাড়িয়ে যায়। ষাটের দশকে টোকিওর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ২ কোটির বেশি হলে এটি বিশ্বের মেটা সিটিতে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, যে শহরের জনসংখ্যা ২ কোটির বেশি, তাকে মেটা সিটি বলে।
মেগা সিটি নির্ধারণের মানদণ্ড: মেগা সিটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূলত কয়েকটি বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়।
জনসংখ্যা: জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী, মেগা সিটি হওয়ার জন্য নগরের জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটির বেশি হতে হবে। এটি শহরের স্থায়ী বাসিন্দা ও দৈনন্দিন জীবনযাপনকারী মানুষের সংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব: শহরটি যদি শিল্প, বাণিজ্য, প্রযুক্তি, ব্যাংকিং বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়, তাহলে এটি মেগা সিটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আঞ্চলিক বা জাতীয় কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা: মেগা সিটি প্রায়ই দেশের বা অঞ্চলের প্রধান প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
নগরায়ণের ঘনত্ব: শহরের বিস্তার, ঘনবসতি এবং ট্রাফিক বা যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিধি মেগা সিটি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। ঘনবসতিপূর্ণ শহর মেগা সিটি হিসেবে সহজে শনাক্ত করা যায়।
নাগরিক সেবা ও সামাজিক অবকাঠামো: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গণপরিবহন, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ এবং অন্যান্য নাগরিক সেবা শহরের গুরুত্ব নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। আধুনিক সেবা ও সামাজিক সুবিধা মেগা সিটি হিসেবে শহরকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন: মেগা সিটি হওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন