

ওষুধ থাকলেও সেগুলো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর না হওয়ায় ভবিষ্যতে মানব সভ্যতা সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘একসময় মানুষ ব্যাকটেরিয়ার কাছে পরাস্ত হতো। কারণ, তখন তাদের হাতে ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করার মতো পর্যাপ্ত ওষুধ ছিল না। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মানবজাতি আবার সেই একই সংকটে পড়তে পারে। তবে এবার ওষুধ থাকবে, কিন্তু সেগুলো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হবে না। তাই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে এখন বিশ্বব্যাপী এক মহাবিপর্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।’
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) ‘বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ আয়োজিত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে পাঠানো ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী।
বিএমইউতে গত এক বছরে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন রোগীর ৪৬ হাজার ২৭৯টি নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। যেখানে দেখা যায়, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাকের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন অ্যামোক্সিসিলিন, সেপট্রিয়াক্সজন জেনটাসমাইসিন, মেরোপেনেম, টিগেসাইসিলিনসহ বহু ওষুধ কাজ করছে না বা রোগীর দেহে রেজিস্ট্যান্স হওয়ার কারণে এসকল অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এটি রোগীর রোগ নিরাময়কে দীর্ঘায়িত করছে, এমনকি রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পরিবর্তে মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হলো হলো—যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবীর মতো অণুজীবগুলো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের মাধ্যমে (অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ইত্যাদি) আর মারা যায় না বা তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় না। ফলে সংক্রমণ নিরাময় কঠিন হয়ে পড়ে, যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি এবং চিকিৎসা পদ্ধতিকে ব্যাহত করছে। এটি মূলত ওষুধের ভুল ব্যবহার বা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘটে। যার কারণে অণুজীবগুলো নিজেদের পরিবর্তন করে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে এবং সাধারণ সংক্রমণও প্রাণঘাতী হতে পারে।
বিএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, ‘সমস্যার দায় ও সমাধানের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিতে হবে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের ক্ষেত্রে গবেষণা, গাইডলাইন প্রণয়ন, বাস্তবায়নে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিএমইউকে নেতৃত্ব দিতে হবে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা অসম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে, যেগুলো সমাধানযোগ্য নয় তারও উপায় খুঁজে বের করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের। সে দায়িত্ব পালন করে জাতিকে মানুষকে আশার আলো দেখাতে হবে।’
বিএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জনস্বাস্থ্যসম্পর্কিত এ সমস্যা মোকাবিলায় সবাইকে দেরি না করে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর), যা বর্তমানে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি। অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া, অসম্পূর্ণ ডোজ এবং প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এসব কারণে জীবাণুগুলো ধীরে ধীরে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহীম সিদ্দিক, অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান, ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত, নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান, শিশু হেমাটোলজি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল করিম, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আয়েশা খাতুন, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জান্নতুল ফেরদৌস, ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নায়লা আতিক খান, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইলোরা শারমিন ও পরিচালক হাসপাতাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইরতেকা রহমান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন