ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই দুই শতাধিক আসনে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে বিএনপি। কে কোন আসনে প্রার্থী হবেন—এই সময়ের মধ্যে দল থেকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে; অর্থাৎ গ্রিন সিগন্যাল বা সবুজ সংকেত দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো কোনো সদস্যের অভিমত, তৃণমূলে বিভ্রান্তি এড়াতে দলীয় এসব প্রার্থিতা ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ ঘোষণা দেওয়া হোক। দলের হাইকমান্ডকে এমন পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, নইলে নির্বাচনের মাঠে তারা পিছিয়ে পড়বেন। গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে না থাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকেই বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। জামায়াত এরই মধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে থাকলেও বিএনপি এখনো তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত ও ঘোষণা করেনি। তবে প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এমন অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে বিএনপি যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা গত মাসে তাদের প্রতিবেদনে দ্রুত সময়ে প্রার্থিতা ঘোষণা করতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেন। এ ছাড়া দলের তৃণমূল পর্যায় থেকেও এমন পরামর্শ আসে।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল’ প্রস্তুত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, সারা দেশে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটির অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে একটি দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তেমনি তারা ওই দলের সঙ্গে জাড়িত। এমনটা হলে নির্বাচনে তারা একটা বিশেষ দলকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখতে পারেন। এতে করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই সতর্কভাবে দল-মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে যেন এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ লক্ষ্যে তারা বুধবার (আজ) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাবেন। এখন থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা চায় বিএনপি।
এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বিএনপির বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন, বিশেষ একটি দলের পক্ষে কাজ করছেন। এসব ঘটনায় বিএনপি উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগের কথা জানাতে এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।
মন্তব্য করুন