ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের চার বছর পূর্তিতে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, যারা ভোট দিয়ে আমাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সবার গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করেছি।
সোমবার (১৩ মে) দুপুরে গুলশান নগরভবনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের ও কাউন্সিলরদের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, নির্বাচনের আগে নগরবাসীর প্রতি আমরা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম। আমার নির্বাচনী ইশতেহার ছিল সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলার। নগরবাসী আমাকে তাদের সেবক নির্বাচন করেছেন। আমি পুরোটা সময় চেষ্টা করেছি আমার প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের। বিগত চার বছরে যতগুলো সফলতা রয়েছে তার সব কৃতিত্ব নগরবাসীর। তাই আজ ভালো-মন্দ কাজের বিচারভার প্রিয় নগরবাসীর হাতে তুলে দিলাম।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দুই বছরে দুই লাখ গাছ রোপণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। গত বর্ষায় (জুন- অক্টোবর) ফুটপাত, মিডিয়া, পার্কসহ, অন্যান্য খোলা জায়গায় প্রায় ৯০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। অনেকেই হয়তো দেখে থাকবেন গাছগুলো বড় হচ্ছে। কিছু গাছ নষ্ট হয়েছে। এই বর্ষায় আমরা সেটা পরিবর্তন করে দেবো। পাশাপাশি ডেঙ্গু সচেতনতায় কাউন্সিলদের নেতৃত্বে নাগরিক কমিটি গঠন (প্রতি কাউন্সিলরকে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ) এলাকাভিত্তিক জনসংযোগ ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিশেষ অভিযান এবং চার কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। কিউলেক্স মশা নিধনে ডিএনসিসি এলাকার খাল ডোবা ও জলাধারের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে।
মেয়র বলেন,
মশক নিধনের অন্যতম একটি ন্যাচার বেজড সলিউশন বিটিআই। আমরা গতবার ডেঙ্গুর মৌসুমে বিটিআই এনেছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল। আমরা তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। এবার ডিএনসিসি নিজেই বিটি আই আমদানি করবে। মন্ত্রিপরিষদের সভায় ইতোমধ্যে এটি পাস হয়েছে। বর্ষাকালে যত্রতত্র পরে থাকা বিভিন্ন ময়লা যেমন টায়ার, দইয়ের বাটি, আইসক্রিমের কাপ, কোমড, পলিথিন ইত্যাদি পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি নগদ টাকায় কিনে নেওয়া হচ্ছে। যাতে করে ডেঙ্গু মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, দুর্গম এলাকায় কার্যকরভাবে লার্ভিসাইট প্রয়োগের জন্য বাফেলো টার্বাইন মেশিন ব্যবহার করা হয়। বড় ডোবা, জলাশয়ের মতো জায়গায় লার্ভাসাইডিং করতে মশককর্মীরা যেতে পারেন না। সেসব জায়গায় বাফেলো টার্বাইন ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও গাবতলীতে ৪০ একর এবং মহাখালী টার্মিনালে ব্যাপক উচ্ছ্বেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বসিলার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন অবৈধ ফার্ম উচ্ছ্বেদ করে দুই একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। মগবাজার ফ্লাইওভারের ন্যায় মহাখালী ফ্লাইওভারের পুরোটাই (নিচে) দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো অবকাঠামো সাজানো হবে।
তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার টন বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহন করে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে ব্যবস্থাপনা করছে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন হবে। একইসঙ্গে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রেডে যুক্ত হবে। গত সপ্তাহ থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মূল প্লান্ট নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ডিএনসিসির ২৪টি পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করে এ বছর সবগুলো পার্ক ও খেলার মাঠ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। মিরপুরের প্যারিস মাঠটি উদ্ধার করে ২২শ ট্রাফ বালু ফেলে ওই এলাকার শিশু কিশোরদের জন্য খেলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন শতশত ছেলে মেয়ে খেলাধুলা করে। পাশাপাশি লাউতলা খালের পাড়ে অবৈধ মার্কেট ও ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছ্বেদ করে পার্ক নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের জুন মাসে ৪৬ হাজার ৮শ ৯৯টি সড়ক বাতি লাগানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ডিএনসিসি কাউন্সিলরদের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে দেখা যায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাতি নষ্ট ছিল। পরবর্তীতে আমরা সেই সাড়ে তিন হাজার বাতি প্রতিস্থাপন করে দিয়েছি। এছাড়া ২ হাজার বাতি নিয়মিত মেইনটেনেন্স রাখতে হচ্ছে। কোথাও বাতি নষ্ট হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে। বাতিগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০ হাইড্রলিক গাড়িও আমদানি করা হয়েছে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ওয়ান ওয়ে রোড সার্ভে শেষে সামনের মাসেই বনানীতে ওয়ান ওয়ে রোড চালু হতে যাচ্ছে। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস, গ্লোবাল রোড সেফটি এবং ওয়ার্ল্ড রিসোর্চেস এ কাজটির জন্য সহযোগিতা করছে। এ অঞ্চলে যানজট নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া অনস্ট্রিট স্মার্ট পার্কিং রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রাথমিকভাবে গুলশানের আটটি রাস্তার ১৯৮টি অনস্ট্রিট পার্কিং চালু করা হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে এই সেবা নেওয়া যায়। অ্যাপটি ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার যানবাহন পার্ক করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসানসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা।
মন্তব্য করুন