কক্সবাজারের পেকুয়ার সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের বিচার ও চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২১ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় পেকুয়া এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়কের চৌমুহনী পয়েন্টে মগনামার আমজনতা দীর্ঘ লাইন ধরে এ মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের অত্যাচারের শাস্তির দাবিতে ও তার বাহিনী মগনামার ত্রাস বহুল আলোচিত হত্যার ঘটনার উস্কানিদাতা মানবতাবিরোধী দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা গোলাম আজমের দেহরক্ষী মগনামা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ফাঁসির দাবি তুলে বক্তব্য দেন।
মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের হাতে নির্যাতিত উপজেলা ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজম, সাবেক ছাত্র নেতা মমতাজ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ছাত্র নেতা কফিল উদ্দিন বাহাদুর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্যাতিত সোলতান মোহাম্মদ রিপন, তাঁতী লীগের সভাপতি জায়েদ মোশেদ, যুবলীগের মোস্তাকসহ শত শত ভুক্তভোগী।
এ সময় ভুক্তভোগী মৃত আবু ছৈয়দের স্ত্রী বুলবুল বলেন, আমার স্বামীকে সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিমের হকুমে তার সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে হত্যা করে পা কেটে উল্লাস করে। আমি যখন মামলা করতে থানায় যাই তখন সাবেক এমপি জাফর আলম আমাকে হুমকি দেয় এবং ওসিকে মামলা না নিতে বলে। তিনি আরও বলেন, যখন আমার স্বামীকে হত্যা করা হয় তখন আমার ছেলের বয়স তিন বছর। আমার ছেলে এখন বাবাকে খোঁজে আর কান্না করে। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার ও ওয়াসিমের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ নেতা ও ভুক্তভোগী রিপন চৌধুরী বলেন, গত পাঁচ বছরে আমি ওয়াসিমের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। আমাকে অহেতুক হত্যা মামলা ও অস্ত্র দিয়ে পুলিশের হাতে আটক করিয়ে জেলে পাঠায়। এমনকি আমাকে পিঠিয়ে দুই পা ভেঙে দেয়। দীর্ঘ ৮ মাস জেলভোগ করে বের হই। আমি এ ত্রাসের সৃষ্টিকারী ওয়াসিমের বিচার ও ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
ভুক্তভোগী মৎস্যচাষি জিয়াবুল করিম বলেন, আমি মগনামার মৎস্য প্রজেক্ট বেঙ্গল টিতে মাছ চাষ করতাম। একদিন সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের মৎস্য প্রজেক্ট থেকে দিনদুপুরে মাছ লুট করে। তার প্রতিবাদ করায় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘর ছাড়া করেছে। গত ৫ বছরে আমি ঘরে আসতে পারি না। আমার পরিবারের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় তারা।
আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক বলেন, আমি বিদেশ ছিলাম, দেশে এসে যখন মৎস্য চাষ ও লবণ ব্যবসা শুরু করি তখন এই চেয়ারম্যান ওয়াসিম আমাকে কল করে তার বাহিনীতে যোগ দিতে বলে। যখন আমি তার কথায় সাড়া দেই না তখন সে আমার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেয়ে আমাকে হত্যার হুমকি দেয় এবং বিভিন্ন মামলায় আসামি করে ও ৪টি অস্ত্র দিয়ে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অন্যায়ভাবে আমাকে ও আমার পরিবারকে অত্যাচার করেছে সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম।
মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই। গত ৫ বছরে এমপি জাফর ও তার বাহিনী সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম সন্ত্রাসী দিয়ে আমার ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমাকে ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে ৪টি মামলা দিয়েছে। এসব বিষয়ে থানা কোর্টে গিয়ে মামলা করতে গেলে এমপি জাফরের অনুমতি ছাড়া মামলা নিত না। এ ওয়াসিম মগনামার মানুষের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে গত ৫ বছর অনেক অত্যাচার করেছে। তার অত্যাচারে আমিসহ সাধারণ মানুষও রেহায় পায়নি। তার নেতৃত্ব চলে দখল ও অত্যাচার। সে কয়েকটি ঘটনার জন্ম দিয়ে এলাকাকে প্রশাসনসহ সর্বমহলে আলোচিত করেছেন। সে দমক ও হুমকি দিয়ে নিরীহ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছিল। কিন্তু এসবের প্রতিবাদ করলে করা হতো হত্যা বা অস্ত্র মামলা। এসব বিচারের দাবিতে আজকের এ মানববন্ধন। তার অবৈধ দখল ও এমপি জাফরের অত্যাচার থেকে রেহায় পেতে আজ এই আসনের সংসদ সদস্য পরিবর্তন হয়েছে মানুষের ভোটে।
প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে শপথ নেওয়ার ৪ মাস পর আমাকে ও আমার চার ভাইকে অস্ত্র দিয়ে আটক করায় এমপি জাফর। পরে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সাজা খেটে আমি আপনাদের সেবা করতে পুনরায় ফেরত আসি। তারপরও এমপি জাফর আমাকে নানাভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। এমপি জাফর পেকুয়া বাজারে অনেক নিরীহ লোকজনের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বহুতল মার্কেট করেছে। মালিকরা থানা ও কোর্টে গেলে এমপি জাফরের কারণে মামলা নিত না। এমপি জাফর আলমের ইন্ধনে মগনামার ওয়াসিম তার এলাকার নিরীহ লোকজনকে নানাভাবে নির্যাতন করত। সে কারণেই আজ এলাকার মানুষ সোচ্চার হয়েছে প্রতিবাদ করতে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আমি সাবেক এমপি জাফর আলম ও ওয়াসিমের বিচার দাবি করছি।
মানববন্ধন শেষে উপজেলা ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজমের নেতৃত্বে সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের বিচার ও চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন