জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র একটি পক্ষ কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম।
শনিবার (২ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে জুলাই আন্দোলনের শহীদ আব্দুল্লাহ আল তাহির ও মুসলিম উদ্দিন মিলনের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আবু সাদিক কায়েম বলেন, সরকারকে হুঁশিয়ার করতে চাই, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদে শহীদদের যে আকাঙ্ক্ষা, তা যদি পরিলক্ষিত না হয়, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি যদি জুলাই সনদে না থাকে এবং জুলাই বিপ্লবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট ও ৯ দফা এবং পরবর্তী আন্দোলন সমন্বয় করাসহ সামগ্রিক বিষয়ের প্রতিচ্ছবি যদি না থাকে তাহলে এ জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র এ জাতি মেনে নেবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রথম দাবি ছিল, খুনি হাসিনা দুই হাজার ভাইবোনকে শহীদ করেছে এবং চার হাজার ভাইবোনকে পঙ্গু করেছে। গত ১৬ বছরে যতগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেগুলোর বিচারই স্বাধীন বাংলাদেশে হোক। কিন্তু এক বছরেও কোনো রায় দেখতে পাইনি, যেটা আমাদের অনেক বেশি হতাশ করছে। শহীদদের রক্তের উপরে যে অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছি তারা জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করছে না বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। তারা অনেক বেশি ভোগ বিলাসে ব্যস্ত আছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে ব্যর্থ দাবি করে ছাত্রশিবিরের এ নেতা বলেন, আমরা যাদেরকে ছাত্র উপদেষ্টা বানিয়েছি তাদের ব্যর্থতা দেখতে পাচ্ছি। তাদের ‘হিস্টোরিকাল করাপশন’ দেখতে পাচ্ছি। পুরো জুলাইকে একটি নির্দিষ্ট বর্গ এবং গ্রুপের মধ্যে নিয়ে যাওয়া দেখতে পাচ্ছি। জুলাইয়ের যে সার্বজনীনতা ও ঐক্য ছিল এটা নষ্ট করার জন্য দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা রয়েছে তাদের বিভাজনমূলক আচরণ দেখতে পাচ্ছি। যেটা পুরো জাতিকে অনেক বেশি হতাশ করছে।
সাদিক বলেন, এক বছরে এখনো পুলিশ সংস্কার হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টগুলোতে ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত দাবির প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। সকল অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করে এবং সবার মতামত যেন এ জুলাই সনদে প্রতিফলিত হয়। তাতে যেন শহীদদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয় সে প্রত্যাশা আমাদের থাকবে।
জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধারা বিষোদগার করছে উল্লেখ করে ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, আমরা আশা করেছিলাম- জুলাই বিপ্লবে যারা আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন, জুলাই পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু ‘জুলাই’ ও ‘বাংলাদেশ’ এ দুই প্রশ্নে আমরা সবাই এক সঙ্গে থাকব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এখন আমরা দেখছি আমাদের সহযোদ্ধারা ক্রমাগতভাবে বিষেদাগার করছেন। তবু আমরা তাদের প্রতি বিদ্বেষ নয়, ভালোবাসা দিয়েই তাদের ও জাতির মন জয় করতে চাই
দলীয় পরিচয়ে শহীদদের বিভাজিত করলে তাদের সম্মানহানি হয় জানিয়ে সাদিক কায়েম আরও বলেন, বিপ্লবে আমরা যখন একত্রিত হয়েছি কেউ তখন রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে যায়নি। আমরা মজলুম ছিলাম জালিম হাসিনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছি। তখন আমরা দেখিনি বামপন্থি, ডানপন্থি নাকি ইসলামপন্থি। আমরা সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে জালিম হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি এবং শহীদেরা আমাদের পথ দেখিয়েছে। শহীদরা সবার কিন্তু আমরা যদি তাদের দলীয় পরিচয় আইডেন্টিফাই করি তাহলে তাদের সম্মানহানি করা হয়। শহীদরা সকল দলের ঊর্ধ্বে তারা জাতির সম্পদ। ইসলামী ছাত্রশিবির জুলাইয়ের সকল শহীদকে ধারণ করতে চায়। শহীদরা যে আকাঙ্ক্ষার জন্য জীবন দিয়েছে সে আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- রংপুর মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা, সেক্রেটারি আনিসুর রহমান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সুমন সরকার, জেলা সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ মহানগর, প্রচার সম্পাদক আতিকুজ্জামান আতিকসহ মহানগর ও জেলা শাখার নেতারা।
মন্তব্য করুন