চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা দেওয়ায় মামলা : গ্রেপ্তার ৫

স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নির্বাচনী প্রচারণা। ছবি : কালবেলা
স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নির্বাচনী প্রচারণা। ছবি : কালবেলা

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নতুন ভাণ্ডারদহ এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের দিলীপ কুমার আগরওয়ালার প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে ইউপি চেয়ারম্যান সদর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমারের গাড়িবহর গতিরোধ করে প্রার্থীকে লাঞ্ছিত ও অস্ত্র প্রদর্শন করে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হাসানুজ্জামান মানিকসহ নৌকার চার সমর্থককে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছান চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমানসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা শহরসহ শংকচন্দ্র ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী কুতুবপুর ইউনিয়নজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন ভাণ্ডারদহ গ্রামে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম জোর টহলে আছে।

স্থানীয় লোকজন ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা শেষে ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করতে নেতাকর্মীদের সাথে গাড়িবহর নিয়ে নতুন ভাণ্ডারদহ এলাকায় যাচ্ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এ সময় নির্বাচনী অফিসে পৌঁছানোর আগেই তার গাড়িবহর গতিরোধ করা হয়। গাড়ি আটকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে নৌকার সমর্থকরা। পরে প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা গাড়ি থেকে নামলে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। খবর পেয়ে সরোজগঞ্জ ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।

ততক্ষণেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেখানে সদর থানার একাধিক টিম পৌঁছায়। পরে ঘটনাস্থলে যান জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন প্রশাসনিক কর্তারা।

সেখান কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হাসানুজ্জামান মানিক, ভাণ্ডারদহ গ্রামের ফারুক হোসেন, সুমন ও শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের জুগিরহুদা গ্রামের হাফিজুর রহমানকে পুলিশ হেফাজতে থানায় নেওয়া হয়। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফরোজা পারভীন, জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলিজা খাতুন ও নির্বাচনী কর্মী নাজনীন আক্তার, রাকিব, সালমান ও আফিলসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

ভাণ্ডারদহ গ্রামের আবু ছদ্দি বলেন, আমরা ঈগলের অফিসে বসেছিলাম, আমাদের প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা আসবেন। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন আমাদের অফিসের সামনে এসে উল্টাপাল্টা স্লোগান দিতে থাকে। এর মধ্যে আমাদের নেতা আসার সাথে সাথেই তারা হামলা চালায়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফরোজা পারভীন বলেন, হামলার সময় নারী সমর্থক ও নারী নেত্রীদের ওপর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালানো হয়। নারী কর্মীদের ওপর হামলার সময় অত্যন্ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন হাসানুজ্জামান মানিকসহ তার লোকজন। এসময় বেশ কয়েকটি রিকশা ভ্যান ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা অভিযোগ করে বলেন, আধা ঘণ্টা ধরে গাড়ি আটকে আমার নামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অশালীন স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। আমি গাড়ি থেকে নামলে তারা মারমুখী আচরণ করে। পরে পুলিশকে খবর দিই। প্রশাসনের কর্মকর্তারা পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, আমার ধারণা ছিল একজন প্রার্থী হিসেবে কিছুটা সম্মান পাব। কিন্তু যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাকে টানা হেঁচড়া করে ধাক্কাধাক্কি করেছে তারা। শুধু একবার নয়, দফায় দফায় আমার এবং আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি অস্ত্র প্রদর্শন করে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। এসবের নেতৃত্বে ছিলেন কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হাসানুজ্জামান মানিক।

দিলীপ কুমার আরও বলেন, প্রশাসনের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এমন ঘটনায় আমি শঙ্কিত-আতঙ্কিত। নির্বাচনের মাঠে নিরপেক্ষতা না থাকলে আমি মাঠে থাকব না।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক দল সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এদিকে রাতে দিলীপ কুমার থানায় উপস্থিত হয়ে মামলা দায়ের করেন।

সদর থানার ওসি সেকেন্দার আলী জানান, রাত অনুমান সাড়ে ৯টায় ঘটনাস্থল থেকে নৌকা প্রতীকের সমর্থক আলী আহমেদ হাসানুজ্জামান মানিক, চেয়ারম্যান, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ, চুয়াডাঙ্গাসহ চারজন নেতাকর্মীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এ বিসয়ে ঈগল প্রার্থীর সমর্থকের অভিযোগের ভিত্তিতে এজাহারনামীয় ২১ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১০০/১২০ জনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার মামলা করেন।

মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. আলী আহম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিক (৪০), আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৪৫), মো. সুমন হোসেন (২১), মো. হাফিজুর রহমান (৪৫), জেহের আলী (২২)।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ দিনের সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাড়ল বাস ভাড়া

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

জুলাই সনদে মিত্রদের ‘কাছাকাছি মতামত’ দেওয়ার পরামর্শ বিএনপির

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

১০

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

১১

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

১২

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

১৩

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১৪

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১৫

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১৬

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১৭

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১৮

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৯

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

২০
X