উত্তরাঞ্চলে কয়েক দিন ধরেই সূর্য যেন আগুনের ফুলকি ছড়াচ্ছে। ফলে রাজশাহীতে বিরাজ করছে মরুভূমির মতো তপ্ত আবহাওয়া। তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় সকাল থেকে তেঁতে ওঠা রোদ দিনভর ছড়াচ্ছে আগুনের হল্কা। ঠাঁ ঠাঁ রোদে তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে উঠেছে পথ-ঘাট। দুপুর গড়াতেই তাপমাত্রার পারদ ঠেকেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গেল কয়েক দিন ধরেই রাজশাহীজুড়ে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। প্রখর রোদ ও প্রচণ্ড গরমে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে মাইকিং করে সতর্কও করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২২ এপ্রিল) ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার (২১ এপ্রিল) ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে, গত বুধবার থেকে রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বুধবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে পহেলা এপ্রিলের পর রাজশাহীতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু গেল সপ্তাহ থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এ ছাড়া ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠলেই তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এদিকে, তীব্র খরার কবলে পড়ে হু হু করে নেমে যাচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। অবর্ণনীয় এক নিদারুণ কষ্টে একেকটি দিন-রাত পার করছেন এ অঞ্চলে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষ। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিও গরমে হাঁসফাঁস করছে। অচল হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বৃষ্টির জন্য চারদিকে হাহাকার পড়ে গেছে। দুর্বিষহ গরমে খা খা করছে মহানগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়ক। বাড়ছে হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। গেল শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে অধিকাংশ মসজিদেই চলমান তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গেল দুই দিন থেকে রাজশাহীতে তাপপ্রবাহ নিয়ে সতর্ক থাকতে মাইকিং করেছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। তারা এই গরমে হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, সামান্য বিরতি দিয়ে থার্মোমিটারে তাপমাত্রার পারদ এবার ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছে। রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল দীর্ঘ ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে ‘বজ্রমেঘ’ তৈরি হলে কেবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দেবে। আর যদি এটা স্থানীয়ভাবে তৈরি না হয় তাহলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় না। আর এখন বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা আপাতত ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই ওঠানামা করবে।
মন্তব্য করুন