রাজশাহীতে এক নারী চিকিৎসককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই সময় ওই চিকিৎসকের মাকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। নারী চিকিৎসকের সঙ্গে তার বাবাকেও তুলে নেওয়া হয়েছিল।
পরে রাস্তায় সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা এলাকায় তাকে ফেলে গেছে অপহরণকারীরা। এরই মধ্যে থানা পুলিশ ভুক্তভোগী চিকিৎসকের বাবাকে তার স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করেছে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোরে এ অপহরণের ঘটনা ঘটে। অপহৃত চিকিৎসকের নাম শাকিরা তাসনিম দোলা (২৬)। তিনি রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে সম্প্রতি ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) শেষ করেছেন। তার বাবা আবু তাহের খুরশিদ বকুল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
বকুল তার পরিবার নিয়ে নগরের চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় নিজের বাসায় থাকেন। পাঁচতলা বাসার দ্বিতীয় তলায় তারা থাকেন। সোমবার ভোরে এ বাসা থেকেই বাবা-মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
সন্ধ্যা ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই নারী চিকিৎসকের বাবা রাজশাহীতে ফিরে আসেননি। তবে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার ওসি এনামুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘বিকেল চারটার দিকে ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসকের কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন এসে তার বাবাকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে নিয়ে গেছে।’
আর বাবা-মেয়েকে তুলে নেওয়ার সময় দেয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়ায় আহত শাকিরার মা রেহেনা পারভীন ওরফে শিউলি (৫১) গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালেই কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য তার স্বামী মসজিদে যান। এ সময় তিনি বাইরের ফটকে তালা লাগিয়ে চাবি সঙ্গে নিয়ে যান। তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর অপহরণকারীরা তার স্বামীকে জিম্মি করে। তারা চাবি নিয়ে এসে বাইরের ফটক খুলে ভেতরে ঢোকে।
এ সময় অপহরণকারীরা তাকে ধরে দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে দেয়। মাথায় তালা দিয়ে আঘাত করে। এরপর তারা তাকে বিছানায় ফেলে গলা চেপে ধরে। তিনি পড়ে গেলে বাবা-মেয়েকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। তারা চলে যাওয়ার পর খবর পেয়ে রেহেনা পারভীনের আত্মীয়-স্বজন এসে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
রেহেনা পারভীন জানান, তার স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মাইক্রোবাসে চালকসহ অপহরণকারীরা ছয়জন ছিলেন। তাকে তোলার পরই মুখবেঁধে ইনজেকশন পুশ করা হয়। তার চেতনা ফিরে এলে তাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়।
সলঙ্গা থানার ওসি এনামুল হক বলেন, দুপুর ১২টার দিকে সলঙ্গা থানার ভেংড়ি এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। একই মাইক্রোবাসে বাবা ও মেয়েকে অপহরণকারীরা তুলে নিয়ে এসেছিল। তারা মেয়েকে নিয়ে গেছে। রাজশাহী থেকে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন এসেছিল। তাদের কাছে বিকেল চারটার দিকে ভিকটিমকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিয়ার রহমান জানান, ‘অপহরণের মূলহোতা হিসেবে তারা তানভীর খান তাজ রওশন আলম নামের একজনের নাম পেয়েছেন। কেউ বলছেন, এই ছেলের সঙ্গে নারী চিকিৎসকের বিয়ে হয়েছিল। কেউ বলছেন, বিয়ে হয়নি। তার নেতৃত্বেই ওই চিকিৎসককে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে পরিবার বলছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওই চিকিৎসকের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় পরিবার মামলা করতে চায়। এজাহার দিলে মামলা রেকর্ড করা হবে।’
মন্তব্য করুন