উত্তরার আকাশে ভেসে বেড়ানো বিমানের আকস্মিক দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের করুণ পরিণতি হৃদয় ভেঙে দিয়েছে গোটা দেশকে। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা যেন হৃদয়ে তীব্রভাবে অনুভব করেছেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশিও। নিজেও দুই সন্তানের জননী। তাই তিনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। কোমল প্রাণগুলোর এমন নির্মম এই বিদায় তাকে ভীষণভাবে আঘাত করেছে। আর এই ব্যক্তিগত শোকের অনুভূতি তিনি ভাগ করে নিয়েছেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে। যেখানে প্রতিটি শব্দে যেন কেঁদে উঠেছে এক মায়ের হৃদয়।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ফেসবুকে শাহনাজ খুশি লিখেছেন, ঢাকা শহরে সন্তান জন্ম দেওয়া বাবা-মা সবচেয়ে বড় অসহায়। কারণ তারা সার্বক্ষণিক এক যুদ্ধের মধ্যে থাকেন। আমার ধারণা, কোনো মানুষ কাল রাতে ঘুমাতে পারেনি। সব মা-বাবা এবং অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ অসহায়ভাবে জেগে ছিল। সবার গলার কাছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কালো ধোঁয়া দলা পাকিয়ে আছে, সেটা না পারা যায় গিলতে, না পারা যায় সহ্য করতে।
তিনি আরও লিখেছেন, ঢাকা শহরে সন্তান জন্ম দেওয়া মা-বাবা সবচেয়ে বড় অসহায়। কেউ কল্পনাও করতে পারে না সেই মা-বাবার সার্বক্ষণিক যুদ্ধ। এ ছাড়াও যে মা-বাবার অর্থনৈতিক হিসাব কষে চলতে হয়, রিকশা, সিএনজি, বাসে চড়তে হয়, তাদের জীবন আরও দ্বিগুণ কঠিন।
বাচ্চার জন্মের পর থেকেই ভাবতে হয়, কোন স্কুলে পড়াতে পারব, কীভাবে ভর্তি করব, বাসা সেখান থেকে কতটা দুরে, যাওয়া আসা কীভাবে হবে, উপার্জনের সঙ্গে মিলবে কি না সব ইত্যাদি বিশদভাবে।
ভর্তি করতে পারলে এক রকম, না পারলে অন্য রকম কষ্ট। স্কুল, কোচিং বিজনেস, সামাজিকতা, ঘরকন্না সব মিলিয়ে জীবনের সব দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। সন্তানের প্রয়োজনে তখন হয় মা বাবার সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত। পিতামাতা হওয়ার অপার স্বপ্নের আনন্দ স্কুল-কলেজ-কোচিং এর টাকা গুনতে গুনতে ঝাপসা হয়ে যায়।’
অভিনেত্রী আরও লেখেন, সব মা-বাবারই যুদ্ধ করতে হয়; কিন্তু ঢাকা শহরের মা-বাবার জীবনে সন্তান ছাড়া কোনো স্পেস নেই। তাদের নানান দুর্ভাবনার মধ্যে কিছুক্ষণের ভাবনার থেকে মুক্তির জায়গা স্কুল। সেখানে বাচ্চাদের দিয়েই কেউ কাজে যায়, বাজারে যায়, ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে দৌড়ে সব দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা করে, অতঃপর আবার দৌড়ে স্কুলে-কোচিংয়ে যায়।
‘এ বাঁচার মানে কেউ বুঝবে না! কেউ জানে না মা-বাবার সন্তানই কোনো পূর্ণতা— কি অপার শূন্যতা! অল্প কিছুদিনের মধ্যে বরাবরের মতোই সবাই সব ভুলে যাবে, স্বাভাবিকভাবেই চলবে সব। শুধু মা-বাবার বুকেই জ্বলবে এ আগুন আমৃত্যু— মাইলস্টোন স্কুলের ধোঁয়া তাদের নিঃশ্বাস-চোখ থেকে কোনোদিন সরবে না! আহা রে আমাদের কলিজা ছেঁড়া ধন! হায় রে আমাদের মা-বাবা হওয়ার আজন্ম অসহায়ত্ব!’
মন্তব্য করুন