আগামী ৭ দিনের মধ্যে ‘দৈনিক আমার দেশ’ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান ও মিসেস মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দেওয়া ‘ফরমায়েশি’ সাজার রায় বাতিল এবং প্রেস খুলে দেওয়াসহ পত্রিকা প্রকাশের সব অন্তরায় দূর করার জন্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপিপন্থি সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতারা। একইসঙ্গে আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে কর্মীদের দীর্ঘ প্রায় একযুগ বেকার রাখা এবং পত্রিকার প্রেস জব্দ করে রেখে যন্ত্রপাতি বিনষ্ট ও লুটপাটের ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিও জানান তারা।
শনিবার (১৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘আমার দেশ পরিবার’ আয়োজিত এক সমাবেশে নেতারা এ দাবি জানান।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, দৈনিক আমার দেশ গণমানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল। মাহমুদুর রহমানের সাহসী নেতৃত্বে পত্রিকাটি যখন জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে উঠে, তখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার তা বন্ধ করে দেয়। মাহমুদুর রহমানকে বারবার গ্রেপ্তার, রিমান্ড, হামলা-মামলা করে তার জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। মাহমুদুর রহমানের মতো নির্ভীক সম্পাদক সমসাময়িককালে আর দেখা যায়নি।
ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, গণঅভ্যুত্থানে পালাতে বাধ্য হওয়া আওয়ামী সরকার আপনার বিরুদ্ধেও অনেক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা পেশাজীবী ও সাংবাদিক সমাজ প্রতিবাদ জানিয়েছি। আপনার সাজা বাতিল হয়েছে, মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। আশা করি মাহমুদুর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা ও মামলা বাতিলে আপনি উদ্যোগ নেবেন। দৈনিক আমার দেশ প্রকাশের পথ সুগম করবেন।
বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, মাহমুদুর রহমান ও আমার দেশ পত্রিকার অপরাধ হচ্ছে তারা সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করেছেন। সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের সংবাদ প্রকাশ করেছে। এ জন্য আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে তাদের। তিনি অবিলম্বে সাজা বাতিল করে মাহমুদুর রহমানের দেশে ফেরার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও আমার দেশের নগর সম্পাদক এম আবদুল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তাদের গদি পাকাপোক্ত করার জন্য প্রথমেই দৈনিক আমার দেশকে টার্গেট করে। কারণ, আমার দেশ সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দুর্নীতি-লুটপাটের সংবাদ প্রকাশ করছিল।
সভাপতির বক্তব্যে আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের নির্মম শিকার। এমন জুলুম কোনো সম্পাদক বা সাংবাদিকের ওপর হয় না। তাকে হত্যা করার জন্য বারবার হামলা করা হয়েছে। ১২৪টি মামলা দিয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরিয়েছে। বানোয়াট অভিযোগে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হওয়ার পরও মাহমুদুর রহমান প্রতিকার না পাওয়া দুঃখজনক। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে মাহমুদুর রহমানের সাজা বাতিল, তার স্ত্রীর সাজা বাতিল, মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং প্রেসের তালা খুলে দেওয়ার দাবি জানান। একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এতে আরও বক্তব্য দেন বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, বর্তমান সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শিক্ষক নেতা ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কবি হাসান হাফিজ, খুরশীদ আলম, মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ইলিয়াস খান, মোরসালিন নোমানী, বাছির জামাল, পেশাজীবীদের মধ্যে কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন