কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ এএম
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলের উপর চলা পাশবিক নির্যাতনের করুণ কাহিনি

মায়ের সঙ্গে সানিয়াত। ছবি : সংগৃহীত
মায়ের সঙ্গে সানিয়াত। ছবি : সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে আদালত চত্বরে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় এক সন্তানকে পিঠে হাত চাপড়ে মায়ের ভরসা দেওয়ার একটি ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়েছিল। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সেই তরুণ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলে সানিয়াত। আদালত চত্বরে মা ও সন্তানের এমন দৃশ্য সবার প্রশংসায় ভাসছিল। এবার সামনে এসেছে তার ওপর নির্যাতনের নির্মম বর্ণনা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ফরিদ উদ্দিন রনি (Farid Uddin Rony) নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক পোস্টে নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

পোস্টে বলা হয়েছে, সানিয়াতের চেহারা মোটামুটি আপনাদের কাছে পরিচিত। আদালতে তাকে যেদিন তোলা হয়, সেদিন প্রিজন ভ্যানে উঠানোর আগ মুহূর্তে আন্টি (তার মা) পেছন থেকে এসে তার পিঠ চাপড়ে ভরসা দেওয়ার সেই মুহূর্তের ভিডিয়োটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সবার প্রশংসায় ভাসছিল আন্টি এবং সানিয়াত। বাট এর পর থেকে সানিয়াতের সাথে যা ঘটেছিল তার বর্ণনা শুনলে আপনাদের গা শিউরে ওঠবে।

ফরিদ উদ্দিন রনি লিখেন, রিমান্ডে প্রতিটি দিন তার জন্য ছিল জাহান্নাম। সে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রতিনিয়ত মরার জন্য দোয়া করতো। রাত আড়াইটা বাজে আন্টিকে (তার মাকে) কল দিয়ে অন এয়ারে রেখে সানিয়াতকে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে আর তার আর্তনাদ শোনানো হচ্ছে। ভাবতে পারেন? মাকে কলে ওপাশে রেখে ছেলেকে নির্মম টর্চার করা হচ্ছে, এটা কোনো মায়ের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব?

শুরুর ঘটনা বলি— সানিয়াতের মা অসুস্থ থাকায় তার বাবা হাসপাতালে নিয়ে যায় মাকে। ছোট ভাইকে নিয়ে বাসায় ছিল সানিয়াত। তার ছোট ভাই আবার ডাউন সিন্ড্রোমের রোগী। রাতের বেলা পেস্ট্রি খাওয়ার আবদার করে। ডাউন সিন্ড্রোমের রোগীদের আবদার তৎক্ষণাৎ পূরণ না করলে এরা অস্থির হয়ে যায়। সানিয়াত ছোট ভাইকে শান্ত করতে রাত একটার দিকে বাসা থেকে বের হয় পেস্ট্রি কিনতে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে 'উডেন স্পুন' নামক একটি খোলা দোকান পেয়ে ঐখানে ঢুকে।

কেক নিয়ে দোকান থেকে বের হতেই ডিবি'র জ্যাকেট পরা একদল তাদের ঘিরে ধরলো। নামটাম জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঘাড় ধরে গাড়িতে তুলে ফেলে। সানিয়াত টেনশন করছিল তার ছোট ভাইকে নিয়ে। তাকে দেখভাল করবে কে! তার বাবার খোঁজে ডিবি তাদের গাড়িতে করেই হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে তার মাকে ভর্তি করানো হয়। সেখানে গিয়ে তার বাবাকে পেল না। মায়ের রুমে নার্সরা ঢুকতে দিল না ডিবিকে। পরে সানিয়াতকে নিয়ে চলে যায়।

তিনি লিখেন, তার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করা হয় তারেক রহমানের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। রামপুরা থেকে উত্তরা সব সহিংসতার নেতৃত্ব দিয়েছে সে—এটা জোর করে স্বীকারোক্তি নিতে চাইল।

এদিকে সানিয়াতকে কোথায় নিয়ে গেল তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিলো না মা-বাবা। এক দিন পর তার মা ঢাকা মেডিকেল মর্গে গিয়ে তার লাশ খোঁজে। কোথাও সানিয়াতকে দেখতে না পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর আদালতে খোঁজ নিতে যান।

সানিয়াতকে ওই দিনেই আদালতে তোলা হয়। পাঁচ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। আদালত থেকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময়ই তার মা দেখতে পায় তাকে। তিনি পেছনে থেকে দৌড়ে গিয়ে পিঠে চাপড়ে তাকে সাহস দেয়।

তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তো অনবরত টর্চার চলছেই, নতুন করে তার মায়ের সাথে এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায় ডিবি। বেড়ে যায় টর্চারের মাত্রা। তাকে ঝুলিয়ে উল্টো করে দৈনিক ১৫-১৬ ঘণ্টা করে টর্চার করেছে। তার শরীরের নিচের অংশ ফুলে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। চিৎকার করলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিত। বাঁচার একমাত্র উপায় ছিল সেখানেই পড়ে থেকে চুপচাপ মারধর সহ্য করা।

তিনি আরও লিখেন, তার নখের ওপর প্লায়ার ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল। সে একটু একটু হাঁটতে পারতো, এটা দেখেই হারুন ক্ষিপ্ত হয়ে যায় কর্মকর্তাদের উপর। মানে কী মারতেছোস তোরা, ও এখনো হাঁটতে পারে কেমনে!!

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, আদালত চত্বরে মায়ের ভিডিওর কথা বলেই তাচ্ছিল্যে করে মারধর শুরু করতো। পানি খেতে চাইলে, পানি তো দিতো না বরং শাস্তি হিসেবে তাকে দুইজন লোকের সাহায্য হাঁটতে বাধ্য করে।

ভিডিওর কথা সানিয়াত কিছু জানতো না। যখন সে জিজ্ঞেস করতো, কীসের ভিডিও? শুরু করতো আবার টর্চার। তখন উপহাস করে বলতো, হারুন স্যার তোমার জন্য অনেক কিছু পরিকল্পনা করেছে। তুমি এখানে অনেক দিন থাকবে।

কখন রাত কখন দিন, কিছুই বুঝতো না। কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে রাখা হতো। যখন ইচ্ছে তখন এসেই মারধর শুরু করতো।

ফরিদ উদ্দিন রনি লিখেন, কিছুদিন আগে দেখেছি রাজনৈতিক কোনো কোনো নেতা আগ বাড়িয়ে ক্ষমার কথা বলায় আওয়ামী লেসপেন্সাররা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে। কেউ কেউ পুনর্বাসন করতে চেষ্টাও করছে। ক্ষমা করা ভালো। এটা করতে পারাটা মহৎ হৃদয়ের কাজ। কিন্তু অপরাধ করতে করতে এমন পর্যায় চলে যাওয়ার পর যার জন্য আর ক্ষমা অবশিষ্ট থাকে না, তাকে আপনি কীভাবে ক্ষমা করার কথা বলবেন!

তিনি লিখেন, শেখ হাসিনা এবং তার লেসপেন্সাররা গত ১৬ বছর এতো সব অপরাধ করেছে যে, তাদের জন্য আর ক্ষমা অবশিষ্ট থাকে না। এদের প্রতি বিন্দুমাত্র দয়া কারো হৃদয়ে থাকতে পারে না। চোখের সামনে এদের করুণ পরিণতি না দেখতে পারলে আমাদের হৃদয় শান্ত হবে না। আমরা যারা সহপাঠী, আশপাশের মানুষকে মরতে দেখেছি; তাদের হাতে নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে দেখেছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জোবাইদা রহমানের জামিন, দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনবেন হাইকোর্ট 

ছাত্রদল নেতা সাম্যকে হত্যায় যুবদল সভাপতি-সম্পাদকের নিন্দা

সাম্য হত্যা / ক্যাম্পাসে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন সারজিস আলম

চট্টগ্রাম বন্দর নেপাল-ভুটান, সেভেন সিস্টার্সের হৃৎপিণ্ড : প্রধান উপদেষ্টা

ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

আয়নাঘর পরিদর্শন করলেন আরএফকে সেন্টারের প্রধান কেরি কেনেডি

সাম্য হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চায় ঢাবি সাদা দল

ভারতের প্রতিক্রিয়ায় জবাব দিলেন প্রেস সচিব

আ. লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে কী বলছে যুক্তরাষ্ট্র

জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিলের শুনানি চলছে

১০

সাম্য আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ছাত্রনেতা : ছাত্রদল সভাপতি

১১

চট্টগ্রাম জেলায় আবহাওয়া নিয়ে দুঃসংবাদ

১২

ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচার চাইলেন মির্জা ফখরুল

১৩

আ.লীগের খবর প্রকাশ করলে দুই থেকে সাত বছর শাস্তি

১৪

চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

১৫

গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে জাদুর মতো কাজ করবে যে খাবার

১৬

আজ জবি শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি

১৭

সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে ট্রাম্পের নতুন বার্তা

১৮

প্রধান উপদেষ্টাকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রাম

১৯

যেসব এলাকায় ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না আজ 

২০
X