কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জননিরাপত্তার অবনতি নিয়ে উদ্বেগ 

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘নিরাপত্তা ও অধিকার : কী চাই, কী পাচ্ছি? শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত। ছবি : সংগৃহীত
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘নিরাপত্তা ও অধিকার : কী চাই, কী পাচ্ছি? শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত। ছবি : সংগৃহীত

দেশে জননিরাপত্তার অবনতি এবং বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল ও গবেষণা অঙ্গনের বক্তারা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘নিরাপত্তা ও অধিকার : কী চাই, কী পাচ্ছি?’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে তারা বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে একক দলীয় উদ্যোগ যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য, রাজনৈতিক জবাবদিহিতা এবং কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার।

সংলাপে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ক্যাথরিন সিসিল জানান, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের একটি নতুন জরিপ যা ৫ থেকে ৩০ নভেম্বর, ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনার আগেই পরিচালিত, তা দেখিয়েছে, ৯২.৩ শতাংশ উত্তরদাতা সহিংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। পাশাপাশি প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা মনে করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সহিংসতা কমাতে রাজনৈতিক দলগুলো পর্যাপ্ত কাজ করছে না।

তিনি আরও জানান নভেম্বর মাসে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে ৫৪.৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বাংলাদেশ ভুল পথে এগোচ্ছে যা জুন ও জুলাইয়ের জরিপের তুলনায় উল্টো প্রবণতা। নভেম্বরের উত্তরদাতারা ভুল পথে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা বলেছেন।

ক্যাথরিন সিসিল বলেন, সাম্প্রতিক তথ্য ইঙ্গিত দেয় এসব সমস্যার সমাধানে নাগরিকদের প্রত্যাশা তীব্র। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে উত্তরদাতারা নতুন সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের কথা বলেছেন। তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় নিরাপত্তা ও সুরক্ষার সমস্যা সমাধানে নাগরিকরা আগ্রহী ও উদগ্রীব। এ প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা শোনা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, গত ২৪ বছর ধরে রাজনৈতিক সহিংসতা বিরোধীদের দমন করতে ব্যবহৃত হলেও এতে সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হয়নি। বরং সহিংসতার রাজনীতি জননিরাপত্তাকে আরও দুর্বল করেছে এবং আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সংসদীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী মনিরা শারমিন বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির বাইরে এসে মৌলিক নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা জরুরি। প্রতিশোধের রাজনীতি বন্ধ না হলে টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন বলেন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী সুশীল সমাজ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয় প্রভাব ও দুর্নীতি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সুশীল সমাজ বর্তমানে দুর্বল হলেও সরকার ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর উচিত এই খাতে কাঠামোগত সহায়তা জোরদার করা।

সবশেষে বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবং সংসদীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী এ বি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, একজন নাগরিক আজ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন না। তার ভাষায়, পুলিশি হয়রানি এখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। নিরপরাধ মানুষ যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হেনস্তার শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে কার্যকর জবাবদিহি ও পেশাদারত্ব জরুরি।

বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমা আক্তার বলেন, নিরাপত্তাহীনতার ভয় নারীদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘর ও বাইরে উভয় পরিসরেই নারীরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। নারীদের নিরাপত্তা প্রশ্নে রাষ্ট্রের নীতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ধরনের ফাঁক রয়ে গেছে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা কেবল নির্বাচনকালেই সীমাবদ্ধ থাকে। অন্য সময়ে এ বিষয়ে কার্যকর মনোযোগ দেখা যায় না। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আইন প্রণয়ন বা রাষ্ট্রীয় চুক্তির ক্ষেত্রে জনগণের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত না হওয়ায় আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সংলাপের উপসংহারে বক্তারা বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো একক দল নয়, জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা এমনভাবে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নাগরিকেরা ভয়মুক্তভাবে নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারেন এবং আইনের শাসন কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অবশেষে ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার

দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

পে স্কেল নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে যে সিদ্ধান্ত নিল কমিশন

গাড়ির গ্যারেজে ঝুলছিল চালকের মরদেহ

হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

কাউকে ভোট দেওয়া ফরজ নয়, ইমান নিয়ে মরা ফরজ : ছারছীনা পীর

ফিফা দ্য বেস্টে কাকে বেছে নিলেন মেসি?

ভারত আ.লীগের ৩০ হাজার সন্ত্রাসী পালছে : হাসনাত

বিশ্বকাপে রেকর্ড প্রাইজমানি ঘোষণা ফিফার

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা জাতীয় পার্টির, তবে...

১০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রকাশ্যে গুলি, আহত যুবক

১১

রাজশাহী বিভাগে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই : বজলুর রশীদ

১২

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করলে জনগণ ক্ষমা করবে না : ইশরাক

১৩

একসঙ্গে ছয় বিদেশি ক্রিকেটারকে দলে নিল রংপুর

১৪

বিজয় দিবসে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রদল নেতা তারিকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

১৫

খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নিরাপত্তা টিমের প্রধানের পরিচয়

১৬

ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ / মান্না ও ইসলামী ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

১৭

ফয়সালকে ভাড়া দেওয়া গাড়ির মালিক যা বললেন আদালতকে

১৮

জননিরাপত্তার অবনতি নিয়ে উদ্বেগ 

১৯

২০২৬ মৌসুম পর্যন্ত মেসির সাথে মায়ামিতেই থাকছেন সুয়ারেজ

২০
X