কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

দুই কর্মকর্তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ কর্মচারীরা

অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সালমা জাফরিন এবং যুগ্মসচিব ইয়াসমিন বেগম। ছবি : সংগৃহীত
অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সালমা জাফরিন এবং যুগ্মসচিব ইয়াসমিন বেগম। ছবি : সংগৃহীত

সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব ও এক যুগ্মসচিবের বেপরোয়া আচরণ নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তাদের দুজনের অবিরত দুর্ব্যবহারে কর্মচারীদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে এমন অভিযোগ লিখিতভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে জমা দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি। অভিযোগের কপিগুলো দৈনিক কালবেলার হাতে পৌঁছেছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের কাছে জমা দেওয়া এই অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশাসনের তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কারণ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো এমন অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের সই করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দুই কর্মকর্তার কারণে সংশ্লিষ্টদের জন্য কর্মপরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। গত এক বছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিসভা ও রিপোর্ট অনুবিভাগের বিভিন্ন শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে, যা একদিকে যেমন অগ্রহণযোগ্য তেমনি অপেশাদারিত্বের চরম দৃষ্টান্ত। এ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সালমা জাফরীন এবং মন্ত্রিসভা/রিপোর্ট ও রেকর্ড অধিশাখার যুগ্মসচিব ইয়াসমিন বেগম তাদের অধীনস্তদের প্রতি রূঢ় আচরণ করে থাকেন।

সামান্য ভুলেও কারও কারও জীবন দুর্বিষহ করছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে নানা ধরণের অগ্রহণযোগ্য আচরণ করলেও বর্তমানে প্রতিমুহূর্তে তাদের এ আচরণ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের এরূপ রূঢ় আচরণের ফলে আমরা আতঙ্কে দিন পার করছি। যা দিনে দিনে আমাদেরকে মানসিকভাবে বিপর্যন্ত করে ফেলছে। তাদের এমন অসহিষ্ণু আচরণ, ব্যক্তি আক্রমণ যেমন অপেশাদারিত্বের বহিঃপ্রকাশ তেমনি তাদের অযোগ্যতার লক্ষণও বটে।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আমাদের ওপর বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া বিরূপ আচরণের নমুনা দেখে মনে হচ্ছে যেন আমাদেরকে ‘বস্তি’ কিংবা ‘রাস্তা’ থেকে উঠিয়ে এনে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদেরকে ‘ছোটলোকের বংশধর’, কেরানির বাচ্চা’, ‘ক্রিমিনাল’, ‘বেয়াদবের বাচ্চা’ এমন অপ্রত্যাশিত এবং অগ্রহণযোগ্য শব্দচয়ন যেন তাদের জন্য নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। এছাড়া অপ্রয়োজনে ইচ্ছাকৃতভাবে অফিস সময়ের পরে অফিসে আটকে রেখে হেনস্তা করার ঘটনা প্রাত্যহিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

তারা আরও বলেন, আমাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বিভিন্ন উপনামে যেমন ‘বেবি এলিফেন্ট’, ‘হাদা-বোদা’, ‘জমিদারের বাচ্চা’, ‘নবাবপুত্র’ ইত্যাদি ডাকা প্রতিদিনকার ঘটনা। সবসময় চাররিচ্যুত করার হুমকি দেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চাকরির অযোগ্য বলে চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন। তাদের অগ্রহণযোগ্য আচরণ কর্মচারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলছে।

জানতে চাইলে সৈয়দা সালমা জাফরিন কালবেলাকে বলেন, আমি এসবের কিছু জানি না। কে অভিযোগ দিয়েছে বলতে পারছি না। অভিযুক্ত অপর কর্মকর্তা যুগ্মসচিব ইয়াসমিন বেগমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী কালবেলাকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আমরা প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে চাকরি করছি। এরকম দুর্ব্যবহারের শিকার কখনো হইনি। অতীতে কখনোই কর্মকর্তারা কর্মচারীদের সঙ্গে এমন খারাপ আচরণ করেছেন বলে আমাদের মনে পড়ে না। তাদের দুজনের দুর্ব্যবহারে আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি।

সূত্র জানায়, সৈয়দা সালমা জাফরিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালিন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নারী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের সেই তকমা ব্যবহার করেই তিনি ক্ষমতা দেখিয়ে চলেন। এমনকি তিনি তার ব্যাচমেটদের কারও কারও সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেছেন। তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি খারাপ ব্যবহার করেন বলে প্রশাসনে দুর্নাম রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও দপ্তর সংস্থার কাছে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। এ বিভাগের মেধাবী, সুশিক্ষিত, দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের কর্মকর্তাদের পদায়ন হয়ে থাকে। কিন্তু সালমা জাফরিন ও ইয়াসমিন সেই সুনাম রাখতে পারেননি।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল মজুমদার মনে করেন, কর্মস্থল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি পরিবার বা সেকেন্ড হোম। এখানে সবাই মিলেমিশে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি অধিস্তনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তা খুবই দুঃখজনক। এটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের জন্যও লজ্জার। কারণ তিনি তো সবারই অভিভাবক। সুতরাং তাকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যদি অভিযুক্তরা সত্যি সতি কর্মচারীদের ‘কেরানির বাচ্চা’ কিংবা ‘নবাবপুত্র’ জাতীয় অশোভন শব্দ ব্যবহার করে গালি দেন তাহলে কর্মকর্তারা তাদের আত্মমর্যাদার বিষয়ে অবহিত নন বলেই ধরে নিতে হবে। তারা যত বড় কর্মকর্তাই হোন না কেন এ জাতীয় শব্দ চয়ন করা একেবারেই অনুচিত। এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪৯৫ রানে থামলো টাইগারদের ইনিংস

ইরানের দিকে যাচ্ছে পারমাণবিক বৃহত্তর রণতরী

মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক

অজান্তেই প্রতিদিনের যেসব অভ্যাস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়

ইনস্টাগ্রামে যেভাবে লাইভ লোকেশন শেয়ার করবেন 

ভিসাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের জরুরি নির্দেশনা দিল যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের হামলায় মর্মান্তিক ক্ষতি হচ্ছে : নেতানিয়াহু

পানিতে ডুবে ও কুকুরের আক্রমণে ৩০০ ভেড়ার মৃত্যু, নিঃস্ব খামারি

হ্যালো আমেরিকা, তোমার দিকে প্রেতাত্মা ছুটে আসছে : যুক্তরাষ্ট্রকে শি জিনপিং

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন কালবেলার ফজলে রাব্বী

১০

আবারও গড়া হচ্ছে সেই ইটভাটা

১১

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে এক হাত নিল ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়া

১২

ঢাকায় আজও বৃষ্টির সম্ভাবনা

১৩

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে বলছেন ট্রাম্প, সিআইএ বলছে না

১৪

ইরান নিয়ে মুখ খুললেন কিম জং উন

১৫

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরছেন ১২৩ বাংলাদেশি

১৬

পল্টনে ডিবির অভিযান / মাদক কারবারিদের গুলিতে আহত দুই পুলিশ 

১৭

ফক্স নিউজের জরিপ / ইরান-ইসরায়েল ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত মার্কিনিরা

১৮

আলোচনায় এল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা এমওপি

১৯

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন / এ সপ্তাহেই ইরানে হতে পারে মার্কিন হামলা

২০
X