কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ১০:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

টানা ৩৭ দিন পর তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি, ১৪ মে পর্যন্ত ঝরবে বৃষ্টি

টানা ৩৭ দিন পর তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেয়েছে দেশবাসী। ছবি : কালবেলা
টানা ৩৭ দিন পর তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেয়েছে দেশবাসী। ছবি : কালবেলা

টানা ৩৭ দিন পর তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেয়েছে দেশবাসী। এখন দেশজুড়ে ঝরছে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে ১৪ মে পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীর পূর্বাভাস রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালবেলাকে বলেন, এখন যেমন বৃষ্টি হচ্ছে একইরকম বৃষ্টি থাকবে কয়েকদিন। আগামী ১১ মের পর বৃষ্টি বাড়তে পারে। সেই বৃষ্টি ১৩-১৪ মে পর্যন্ত থাকবে। এরপর কমলেও বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত থাকবে। আগামী ১৪ মের পর থেকে তাপমাত্রা একটু বাড়বে।

মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টাঙ্গাইলে ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুর বিভাগে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৩০ দশমিক ৫, ময়মনসিংহে ৩২ দশমিক ৬, সিলেট বিভাগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৩৩, চট্টগ্রামে বিভাগে সীতাকুণ্ডে ৩৪, খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ৭৭ মিলিমিটার। ঢাকায় ২, ফরিদপুরে ৪, মাদারীপুরে ২৮, গোপালগঞ্জে ৫৫, রংপুর, সৈয়দপুর, রাজারহাট ও তেঁতুলিয়ায় ১, ডিমলায় ৬, চট্টগ্রামে ২১, সন্দ্বীপে ১৪, সীতাকুণ্ডে ১৩, রাঙামাটি ৬, কুমিল্লা ৮, চাঁদপুর ২৮, নোয়াখালীর মাইজিকোর্টে ৪৯, ফেনী ২০, হাতিয়ায় ২৪, কক্সবাজারে ২৯, টেকনাফে ১১, বান্দরবানে ৯, খুলনায় ৭৫, মোংলায় ২৯, সাতক্ষীরায় ৬৭, যশোরে ২৫, চুয়াডাঙ্গায় ২, কুষ্টিয়ায় ১, বরিশালে ৫৮, পটুয়াখালীতে ৪১, খেপুপাড়ায় ৭৫ এবং ভোলায় সর্বোচ্চ ৪৩ মিলিমটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া ও নেত্রকোনায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে আবহাওয়া অফিস জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

গত ৩১ মার্চ থেকে টানা ৩৭ দিন ধরে দেশে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা ৭৬ বছরের মধ্যে রেকর্ড। এপ্রিলজুড়ে তীব্র, কখনো অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এতে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল জনজীবন।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, যে তাপপ্রবাহ বয়ে গেল, তা অস্বাভাবিক ছিল। দেশের ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। সাধারণত এপ্রিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমবেশি বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার এপ্রিলে শুধু সিলেটে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ তাপপ্রবাহের পর ২ মে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়। এই বৃষ্টি সঠিক সময়ে আসেনি। এই বৃষ্টি অনেকটা অস্বাভাবিক।

তিনি বলেন, বৃষ্টির এই যে অস্বাভাবিক প্রবণতা, তা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেরই প্রতিফলন। দীর্ঘদিন বৃষ্টি হয়নি। সময়মতো বৃষ্টি হয়নি। আবার বৃষ্টির ধরনে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, যখন বৃষ্টি হচ্ছে, তখন বেশি বেশি হচ্ছে। এই প্রবণতাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের আরও নানামুখী প্রভাব ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে।

গত ৩০ এপ্রিলে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে, যা গত পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৯৯৫ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল আগের নয় বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ঈশ্বরদীতে, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০১৪ সালের মে মাসে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৭২ সালের ১৮ মে, ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

২৯ এপ্রিল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল তার আগের ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ১৯৬৫ সালে থার্মোমিটারের পারদ উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘সবুজ ও জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বহুমুখী প্রচেষ্টা জরুরি’

ঘুষ নিতে গিয়ে পুলিশ সদস্য আটক, অতঃপর...

ঘূর্ণিঝড় রেমাল : নেওয়া উচিৎ যেসকল সতর্কতা

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত

সমুদ্রে ৬৫ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

অভিনয়ের জন্য এক পয়সাও নেন না শাহরুখ খান

বাংলাদেশে আসার তারিখ জানালেন কুরুলুস উসমানের নায়ক 

আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন 

বাংলাদেশ ব্যাংকে কি তাহলে মাফিয়া-ঋণখেলাপিরা ঢুকবে, প্রশ্ন রিজভীর

ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষায় নবীজি (সা.) যে দোয়া পড়তেন

১০

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা / ইরানের প্রেসিডেন্টের ভাগ্যে কী ঘটেছে?

১১

আবারও আলুর হিমাগারে মিলল লাখো ডিম

১২

কখন আঘাত আনতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল

১৩

ঢাবি শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম

১৪

বিল বকেয়া থাকায় রেল কার্যালয়ের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

১৫

ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কর ফাঁকি বন্ধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার

১৬

চেয়ারম্যান এলিমের অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি

১৭

বিএনপির ২ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি

১৮

শেখ ও বাদশারাও আমাকে বিয়ে করতে চায় : মিষ্টি জান্নাত

১৯

বিএনপির ওপর নানা কায়দায় নিপীড়ন করছে সরকার : ফখরুল 

২০
X