কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নির্বাচন বানচালে অনেক গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছেন হাফিজ উদ্দিন

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। ছবি : সংগৃহীত
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। ছবি : সংগৃহীত

সংসদ নির্বাচন বানচালে দেশে অনেক গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে দেশে অনেক গণ্ডগোল হবে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে মাফিয়া নেত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে লন্ডভন্ড করার জন্য, নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য অনেক সহিংস ঘটনার অবতারণা করবেন।’

শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে ‘অগ্নি সোশ্যাল ফাউন্ডেশন’ ও ‘আমাদের নতুন বাংলাদেশ’র যৌথ উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘দ্রুত বিচার সম্পন্ন, মৌলিক সংস্কার ও সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা দল-মত নির্বিশেষে দেশবাসী সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই মাফিয়াদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করব। আজকের দিনে এই হোক অঙ্গীকার।’

তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন হবে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য, এবারের নির্বাচন হবে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করার জন্য, এবারের নির্বাচন হবে এই হাসিনা মার্কা, আওয়ামী লীগ মার্কা দুঃশাসনকে চিরতরে নির্বাসনে দেওয়ার জন্য।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সরকারের কাছে আহ্বান, আপনারা এমন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, যাকে নিয়ে দেশবাসী গর্ব করতে পারে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে, নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা সেখানে রয়েছেন.. আমি আশা করব, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণ রায় প্রতিফলিত হবে। এই নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে। অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য এবং সুষ্ঠু নির্বাচন পাওয়ার জন্য।’

‘পুলিশ বাহিনীর সংস্কার করতে হবে’

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এ দেশের পুলিশ বাহিনী একটি পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল, বাংলাদেশ একটি পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এক বছর ‍অতিক্রান্ত হলেও এখনো পুলিশ বাহিনীতে কোনো সংস্কার হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এই বাহিনী সঠিকভাবে আসন্ন নির্বাচন করতে পারবে কি না, এ নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, র‌্যাবকে নির্বাচনের দায়িত্বে রাখা হবে। কিন্তু এই বাহিনীকে এখনো রাখা হলো কেন? বিএনপি থেকে যে একটা পুলিশ সংস্কারের কমিটি করা হয়েছিল, আমি সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম। আমরা সুপারিশ করেছিলাম এই র‌্যাবকে বিলুপ্ত করে দেওয়ার জন্য। এত কলঙ্ক তারা লেপন করেছে, এত অত্যাচার-নির্যাতন করেছে এই বাহিনী সম্পর্কে উপযুক্ত কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

‘অন্তর্বর্তী সরকার : তারা কৃতী মানুষ’

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই অন্তবর্তী সরকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য যারা আছেন, তারা নিঃসন্দেহে ভালো লোক, কৃতী মানুষ। কিন্তু রাজনীতিতে একেবারেই অনভিজ্ঞ।’

তিনি বলেন, ‘অবশেষ তাদের বোধোদয় হয়েছে যে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া বাংলাদেশের জনগণের এসব সমস্যার সমাধান কেউ করতে পারবে না। দেরিতে হলেও তারা উপলব্ধি করেছেন এবং প্রফেসর ইউনূস আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসে লন্ডনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্থে নির্বাচন হবে। এই প্রতিশ্রুতি পালন করার জন্য আমি প্রফেসর ইউনূসকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা আশা করব, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন।’

‘পিআর নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচন হবে’

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনে সাধারণ মানুষ একজন ব্যক্তিকে ভোট দিতে চায়। যে দেশের মানুষের পাশে থাকবেন, যার কাছে গেলে পুলিশের অত্যাচার, সমাজপতিদের অত্যাচার, গ্রামাঞ্চলে বা শহরাঞ্চলে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একজন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে তিনি হবে তাদের কাছে আপাতত প্রধান আশ্রয়স্থল। জনগণ এভাবে সচেতন হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলো এতখানি পরিপক্ততার পরিচয় এত বছর দিতে পারেনি যে, কেবল প্রতীকে ভোট দিলেই তাদের সমস্যার সমাধান হবে। ফলে সরাসরি ভোটে নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তনে আমরা কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ দেখি না।’

তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা ধরেই নিয়েছে যে, নির্বাচনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, তাদের পক্ষে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়। এই নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য তারা পিআর সিস্টেমের কথা বলছে।’

জামায়াত প্রসঙ্গে হাফিজ বলেন, ‘এই জামায়াতে ইসলামী তারা বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়নি। তারা ভেবেছে, বাংলাদেশের মানুষের স্মরণ শক্তি খুবই দুর্বল। ১৯৭১ সালে আন্দোলনের সময়ে এই দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে… ৮১ বছর বয়স। সুতরাং সেদিনের কথা মনে হয়, আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি হয়েছিল। সেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল জামায়াতে ইসলামী, একাত্তর সালেও মহান মুক্তিযুদ্ধেও তারা বিরোধিতা করেছে। এখন তারা নতুন নতুন বাণী নিয়ে আর্বিভূত হয়েছে।’

অগ্নিসেনা সোশ্যাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তালুকদার জহিরুল হক তুহিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি ও বিএনপির রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাথর লুট / ডিসি, এসপি ও বিভাগীয় কমিশনারকে দুষলেন জামায়াত নেতা

ফ্যান চালালে মাসে কত টাকা বিদ্যুৎ খরচ হয় জেনে নিন

নতুন নাটকে আইনা আসিফ

বাংলাদেশ এখন অর্থনীতিকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত : আমির খসরু

সিলেটের পাথর উদ্ধারে চলছে দুদকের অভিযান

ডিজিটাল ডিভাইস থেকে চোখ সরছে না, হতে পারে বিপদ

২০২৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সরাসরি খেলার সম্ভাবনা কতটুকু?

আন্তর্জাতিক যুব দিবস ২০২৫ / বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় তরুণদের মূল্যায়ন কতটা জরুরি? 

রেলপথ অবরোধে আটকা ৮টি ট্রেন, ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়

পাকিস্তান সীমান্তে দুপক্ষের গোলাগুলি, ভারতীয় সেনা নিহত

১০

জেসিকাকে ওরকার খেয়ে ফেলার দাবি ভুয়া, ভিডিওটি এআই নির্মিত

১১

সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১২

আটক ৫ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ

১৩

অবশেষে প্রকাশ্যে এলো ‘দেবী চৌধুরানী’র টিজার

১৪

আড়তে মেলে ইলিশ, পাতে ওঠে না সবার

১৫

নির্বাচনের সময় উপদেষ্টা থাকবেন না আসিফ মাহমুদ

১৬

বাস-ট্রাকের ভয়াবহ সংঘর্ষ

১৭

শিক্ষকরা প্রেস ক্লাবের সামনে, যান চলাচল বন্ধ

১৮

নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার এবার খেলবেন স্কটল্যান্ডের হয়ে

১৯

কিশোরগঞ্জে ২ কলেজের নাম পরিবর্তন

২০
X