আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট বাতিল না করলে ‘জনগণ শান্ত থাকবে না, সমুচিত জবাব দেবে’ বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাজধানীতে সমাবেশ শেষে কাকরাইল মোড়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এই হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, এটা কোনো নির্বাচন না। মানুষদের বলছি, এই ভোট দিতে যাবেন না। আমি এখানে বসে ছিলাম দেখলাম কয়েকজন রিকশাওয়ালা গেল… সাংবাদিক ভাইয়েরা হয়তো খেয়াল করেছেন তারা কি বলতে বলতে গেছে… আপনারা শুনেছেন। রিকশাওয়ালা, পান-বিড়ি দোকানদার, গ্রামে যে সমস্ত চায়ের দোকান আছে, হাট-বাজার সমস্ত জায়গায় মানুষ বলছে, কীসের ভোট? ভোট তো আগেই হয়ে যায়, এই ভোট আমরা দিতে যাব না।
মান্না বলেন, আমরা বলি, এরপর একেক করে যদি আবারও সারা দুনিয়া থেকে আপনাদের (সরকার) ওপরে চাপ আসে সহ্য করতে পারবেন? আমরা তো ওই জন্য চিন্তিত। আমরা দেশকে ভালোবাসি তাই বলি এই ভোট বাতিল করেন, সংসদ ভেঙে দেন এবং একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করেন। জানি এ কথা শুনবেন না আপনারা। কিন্তু তবুও ভালো কথা বলতে তো দোষ নাই। ভালো কাজ যদি না করেন নিশ্চিত থাকতে পারেন জনগণ শান্ত থাকবে না। নিশ্চিত থাকতে পারেন আমরা যে রকম করে কেবল লিফলেট বিতরণ করছি, সভা করছি… মানুষ বলবে, সব বন্ধ করে দাও, হরতাল দাও, অবরোধ দাও আবার... এই নির্বাচনে আমরা যাব না।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার ঘরপোড়ার মধ্যে আলুপোড়া দিচ্ছে। যখন বিরোধী দল রাজপথে আন্দোলন করছে একই সাথে তারা আইন আদালত ব্যবহার করে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের ফরমায়েশি রায় দিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটাচ্ছেন। এটা করেই তারা শেষ করেননি। আপনারা খেয়াল করেছেন, নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসকে শ্রম আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা ইতোমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দুনিয়ার গণতান্ত্রিক শিবিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।
সাইফুল হক অভিযোগ করে বলেন, তারা (সরকার) গুঞ্জন ছড়িয়ে দিয়েছে যে, ৭ তারিখের পরে বিএনপিকে তারা নিষিদ্ধ করতে পারেন কিনা। এ রকম উদ্যোগ অতীতে যারা নিয়েছেন, যারা রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে যারা প্রশাসনিক অর্ডার দিয়ে নিষিদ্ধ করতে গেছেন; দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিকভাবে তাদের মৃত্যু ঘটেছে। মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বর্জন করেছে।
তিনি বলেন, আমি আশা করি, ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ সেই পথে আপনারা হাঁটবেন না। যখন আপনি অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়েন সেদিন লোকেরা বলত পাশে আরেকটা গর্ত খুঁড়ে রাখবেন; কারণ এই গর্তে পরের দিন হয়তো আপনাকেই পড়তে হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনও শর্ত দিচ্ছেন যে, নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ গোটা দুনিয়া থেকেও নাকি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে লক্ষণটা আপনারা দেখছেন। বিবিসি গতকাল (সোমবার) সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, ‘বাংলাদেশ ইলেকশন হ্যাজ বিকাম এ ওয়ান উইমেন সো’। দুনিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই নির্বাচনকে সরকার, সরকারি দলের এবং বিশেষ ব্যক্তিদের তাদের ইচ্ছা পূরণের, তাদের অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করার তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করছেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। ৭ তারিখে যা হচ্ছে সেটা সুষ্ঠু নির্বাচন না, ৭ তারিখে যা হচ্ছে তা তামাশা, ৭ তারিখে যা হচ্ছে একই দলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে তথাকথিত ভোটার আনার জন্য। কাজেই মানুষের এই বিষয়ে কোনো আগ্রহ নাই, মানুষ ভোট দিতে যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বলি, এখনো সময়ে আছে… সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পার্লামেন্ট ভেঙে দেন… সমস্ত দলকে নিয়ে আলোচনায় বসেন, সংকট সমাধান করেন...। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন… সেটা সকলের জন্য মঙ্গল। আর না হয় এদেশের মানুষ সংগ্রাম করতে জানে, এই দেশের মানুষ সংগ্রাম করবে, তার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া তারা সহ্য করবে না।
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিজুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন