বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে দুর্ভাগ্য যে, ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দখলদার আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে ক্ষমতা দখলে রেখেছে। তারা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। ইতোমধ্যে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রকামী অনেক তরুণ-যুবককে তারা হত্যা করেছে। এমনকি তাদের অত্যাচার-নির্মমতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। পুলিশ অনেকের বাড়িতে রেইড দিয়েছে। কাউকে না পেয়ে অনেকের স্ত্রী, বোন, মা কিংবা সন্তানকে তুলে নিয়ে গেছে। তাদের ওপর নির্যাতন করেছে। আজকে কারও মনে কিন্তু হাসি নেই। এভাবে একে একে বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। অনেককে সাজা দিয়ে সর্বস্বান্ত করেছে।
রোববার (৭ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য কামনা, কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের জন্য দোয়া এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা, তাদের পরিবারে ঈদ উপহার বিতরণ ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এ্যাব। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ্যাব’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুলের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রকৌশলী আ ন হ আকতার হোসেন, এ্যাব’র মহাসচিব প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন আহমেদ, সহসভাপতি প্রকৌশলী মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, এ্যাব’র নেতা প্রকৌশলী মাহবুব আলম, শহীদ নুরে আলম ভূঁইয়া তানুর স্ত্রী কানিজ ফাতিমা আঁখি প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের যেসব ভাই, সহযোদ্ধা আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন আমরা তাদের গৌরবের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। যে জায়গায় তারা ন্যায় বিচার পাবেন। আজকে কত শিশু তার বাবাকে ভিক্ষা চায়। তবে মজলুমের অশ্রুধারা কখনো বৃথা যেতে পারে না।
তিনি বলেন, যারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সাধারণ মানুষের মনে আশা জেগেছিল যে, এবার বোধহয় কিছু একটা হবে। কিন্তু সরকার ভয়াবহ দানবীয় নির্যাতনে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমরা হয়তো থেমে গেছি। তবে আমাদের ভেতরে আগুন জ্বলছে। আমরা যে লক্ষ্যে মাঠে নেমেছি সেটা হলো, দেশ মাতৃকাকে রক্ষা। সমস্ত অন্যায়কে পরাভূত করে অধিকার আদায় এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করব।
তিনি আরও বলেন, আমরা সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই সরকারের অপকীর্তির কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না। এরা সবদিক থেকে ব্যর্থ। দেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্র সব ধ্বংস করেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব খাত ধ্বংস করেছে। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ একাধিপত্য ও ভয়াবহ রাজত্ব চালাচ্ছে। এখন বুয়েট বাকি আছে, সেখানেও হিংস্র থাবা বসিয়েছে। অথচ বুয়েটে কিছুটা হলেও জ্ঞানের চর্চা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সীমান্ত অরক্ষিত। বান্দরবানে অস্ত্র ও ব্যাংক লুট হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো স্পষ্ট করে বলতে পারছে না, কারা এটার সঙ্গে জড়িত। যখন কোনো দোষ চাপাতে হয় তখন জঙ্গি খুঁজে বের করে। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতোটা ভঙ্গুর। আজকে দেশের পানি সমস্যা, সীমান্ত সমস্যা নিরসন করতে পারেনি। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। দেশের প্রয়োজনে আবারও তরুণ যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, প্রকৌশলী মো. আবদুল মতিন খান, প্রকৌশলী মো. হানিফ এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন