মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঘুষ নিয়ে এএসআইয়ের দর-কষাকষির অডিও ভাইরাল
বাদীপক্ষের কাছে টাকা দাবি ও বিবাদীদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) আলতাফ হোসেনের।   অভিযুক্ত আলতাফ হোসেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার আসমানখালী পুলিশ ক্যাম্পের উপ পরিদর্শক। ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।  এর আগে গত ১৩ মে এএসআই আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন আলমডাঙ্গা উপজেলার শালিকা গ্রামের আফরোজা খাতুন নামে এক ভুক্তভোগী নারী। এরপরই পুলিশ সুপার অভিযোগটি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম উদ্দিন আল আজাদকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ভুক্তভোগী নারী আফরোজা খাতুন বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর যাবত আমার স্বামী আতিয়ার হোসেন অসুস্থতার জন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। তিন ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। কখনো দর্জির কাজ ও পাড়া-মহল্লার বাড়ির কাঁথা সেলাই করে সংসার চালিয়েছি। গত ১০ মাস যাবত স্থানীয় একটি বেসরকারি এনজিওতে রান্নার কাজ করছি। এ কাজ করি বিধায় আমার দেবর আক্তার আলী ও মেজো ভাসুর হাশেম আলী আমাকে নিয়ে আমার স্বামীকে বিভিন্নভাবে ভুল বোঝাতে থাকেন।  তারা আমার স্বামীকে বলেন, আফরোজার জন্য আমাদের মানসম্মান চলে গেল, সে খারাপ কাজ করে। তাদের কথা শুনে আমার স্বামীও আমাকে অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকেন। এ ঘটনার জেরে গত ৯ মে আমার দেবর ও মেঝ ভাসুর হত্যার উদ্দেশে বাড়িতে আসেন। প্রাণ রক্ষার্থে আমি আমার দুই ছেলে আরেফিন রহমান (১৭) ও আল মেরাজকে (১২) নিয়ে ঘরের দরজা আটকে দিই। পরে ঘরে ঢুকতে না পেরে চাইনিজ কুড়াল ও হাঁসুয়া দিয়ে টিনের বেড়া এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায় তারা।  তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পরদিন ১০ মে আমার বড় ছেলে আরেফিন বাড়িতে এসে তার বাবাকে বিষয়টি বলছিল। এ সময় আমার দেবর ও মেঝ ভাসুর লোহার রড, লোহার পাইপ নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। আমাকে ও আমার সন্তানদের বেধড়ক মারপিট করে। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মেঝ ছেলেকে ভর্তি করি এবং আমার বড় ছেলেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনার দিন ১০ মে আমার স্বামী, দেবর ও মেঝ ভাসুরের বিরুদ্ধে আসমানখালী ক্যাম্পে একটি অভিযোগ দায়ের করি।  ক্যাম্পের পুলিশ উভয় পক্ষকে ডেকে আপস-মীমাংসা করে দেয়। এরপর আমি আমার সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিবাদীরা আমাদেরকে ঢুকতে দেয়নি। সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় খেয়ে না খেয়ে দুইদিন ঘুরেছি। আমার বড় ছেলে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা। এমন অবস্থায় তার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আফরোজা খাতুন বলেন, গত ১৩ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসানখালী ক্যাম্পের এএসআই আলতাফ হোসেন আমার বাড়িতে এসে আমাকে না পেয়ে আমার বড় জা, তার পুত্রবধূ ও তার মেয়ের সঙ্গে আমার নামে অশালীন ভাষায় কথাবার্তা বলেন এবং নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে আসমানখালী ক্যাম্পে দেখা করার জন্য বলেন। আমি একজন অসহায় গরিব মানুষ, আমার পক্ষে এত টাকা যোগাড় করা সম্ভব না। সে কারণে সঠিক বিচারের আশায় বড় স্যারের (পুলিশ সুপার) নিকট অভিযোগ করেছি। এদিকে এ ঘটনার একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অডিও ক্লিপটিতে এএসআই আলতাফ হোসেন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কয়েকজনের কণ্ঠ শোনা যায়। এএসআই আলতাফ হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘এই মানুষই ভালো করে, আবার এই মানুষই খারাপ করে। আমি যেভাবে বলব সেভাবে হবে।’ এমন কথা বলার পর ৫০ হাজার টাকা দাবি করতে শোনা যায় এএসআই আলতাফ হোসেনকে। এ নিয়ে দর-কষাকষি হতে থাকে।  এএসআই আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমার একটা পাওয়ার আছে, সার্কেল স্যার আমার কাছের লোক (চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান)। তাকে আমি বুঝ দিতে পারব। আমার ব্যাকআপ কিন্তু সে।’    এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এএসআই আলতাফ হোসেন বলেন, ঘটনাটি সত্য নয়। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।  চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযোগটির তদন্ত চলছে। ভাইরাল অডিও ক্লিপটিতে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত এএসআই আলতাফ হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি অডিও ক্লিপটি এডিট করা। প্রয়োজন হলে আমরা অডিও ক্লিপটি ফরেনসিকে পাঠাব। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সুপারের কাছে জমা দেওয়া হবে।
২১ ঘণ্টা আগে

ঘুষ নিতে গিয়ে পুলিশ সদস্য আটক, অতঃপর...
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক পুলিশ সদস্যকে মাদকাসক্ত এক ব্যক্তির বাড়িতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে আটকে রেখে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৮ মে) আক্কেলপুর পৌরশহরের শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লার মৃত সেকেন্দার আলীর পুত্র সোহেলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। রোববার (১৯ মে) এ ঘটনায় ওই পুলিশ সদস্যকে জয়পুরহাট পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। জানা যায়, পুলিশের ওই কনস্টেবলের নাম আশিক হোসেন। ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তাকে আটকে রাখেন শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লার বাসিন্দা সোহেল রানা ও স্থানীয় লোকজন। থানা-পুলিশ, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে জমি-জমা নিয়ে একটি অভিযোগের তদন্ত করতে একজন এসআইয়ের সঙ্গে কনস্টেবল আশিক রানা শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লায় এসেছিলেন। তখন আশিক বিবাদী পক্ষের সোহেল রানার কাছে এক হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওইদিন সোহেল কনস্টেবলকে কোনো টাকা-পয়সা দেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সোহেলকে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনার দুদিন পর রাতের বেলায় স্থানীয় একটি সড়কে কনস্টেবল আশিক সোহেল রানার পকেট তল্লাশি করে ইয়াবা পান বলে দাবি করেন। তখন তাকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে ২০ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়া হয়। সোহেল পর দিন সকালে ঘুষের টাকা দেবেন বলে কথা দিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। কনস্টেবল শুক্রবার (১৭ মে) ভোরে ঘুষের টাকা নিতে সোহেল রানাদের বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করে তাকে পাননি। তখন ক্ষুদ্ধ হয়ে বাড়ির দরজায় লাথি দিয়ে চলে যান।  শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আশিক শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লায় সোহেলের বাড়িতে আসেন। তিনি ঘুষের ২০ হাজার টাকা দাবি করলে সোহেল ৫ টাকা হাজার তুলে দেন। এ সময় সোহেলের স্ত্রী গোপনে মুঠোফোনে ঘুষের টাকা লেনদেনের ভিডিও ধারণ করেন। বিষয়টি টের পেরে টাকা ফেরত দিয়ে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। তখন সোহেল পুলিশ সদস্যকে তার বাড়িতে আটকে রেখে ৯৯৯ কল করেন। পুলিশকে আটকে রাখার খবর পেয়ে উৎসুক গ্রামবাসীরা সেখানে জড়ো হন। সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফেরদৌস হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। থানা পুলিশ সোহেলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ফোনে থাকা ঘুষ লেনদেন ভিডিও মুছে ফেলে আটক থাকা কনস্টেবল আশিককে নিয়ে চলে আসেন।   ভুক্তভোগী সোহেল বলেন, আমি দুই মাস আগে মাদক সেবন ছেড়ে দিয়েছি। জমি-জমা নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছিল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক সপ্তাহ আগে একজন এসআইয়ের সঙ্গে কনস্টেবল আশিক রানা আমাদের গ্রামে এসেছিলেন। তখন আমার কাছে টাকা দাবি করেন। সেই টাকা না দেওয়ায় পরে আমাকে রাস্তার মধ্যে পকেটে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন তিনি। পরে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হলে তিনি আমাকে ছেড়ে দেন। পরে ওই টাকা নিতে এলে এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাটি থানার ওসিকে জানাতে চাইলে ঘুষের টাকা রেখে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ এসে আমার স্ত্রীর ধারণ করা ভিডিও ডিলিট করে তাকে নিয়ে যায়। আক্কেলপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফেরদৌস হোসেন কালবেলাকে বলেন, সোহেলের বাড়িতে সিভিল পোশাকে একজন কনস্টেবলকে আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে।  ঘটনার সময় নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে ফেরদৌস হোসেন আরও বলেন, একটি মোবাইল ফোন নিয়ে সোহেলের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা কাড়াকাড়ি করছিলেন। সেটি কার আমি জানি না। তবে ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে পুলিশ সদস্য আশিক রানা কালবেলাকে বলেন, সোহল একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাকে চিহ্নিত করতে ভোরবেলা তার বাড়িতে যাই। এ কারণে আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, আমি কনস্টেবলের ওই ঘটনায় এসপি স্যারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি। বিকেল ৪টায় ওই কনস্টেবল আশিক রানাকে জয়পুরহট পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কনস্টেবল আশিক রানার বাড়ি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেল সদরে। সে ২০১৫ সালে পুলিশ সদস্য পদে যোগদান করেন।
১৯ মে, ২০২৪

ট্রাম্পের নির্দেশে স্টর্মিকে ঘুষ দেন কোহেন
সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেন বলে দাবি করেছেন ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন। সোমবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন। খবর সিএনএনের। জবানবন্দি দেওয়ার সময় কৌঁসুলি সুসান হফিংগারের প্রশ্নের জবাবে কোহেন বলেন, ‘আমি যা করেছি, ট্রাম্পের নির্দেশনায় এবং তার লাভের জন্যই করেছি।’ কোহেনের এই বক্তব্য ঘুষের অর্থ প্রদানের নেপথ্যে যে ট্রাম্প ছিলেন, সে বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে কৌঁসুলিদের সুবিধা হবে। এমনকি ট্রাম্প যদি নিজেই ওই অর্থ না দিয়েও থাকেন। একপর্যায়ে ফোন রেকর্ড বের করে কৌঁসুলিরা দেখান, ঘুষ দেওয়ার ওই সময় ফোনে কথা বলেছিলেন ট্রাম্প ও কোহেন। কোহেন ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর ট্রাম্পকে কল দিয়ে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় কথা বলেন। ওই দিনই স্টর্মির সঙ্গে সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছিল। কোহেন আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি স্টর্মির আইনজীবীর কাছে ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার হস্তান্তর করেছিলেন। স্টর্মি সমঝোতা চুক্তি এবং অতিরিক্ত নথিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যা তাকে নীরব হতে বাধ্য করেছিল। বিষয়টি ট্রাম্প জানতেন কি না, কৌঁসুলি সুসানের এমন প্রশ্নের জবাবে কোহেন বলেন, তিনি বিষয়টি ট্রাম্পকে তাৎক্ষণিক জানিয়েছেন।
১৫ মে, ২০২৪

চাকরির নামে ঘুষ গ্রহণকারী সেই দুই পুলিশ বরখাস্ত
মাদারীপুরে পুলিশে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তানজিলা আক্তার ও শহিদুল ইসলাম নামে সেই দুই পুলিশ কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শনিবার (১১ মে) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও জেলা পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুজ্জামান ফকির কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার রবিদাসের ছেলে রতন দাসের কাছ থেকে পুলিশে নিয়োগ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ গ্রহণ করে তানজিলা আক্তার ও শহিদুল ইসলাম নামে দুই কনস্টেবল। এ ঘটনায় শুক্রবার (১০ মে) ও শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জানা গেছে, রতন দাস একটি দোকানে কাজ করতেন। সেখানেই পুলিশ সদস্য তানজিলা আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে পুলিশ নিয়োগের সময় তানজিলা আক্তার পুলিশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রতনের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নেয়। বিশ্বাস অর্জনের জন্য তানজিলা আক্তার নিজের স্বাক্ষর যুক্ত কমিউনিটি ব্যাংকের একটি চেকও প্রদান করে। এদিকে পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে চাকরি না হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী রতন দাস। উপায় না পেয়ে অভিযোগ করেন পুলিশ সুপার বরাবর।  চাকরিপ্রত্যাশী রতন দাস বলেন, আমাকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছে তানজিলা আক্তার নামে এক পুলিশ। কিন্তু সে চাকরি দিতে পারেনি। তিনি বলেন, আমার দেওয়া সেই টাকা দিয়ে তানজিলার স্বামী ফরিদপুরের ভাঙ্গাতে ব্যবসা শুরু করছে। টাকা ফেরত চাইলে সে বিভিন্ন রকমের তালবাহানা শুরু করে। বিভিন্ন অজুহাতে সে আমার টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এ ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে শহিদুল নামে এক পুলিশও জড়িত। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর সিনিয়র স্যারদের নির্দেশে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্য তানজিলা আক্তার একটি দোকানে এক হাজার টাকার কয়েকটি বান্ডিল গুনে নিচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দোকানটি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। সেই দোকানেই টাকা লেনদেন হয়েছে। গত বছরের ১ মার্চ রতন দাসের কাছ থেকে পুলিশ কনস্টেবল তানজিলা আক্তার ও শহিদুল টাকা গ্রহণ করেন।
১১ মে, ২০২৪

চাকরির নামে দুই পুলিশের ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল
মাদারীপুরে পুলিশে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।  টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।  ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্য তানজিলা আক্তার একটি দোকানে এক হাজার টাকার কয়েকটি বান্ডিল গুনে নিচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দোকানটি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। সেই দোকানেই টাকা লেনদেন হয়েছে। গত বছরের ১ মার্চ টাকা গ্রহণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার রবিদাসের ছেলে রতন দাস একটি দোকানে কাজ করতেন। সেখানেই পরিচয় হয় পুলিশ সদস্য তানজিলা আক্তারের সঙ্গে। পরে পুলিশ নিয়োগের সময় তানজিলা আক্তার পুলিশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রতনের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নেয়। বিশ্বাস অর্জনের জন্য তানজিলা কমিউনিটি ব্যাংকের একটি চেকও প্রদান করে। তানজিলা আক্তারের নামে কমিউনিটি ব্যাংকের চেকে তানজিলার স্বাক্ষর ও তারিখ রয়েছে। এদিকে পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার পর রেজাল্ট দিলে চাকরি না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী রতন দাস। উপায় না পেয়ে অভিযোগ করেন পুলিশ সুপার বরাবর। চাকরিপ্রত্যাশী রতন দাস বলেন, আমাকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছে তানজিলা আক্তার নামে এক পুলিশ সদস্য। কিন্তু সে চাকরি দিতে পারেনি। সেই টাকা দিয়ে তানজিলার স্বামী ফরিদপুরে ব্যবসা শুরু করছে। টাকা ফেরত চাইলে সে বিভিন্ন রকমের টালবাহানা করছে। আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় একটি চেকও দিয়েছিল। এরপরও বিভিন্ন অজুহাতে সে আমার টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এই ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে শহিদুল নামে এক পুলিশও জড়িত। রতন দাসের বাবা রবিদাস বলেন, আমি ধার-দেনা করে ছেলের চাকরির জন্য টাকা দিয়েছিলাম তানজিলার কাছে। সে চাকরি দিতে পারেনি। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। তাই এসপি অফিসে অভিযোগ দিয়েছি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত তানজিলা আক্তার বলেন, যা বলার এসপি স্যারকেই বলেছি।  অপর অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম নিজের দায় অস্বীকার করে জানান, তিনি কোনো টাকা নেননি। মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, চাকরির প্রলোভনে দুই পুলিশ সদস্যের ঘুষ নেওয়ার একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১০ মে, ২০২৪

বাকিতে ঘুষ নেওয়া পুলিশের সেই তিন কর্মকর্তা ক্লোজড
‘পুলিশের তিন কর্মকর্তা ঘুঘ নেন বাকিতে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের শাহ আলী থানার ওই অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজ করা হয়েছে। তারা হলেন শাহ আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমাদুল, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামরুজ্জামান এবং সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বদরুজ্জামান। শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। গত ৬ মে ‘পুলিশের তিন কর্মকর্তা ঘুঘ নেন বাকিতে’ শিরোনামে কালবেলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, মিরপুরে একটি জুতার দোকানের কর্মচারী মো. ফরিদকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন শাহ আলী থানার এসআই মো. এমাদুল। তার স্ত্রীকে জানান, এই টাকা না দিলে ফরিদকে মাদক মামলায় আসামি করা হবে। পরে ৩০ হাজার টাকায় বিষয়টির সুরাহা হয়। এমাদুলের কথামতো রাতেই নগদ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে নেন তার স্ত্রী। বাকি ৫ হাজার টাকা দুদিন পর দেওয়া হয় এমাদুলকে। ফরিদের মতো আরও অনেককে ধরে এনে টাকা আদায় করেছে তারা। শুধু বাকিতেই আটক করা মানুষকে ছাড়েন না এমাদুল। রাস্তাঘাট থেকে ধরে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে পকেটে থাকা সব টাকা বের করেও নেন তিনি। তাতেও কম পড়লে সেই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ফোন করে ডেকে এনে আদায় করেন আরও টাকা। তার এসব অপকর্মের সঙ্গী একই থানার এএসআই কামরুজ্জামান এবং এএসআই বদরুজ্জামান।
০৮ মে, ২০২৪

বাকিতে ঘুষ নেওয়া সেই তিন পুলিশ কর্মকর্তা ক্লোজড
‘পুলিশের তিন কর্মকর্তা ঘুষ নেন বাকিতে’ এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক কালবেলায়। এ ঘটনার পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের শাহআলী থানার ওই অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।  তারা হলেন- শাহ আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমাদুল, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামরুজ্জামান এবং সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বদরুজ্জামান।  শাহআলী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মওদুদ হাওলাদার কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওসি বলেন, তিন পুলিশ অফিসারকেই ক্লোজড করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। মিরপুরে একটি জুতার দোকানের কর্মচারী মো. ফরিদকে মাঝ রাস্তায় পথ আটকিয়ে তুলে নিয়ে যায় শাহ আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমাদুল। ফরিদকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর তার স্ত্রীকে ফোন করেন এসআই এমাদুল। দাবি করেন ৫০ হাজার টাকা। জানান এই টাকা না দিলে তার স্বামীকে মাদক মামলায় আসামি করা হবে। পরে স্বামীকে বাঁচাতে ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন ফরিদের স্ত্রী।  এমদাদুলের কথামতো রাতেই নগদ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে নেন তার স্ত্রী। আর ৫ হাজার টাকা বাকি রাখেন তিনি। সেই বাকির ৫ হাজার টাকা দুদিন পরে দিয়ে দেন এসআই এমাদুলকে। ভুক্তভোগী মো. ফরিদ কালবেলাকে বলেন, আমি শাহ আলী মার্কেটের একটি জুতার দোকানে কাজ করি। গত ১৪ রোজায় আমি রাতে দোকান থেকে হেঁটে বাসায় আসিতেছিলাম। তখন সেখান থেকে এসআই এমাদুল  আমারকে ধরে নিয়ে শাহ আলী থানার টিনশেডে নিয়ে যাইয়া, আমারে আটকাইয়া ফালাইছে। আটকাইয়া আমার কয় ফ্যামিলিরে ফোন দে। তারপর আমি আমার ওয়াইফ-রে ফোন দিছি। এরপর এসআই এমাদুল আমার স্ত্রীকে বলে ওনাকে ছাড়াতে হলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। ওনার কাছে মদের বোতল পাইছি। আসলে তারা আমার কাছে কিছুই পায় নাই। আমি পান ছাড়া জীবনে আর কিছুই খাই নাই।  তিনি আরও বলেন, এসআই এমাদুল তখন হাতে লাঠি নিয়ে বলে তোকে হিরোইন মামলা দেব, মারব বিভিন্ন রকমের ভয় দেখায়। তখন আমার স্ত্রী ভয়ে বলে ঠিক আছে ২০ হাজার টাকা দেব। কিন্তু উনি তাতে রাজি হয় না, অনেক মারধোর করছে আমাকে। পরে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ছাড়ছে। সেই রাতে দিছি ২৫ হাজার। আর বাকি ছিল ৫ হাজার। সেই বাকির ৫ হাজার ২ দিন পরে নিয়েছে।  স্বামীকে বাঁচাতে মাঝরাতে কোলের শিশুকে নিয়ে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না ফরিদের স্ত্রীর। তাই বাধ্য হয়ে নিজের কানের দুল বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করেছিলেন তিনি।  ভুক্তভোগী ফরিদের স্ত্রী কুলসুম বেগম কালবেলাকে বলেন, সেই রাতে এমাদুল স্যার আমার জামাইকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর প্রথমে আমাকে কয় ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি কই স্যার গরিব মানুষ এত টাকা কই পামু। তখন কয় টাকা না দিলে হিরোইন মামলা দিয়ে লাইফ শেষ করে দিমু। এটা শুনে তো আমি ভয় পাইয়া যাই। পরে আমি হাতে পায়ে ধরে সেই রাতে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে জামাইরে ছাড়াইয়া আনছি। বাকি ৫ হাজার টাকা পরে দিছি।  শুধু এই স্বামী-স্ত্রীর গল্পই নয়। আরও এক ব্যক্তিকে মামলার ভয় দেখিয়ে তার স্ত্রীর কাছে থেকে দফায় দফায় টাকা নিয়েছেন এসআই এমাদুল।  মোছা. তাসলিমা নামের ভুক্তভোগী ওই নারী কালবেলার কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী মুরগির গাড়িতে ডিউটি করে। যেহেতু গাড়িতে থাকে তাই হালকা পাতলা নেশা করেই। কিন্তু আমার স্বামীর কারণে এসআই এমাদুল বারবার আমার বাসায় গিয়ে টাকা নিয়ে আসে। এ পর্যন্ত দফায় দফায় কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। একদিন আমার ঘরে গিয়ে বলে তল্লাশি করবে। তল্লাশি করে কিছুই পায় নাই। তখন আমার ড্রয়ারে কিস্তির বইয়ের মধ্যে টাকা ছিল সেই টাকাগুলোও নিয়ে গেছে। আমি এত করে বলছি এগুলো কিস্তির টাকা নিয়েন না। তবুও উনি থাবা দিয়ে টাকা নিয়ে পকেটে ঢুকাইয়া ফেলছে। শুধু বাকিতেই আটকে নেই এসআই এমাদুল। রাস্তাঘাট থেকে ধরে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে পকেটে থাকা সমস্ত টাকা বের করে নেন তিনি। তাতেও কম পড়লে সেই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ফোন করে ডেকে নিয়ে আদায় করেন আরও টাকা। তার এসব অপকর্মের সঙ্গী একই থানার এএসআই কামরুজ্জামান এবং এএসআই বদরুজ্জামান।  একই ঘটনা ঘটিয়েছেন গত বছরের ১৬ অক্টোবর রাতেও। রিজন নামের এক ছেলেকে গুদারা ঘাটের ৮নং রোডের একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যান এসআই এমাদুল। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন এএসআই কামরুজ্জামান এবং এএসআই বদরুজ্জামান। আটকের খবর পেয়ে ভাইকে বাঁচাতে থানায় যান রিজনের ভাই সোহাগ। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বন্ধু আল আমিন। সেখানে যাওয়ার পরই এসআই এমাদুল ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহাগ ও আল আমিনের হাতে হ্যান্ডকাপ লাগায় এএসআই কামরুজ্জামান। পরে সোহাগের পকেটে থাকা ৮ হাজার টাকা এবং আলামিনের পকেটে থাকা ৫ হাজার টাকা বের করে নিয়ে নিজের পকেটে রেখে দেন এই পুলিশ সদস্যরা।  তবুও মেলেনি রক্ষা। তাদের হাজতে ঢুকিয়ে রেখে বিকাশে আরও ১০ হাজার টাকা আদায় করেন এই তিন পুলিশ কর্মকর্তা। সেই তিনজনকে থানায় আটক রাখার ভিডিও এবং টাকা লেনদেনের অডিও পৌঁছেছে কালবেলার হাতে।  সেই রাতের পুলিশের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারে কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সোহাগ। কিন্তু অভিযোগ করার পরই তাকে নানা রকমের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এই পুলিশ সদস্যরা।  ভুক্তোভুগি সোহাগ কালবেলাকে বলেন, তিন পুলিশের নামে অভিযোগ করার পর থেকেই অনেক চাপে আছি। নানা রকমের হুমকি দিচ্ছে তারা। এসব অভিযোগের বিষয়ে শাহআলী থানায় গিয়ে পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত ৩ পুলিশের কাউকেই। পরে যোগাযোগ করা হয় তাদের মুঠোফোনে। প্রত্যেকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা রিসিভ করেননি কেউই। এরপর তাদের মুঠোফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠালেও কোনো উত্তর মেলেনি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অল্প সংখ্যক এমন কিছু পুলিশ সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীর সুনাম নষ্ট হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক কালবেলা বলেন, শাহ আলী থানা এলাকার ৩ পুলিশ সদস্য ওইখানের মানুষের মনে যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। পুলিশের এই দুয়েকজন কর্মকর্তার অপেশাদার আচরণের কারণে মানুষের মনে কিন্তু অনেক অবিশ্বাস তৈরি হয়। প্রশ্ন হলো এই তিন পুলিশ যা করছেন তা কি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখেন না। যদি দেখেও না দেখার মতো থাকেন এটাও অপরাধ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি। এতে জনগণ ও পুলিশের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ্য ও বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হবে।  পুলিশ সদস্যের এমন বেপরোয়া কাজের প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
০৭ মে, ২০২৪

রাজধানীর শাহ আলী থানা / পুলিশের তিন কর্মকর্তা ঘুষ নেন বাকিতে!
রাতে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন জুতার দোকানের কর্মচারী মো. ফরিদ। মাঝ রাস্তা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় শাহ আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমাদুল। এরপর ফরিদের স্ত্রীকে ফোন করেন এসআই এমাদুল। দাবি করেন ৫০ হাজার টাকা। বলেন, এই টাকা না দিলে তার স্বামীকে মাদক মামলায় আসামি করা হবে। পরে স্বামীকে বাঁচাতে ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন ফরিদের স্ত্রী। এমাদুলের কথামতো রাতেই ২৫ হাজার টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে নেন তার স্ত্রী। আর ৫ হাজার টাকা বাকি রাখেন তিনি। বাকির ৫ হাজার টাকা ২ দিন পরে দেন এসআই এমাদুলকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহ আলী থানা এলাকার সাধারণ মানুষকে রাস্তাঘাট থেকে ধরে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে পকেটে থাকা সব টাকা বের করে নেন এসআই এমাদুল। তাতেও কম পড়লে সেই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ফোন করে ডেকে নিয়ে আদায় করেন আরও টাকা। তাৎক্ষণিক দাবিকৃত অর্থ দিতে না পারলে বাকিতে রেখে পরে সেই টাকা আদায় করা হয়। তার এসব অপকর্মের সঙ্গী একই থানার এএসআই কামরুজ্জামান এবং এএসআই বদরুজ্জামান। ভুক্তভোগী মো. ফরিদ কালবেলাকে বলেন, ‘আমি শাহ আলী মার্কেটের একটি জুতার দোকানে কাজ করি। গত ১৪ রোজার দিনে আমি রাতে দোকান থেকে হাইটা আসিতেছিলাম। তখন সেখান থেকে এসআই এমাদুল আমাকে ধরে নিয়ে শাহ আলী থানার টিনশেডে নিয়ে যাইয়া আমারে আটকাইয়া ফালায়। এরপর আমারে কয় ফ্যামিলিরে ফোন দে। তারপর আমি আমার ওয়াইফরে ফোন দিছি। এরপর এসআই এমাদুল আমার স্ত্রীকে বলে ওনাকে ছাড়াতে হলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। ওনার কাছে মদের বোতল পাইছি। আসলে আমার কাছে কিছুই পায় নাই। আমি পান ছাড়া জীবনে কিছুই খাই নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসআই এমাদুল তখন হাতে লাঠি নিয়ে বলে তোকে হিরোইন মামলা দেব, মারব বলে বিভিন্নভাবে ভয় দেখায়। তখন আমার স্ত্রী ভয়ে বলে ঠিক আছে ২০ হাজার টাকা দেব; কিন্তু উনি তাতে রাজি হয় না। অনেক মারধর করছে আমারে। পরে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ছাড়ছে।’ স্বামীকে বাঁচাতে মাঝরাতে কোলের শিশুকে নিয়ে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না ফরিদের স্ত্রীর। তাই বাধ্য হয়ে নিজের কানের দুল বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করেন তিনি। ফরিদের স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, ‘সেই রাতে এমাদুল স্যার আমার জামাইরে ধরে নিয়ে যায়। এরপর প্রথমে আমারে কয় ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি কই স্যার গরিব মানুষ এত টাকা কই পামু। তখন কয় টাকা না দিলে হিরোইন মামলা দিয়ে লাইফ শেষ করে দিমু। এটা শুনে তো আমি ভয় পাইয়া যাই। পরে আমি হাতে-পায়ে ধরে রাতেই ২৫ হাজার টাকা দিয়ে জামাইরে ছাড়াইয়া আনছি। বাকি ৫ হাজার টাকা পরে দিছি।’ তাসলিমা নামের এক নারী কালবেলাকে বলেন, ‘আমার স্বামী মুরগির গাড়িতে ডিউটি করে। যেহেতু গাড়িতে থাকে তাই হালকা পাতলা নেশা করেই। সে জন্য এসআই এমাদুল বার বার আমার বাসায় গিয়ে টাকা নিয়ে আসে। এ পর্যন্ত দফায় দফায় অন্তত ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। একদিন আমার ঘরে গিয়ে বলে তল্লাশি করবে। তল্লাশি করে কিছুই পায় নাই। তখন আমার ড্রয়ারে কিস্তির বইয়ের মধ্যে টাকা ছিল, সেই টাকাগুলোও নিয়ে যায়।’ গত বছরের ১৬ অক্টোবর রাতে রিজন নামের এক ছেলেকে গুদারা ঘাটের ৮ নম্বর রোডের একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যান এসআই এমাদুল। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এএসআই কামরুজ্জামান এবং এএসআই বদরুজ্জামান। আটকের খবর পেয়ে ভাইকে বাঁচাতে থানায় যান রিজনের ভাই সোহাগ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বন্ধু আলামিন। তাদের কাছে এসআই এমাদুল ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহাগ ও আলামিনের হাতে হ্যান্ডকাফ লাগায় এএসআই কামরুজ্জামান। পরে সোহাগের পকেটে থাকা ৮ হাজার টাকা এবং আলামিনের পকেটে থাকা ৫ হাজার টাকা বের করেন এই পুলিশ সদস্যরা। তবুও মেলেনি রক্ষা। তাদের হাজতে ঢুকিয়ে রেখে বিকাশে আরও ১০ হাজার টাকা আদায় করেন এই তিন পুলিশ কর্মকর্তা। সেই তিনজনকে থানায় আটক রাখার ভিডিও এবং টাকা লেনদেনের অডিও রয়েছে কালবেলার হাতে। সেই রাতের পুলিশের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সোহাগ; কিন্তু অভিযোগ করার পরই তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এই পুলিশ সদস্যরা। সোহাগ কালবেলাকে বলেন, তিন পুলিশের নামে অভিযোগ করার পর থেকেই অনেক চাপে আছি। নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে তারা। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাহ আলী থানায় গিয়েও পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত ৩ পুলিশের কাউকেই। পরে তাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। এরপর তাদের মোবাইল ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠালেও কোনো উত্তর মেলেনি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অল্পসংখ্যক এমন কিছু পুলিশ সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীর সুনাম নষ্ট হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক কালবেলাকে বলেন, শাহ আলী থানা এলাকার ৩ পুলিশ সদস্য সেখানকার মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। পুলিশের এই দু-একজন কর্মকর্তার অপেশাদার আচরণের কারণে মানুষের মনে অনেক অবিশ্বাস তৈরি হয়। প্রশ্ন হলো এই তিন পুলিশ যা করছেন, তা কি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখেন না। যদি দেখেও না দেখার মতো থাকেন, তাহলে এটাও অপরাধ। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. ফারুক হোসেন কালবেলাকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আমাদের ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে একটি শাখা রয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি এ ধরনের বিচ্যুতিমূলক কাজ করে থাকে, তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাটি অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়। তদন্তে যদি সত্যতা প্রমাণ হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অপরাধ বিবেচনায় চাকরিচ্যুতও হতে পারে। আমরা বলতে চাই, একজন ব্যক্তি পুলিশের অপরাধের দায় শুধুই তার। ডিপার্টমেন্ট তার অপরাধের দায়ভার বহন করবে না।
০৬ মে, ২০২৪

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
পিরোজপুরের নেছারাবাদ মৈশানী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী হালদারের বিরুদ্ধে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তিনটি পদে নিয়োগে ১০টি আবেদন পড়লেও অজ্ঞাত কারণে বন্ধ রেখেছেন নিয়োগ। এ নিয়ে বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক দুই সভাপতি ও স্থানীয়রা ক্ষোভ জানিয়েছেন। স্থানীয় শিমুল গাজী অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী হালদার বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে আমার কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছেন। ওই পদে আমার স্ত্রী প্রার্থী ছিল। বিদ্যালয়ের ডোনেশনের কথা বলে তিনি ওই টাকা নিয়েছেন। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছে না, নিয়োগও দিচ্ছে না। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও সমুদয়কাঠি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়ে আমি এক সময় সভাপতি ছিলেন। আমি থাকাকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক এবং নিরাপত্তাকর্মী পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী। নিয়োগে বেশ কয়েকটি আবেদন জমা পড়ে। তিনি ওই পদের বিপরীতে মোটা অঙ্কের টাকার প্রার্থী না পেয়ে আমার সঙ্গে কোনো আলাপ আলোচনা না করেই নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি ও সমুদয়কাঠি ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমাউন কবির বেপারি বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ। আমি নিজে উপস্থিত থেকে নতুন কমিটি করে দিয়েছি। কমিটি গঠনের দিন প্রধান শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়ায় নতুন কমিটি পাস হয়নি। তবে তিনি বিদ্যালয়ের তিনটি পদের নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন। তিনি আমার কাছে কিছু না বলেই সেই নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছেন। সেখানে কিছুটা তার স্বেচ্ছাচারিতা রয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আরেক সাবেক সভাপতি আব্দুল হালিম গাজী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে কয়েক বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী হালদার। তিনি বিদ্যালয়ের একটি নিয়োগ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্য ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিনি বিদ্যালয়ের তিনটি পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নানা অনিয়ম শুরু করেছিলেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে মতানৈক্য দেখা দেয়। পরে ইচ্ছে করে বিদ্যালয় থেকে সরে যাই আমি। পরে বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যদের অনুরোধে আমি পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি।  তিনি বলেন, পর্শিয়া রানী আমাকে কমিটির সভাপতি মানতে না পেরে তিনি কমিটির কাগজ ফরোয়ার্ড করেননি। তিনি বিদ্যালয়ের ওই তিনটি অফিস সহায়ক পদে স্থানীয় শিমুল গাজীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়েছেন। বাকি দুটি পদে ঘুষ না পেয়ে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে রেখেছেন। আমি সভাপতি হলে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ দিব তাই তিনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন না। অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী হালদার কালবেলাকে বলেন, বিদ্যালয়ের তিনটি পদে নিয়োগের জন্য ১০টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রার্থীরা বর্তমান সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হুমাউন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণ নিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো মতামত দিচ্ছে না। তাই নিয়োগ দিতে পারছি না। নেছারাবাদ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, নিয়োগসংক্রান্ত লেনদেনের ব্যাপারে আমাকে কিছু জানায়নি। কোনো অভিযোগও আমি পাইনি। তবে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিটিংয়ের দিন অসুস্থ হয়ে পড়ায় অফিসিয়াল কোনো ডকুমেন্টসে এখন পর্যন্ত স্বাক্ষর করা হয়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে।
০১ মে, ২০২৪

বনের জায়গায় পাকা ঘর, কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য
কক্সবাজারের পেকুয়ার বারবাকিয়া, টইটং ও শিলখালীর পাহাড়ি অঞ্চলের বন বিভাগের সংরক্ষিত জায়গায় গত দুই বছরে গড়ে উঠেছে প্রায় দেড় শতাধিক পাকা স্থাপনা। স্থানীয়দের ভাষ্য- প্রতিটি স্থাপনা গড়ে তুলতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক। এতে বন বিভাগের জায়গা বেদখল করে কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের শুরুর দিকে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন হাবিবুল হক। তখন থেকে বর্তমান সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন পেকুয়ার তিন পাহাড়ি অঞ্চলে বন বিভাগের প্রায় ১০০ হেক্টর জায়গার দখল বিক্রি করেছেন এ রেঞ্জ কর্মকর্তা। বেদখল হওয়া এসব জায়গায় গড়ে উঠেছে প্রায় দেড়শর উপরে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাকা ঘরবাড়ি। অনুসন্ধানে জানা যায়, বারবাকিয়া ও শিলখালীর পাহাড়ি জায়গায় পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তার পক্ষে আর্থিক লেনদেন করেন পাহাড়িয়াখালী এলাকার বাসিন্দা জালাল আহমদ। তিনি বন বিভাগের হেডম্যান পরিচয় দিয়ে আরও নানাবিধ অপকর্ম করে থাকেন বলে জানা যায়। এ ছাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তার ডান হাত হিসেবেও বেশ পরিচিত তিনি। অন্যদিকে টইটং এলাকায় রেঞ্জ কর্মকর্তার নির্দেশে টাকা তোলেন হাছানের জুম এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে অলি আহমদ। টইটংয়ে বন বিভাগের জায়গায় পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ, পাহাড়কাটা, অবৈধ বালু উত্তোলনসহ নানা অপকর্ম করার আগে তার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অলিখিত চুক্তি করতে হয়। সকল অপকর্ম সম্পাদনের জন্য টাকা তুলে তিনি দিয়ে আসেন রেঞ্জ কর্মকর্তার হাতে। স্থানীয়দের দাবি অলি আহমদের কাছে জিম্মি পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষ। টইটং, শিলখালী ও বারবাকিয়া পাহাড়ি এলাকা ঘুরে জানা যায়, গর্জনিয়া পাড়ায়  জামাল হোসেন, জুমপাড়ায় যুবদল নেতা আকতার হোসেন, সোলতান আহমদের ছেলে মৌলভী আলী হোসেন, নুরুল আজিম, ফজুরমুরা এলাকায় মৃত মাহমুদুল হকের ছেলে মো. বাচ্চু, ফজুর মুরা এলাকার ছবির আহমদের ছেলে মো. আলম, কেরনছড়ি এলাকায় মালদ্বীপ প্রবাসী নাসির উদ্দিন, কাতার প্রবাসী আহমদ শফি, চেপ্টামোরা এলাকায় লাইলা বেগম, আবদুল মাজেদ, মধুখালী এলাকায় ঠান্ডা মিয়ার ছেলে আবদু রহিম, ফুরুক আহমদের ছেলে লেদু মিয়া, চৌকিদার পাড়ায় সৌদি প্রবাসি আবুল কাশেম, মৌলভী পাড়ায় সালাহ উদ্দিন, আহমদ ছফার ছেলে শাকের, দরগাহ মোড়া এলাকায় আবদুল হাকিমের ছেলে শাহনেওয়াজ, আবদুল্লাহ পাড়ার জাফর সওদাগর, হাছানেরজুম এলাকায় আবদুল হাকিম, ছনখোলারজুম ছালাম মার্কেটের পাশে মনোয়ারা বেগম, রমিজ পাড়ায় নুরুল হকের ছেলে আববাস উদ্দিন, নতুন পাড়ায় বাদশা মিয়া, খুইন্যাভিটায় মৌলভী হোসাইনের ছেলে শাহাব উদ্দিন, খলিফা মুরায় নুরুল আবছারের ছেলে শাহাবুদ্দিন, জারুলবনিয়া ঢালার মুখ এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী আবদুল্লাহ, মাঝেরঘোনায় মৌলভী নুরুল কবির, ফরিদুল আলমের ছেলে খোকন মিস্ত্রি, সৌদি প্রবাসী বদিউল আলম, সবুজ পাড়ায় ইদ্রিসের ছেলে গরু ব্যবসায়ী মনু মিয়া, মুহাম্মদ হোসেনের ছেলে রমিজ আহমদ, মৃত রহমত আলীর ছেলে আলমগীর, মৃত নুর আহমদের ছেলে জামাল হোসেন, তারাবনিয়া পাড়ার শাহ আলম, হোসাইনাবাদ এলাকায় সৌদি প্রবাসী আবদুল খালেকের ছেলে শওকত, ফাইন্যারচড়া এলাকায় আকতার হোসেনের ছেলে কফিল উদ্দিন, বারবাকিয়া ভারুয়াখালী এলাকায় আবদুল হাকিমের ছেলে হেলাল উদ্দিন, মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে আবুল কাশেম, ওমান প্রবাসী ফয়জুল করিম, সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলামের ছেলে কায়সার উদ্দিনসহ আরও অনেকে স্থায়ী পাকা ঘরিবাড়ি নির্মাণ করেছেন। এসব পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক। এদিকে রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক তিন ইউনিয়নে রাম রাজত্ব কায়েম করলেও বন মামলার ভয়ে কেউ টুঁ শব্দ করার সাহস পায় না। এলাকার সাধারণ মানুষ তার কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। হাবিবুল হক পাহাড়ি জনপদে যেন এক অঘোষিত রাজা এমনটা জানিয়েছেন পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ জনগণ। অভিযোগ অস্বীকার করে অলি আহমদ জানান, আমি এসবে জড়িত নই। কারও কাছ থেকে কোনো সময় টাকা নেওয়া হয়নি। রেঞ্জ কর্মকর্তা টাকা নেয় কি না আমার জানা নেই। হেডম্যান পরিচয়দানকারী জালাল আহমদ এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। এ বিষয়ে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক জানায়, রিজার্ভ জায়গায় যে সমস্ত বাড়িঘর তৈরি করছে আমরা অভিযান চালিয়ে এসব গুঁড়িয়ে দিয়েছি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি। কারও কাছ থেকে টাকা নেয়নি। এগুলো মিথ্যা কথা, অপপ্রচার।  চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, যারা বাড়িঘর করেছে তাদের তালিকাটা দিন। বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৯ এপ্রিল, ২০২৪
X