পিরোজপুরের নেছারাবাদ মৈশানী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী হালদারের বিরুদ্ধে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তিনটি পদে নিয়োগে ১০টি আবেদন পড়লেও অজ্ঞাত কারণে বন্ধ রেখেছেন নিয়োগ। এ নিয়ে বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক দুই সভাপতি ও স্থানীয়রা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
স্থানীয় শিমুল গাজী অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী হালদার বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে আমার কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছেন। ওই পদে আমার স্ত্রী প্রার্থী ছিল। বিদ্যালয়ের ডোনেশনের কথা বলে তিনি ওই টাকা নিয়েছেন। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছে না, নিয়োগও দিচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও সমুদয়কাঠি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়ে আমি এক সময় সভাপতি ছিলেন। আমি থাকাকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক এবং নিরাপত্তাকর্মী পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী। নিয়োগে বেশ কয়েকটি আবেদন জমা পড়ে। তিনি ওই পদের বিপরীতে মোটা অঙ্কের টাকার প্রার্থী না পেয়ে আমার সঙ্গে কোনো আলাপ আলোচনা না করেই নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি ও সমুদয়কাঠি ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমাউন কবির বেপারি বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ। আমি নিজে উপস্থিত থেকে নতুন কমিটি করে দিয়েছি। কমিটি গঠনের দিন প্রধান শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়ায় নতুন কমিটি পাস হয়নি। তবে তিনি বিদ্যালয়ের তিনটি পদের নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন। তিনি আমার কাছে কিছু না বলেই সেই নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছেন। সেখানে কিছুটা তার স্বেচ্ছাচারিতা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আরেক সাবেক সভাপতি আব্দুল হালিম গাজী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে কয়েক বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী হালদার। তিনি বিদ্যালয়ের একটি নিয়োগ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্য ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিনি বিদ্যালয়ের তিনটি পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নানা অনিয়ম শুরু করেছিলেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে মতানৈক্য দেখা দেয়। পরে ইচ্ছে করে বিদ্যালয় থেকে সরে যাই আমি। পরে বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যদের অনুরোধে আমি পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি।
তিনি বলেন, পর্শিয়া রানী আমাকে কমিটির সভাপতি মানতে না পেরে তিনি কমিটির কাগজ ফরোয়ার্ড করেননি। তিনি বিদ্যালয়ের ওই তিনটি অফিস সহায়ক পদে স্থানীয় শিমুল গাজীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়েছেন। বাকি দুটি পদে ঘুষ না পেয়ে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে রেখেছেন। আমি সভাপতি হলে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ দিব তাই তিনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন না।
অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পর্শিয়া রানী হালদার কালবেলাকে বলেন, বিদ্যালয়ের তিনটি পদে নিয়োগের জন্য ১০টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রার্থীরা বর্তমান সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হুমাউন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণ নিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো মতামত দিচ্ছে না। তাই নিয়োগ দিতে পারছি না।
নেছারাবাদ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, নিয়োগসংক্রান্ত লেনদেনের ব্যাপারে আমাকে কিছু জানায়নি। কোনো অভিযোগও আমি পাইনি। তবে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিটিংয়ের দিন অসুস্থ হয়ে পড়ায় অফিসিয়াল কোনো ডকুমেন্টসে এখন পর্যন্ত স্বাক্ষর করা হয়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে।
মন্তব্য করুন