মোহাম্মদ সাগর, উপকূলীয় (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বনের জায়গায় পাকা ঘর, কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য

বন বিভাগের সংরক্ষিত জায়গায় নির্মাণ হচ্ছে পাকা ঘর। ছবি : কালবেলা
বন বিভাগের সংরক্ষিত জায়গায় নির্মাণ হচ্ছে পাকা ঘর। ছবি : কালবেলা

কক্সবাজারের পেকুয়ার বারবাকিয়া, টইটং ও শিলখালীর পাহাড়ি অঞ্চলের বন বিভাগের সংরক্ষিত জায়গায় গত দুই বছরে গড়ে উঠেছে প্রায় দেড় শতাধিক পাকা স্থাপনা। স্থানীয়দের ভাষ্য- প্রতিটি স্থাপনা গড়ে তুলতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক। এতে বন বিভাগের জায়গা বেদখল করে কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের শুরুর দিকে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন হাবিবুল হক। তখন থেকে বর্তমান সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন পেকুয়ার তিন পাহাড়ি অঞ্চলে বন বিভাগের প্রায় ১০০ হেক্টর জায়গার দখল বিক্রি করেছেন এ রেঞ্জ কর্মকর্তা। বেদখল হওয়া এসব জায়গায় গড়ে উঠেছে প্রায় দেড়শর উপরে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাকা ঘরবাড়ি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বারবাকিয়া ও শিলখালীর পাহাড়ি জায়গায় পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তার পক্ষে আর্থিক লেনদেন করেন পাহাড়িয়াখালী এলাকার বাসিন্দা জালাল আহমদ। তিনি বন বিভাগের হেডম্যান পরিচয় দিয়ে আরও নানাবিধ অপকর্ম করে থাকেন বলে জানা যায়। এ ছাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তার ডান হাত হিসেবেও বেশ পরিচিত তিনি।

অন্যদিকে টইটং এলাকায় রেঞ্জ কর্মকর্তার নির্দেশে টাকা তোলেন হাছানের জুম এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে অলি আহমদ। টইটংয়ে বন বিভাগের জায়গায় পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ, পাহাড়কাটা, অবৈধ বালু উত্তোলনসহ নানা অপকর্ম করার আগে তার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অলিখিত চুক্তি করতে হয়। সকল অপকর্ম সম্পাদনের জন্য টাকা তুলে তিনি দিয়ে আসেন রেঞ্জ কর্মকর্তার হাতে। স্থানীয়দের দাবি অলি আহমদের কাছে জিম্মি পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষ।

টইটং, শিলখালী ও বারবাকিয়া পাহাড়ি এলাকা ঘুরে জানা যায়, গর্জনিয়া পাড়ায় জামাল হোসেন, জুমপাড়ায় যুবদল নেতা আকতার হোসেন, সোলতান আহমদের ছেলে মৌলভী আলী হোসেন, নুরুল আজিম, ফজুরমুরা এলাকায় মৃত মাহমুদুল হকের ছেলে মো. বাচ্চু, ফজুর মুরা এলাকার ছবির আহমদের ছেলে মো. আলম, কেরনছড়ি এলাকায় মালদ্বীপ প্রবাসী নাসির উদ্দিন, কাতার প্রবাসী আহমদ শফি, চেপ্টামোরা এলাকায় লাইলা বেগম, আবদুল মাজেদ, মধুখালী এলাকায় ঠান্ডা মিয়ার ছেলে আবদু রহিম, ফুরুক আহমদের ছেলে লেদু মিয়া, চৌকিদার পাড়ায় সৌদি প্রবাসি আবুল কাশেম, মৌলভী পাড়ায় সালাহ উদ্দিন, আহমদ ছফার ছেলে শাকের, দরগাহ মোড়া এলাকায় আবদুল হাকিমের ছেলে শাহনেওয়াজ, আবদুল্লাহ পাড়ার জাফর সওদাগর, হাছানেরজুম এলাকায় আবদুল হাকিম, ছনখোলারজুম ছালাম মার্কেটের পাশে মনোয়ারা বেগম, রমিজ পাড়ায় নুরুল হকের ছেলে আববাস উদ্দিন, নতুন পাড়ায় বাদশা মিয়া, খুইন্যাভিটায় মৌলভী হোসাইনের ছেলে শাহাব উদ্দিন, খলিফা মুরায় নুরুল আবছারের ছেলে শাহাবুদ্দিন, জারুলবনিয়া ঢালার মুখ এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী আবদুল্লাহ, মাঝেরঘোনায় মৌলভী নুরুল কবির, ফরিদুল আলমের ছেলে খোকন মিস্ত্রি, সৌদি প্রবাসী বদিউল আলম, সবুজ পাড়ায় ইদ্রিসের ছেলে গরু ব্যবসায়ী মনু মিয়া, মুহাম্মদ হোসেনের ছেলে রমিজ আহমদ, মৃত রহমত আলীর ছেলে আলমগীর, মৃত নুর আহমদের ছেলে জামাল হোসেন, তারাবনিয়া পাড়ার শাহ আলম, হোসাইনাবাদ এলাকায় সৌদি প্রবাসী আবদুল খালেকের ছেলে শওকত, ফাইন্যারচড়া এলাকায় আকতার হোসেনের ছেলে কফিল উদ্দিন, বারবাকিয়া ভারুয়াখালী এলাকায় আবদুল হাকিমের ছেলে হেলাল উদ্দিন, মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে আবুল কাশেম, ওমান প্রবাসী ফয়জুল করিম, সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলামের ছেলে কায়সার উদ্দিনসহ আরও অনেকে স্থায়ী পাকা ঘরিবাড়ি নির্মাণ করেছেন। এসব পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক।

এদিকে রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক তিন ইউনিয়নে রাম রাজত্ব কায়েম করলেও বন মামলার ভয়ে কেউ টুঁ শব্দ করার সাহস পায় না। এলাকার সাধারণ মানুষ তার কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। হাবিবুল হক পাহাড়ি জনপদে যেন এক অঘোষিত রাজা এমনটা জানিয়েছেন পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ জনগণ।

অভিযোগ অস্বীকার করে অলি আহমদ জানান, আমি এসবে জড়িত নই। কারও কাছ থেকে কোনো সময় টাকা নেওয়া হয়নি। রেঞ্জ কর্মকর্তা টাকা নেয় কি না আমার জানা নেই।

হেডম্যান পরিচয়দানকারী জালাল আহমদ এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।

এ বিষয়ে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হাবিবুল হক জানায়, রিজার্ভ জায়গায় যে সমস্ত বাড়িঘর তৈরি করছে আমরা অভিযান চালিয়ে এসব গুঁড়িয়ে দিয়েছি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি। কারও কাছ থেকে টাকা নেয়নি। এগুলো মিথ্যা কথা, অপপ্রচার।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, যারা বাড়িঘর করেছে তাদের তালিকাটা দিন। বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিপুন সমর্থিত শিল্পীদের মিশা-ডিপজলকে সংবর্ধনা

বাড়াবাড়ি করবেন না, বিদায় করে দেব, এমপিকে কাউন্সিলরের হুমকি

ট্রেনে কাটা পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ঘরে বসে নিশ্চিন্তে কোরবানি হবে বেঙ্গল মিটে

দুবাইয়ে বিদেশিদের গোপন সম্পদ, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশি

বিএনপির আরও ৪ নেতা বহিষ্কার

তীব্র গরমে ক্লাসেই অসুস্থ ৩০ শিক্ষার্থী

নবীনদের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দিচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

এলসভিয়ার থেকে ফ্রি ই-বুকের সুবিধা পাবে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগ শনিবারেও খোলা থাকবে

১০

লু’র কথার পরে ফখরুলের বক্তব্যের আর কোনো মূল্য নেই : কাদের

১১

রাসেল ভাইপার আতঙ্কে মিলছে না ধানকাটার শ্রমিক!

১২

জেলায় জেলায় ডাকাতি করাই তাদের নেশা

১৩

প্রমাণ হলো এসএমসি প্লাস অনুমোদনহীন, কর্ণধারকে জরিমানা

১৪

উন্নয়ন প্রকল্পে মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে সমীক্ষা করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

১৫

নিপুন অসুস্থ, তাকে মানসিক ডাক্তার দেখানো জরুরি : জায়েদ খান

১৬

বিমানবন্দরের সামনে মাইক্রোবাসে আগুন

১৭

জেনিথ লাইফের সঙ্গে মিডল্যান্ড ব্যাংকের চুক্তি

১৮

ফ্রেশারদের চাকরির সুযোগ দিচ্ছে ওয়ান ব্যাংক, পদ ৩০

১৯

৯ হজ এজেন্সিকে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্নের নির্দেশ

২০
X