ব্যালটের ছবি ছড়ানো সেই ছাত্রলীগ নেতার শাস্তি
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলমারা ব্যালটের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করায় ইয়াকুব আলী মিশুক নামে সেই ছাত্রলীগ নেতার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অনাদায়ে সাত দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জুডিশিয়াল ম্যাজিন্ট্রেট সাইয়েদ মোহাম্মদ শাফায়াত হোসেনের আদালত তাকে এ সাজা দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ইয়াকুব আলী মিশুক উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বুধবার (২৯ মে) সকালে উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরসাহাভিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (চাঁন মিয়ার দোকান) ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন ইয়াকুব আলী।  জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা মোবাইল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এরপর ব্যালট নিয়ে গোপন বুথে যান। সেখানে ব্যালটে সিল মারেন ও বুথের সামনেই ব্যালটসহ ছবি তুলে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার আহসানুল বারী ভূঁইয়া বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে বুথের সামনে সিলমারা ব্যালটের ছবি তোলার বিষয়টি জানার পর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নির্দেশে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে সাজা দেন। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বলেন, ভোটকেন্দ্রের গোপন বুথে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ছবি তোলা বেআইনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এরপরও ওই ব্যক্তি কীভাবে মোবাইল ব্যবহার করছেন তা বোধগম্য নয়। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সুদ্বীপ রায় বলেন, জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে বুধবার সন্ধায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জরিমানা পরিশোধ করে জেল থেকে বের হতে পারবেন।
৩০ মে, ২০২৪

অপরাধী হলে শাস্তি পেতেই হবে, সাবেক সেনাপ্রধান-আইজিপির বিষয়ে কাদের
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদের প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো অপরাধী শাস্তি ছাড়া পার পাবে না।  মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।  সেতুমন্ত্রী বলেন, অপরাধী হলে অপরাধের জন্য শাস্তি পেতেই হবে। কোনো অপরাধী শাস্তি ছাড়া পার পাবে না। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে এখন তদন্ত হচ্ছে এবং আরও তদন্ত হবে- এ কথা দুদক সূত্রে জানা গেছে। তদন্ত হচ্ছে মানে মামলা হলে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। যিনি সেনাবাহিনীর প্রধান, তিনিও যদি অপরাধী হোন, তার বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে দুদকের কোনো বাধা নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করতে পারবে। অপরাধী হলে অপরাধের জন্য শাস্তি পেতেই হবে। সে যে-ই হোক।  মির্জা ফখরুল ও বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, কথায় কথায় সাবেক আইজিপির দুর্নীতির কথা বলে। তাদের আমলে আশরাফুল হুদা আইজিপি, কে করেছে তার বিচার? বিএনপি আমলে কি তার বিচার হয়েছে? লতিফুল হুদা চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টায় জড়িত, এই লতিফুল হুদার বিচার কি হয়েছে? এসপি কহিনুরকে তখন বলা হতো ভিআইপি এসপি। এই কহিনুরের হাতে কত রাজনৈতিক কর্মী  নির্যাতিত হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারী পর্যন্ত রাজপথে মিছিল করতে গিয়ে কহিনুরের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই কহিনুরের দুর্নীতির বিষয় ঢাকা শহরের লোকের মুখে মুখে, কে করেছে বিচার? তিনি বলেন, তাদের আমলে তাদের যেসব নেতারা দুর্নীতি করেছে, হাওয়া ভবনের দুর্নীতি, এগুলোর বিচার কি তারা কোনো দিন করবে? তাদের এসব অপরাধের বিচার কি তারা করেছে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশে পঁচাত্তর পরবর্তীকালে একমাত্র ক্ষমতাসীন রাজনীতিক, যিনি অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখেন। দলের লোক হোক- ক্ষমা নেই, যদি অপরাধ-অপকর্ম করে থাকে। সেটা তিনি এ পর্যন্ত প্রমাণ করেছেন।  সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, বেনজীরের বাড়ি তো টুঙ্গীপাড়া, সেই সূত্রেও তো অনেকে ভাবতে পারে যে ক্ষমা পাবে; অপরাধীর ক্ষমা নেই, এটা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা তো ছাত্রলীগের কর্মী। রেহাই পেয়েছে? কাউকে কি ছাড় দেওয়া হয়েছে? বিশ্বজিতের কথা সবার মনে আছে। বিএনপি নিজেদের অপরাধ ঢাকতে অপপ্রচার করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, অপরাধীর বিচার হতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা হবে।
২৮ মে, ২০২৪

তারেককে শাস্তি দেওয়াই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করায় প্রধানমন্ত্রী তার ওপর রাগান্বিত হয়েছেন। এখন সরকারের টার্গেটই যেন তারেক রহমান। তাদের একমাত্র কাজ তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেওয়া। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে নজরুল ইসলাম খান এসব বলেন। ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জেলা সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধন হয়। ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। মানববন্ধনে সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে, আপনি এমন ডুবতে শুরু করেছেন আর তল খুঁজে পাচ্ছেন না।
২৮ মে, ২০২৪

ঋণখেলাপিদের শাস্তি ছাড়া ব্যাংক একত্রীকরণে সুফল মিলবে না
সম্প্রতি পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে পাঁচটি বড় ব্যাংকের সঙ্গে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাইভেট খাতের এক্সিম ব্যাংক সবচেয়ে দুর্বল প্রাইভেট ব্যাংক পদ্মা ব্যাংককে অধিগ্রহণ করেছে সবার আগে, এরপর সিটি ব্যাংককে বেসিকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তারপর সোনালী ব্যাংক বিডিবিএলকে অধিগ্রহণ করার ঘোষণা এসেছিল, ১২ মে ২০২৪ তারিখে এই দুই ব্যাংক একীভূত হওয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর একীভূত হওয়ার ঘোষণা এসেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের। এটা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।  সবশেষে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিন একীভূত হওয়ার ঘোষণা এসেছিল প্রাইভেট ব্যাংক ইউসিবি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের। কিন্তু, ন্যাশনাল ব্যাংকের নবগঠিত পর্ষদ এই একীভূতকরণের ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা নাকি ন্যাশনাল ব্যাংককে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করাবে। এভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের সঙ্গে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত ‘ভলান্টারি’ ছিল কি না, কিংবা কেন ও কী শর্তে গ্রহণ করা হয়েছিল, তা এখনো জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক চাপ দিয়ে এই ব্যাংকগুলোকে মার্জারের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা গুরুতর অভিযোগ।  ‘মার্জার’ দুটি সংস্থার ‘ভলান্টারি’ বা স্বপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত না হলে তা বুমেরাং হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো বিশেষজ্ঞদের কিংবা ওইসব ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পছন্দসই হয়নি বোঝা যাচ্ছে। বেসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিবর্তে অন্য কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। তাই বলা প্রয়োজন, পাঁচটি দুর্বল ব্যাংকের মধ্যে তিনটির ব্যাপারে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাওয়ার পর বোঝা যাবে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে কি না। আরও পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে ‘মার্জার’-এ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। শর্তগুলো বিস্তারিত না জেনে বর্তমান পর্যায়ে মার্জারের সুফল এবং কুফল সম্পর্কে মন্তব্য করা সময়োচিত না-ও হতে পারে। তবুও কয়েকটি মন্তব্য সমীচীন মনে করছি। এক্সিম ব্যাংককে নাকি অন্য আরেকটি ব্যাংক অধিগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাপ প্রদান করা হয়েছিল, কিন্তু তারা পদ্মা ব্যাংককে বেছে নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পেছনে নিশ্চয়ই তার কিছু হিসাবনিকাশ রয়েছে। সোনালী ব্যাংক এবং বিডিবিএল একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক। এখন দীর্ঘমেয়াদি শিল্প ঋণ দেওয়ার জন্য আলাদা ব্যাংক থাকার ভালো যুক্তি নেই, কারণ এতদিনে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকই দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।  বিডিবিএল এর আগে দুটি শিল্পায়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধুঁকে ধুঁকে টিকে ছিল—একটি বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, অন্যটি বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস)। চার দশক ধরে এই দুটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণে জর্জরিত ছিল। পরে ওগুলোকে সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তর করা হলেও ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো। বিডিবিএল এর খেলাপি ঋণগুলো দীর্ঘদিনের। এগুলো আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এত বেশি খেলাপি ঋণের বোঝা সোনালী ব্যাংক কীভাবে সামলায়, সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মার্জারও যৌক্তিক। আমার মতে আলাদা করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তটিই ভুল ছিল, কৃষি ব্যাংকের শাখা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের আঞ্চলিক কৃষি ঋণের চাহিদা পূরণের দায়িত্বটি পালন যথাযথ হতো।  বেসিক অত্যন্ত ভালো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ছিল, যার খেলাপি ঋণের অনুপাত দেড় দশক আগেও ৩-৪ শতাংশের বেশি ছিল না। কিন্তু শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল রেখে কয়েক বছর লুটপাট করতে দেওয়া হয়েছে। বহুদিন পর আবদুল হাই বাচ্চুকে অপসারণ করে তার পরিবর্তে নতুন চেয়ারম্যান করা হলেও ব্যাংকটিকে পতনের ধারা থেকে ফেরানো যায়নি। এখন এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৮ শতাংশের বেশি। তাই আলাদাভাবে এই ব্যাংকটি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। অতএব, মার্জারের মাধ্যমে ব্যাংকটির অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা সময়োচিত সিদ্ধান্ত। তবে একটি পতনোন্মুখ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বোঝা অন্য বেসরকারি ব্যাংক কীভাবে বহন করবে—সেটা উদ্বেগের বিষয়।  একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর বেসিক ব্যাংকের আমানত প্রত্যাহারের হিড়িক পড়েছে। আশঙ্কার কারণ রয়েছে যে, এর ফলে যে কোনো সময় ব্যাংকের আমানতকারীদের আমানত ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ব্যাংকটি ব্যর্থ হতে পারে। ন্যাশনাল ব্যাংক জন্মলগ্ন থেকেই লুটপাটের শিকার। অন্যতম ফার্স্ট-জেনারেশন প্রাইভেট ব্যাংক হিসেবে ১৯৮৩ সালে জন্মগ্রহণের পর একসময়ের বড় প্রাইভেট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত হলেও সিকদার পরিবারের দুই ভাই রণ হক সিকদার ও রিক হক সিকদারের হাতে পড়ার পর ব্যাংকটি লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে কয়েক বছর আগেই। (অবশ্য জনশ্রুতি রয়েছে যে, প্রথম থেকেই বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ীর লুটপাটের শিকার হয়েছিল ব্যাংকটি)। এরকম একটি নিমজ্জমান প্রাইভেট ব্যাংককে উদ্ধার করতে গিয়ে ইউসিবি নিজেই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান নিজেই দেশের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, যার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা ন্যাশনাল ব্যাংক পেয়ে গেলে মুনাফাদায়ক হবে। তিনি ব্যাংকটিকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়ায় ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমান সিদ্ধান্তটি শাপেবর হতে পারে। যে কথাটি জোর দিয়ে বলা প্রয়োজন তা হলো, এই পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তির আওতায় না এনে ব্যাংকগুলো মার্জারের মাধ্যমে অন্য পাঁচটি ব্যাংকের অধিগ্রহণে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি একটি বড় ধরনের ‘মরাল হ্যাজার্ডের’ জন্ম দিচ্ছে। পদ্মা ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল ফার্মার্স ব্যাংক হিসেবে, ওটার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং সরকারের সাবেক আমলা ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর। একটি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ কোটি টাকা তার সারা জীবনের বৈধ আয় থেকেও সংগ্রহ করা অসম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে হয়তো পুরস্কৃত করা হয়েছিল তার ১৯৯৬ সালের ‘জনতার মঞ্চের’ ভূমিকার জন্য। কিন্তু, প্রথম থেকেই ফারমার্স ব্যাংক লুটপাটের শিকার হয়ে লাটে ওঠার জোগাড় হওয়ায় পদ্মা ব্যাংক নাম দিয়ে ব্যাংকটিকে সরকার বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল।  বোঝা যাচ্ছে, সরকারের ওই প্রয়াস ফেল মেরেছে। কিন্তু ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের কী শাস্তি হয়েছে? এবার এমপি নমিনেশন না পেলেও তিনি তো বহাল তবিয়তেই রয়েছেন! বেসিকের আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে শেষমেশ দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে, তিনি নাকি এখন পলাতক। কিন্তু কয়েক বছর আগেই তো বেসিককে ধ্বংস করে দিয়েছিল বাচ্চু। কই, তখন তো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি? রণ হক সিকদার এবং রিক হক সিকদার বেশ কয়েক বছর আগেই বন্দুকের নল মাথায় ঠেকিয়ে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে বাধ্য করার ঘটনায় হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। ওই ঘটনার জন্য তাদের কি কোনো শাস্তি পেতে হয়েছে? আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে পুরোনো এবং সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ সমস্যা। বর্তমানে দেশের প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ কোটি টাকা প্রদত্ত ব্যাংক ঋণের মধ্যে কমপক্ষে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণে পরিণত হয়ে গেছে, কিন্তু নানা কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তিন মাস পরপর প্রকাশিত ‘ক্ল্যাসিফাইড লোনের’ হিসাবে মাত্র ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকাকে ক্ল্যাসিফাইড দেখানো হচ্ছে। বাকি খেলাপি ঋণকে ‘টেকনিক্যাল কারণে’ হিসাবের বাইরে রাখতে হচ্ছে।  এর মধ্যে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ঝুলে থাকা মামলায় বছরের পর বছর আটকে থাকায় টেকনিক্যালি ওগুলোকে ‘ক্ল্যাসিফাইড’ বলা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো ‘মন্দঋণ’, যেগুলো বিভিন্ন ব্যাংক ‘রাইট অফ’ করে দেওয়ায় ওগুলোকেও আর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ‘ক্লাসিফাইড লোনে’ অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। এর পাশাপাশি আড়াল হয়ে যাচ্ছে বারবার নিয়মবহির্ভূতভাবে ‘রিশিডিউল’ করা ‘পরিশোধের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়া’ বিপুল পরিমাণ ঋণ, যেগুলোর প্রকৃত পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকেরও অজানা। আর একটা ক্যাটাগরির ঋণও অনিয়মিত: যেগুলো নতুন ঋণের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে ‘নিয়মিত’ দেখিয়ে চলেছে বিভিন্ন ব্যাংক। এ ব্যাপারটাও বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।  অতএব, খেলাপি ঋণের ওপরে উল্লিখিত সব ক্যাটাগরিকে যোগ করলে সন্দেহাতীতভাবে বলা যাবে যে, খেলাপি ঋণ সমস্যাটা ব্যাংকিং খাতের ‘নিরাময়-অযোগ্য ক্যান্সারে’ পরিণত হয়ে গেছে তিন দশক আগেই। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা সমস্যাটির ওপরে উল্লিখিত মারাত্মক ডাইমেনশনগুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও ৩০ বছর ধরে খেলাপি ঋণ সমস্যাটিকে কার্পেটের তলায় লুকিয়ে ফেলার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে চলেছেন, সমস্যার সমাধানে তারা মোটেও আন্তরিক নন। বরং, ২০০৯ সাল থেকে সরকার দফায় দফায় আরও ৩০টিরও বেশি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে, যার ফলে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই এদেশে মোট বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা ৬১-তে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত প্রতিবারই নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে ক্ষমতানুযায়ী ওসব সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গেছেন।  এসব নতুন ব্যাংকের মালিকদের মধ্যে তার বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন রয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা রয়েছেন কয়েকজন, যাদের নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ কোটি টাকা মূলধন থাকারই কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। (হয়তো ওইসব ব্যাংকের ‘ব্যবসায়ী পরিচালকরাই’ লাইসেন্সের অর্থ পরিশোধ করে দিয়েছেন)! এভাবে ব্যাংক খোলার যথেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবারই সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি আমি, কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের কর্ণকুহরে ওই প্রতিবাদ পৌঁছায়নি। পাঠকদের জানাচ্ছি, দেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে ১ কোটি ৫৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি। তারা ফর্মাল চ্যানেলে কিংবা হুন্ডির মাধ্যমে যেভাবেই রেমিট্যান্স পাঠান না কেন, তার একটা বড় অংশ নিরাপত্তার খাতিরে ব্যাংকে আমানত হিসাবে জমা হয়ে যাবেই। এর ফলে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের একটা ঢল চলমান রয়েছে। সেজন্য খেলাপি ঋণ সমস্যা তিন দশক আগেই মহাসংকটে পরিণত হলেও ব্যাংকগুলো এখনো বড়সড় তারল্য সংকটে পড়তে হয়নি।  সরকারও যেহেতু ব্যাপারটা জানে, তাই খেলাপি ঋণ আদায়ে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সরকার কখনই সত্যিকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে নিষ্ঠাবান ছিল না। ১৯৯৮ সালে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত বিচারপতি সাহাবুদ্দীন বিআইবিএম আয়োজিত প্রথম নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতায় প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির ওই প্রস্তাবে কর্ণপাতও করেনি তখনকার ক্ষমতাসীন সরকার, কিংবা পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসা ২০০১-০৬ মেয়াদের জোট সরকার এবং ২০০৭-০৮ সালের সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বরং, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলাই ‘কালচারে’ পর্যবসিত হয়েছিল। উদাহরণ: আওয়ামী লীগ কর্তৃক ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দেওলিয়া আদালতকে বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই একেবারে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছিল।  দেওলিয়া আইনটি এখনো বহাল থাকলেও দেওলিয়া আদালতের ঘুম গত ২৩ বছরেও ভাঙেনি। বরং, ২০০১ সাল থেকে খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলার সংস্কৃতি ২৩ বছরে ধাপে ধাপে এমনভাবে গেড়ে বসেছে যে, সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল অভূতপূর্ব কয়েকটি ‘অযৌক্তিক ও অন্যায় সুবিধা’ দিয়ে রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের নিজেদের নাম ঋণখেলাপির তালিকা থেকেই উধাও করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে গেছেন। দেশের সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি এখন খোদ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা! অতএব, খেলাপি ঋণের প্রতি সরকারের এহেন ন্যক্কারজনক দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত রেখে ‘ব্যাংকের মার্জার’ ব্যাংকিং খাতকে সবল করে তুলবে আশা করা কি বাতুলতা নয়? ড. মইনুল ইসলাম: বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ; অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 
২৬ মে, ২০২৪

বাফুফের বড় ৫ কর্তাকে ফিফার শাস্তি
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, নিষিদ্ধ সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ শীর্ষ ৫ কর্তাকে বড় শাস্তি দিয়েছে ফিফা।  শাস্তি পাওয়া অন্য কর্তারা হলেন সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসাইন, অপারেশন্স ম্যানেজার মিজানুর রহমান ও প্রকিউরমেন্ট অফিসার ইমরুল হাসান। মূলত দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে বাফুফের এই শীর্ষ কর্তাদের শাস্তি দিল বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।  বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ফিফার ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ তদন্ত শেষে সংস্থাটির এথিকস কমিটির এডজুকেটরি চেম্বার এই শাস্তির ঘোষণা দেয়।  প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একাধিক সাক্ষ্যপ্রমাণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপরই শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় এথিকস কমিটি।  শাস্তির প্রতিবেদনে বলা হয়- বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহাগকে তিন বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ২৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ফিফা।   এ ছাড়া আবু হোসাইন ও মিজানুর রহমানকে দুই বছরের জন্য দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময়ে তারা কোনো ধরনের ফুটবল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।  নিষিদ্ধ করা না হলে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শিদীকে। ফিফার একাউন্টে জমা করতে হবে ১৩ লাখ টাকা। আর ইমরুল হাসানকে সর্তক করা হয়েছে।    
২৩ মে, ২০২৪

মাতাল হয়ে গাড়ি চালিয়ে দুজনকে হত্যার শাস্তি রচনা লেখা!
মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুজনকে হত্যা করেছে এক কিশোর। এ ঘটনায় শাস্তি দিয়েছেন আদালত। তবে শাস্তি হিসেবে তাকে রচনা লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২২ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  ভারতের বিচার বিভাগ এমন সাজা দিয়েছেন। ফলে বিচার বিভাগের নমনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া জনগণের মাঝে এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ ওই কিশোরের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।  ভারতের মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্রে ফাদনাভিস বলেন, রোববার পুনেতে বেপরোয়া গতির একটি গাড়ি চালাচ্ছিল ১৭ বছরের এক কিশোর। একপর্যায়ে সে একটি মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় দুজন নিহত হয়।  তিনি জানান, এ ঘটনায় ওই কিশোরকে কারা হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর তাকে জুভেইনাল জাস্টিস বোর্ডের সামনে হাজির করা হয়। সেখানে সে জামিনে মুক্তি পায়। তবে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তাকে ১৫ দিনের সমাজসেবা ও সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে রচনা লিখতে বলা হয়েছে।  মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের এমন রায়ের পর ক্ষোভ বাড়তে থাকে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরের বয়স ১৭ বছর ৮ মাস। এটি নৃশংস অপরাধ।  সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভারতে ২০১৫ সালে কিশোর আইনে পরিবর্তন করা হয়। ওই আইন অনুসারে, ১৬ বছরের বেশি বয়সের কিশোরদের নৃশংস অপরাধ করলে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিচার করা যাবে। আইনের এ বিষয়টি উল্লেখ করে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটি অবাক করা আদেশ। জামিনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আবেদনের কথাও জানান তিনি।  পুনের পুলিশ কমিশনার অমিতেশ ‍কুমার জানান, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়ায় কিশোরের বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া যারা মদ সরবরাহ করেছিলেন তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা সবচেয়ে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেছি। নিহতদের ন্যায়বিচার ও অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের ক্ষমতার মধ্যে সবকিছু করব। 
২২ মে, ২০২৪

সম্পাদকীয় / দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন
শিক্ষকতার মতো মহান পেশাও এখন ভয়াবহ সব অপকর্মে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কিছুসংখ্যক শিক্ষক নীতি-নৈতিকতাবিবর্জিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে কলঙ্কিত করছেন পেশাটাকে এবং এ পেশায় অন্যদের ফেলছে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে। বিশেষ করে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা মাঝেমধ্যেই হচ্ছে খবরের শিরোনাম। এ ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন রয়েছে মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী; আবার আছে প্রাথমিকের শিশুরা। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকারের ক্ষেত্রে বাদ যাচ্ছে না ছেলেশিশুরাও! অবাক করা বিষয় হলেও এসবই আমাদের সমাজে ঘটছে; অর্থাৎ, ঘটনা সত্য, যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগ ও হতাশার চিত্র। সোমবার দৈনিক কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনাস্থল রাজশাহীর কাটাখালী। একটি মাধ্যমিক স্কুলের ৩৩ বছর বয়সী শিক্ষক আব্দুল ওয়াকেল ছেলেশিশুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছিলেন পাশবিক যৌন অনাচার। তিনি সেই দৃশ্য আবার ধারণ করে রাখতেন মোবাইল ফোনের ভিডিওতে। অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ‘টিচ ইন’ নামের একটি কোচিং সেন্টারও খোলেন। তার টার্গেটে ছিল ১০ বছরের কম বয়সী শিশুরা। গত শনিবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে। গত রোববার তাকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হলে তিনি দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, আব্দুল ওয়াকেল অন্তত ৫০টি শিশুর ওপর পৈশাচিকতা চালিয়েছেন। তার সাতটি জি-মেইল অ্যাকাউন্টসহ হার্ডডিস্কের ড্রাইভ ও পেনড্রাইভে পাওয়া গেছে অসংখ্য শিশুর আপত্তিকর ভিডিও। এর আগে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মুরাদ হোসেন সরকার নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বহু ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনার কথা সবার জানা। প্রায় এক দশক ধরে তিনি শিশুছাত্রীদের নানাভাবে যৌন নির্যাতন করে আসছিলেন। একই প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগ এর আগেও রয়েছে একাধিক। তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার জন্ম দেয় এক দশকেরও বেশি সময় আগে স্কুলটির শিক্ষক পরিমল জয়ধর নামের একজন শিক্ষক। সেই ঘটনায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এরপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বারবার এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও উঠেছে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ, যা খুবই হতাশার। এসব ঘটনা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের সাক্ষ্য বহন করে। শিক্ষকের নীতি-আদর্শের এমন অধঃপতন হলে ভরসা-আস্থা-বিশ্বাসযোগ্যতা আর দায়িত্ববোধের জায়গা বলে সমাজে আর কিছু থাকে কি? একের পর এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনা অভিভাবকদের স্বাভাবিকভাবেই ভীতসন্ত্রস্ত না করে পারে না। কেননা এ চিত্র যে কোনো সমাজের জন্যই ভয়াবহ। শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থী নিরাপদ নয়, এর চেয়ে হতাশার চিত্র আর কী হতে পারে! এমন শিক্ষকের জন্য শিক্ষক সমাজ নিশ্চয়ই লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছে। আমরা প্রকৃত শিক্ষাগুরুদের কথা ভেবে অবশ্যই দুঃখ বোধ করছি। আমরা চাই, এ ঘটনায় প্রমাণ সাপেক্ষে দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। শিক্ষকের কাছে সন্তান পাঠিয়ে যদি অভিভাবকদের এমন শঙ্কাগ্রস্থ ও সতর্ক থাকতে হয়, তাহলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা মনে করি, সামাজিক-নৈতিক অবক্ষয় রোধে শুধু আইন নয়, পরিবার ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সাংস্কৃতিক চর্চার মতো বাড়াতে হবে নানা শুদ্ধচর্চা।
২২ মে, ২০২৪

শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করিনি : সাবেক সেনাপ্রধান
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞায় অবাক হয়েছি। অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে যে কোনো পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত রয়েছি। মঙ্গলবার (২১ মে) একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ২৪-কে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন। এর আগে দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ মে) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণার কথা জানানো হয়। এদিকে, সাক্ষাৎকারে আল জাজিরায় প্রকাশিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’-এর প্রসঙ্গ তুলে আনেন আজিজ আহমেদ। সেটাকে একটি নাটক হিসেবেও আখ্যা দেন তিনি। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ বলেন, ‘২০২১ সালে আল জাজিরার তৈরি করা ডকুমেন্টারিতে যে দুটি অভিযোগ করা হয়েছিল, এই নিষেধাজ্ঞাতেও সেই দুই অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। এই দুটি জিনিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’ ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে আজিজ বলেন, ‘আমি সেনাপ্রধান হওয়ার অনেক আগে থেকে সে বিদেশে বসবাস করে। সে যদি বিদেশে গিয়ে থাকে তাহলে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই গেছে। এখানে আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করে দেশের আইন ফাঁকি দিতে সাহায্য করেছি, এমন অভিযোগ মেনে নিচ্ছি না। মেনে নিতে পারি না। এটা সঠিক না।’ দ্বিতীয় অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ৪ বছর বিজিবিতে ও ৩ বছর সেনাপ্রধান ছিলাম। এই সময়কালে যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, আমি আমার ভাইকে কোনো কন্ট্রাক্ট পেতে সাহায্য করেছি, তবে এর জন্য যে কোনো পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত আছি।’ সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রমাণ পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের বিষয়। তারা প্রমাণ দিক। আমি আমার কোন ভাইকে কন্ট্রাক্ট দিয়েছি।’ আমেরিকান দূতাবাসে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার এটি করার কোনো প্রয়োজন নেই।’ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে আজিজ আহমেদকে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। এর ফলে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তার (আজিজ আহমেদ) কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এ ছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন। আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। 
২১ মে, ২০২৪

রাইসিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, বললেন ইসরায়েলি নেতা
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কয়েকজন ইহুদি ধর্মীয় নেতা। এটা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে শাস্তি বলেও বিশ্বাস তাদের। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসির মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করেছেন ইহুদি ধর্মীয় নেতারা। ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও ইহুদি ধর্মীয় নেতারা রাইসির মৃত্যুর পর তার প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। ঘন কুয়াশার কারণে রোববার ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। সফরসঙ্গীসহ রাইসি নিহত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বিশ্বের বিভিন্ন নেতারা শোক প্রকাশ করছেন। তার বিপরীতের ইহুদি ধর্মীয় নেতারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি ইহুদি ধর্মীয় নেতা দাবি করেছেন, এটা ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ ছিল। রাইসিকে ‘তেহরানের জল্লাদ’ উল্লেখ করেছেন রাবি মেইর আবুতবুল। ফেসবুকে এক পোস্ট করে তিনি রীতিমতো রাইসির সমালোচনা করেছেন। ইসরায়েল ও ইহুদিদের প্রতি রাইসির মনোভাবের কঠোর নিন্দা জানান আবুতবুল। তার ভাষায়, এই হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা ঐশ্বরিক শাস্তি। খুব নোংরা ভাষায় আবুতবুল লেখেন, সে ইহুদিদের ঝুলাতে চেয়েছিল, তাই ঈশ্বর তাকে এবং তার সঙ্গে থাকা ইসরায়েল বিরোধী ক্রুকে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করে বাতাসে বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছেন। ইরানের সদ্য প্রয়াত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিষবাষ্প উগড়ে দিয়েছেন রাবি নির বেন আর্টজিও। এ ঘটনাকে ঈশ্বরের অসন্তোষ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এক ফেসবুক পোস্টে এই রাবি লেখেন, নিজের প্রতি জুলুম করো না, ঈশ্বর বলেছেন, যথেষ্ট হয়েছে। আপনি ঈশ্বরকে রাগান্তিত করেছেন। রাইসি ও তার প্রশাসনের পদক্ষেপের দিকে ইঙ্গিত করে এমন মন্তব্য করেন বেন আর্টজি। ইহুদি আরেক ধর্মীয় নেতা রাবি ইৎজ-চাক বাৎজরি আরও এক কাঠি সরেস। তিনি রাইসিকে ফেরাউনের দোসর হামানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। রাইসির মৃত্যুর খবর আসার আগে বাৎজরি ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে দুষ্টু হামান। নিজের পোস্টে বাইবেলের একটি লাইনও জুড়ে দেন এই রাবি। ইরানের উত্তরাঞ্চলে মর্মান্তিক ওই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসিসহ আরোহী ৯ জনের কেউ প্রাণে বাঁচেননি। প্রায় ১৫ ঘণ্টার অভিযান শেষে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকারীরা কারও জীবনের চিহ্নই খুঁজে পাননি। ইরানের সরকার জানিয়েছে, হার্ড ল্যান্ডিং কারণে এই দুর্ঘটনার ঘটেছে। তবে দুর্ঘটনার আগে হেলিকপ্টার থেকে একবার যোগাযোগ করা হয়, সেই ছিল শেষ কথা।
২০ মে, ২০২৪
X